ধর্মের দেয়াল পর্ব:৬

0
1268

#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৬

ফুফু ভাত মাখিয়ে নাফিসার মুখে
ভাতের লোকমা তুলে দিল। এবার
নাফিসার চোখের পানি আর
আটকাতে পারল না। টপ টপ করে পানি
ঝরেই চলছে।
রেহানা বিব্রত হয়ে বলল, এই পাগলি
কাদছিস কেন?
নে জলদি শেষ করতো ভাত গুলো।
রাফসানের আর বুঝার বাকি রইলনা।
রাফসান সেখান থেকে দ্রুত চলে গেল।
মেয়েটার চোখের পানি যে ওকে বড্ড
পোরায়।
নাফিসা! এই ফুফুর উপর এখনো রাগ
চেপে বসে আসিছ?
-নাফিসা মুখে ভাত নিয়েই শুধু মাথা
নারিয়ে না করল।
-দেখ সেদিন আমি ইচ্ছা করে তোদের
বিয়ে ভাঙ্গিনি। আজ তোকে কিছু
বলব। শুনে তোর যা মনে হয় তা ডিসিসন
নিবি।
তোর মায়ের ছবি কি কখনও দেখেছিস?
ও মাথা নিচু করে বলল না দেখিনি।
-তোর নিজের মাকে জিবনে
দেখিসনি ব্যাপারটা আজব নয় কি!
তোর সামনে যেকোন মহিলাকে দ্বার
করিয়ে যদি বলা হয় এটা তোর মা
তাহলেত তুই তাই বিশ্বাস করবি।।
নাফিসার কাছে এর কোন জবাব নেই
কারন বাবাকে তাও ছবিতে দেখেছি
কিন্তু মা কে কখনও দেখিনি।
চাচা,চাচী,দাদীকে বলেও কোন
লাভ হয়নি। উল্টো বকা খেতে হয়েছে।
নাফিসা ফুফুকে বলল তাহলে কি করব
ফুফু। আমার যে জানার কোন সুযোগ ও
নাই।
রেহেনা বলল হুম জানি সেটা বলেই
ভাতের লোকমা পুরে দিল ওর মুখে।
-তাহলে শোন……..
– তোর বাবা মেহেদী আমাদের সবার
ছোট ছিল। আমাদের খুব আদরেরও ছিল। ও
খুব মেধাবী ছিল। ও যখন কানাডায়
স্কলারশীপের সুযোগ পেল তখন আব্বা
কিছু না ভেবেই কিছু জমি বিক্রয় করে
ওর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল।
দিন গুলো বেশ ভালই চলছিল। পড়াশুনার
পাশাপাশি ও জব করত এবং সেখান
থেকে বাবাকে মোটা অংকের
টাকাও পাঠাত। এভাবে চলার পর তোর
বাবার পড়াশোনা শেষের দিকে।
একদিন হঠাৎ করে এক কানাডিয়ান
মেয়ে মানে তোর মা কে নিয়ে
বাসায় হাজির। মেহেদী বলে
মেয়েটা নাকি ওর বউ।
বাবা এগুলো দেখে বেশ কষ্ট এবং
গম্ভীর হয়ে গেলেন।
নাবিলা যখন এই বাড়িতে পা রাখল
তখন সাথে সাথে কই যানি থেকে ২
টা কুকুর দৌড়ে আসে উঠানে।
– জাহানারা তখন প্রেগন্যান্ট ছিল ৭
মাসের।
২ কুকুর ওর পাশ দিয়ে দৌড়ে যেতেই
জাহানারা চমকে ওঠে এবং কিছু বুঝে
ওঠার আগেই নিচে রাখা কাঠের
গুড়ির উপর পড়ে যায়।
যার ফলাফল তোর চাচীর বাচ্চা নষ্ট
হয়ে যায় এবং সেদিন মৃত্যুর হাত হতে
অলৌকিক ভাবে বেচে যায়।
তার পর থেকে তোকে আর তোর মাকে
সহ্য করতে পারেনা জাহানারা। এর
জন্য তোর মাকেই দোষী বলে মনে
করতো।
-সেদিন কুকুর ২ টি তোর মাকে দেখে
সেই চিৎকার করছিল।
আমি তখন রাফসান ও তোর ফুফাকে
নিয়ে চট্রোগ্রাম থাকতাম
তারপর মোটামুটি সব স্বাভাবিক ছিল।
৮ মাসের মাথায় আব্বা অস্বাভাবিক
ভাবে মারা গেলেন। এই তোর যেমন
গত রাতে সমস্যা হইছিল তেমনি ভাবে
আব্বারও সমস্যা হইছিল।
পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে
আসে। আমি রাফী আর তোর ফুফাকে
নিয়ে এই বাসায় চলে আসি।
তোর মাকে সেদিন প্রথম দেখেছিলাম
আমি। অতি চমৎকার মেয়ে ছিল
নাবিলা। কিন্তু তখন খুব রাগ হচ্ছিল
ওকে দেখে। রেগে তোর মাকে যা
ইচ্ছা তাই বলেছিলাম। আব্বার দাফন
শেষে আরও ৮ দিন থেকে বাসায় ব্যাক
করি আমরা।
– তারপর তোর মার সাথে আর কোন দিন
দেখা বা কথা বলার সুযোগ হয়নি
আমার। এমনকি মেহেদীর সাথেও না
বলে কাদতে লাগল রেহানা।
নাফিসা জানিস মা! তোর বাবা
আমাদের খুব আদরের ছিল। কিন্তু
ভাইটার সাথে শেষ দেখাও করতে
পারিনি সেদিন।
আম্মা একটা কথা বলছিল যেদিন আগুনে
