ধর্মের দেয়াল পর্ব:৯

0
1104

#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৯

– সবাই পিছনেই ফিরে দেখল বিকট
চেহেরার ২ জন্তু। এটা দেখে সবাই
কাপতে শুরু করল। বাসের কোন কোন
নারী জোরে জোরে কাদতে লাগল।
– জন্তু ২টি খিটখিট করে হসে উঠল। শরীর
হিম করার মত হাসির শব্দ। ওদের একজন
বলল এখানেতো অনেক শিকার।
কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই।
.
.
.
.
-নাফসা ওর ছিটে ওদের দেখতে
দাড়িয়ে ছিল।
-১জন নাফিসা কে দেখিয়ে বলে
ঐটাকে নিয়ে চল। সাথে ২ টা
বাচ্চাও।
– নাফিসা ওর দিকে আঙ্গুল উঠানো
দেখে খুব ভয় পেয়ে গেল।
– নাফিসার মারিয়ামের কথা মনে
পড়ল। ও বলেছিল সামনে বিপদ আসবে।
-নাফিসা পাশের ১জন বয়স্ক লোককে
বলল চাচা আপনি জোড়ে আযান দিতে
থাকুন। আর পুরুষদের সবাইকে বলল
আপনারা যারা আযান পাড়েন তারা
দেওয়া শুরু করেন। সবাইকে বাচতে
হবে।
.
.
. – এমন সময় এক মেয়ে বলে উঠল ওরা
তোমায় চায়। যা করার তুমি করবা
আমরা কেন তোমার জন্য নিজেদের
বিপদ ডেকে আনব।
.
.
.
-নাফিসা দেখল ওর কথা কেউ শুনছেনা
তখন নিজেই আয়াতুল কুরছি পড়তে শুরু
করে দেয়।
– এতে ওরা আরও রেগে যায়। যে
মহিলা নাফিসাকে ঐ সব কথা বলছিল
তখন ঐ মহিলার কোলের বাচ্চাকে
জন্তুটি টেনে নিয়ে বলে তোরা কেউ
বাচবিনা। মহিলাটি চিৎকার দিয়ে
কেদে ওঠে।
– নাফিসা বলল এবারও আপনারা চুপ
করে থাকবেন?
ওদের দেখিয়ে দেন মানুষই সৃষ্টির
সেরা জীব।
.
.
এর পর একবারে ১০ জন একসাথে আযান
দিতে থাকে।
-এবার জন্তু ২ টি কে দেখার মত।
ওদের শরীর মনে হয় জলতে থাকে এরকম
ছটফট করতে থাকে।
-ওরা ২ জন চলে যাওয়ার সময় বলে যায়
তোরা সবাই আমাদের শিকার তাই
তোদের আমাদের হাতেই মরতে হবে।
আমরা আবার আসব বলেই পিছনের কাচ
ভেঙ্গে চলে যায়।
.
.
.
-ডাইভার স্টার্ট দেয় কিন্তু বাস স্টার্ট
হয়না। সবাই মহা বিপদে পড়ে যায়।
– নাফিসা বলল এভাবে হবেনা। ৮ জন
পুরুষকে নিয়ে নেমে পড়ল এবং প্রতিটা
চাকায় বিসমিল্লাহ্ লিখল এবং
গাড়ীর ৪ দিকে লিখল। নাফিসা বলল
বাসের ছাদেও লিখতে হবে। কিন্তু
কেউ ভয়ে উপরে উঠতে চাচ্ছিলনা।
.
.
.
-শেষে নাফিসা উপরে ওঠার
সিদ্ধান্ত নিল। এমনি সময় ২ পাখা
ওয়ালা বিশ্রী একটা জন্তু ছাদের উপর
এসে পড়ল। অমনি বাকি সবাই গাড়িতে
ওঠার জন্য দৌড়াতে লাগল।
.
.
.
– নাফিসা বাসে উঠেই বলল
বিসমিল্লাহ্ বলে স্টার্ট করেন বাস।
ডাইভার তাই করল।
-নাফিসা বলল আপনাদের মোবাইলে
সুরা আছে?
-১ জন বলল হ্যাঁ আমার আছে বলে
নাফিসাকে ফোন দিল।
-নাফিসা “””সুরা বাকারা””” চালু করে
দিল।
-নাফিসা সবার উদ্দেশ্য বলল যে যা
জানেন সবাই সেগুলো পড়েন।
.
.
.
.
