#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৮
-বাসা থেকে নদীর পথ মাএ ১০ মিনিট
কিন্তু এতটুকু আসতে নাফিসা হাপিয়ে
ওঠে।
– পা টা বাজে ভাবে মচকে গেছে
তাই হাটতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে।
.
.
.
.
– নদীর পারে একটা ঢালু জায়গায় এসে
বসল।
-পুরনো কথা মনে হতেই কাদতে
লাগলো খুব। মা আমি তোমার কাছে
আসছি আর কিছুক্ষন পর বলে উঠে পড়ল।
.
.
– নাফিসারর মনে হচ্ছে আসে পাশে
ভয়ঙ্কর কিছু একটা জিনিস আছে যে ওর
সামনে আসতে চায়।
.
.
.-একদম নদীর পাড়ে গিয়ে ওর পানি
দিয়ে ওযু করে নেয়।
-আল্লাহ মাফ করে দিও আমার আর
যাওয়ার কোন জায়গা নেই তাই মৃত্যুই
আমার একমাএ পথ বলেই পানিতে
নেমে গেল।
.
.
.
-কোথা থেকে এক মেয়ে দৌড়ে এসে
বলে নাফিসা!
.
.
-ঐ অবস্থায় পিছন ফিরে দেখে একটা
২৯/৩০ বছরের মত মহিলা দাড়িয়ে
আছে। দেখেত খুব অবাক নাফিসা। এই
অপরিচিত মহিলা কে? আর আমার নামই
বা জানল কেমন করে?
.
.
.
-নাফিসা সেটা কেয়ার না করে
আবার নিজের কাজে মন দিল।
-মেয়েটা যখন দেখল কিছুই দিয়ে কিছু
হচ্ছেনা তখন চট করে বলে উঠল,
নাফিসা তোমার মাকে দেখতে
চাওনা?
.
.
.
– নাফিসা চমকে ঢ়ুরে দাড়াল এবং
ভাবল ইনি আমার মাকে চিনল কেমন
করে।
.
.
– নাফিসা উঠতে যাবে ওমনি সম্পূর্ন
পানিতে ডুবে যায়।
– মেয়েটি কি না ভেবেই লাফ দেয়
এবং দ্রুত ওকে নিয়ে কিনারে উঠে
আসে।
.
.
– মরার এত্ত সখ! তোমার জানারও
বাহিরে অনেক গল্প আছে যেগুলো
তোমার জানা উচিত বলে আমার মনে
হয়।
-মহিলাটি ওকে কোলে তুলে নিরাপদ
স্থানে নিয়ে যায়।
.
.
– নাফিসা বলল এটা কোন জায়গা!
আমিতো চিনি না আর আমাকে
কেমনে কোলে নিলেন তাও আপনি
মেয়ে হয়ে?
.
.
.
– মেয়েটি বলল হাতে একদম সময় নেই
তোমাকে কিছু জিনিস দিতে এসেছি
এবং দেখাতেও।
– মেয়েটি নাফিসার সামনে একটা
আগুন গোলক তৈরি করে যার ভিতর
নাফিসা দেখল অনেক গুলো বিশ্রী পশু
মিলে একটা মহিলাকে ধরে আছে।
মহিলাটি ছটফট করছে ছাড়ানোর জন্য
আর চারদিকে আগুন জ্বলছে। এমন সময়
একটি পুরুষ এসে তাকে টেনে বের
করতে চাইল কিন্তু তাকে বের করতে
পারল না। ২ জনেই মারা গেল সব শেষ
হয়ে গেল।
– নাফিসা চিৎকার দিয়ে উঠল বাবা
বলে কারন পুরুষটি তার বাবা ছিল।
তাহলে কাছের নারীটি ওর মা। কিন্তু
তার মুখ দেখা যাচ্ছিল না।
– নাফিসা গর্জে উঠে বলে কে
মেরেছে এভাবে আমার মা-বাবা
কে?
.
.
.
– মেয়েটি বলল এর প্রশ্নর উত্তর না
নিয়েই মরতে গিয়েছিলে! এদের কে
শাস্তি না দিয়েই।
– নাফিসা বলল বোন আমার ভুল হয়ে
গেছে আমাকে খুলে বলুন সব।
.
.
– মেয়েটির চোখে পানি দেখে
নাফিসা বলল,
বোন আপনি কাদছেন কেন?
.
.
.মেয়েটি চোখ মুছে বলে আমার নাম
মারিয়াম।
– তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিল। যে
এটা সংগ্রহ করছে সে কোথায় আছে
আমি জানিনা কিন্তু এটা আমার
কাছে আমানত রেখেছিল।
.
.
.
একটা রুপোর বক্স মারিয়াম
নাফিসাকে দিয়ে বলে এটা নাও আর
কোন নিরাপদ জায়গায় যখন যাবা তখন
একা এটা খুলবা। মনে রেখ তুমি ছাড়া
এটা কেউ খুলতে পারবেনা।
.
.
এখানে ২ জন আলাদা আলাদা মায়া
করে সুরক্ষা কবচ দিয়ে আটকিয়েছে।
তাই কারো জন্য এটা খোলা সম্ভব হবে
না।
.