তোর মা পুরছিল সেদিন নাকি তোর
মা ঠায় ভাবে শুধু দাড়িয়ে ছিল।
আগুনে তোর বাবা নাবিলা কে
কিছুতেই ফেলে রেখে আসতে
পারেনি। যার ফলাফল সব সমাপ্ত।
এটা তোর দাদি কিছুতেই মেনে
নিতে পারেনি। তবুও তোর মুখের
দিকে তাকিয়ে ধর্য্য ধরেছিল।
একদিন এসে প্রথম দেখতে পাই তোকে।
খুব সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ১ বছরের।
দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
সেদিন রাফসান তোকে কোলে তুলে
নিয়ে বলেছিল এটা আমার মিষ্টি
পাখি। যে এখনো সেই নামেই ডাকে
তোকে।
এরপর দিনগুলো বেশ ভালয় চলছিল কিন্তু
হঠাৎ রাতে কল আসে। সাজ্জাদ বলে
আম্মার অবস্থা নাকি সেই খারাপ।
আমি আবার বেশ ঘাবড়ে যাই না
জানি আজ আম্মার সাথে কি ঘটেছে।
বাসায় পৌছাইতে দেখি অনেক মানুষ।
আমার আর বুঝার বাকি রিলনা যে কি
সর্বনাশ আমাদের হয়েছে।
আম্মার দাফন কাজ শেষ হবার পর তোকে
কে দায়িত্বে নিবে সেই নিয়ে বেশ
ঝামেলা পোহাতে হয়।
জাহানারা একদম সবার সামনে সাফ
বলেই ফেলে দেয় তোকে কিছুতেই
নিবে না।
তোর মা নাকি যেদিন থেকে এই
বাসায় এসেছে সেদিন থেকে পরপর
অঘটন ঘটেই চলছে।
রাফসান তোকে হাত ধরে নিয়ে এসে
বলল আম্মু চলনা আমরা পাখিটারে
আমাদের কাছে নিয়ে যাই।
তখন আমার বুক ধরপরিয়ে উঠল না জানি
তোর কারনে আমার রাফসানকে ওর
নানীর মত না হারাতে হয়।
আমি সেদিন ওর হাত ধরে টেনে
নিয়ে এসে বললাম তুমি একদম চুপ
থাকবা।
আর দ্রুত সেদিন বাসায় নিয়ে আসি
ওকে।
কথা গুলো শুনে নাফিসার চোখ দিয়ে
টপটপ করে জল পড়ছিল।
চোখের জল মুছে নাফিসা বলল তাহলে
তোমাদের ধারনা আমার মা এবং
আমার জন্য এই ক্ষতি গুলি হয়েছে?
রেহানা কোন জবাব দিলনা। তার
মতে ২ মা-মেয়েই দ্বায়ী।
রেহেনা বলল দেখ আমি তোকে
নিজের মেয়ের মতই ভালবাসী।
– নাফিসা বলে উঠল তাই! নিজের
মেয়ের থেকে কেউ বুঝি তার
ভালবাসাকে এভাবে ছলনা করে
কেরে নেয়?
নাফিসা যে এমন উত্তর দিবে সেটা
ভেবেই দেখেনি রেহেনা।
নিজেকে মনে হচ্ছে আজ বড় অপরাধী
হচ্ছে।
আচ্ছা ফুফু বাবা কি আমার জন্য কিছু
রেখে যায়না?
বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়ে গেল
রেহানা। এই মেয়ে কি চাচ্ছে!
কিছুক্ষন ভেবে বলল রেহানা হুম এখন যা
দেখছিস এর বেশি ভাগ তোর বাবার
টাকার।
ফুফু আমার মনে হয় আমাদের মানে
চাচা সম্পত্তির পরিমান ৪ কোটি তোহ
হবেই। তার মানে বাবারই ৩ কোটির
বেশি। যার বাবার এত্ত সম্পত্তি তার
মেয়ে কেন না খেয়ে থাকে।
টিউশানি করে কেন নিজের খরচ
চালাতে হয়। কারনে অকারনে কেন
ম্যার খেতে হয় বলতে পারো বলে
নাফিসা কেদে উঠল।
বেহেনা বলল দেখ মা আমি এত্ত কিছু
জানিনা তুই শুধু রাফসানের সংসার টুকু
ভাঙ্গিসনা। অনেক কষ্টে আমি একটু
স্বাভাবিক করছি। আমি মা হয়ে ওর পা
ধরেছি। ক্ষমা করে দে মা।
ফুফু আমি কেন একা কষ্ট পাব। আর
প্রিয়জিনিস হারানোর ব্যাথা
জানো?
এবার জানবে।
দিনটা রেহানার বাজে ভাবে
কেটে গেল। রাফসানকে বাসায়
পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিল
বিকেলে। হাফ ছেড়ে বাচল যেন।
রাফসান চলে যাওয়ার পর রেহেনা
রাফীদের পুরো পরিবার কে নিয়ে
বাহিরে চলে গেল। নাফিসাকে
বলেছিল কিন্তু নাফি যায়নি।
অন্ধকার ছাদে ওর লম্বা লম্বা চুল গুলো
ছাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে নাফিসা।
কেউ একজন এসে ওকে পিছন থেকে
জাপটে ধরে ওর গলায় কিস করল।
নাফিসা ঠায় দাড়িয়েই আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here