.-কয়েকজন মিলে আযান দেওয়া শুরু করল।
ওরা সবাই যেন পাগল হয়ে বাসের
ছাদে জোড়ে জোড়ে ঘুষি দিচ্ছে।
– নাফিসাও জোড়ে জোড়ে তাকবির
দিতে লাগল। বাসের সামনে অন্ধকার
আরো গাড় হয়ে আসছিল। সবাই এবার
দোয়া পড়া যেন ভুলে যায়।



-হাঠাৎ একটা ছেলে মোবাইলে
থাকা আযান জুড়ে দেয়। ওর বুদ্ধিটা
বেশ ছিল।
-বাসটি এভাবে চলতে চলতে
লোকালয়ে এসে গেল।
-আর সাথে সাথে সব উধাও হয়ে গেল।
যেন এক মৃত্যু পুরী থেকে ওরা ফিরে
আসল।
.
.
.
.
সবাই নাফিসার প্রশংসা করল।
নাফিসাও খুব ক্লান্ত তাই জলদি আবার
ঘুমে পড়ল।
.
.
.
.
– বাসটি সকাল ১০.৪৫ মিনিটের দিকে
চিটাগাং এ এসে থামল। হেলপারের
ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বলল আইসা
পড়ছি আপা আপনি নামবেন না?
.
.
-আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি
হেলপার টা সামনে দাড়িয়ে আছে।
– তাকে জিঙ্গাসা করলাম এটা কোন
জায়গা?
-ওনি হেসে বলল কেন আপা আপনি কি
নিজেই জানেননা আপনি কোথায়
যাচ্ছেন?
.
.
.
. -আমি ওনার কথা শুনে বিব্রত বোধ
করতে লাগলাম। উনি কি জানি ভেবে
বলল আপা আমিতো মজা করছি , এটা
চিটাগাং। সবাই নাইমা গেছে
আপনি যাবেন না?
.
.
.
আমি ওনার আর কোন কথার জবাব না
দিয়ে নিচে নেমে গেলাম।
-প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আশেপাশে অনেক
মানুষ দাড়িয়ে আছে আর আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।
– আমি কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম
তারা কেন ওভাবে তাকিয়ে আছে।
.
.
.
– বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে কিন্তু
আজ ১ম বোরখা ছাড়া আমি বাহিরে
বলে ভিজতে পারছিনা।
-কি আর করার! পরিস্থিতি যে বড়ই
ভয়ানক ছিল।
.
.
. প্রায় ঘন্টা খানেক দাড়িয়ে থাকার
পর একটা ব্লাক কালার গাড়ি এসে
থামে ঠিক আমাদের সামনে।
.
.
.
– লোকটি বেশ ইয়াং ছিল। আমায় এসে
বলল আপনি নাফিসা?
– আমি থতমত হয়ে বললাম হ্যাঁ কিন্তু
আপনি কে আর আমার নাম এবং আমায়
চিনলেন কেমনে।
.
.
.
-উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল
গাড়িতে উঠুন। আমার অনেক কাজ তাই
দয়া করে আর সময় নষ্ট করবেন না।
.
.
.
-আমি ভ্যাবলার মত ওনার কথা শুনে
ওনাকে অনুসরন করে গাড়িতে উঠলাম।
.
.
.
– গাড়ি চলছে অজানা পথে। আমি
ভাবলাম যার কোন বাচার আশা নেই
এবং যাওয়ার জায়গায় নেই তার আবার
ভয় কিসের!
.
.
.
-লোকটি বলল আমার নাম আজগড়। আপনার
নাম সুনেতো মনে হচ্ছে আপনি মুসলিম।
কিন্তু আপনি যেখানে যাচ্ছেন তারা
অন্য ধর্মের।
.
.
.
-আমি শুনে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে
গেলাম। মারিয়াম আমায় কোথায়
পাঠাচ্ছে। আমি বললাম সেটা আমার
বিষয়। আপনার আমাকে নিয়ে না
ভাবলেও চলবে।
– আমি বললাম আমাদের সেখানে
পৌছাতে কত সময় লাগবে?
.
.
.
-আজগড় বলল আমি ইচ্ছা করলে ১
মিনিটে যাইতে পারি কিন্তু অনুমতি
নাই তাই ৩ ঘন্টা লাগবে যেতে।
.
.
.
– লোকটার কথা কেমন যানি
সন্দেহজনক। আমি ভাবলাম ঘুমালে
চলবে না এই ব্যাটার কি মতলব কে
জানে!
.
.
.