.
.
-আমাদের অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে
এখন এখান থেকে বেড় হইতে হবে।
– নাফিসার মনে হাজার প্রশ্ন মনে
জাগে।কিন্তু কিছু না বলে মারিয়াম
কে অনুসরন করে চলতে থাকে।
.
.
.
মারিয়াম বাস স্ট্রান্ডে এসে বলল
বাসে উঠে পড়। একটা ঠিকানা লিখে
ওর হাতে দিল এবং ১ টা চিঠি দিল
ওকে।
.
.
.
বলল চিঠিটা আশা করি তুমি সেই
বাসায় গিয়ে দেখাবা। আর চিঠিটি
খুলবা না।
– বাস থেকে নেমে একটু ওয়েট করবে
তাহলে একজন নিতে আসবে তার
সাথে চুপ করে চলে যাবে। আশা করি
তোমার একটা ভাল থাকার ব্যবস্থা
হয়ে যাবে।
.
.
.
– নাফিসা বলল বোন আপনি যাবেননা?
.
.
– না বোন যদি বেচে থাকি আমার
প্রয়োজনে তোমার সাথে দেখা করব।
যানিনা এর পর আমি বেচে থাকব
কিনা।
.
.
– নাফিসাকে একটা লকেট ওর গলা
থেকে খুলে পড়িয়ে দিয়ে বলে এটা
সবসময় কাছে রাখবা কারণ সামনে
তোমার ভয়াভয় বিপদ। আশা করি এই
লকেট তোমায় বিপদে সাহায্য করবে।
.
.
.
– একটু পর বাস চলে আসে নাফিসাকে
বাসে উঠাই দিয়ে একটা ব্যাগ দেয় ওর
হাতে।
– এখানে কিছু তোমার প্রয়োজনীয়
জিনিস আছে। ভাল থেক। ইনশাল্লাহ
আবার দেখা হবে। ‘আল্লাহ হাফেয ‘
….
.
.
.
নাফিসা ওর চলে যাওয়া দেখে শুধু।
পুরো দিন ও রাত না খাওয়া শরীর
নিয়ে বেশ ক্লান্ত।
তাই বাস ছেড়ে দিতেই জলদি ঘুমিয়ে
পড়ল।
.
.
.
.________________________
– দুরে আযানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন
সময় বিথীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানায়
নাফিসা নেই দেখে ওর বুক ধরপড় করে
ওঠে।
:
:
রাফী কে ডাকতে থাকে বিথী।
-রাফী ধপ করে উঠে পরে এবং বিথীর
দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
.
– ভাইয়া আপা নাইরে চলে গেছে
বলে কেদে উঠল ফুফিয়ে। রাফী ঘুম
চোখে তাকিয়ে আছে বিথীর হাতে
একটি চিঠি দেখে।
– রাফী চিঠিটা পড়ে যেন মাথাটা
ঘুরে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বাহিরে
যায় এবং দেখে দরজা খোলা।
.
.
.
. মা- বাবাকে গিয়ে ডাক দেয়।
– সাজ্জাত উঠে এসে বিরক্ত স্বরে বলে
কি হইছে?
– বাবা নাফিসা নেই বাসা ছেড়ে
চলে গেছে বলে চিঠিটা দেখায়।
– সাজ্জাদ চিঠি দেখে চুপ করে যায়
এবং জাহানারা কে ডেকে বলল
নাফিসা বাসা থেকে চলে
গেছে।
.
.
.
জাহানারার রিয়াক্ট দেখার মত
– জাহানারা চেচিয়ে উঠল এবং বলল
কয় দিন বাহিয়ে গিয়া থাকব এমনি
২দিন পর আসবে ফিরে।
– এবার আসলে ঝেটিয়ে বিদায় করব।
গিয়ে দেখ কোন নাঙ্গের বাসায়
গিয়ে উঠছে। কেউ জায়গা দেবে না
ঐ বিয়াদপ মেয়েকে।
.
.
.
– রাফী শুধু মায়ের কথা শুনল কিন্তু কিছু
না বলে বাহিরে ওকে খুজতে চলে
গেল।
.
.
.
-বিথী রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল
এবার তোমার সুখ হইছে? আর শোন আমার
জাত গোষ্ঠী তোমার জাতের থেকেও
ভাল।
.
.
ক দিন আগে না তোমার ভাইয়ের
মেয়ে বের হয়ে গেল? আর তাছাড়া
তেমার ২ ভাইয়ের মেয়েরা তোহ বের
হয়ে গিয়েছে নাঙ্গের সাথে। মানুষ
১ /২জন যায় তাই বলে বাসা থেকে ৩
টা যায়না। আবার ঐ মুখে প্রসংসা
করে। ঐ বংশের মেয়ে তুমি আর কতই
ভাল তোমার ব্যবহার হবে।
– তোমার কথা গুলো আপাকে বলার জন্য
তোমার লজ্জা হওয়া উচিত।
.
.
– আজ যেন বিথী পাগল হয়ে যাচ্ছে।
আজ শুধু বাবা ১টা কথা বলুক বাবাকেও
ছাড়বে না সে। কি পাইছেটা কি
এরা।
.
.
.
– রাফী অনেকক্ষন পরে বাসায় চলে
আসল।
– রাফীকে দেখে সাজ্জাদ দৌড়ে
গিয়ে বলল
বাবা! মেয়েটারে কি পাইছিস?
.
.
.
– এবার বিথীকে পায় কে! চিল্লে
বাড়ী যেন মাথায় তুলল আর বলল কেন
কাল মারার সময় মনে ছিলনা। এত্তবড়
মেয়ের গায়ে কিভাবে হাত তোলেন
আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।
.
.
-আরে বাড়িতে কুকুর বিড়াল থাকলেও
মায়া জন্মে কিন্তু আপনাদের ভিতর
তার জন্য ছিটা পরিমাণ ও মায়া নেই।
মনে রাখেন আল্লাহ তার কর্মের ১০ গুন
ফিরে দিবেন।
.
.
.
– জাহানারা বলল আমার নিজেদের
সন্তান নিজের শত্রু হয়ে গেছে। কোন
দিন ওর ভাল হবেনা বললে ঘুরে
দাড়াতেই সাজ্জাদ ওর গালে চড়
বসিয়ে দেয়।
.
.
– জাহানারা বলল তুমি আমাকে
মাড়লে! আরে আগে তোমাকে আমার
শাসন করা উচিত ছিল।
– এতদিন পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা।
– আল্লাহ এখানে আমার সবাই শত্রু
আমাকে ওঠায়ে নাও।
– আমি বাসায় থাকবোনা বাবার
বাড়ী যাব। ঐ অলুক্ষনে মেয়ে চলে
গেছে আমার সংসার শেষ করে গেছে।
.
.
.
.
রাফীর কিছু ভাল লাগছেনা ওখান
থেকে চলে নিজের রুমে আসে। আর
ফুফুকে গিয়ে কল দেয়।
– রেহেনা কল রিসিভ করে বলে
বাসার সবাই ভাল আছেতো?
– কিছু ভাল নেই বলে কাল রাতে ঘটনা
সহ সব বলল।
.
.
.
– রেহেনা কল কেটে সোজা
রাফসানের রুমে যায় এবং ওর গালে
ঠাস করে একটা চড় দেয়। চড়ের শব্দে
সুমিও আসে।
– মা ওকে মারছো কেন?
.
.
– রাফসানকে বলল তুই শেষে
মেয়েটাকে এভাবে শেষ করলি বলে
সব কাহিনী বলল।
.
.
.
-রাফসান ভেবে পেলনা কি বলবে। ওর
যে বুক ফেটে যাচ্ছে।
.
. –
– সুমি অন্য রুমে কেদেই যাচ্ছে আর
ভাবছে রাফসান আমাকে দুরে সরিয়ে
রাখত একটা মেয়ের জন্য কিন্তু সে
মেয়ে যে নিজের বোন সেটা সে
কল্পানাতেও ভাবতে পারেনি।
আগে যদি জানত তাহলে কোন দিনও এই
বিয়েটা করত না।
.
.
.
.
” সময় গেলে সাধন হবে না”…… ফকির
লালন সাহ্ এই কথাটি অক্ষরে অক্ষরে
ফলে যায়।
.
.
.
রাফীদের পার্ট আপাতত এখানেই শেষ
– হঠাৎ একটা ধাক্কায় বাস থেমে যায়
সাথে সাথে সামনের দিকে বেশ
ঝুকে যায় আর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
– বাসের হেলপার ডাইভার কে বলে
ওস্তাদ কি হইল।
.
.
-কি জানি কার সাথে যেন ধাক্কা
লাগল।
এমন সময় একটা লোক দরজায় ধাক্কা
দিল।
-হেলপার দরজা খুলে দিলে লোকটি
কোন কথা না বলেই বাসে উঠে পড়ল।
হেলপারতো অবাক। বলা নাই কওয়া
নাই উইঠা পড়লেন ক্যা।
.
.
.
লোকটির গায়ে চাদর দিয়ে ঢাকা
ছিল। বলল এই তো সামনে যাব।
আপনারা চলেন।
.
.
লোকটি এগিয়ে এসে পিছন সাড়িতে
বসল।
.
.
– আবার বাস স্টার্ট করল ডাইভার।
– আর কিছু দুর যেতেই টিকিট ম্যান
পিছন থেকে হাউমাউ করে চিল্লে
সামনের দিকে আসল।
.
.
.
ড্রাইভার হেলপার সহ সবাই পিছন
ফিলে যা দেখল তা দেখার জন্য
তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না
চলবে…………..
” শক্তির নিত্যতা সূত্রের মত
পৃথিবীতে সুখ আর দুঃখের পরিমান
নিদির্ষ্ট
সুখ যেমন তৈরি করা যায় না, দুঃখ ও
তেমনি ধংস কর করা যায় না”
এটাই বাস্তবতা………..