– আজগড় বলল আপনার মত আমার ১ বোন
আছে আর আপনাকে বোনের মত এখন
দেখছি তাই আমার কোন মতলব নেই।
আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন।
.
.
.
আমি হচকিয়ে উঠলাম আর ভাবলাম এটা
কি করে সম্ভব! উনি কি ভাবে বুঝল
আমি কি ভাবছি।
.
.
.
– আমার ভয় পেতে শুরু করল আর মনে মনে
আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম।
-আজগড় বলল ভয় পাবেন না আমি আপনার
শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই কথা না বাড়িয়ে
ঘুমিয়ে যান।
.
.
. আমার তবুও ভয় কমছিলনা। কিন্তু আমি
যে কখন ঘুমি পড়লাম নিজেও জানিনা।
– আজগড়ের ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গে
যায়। বলল এবার উঠুন আমরা এসে গেছি।
বলে ডোর খুলে দাড়িয়ে থাকল।
-আমি বললাম এখন আমি কই যাব?
-আজগড় বলল সামনে যে বাসা দেখছেন।
ওখানে গিয়ে নক করুন। ঐ টায় আপনার
গন্তব্যপথ।
.
.
.
-আমি আজগড় কে বললাম আমার সাথে
আপনিও চলেন না। আমার একা যেতে
ভয় লাগছে।
– আজগড় স্মিত হেসে বলল কিছুক্ষন আগে
আমাকে দেখেও ভয় পাইছিলেন।
ভাবছেন আমি ছেলে ধরা তাইনা!
.
.-আজগড়ের কথা শুনে লজ্জায় পড়ে
গেলাম সাথে কিছুটা রেগেও
গেলাম। ব্যাটা খোচা দিতে জানে।
কোথায় কি ভাবে দিতে হয়।
.
.
.
– আজগড় বলল আমি ব্যাটা ছেলেই
সেখানে ব্যাটা বলে গালি না
দিলে হয়না?
.
.
.
-ওর কথা শুনে আর দেরি করলাম না।
আরে ওর ভেলকি কি দেখাবে কে
জানে।
-আজগড় বলল ব্যাগটা নিয়েতো যাবেন!
আসল জিনিস কেন ফেলে যাচ্ছেন।
এত্ত কেয়ারলেস কেন আপনি।
.
.
.
-আমি ব্যাগটা নিয়ে হনহন করে চলতে
শুরু করলাম। আর পিছন ফিরে তাকাই নি।
– আসে পাসে বাসা মিলে মোট ৭ টা
বাসা। আবার সেগুলো বিশালও বটে।
আমি বাসার গেটের কাছে
দাড়ালাম। কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
পিছন ফিরে দেখলাম আজগড় দাড়িয়ে
আছে এবং হাতের ইশারায় বলল যান
ভিতরে।
.
.
.
আমি ওর কথায় সাহস পেয়ে গেটের
ভিতর বিসমিল্লাহ্ বলে ঢুকলাম।
– সাথে সাথে ঝড় শুরু হয়ে গেল। আমি
আবার দৌড়ে গেটে আসলাম আজগড়কে
দেখতে। কিন্তু ওখানে ও নেই ভয়ে
আবার কাদতে লাগলাম। আল্লাহ আবার
কোন নতুন বিপদের ভিতর ফেললে।
.
.
.
– কিছুক্ষন পড় বাতাশ থেমে গেল এবং
আমি ঐ বাসায় গিয়ে কলিং বেল
চাপলাম।
কিন্তু খোলার নামই নেই।
.
.
.
– অনেকক্ষন পর এক মহিলা খুলে দিল।
আমি তাকে সালাম দিলাম এবং কিছু
বলতে যাব এমন সময় বলল কি চাই!
.
.
– আমি কি বলব ভেবেই পাচ্ছিনা।
মহিলাটি বলল এভাবে কারও সময় নষ্ট
করতে নেই বলেই মুখের সামনে দরজা
বন্ধ করে দিল।
.
.
.
-আমার এত্ত ইগোতে লাগল যে আমি
সেখান থেকে বাহিরে চলে আসলাম।
– সামনে একটা ফুলের বাগান ছিল তার
সামনে বেঞ্চি। ওখানে গিয়ে বসে
রইলাম।
এমন সময় বৃষ্টি শুরু হইল
.
.
.
নাফিসা এই বৃষ্টির ভিতর ভিজতে
লাগল। আর দরজার দিকে লক্ষ্য করছিল
যদি আজগড় আসত তাহলে ওর সাথে চলে
যেতাম।
.
.
.
– আমি দরজার দিকে আবার তাকালাম
দেখলাম দুরে কেউ দাড়িয়ে আছে।
আমি কিছু না ভেবেই দৌড় দিলাম।
.
.
.
– গিয়ে দেখলাম আজগড় দারিয়ে।
আমি বললাম কই গিয়েছিলেন ওরা
আমায় ঢুকতে দেয়নি।
.
.
. আজগড় বলল চিঠিটা দেখাইছেন?
– না তো! মনেই ছিল না।
– এই নিয়ে আপনি আমার পিছে
গোয়েন্দা গিরী করছিলেন? যান
এবার গিয়ে চিঠিটা দেখাবেন।
তাহলেই ঢুকতে দিবে।
– আপনার সাথে কি আমার আর দেখা
হবে না?

আজগড় কিছুক্ষন পর বলল হতেও পারে
দেখা আপনি চাইলে। বলেই চলে গেল।
– আমি যে ওর চলে যাওয়া দেখছি ওর
পিছন ফিরে একবারও দেখার প্রয়োজন
বোধ করলনা।। আমি ওর চলে যাওয়া
দেখছি। ও দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল।
.
.
.
– আমি বাসাটিতে গিয়ে এবার
জোড়ে কলিং বেল চাপ দিতে
লাগলাম।
– আমার বয়সী প্রায় একটা মেয়ে এসে
গেট খুলে দিয়ে তাকিয়ে রইল।

-আমি এবারও তাকে সালাম দিলাম
কিন্তু সে নিল না সালাম।
– আমাকে দেখে বলল কি সমস্যা
আপনার! কিছু চান?
– আমি ওর হাতে চিঠিটা দিলাম।
.
.
– সে চিঠিটা দেখে দরজা বন্ধ করে
আবার চলে গেল।
.
– এবার আমার ধৈর্যর বাধ ভেঙ্গে গেল।
এই অপমান যেন আর সহ্য করাই যাচ্ছেনা।
.
.
.
.
– আমি চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
যা কপালে থাকে থাক আর এই বাসায়
ঢুকছি না।
– এই সময় দরজা খোলার শব্দ পেলাম।
পিছন ফিরে দেখি মেয়েটা।
– মেয়েটা বলল ভিতরে আসুন।
– আমি কোন কথা না বলে ওকে অনুসরন
করে ভিতরে ঢুকলাম।
.
.
.
.
– একটি মহিলার কাছে নিয়ে গেল।
আমি তাকে সালাম দিলাম উনি
ভদ্রতার সাথে জবাব দিল।
– উনি বলল আমার নাম “মিনা”। তুমি
আমাকে আন্টি বলেই ডেকও।
– ও আমার মেয়ে “রোজ”। তোমার
সমবয়সী।
.
.
আমি বললাম আন্টি রোজ সত্যি আপনার
মেয়ে?
– আন্টি অবাক হয়ে গেল সাথে রোজ ও
অবাক হয়ে গেল এবং বলল কেন এই কথা
বললা।
– আমি ওনাদের চেহারা দেখে ভয়
পেলাম
– আমি বললাম না মানে আপনি এত্ত
ইয়াং তার উপর রোজ আপনার মেয়ে।
– আন্টি স্মিত হেসে বলল আমার আরও ২
টা ছেলে আছে। তাই তোমার অবাক
হওয়া তাহলে আরও বাকি আছে।
.
.
.
– আন্টি রোজ কে বলল আমাকে আমার
রুমে নিয়ে যেতে।
.
.
.
-রোজ বলল এই মেয়ে তোমার সাহস তো
কম না Mom এর সাথে কথা বলছ ওভাবে।
– আমি বললাম আমার ভুল হয়ে গেছে।
– রোজ হেসে বলল আরেহ এতে ভুলের
কিছু নেই আমরা Mom কে একটু বেশি ভয়
পাই এই আর কি।
.
.
.
.
– আমরা একটা সুন্দর রুমে প্রবেশ করলাম
আর আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
– হয়ত আল্লাহ আমাকে আরও ভয়ঙ্কর কিছু
দেখানোর অপেক্ষায় ছিল।
– একটা ৮ বছর বয়সী ছেলে খাটের উপর
উল্টো হয়ে মাথা দিয়ে হাটছে আর
দেহের পিছন দিকে উল্টো করে মুখ
করে আমার দিকে হাসছে।
– এবার আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে
গেলাম নিচে….
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here