ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)পর্বঃ১৮

0
641

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১৮

– আমি একটা চিৎকার দিয়ে রাগের চোটে জ্বীনের উপর সব বিদ্যা প্রয়োগ করি এবং বৃষ্টির মত একেকটা আগুরের গোলক জ্বীনটিকে আঘাত করে থাকে। এতে জ্বীনটি সইতে না পেরে ভ্যানিস হয়ে যায়।




– আমি চিৎকার দিয়ে বললাম শয়তান জ্বীনের দল কোথায় গেলি। আমিতো কোন রাজ্য চাইনি… চাইনি কোন ক্ষমতা…. শুধু মেয়েটাকে নিয়ে একটু বেঁচে থাকতে চেয়েছি সাধারন ভাবে। আমার মাকে কেন জিবন দিয়ে প্রতিদান দিতে হল বলেই ঐশোর্যের গলা ধরে মাটি থেকে শূন্যতে তুলি।




– তোর শক্তির খুব দম্ভ না ঐশোর্য। আজ তোর এমন হাল করে ছাড়ব যাতে সাবাই দেখে ভয় পেয়ে অন্তত আর অন্যায় কাজ না করে বলেই ওকে শূন্যতে ভাসিয়ে বুকে একটা লাথি দিলাম।ঐশোর্য ছিটকে দুরে পরে যায় আর সবাই হাতত তালি দেয়। এটাই ওর জন্য সব থেকে বড় অপমান। ঐশোর্য আজ তোকে কিছু বলবনা কিন্তু এমন একটা দিন আসবে যে তুই আমার কাছে আসবি আর তার প্রতিফল আমি নিজে তোকে দিব। এটাই ওর জন্য অনেক। এই অপমান ই ও সহ্য করতে পারবেনা।




– আমি সব জ্বীনদের উদ্দেশ্য বললাম আমি যদি আমার শক্তির ব্যবহার খারাপ কাজে লাগাই তাহলে উপরওয়ালা অবশ্যই আমাকে শেষ করার জন্য কোন প্রতিনিধি পাঠাবেন। তাই ভুলেও আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলবেন না। আমার যেদিন ভাগ্যতে মৃত্যু লেখা আছে সেদিনই মারা যাব।




– আমি নিচে এসে মারিয়ামের দেহের ভষ্ম নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আলিক্স ও একবারে থ হয়ে গেছে। সব কিছু তছনছ হয়ে গেল এক নিমিষেই। নাফিসাকে প্রাসাদে আনা হয়েছে। মেয়েটা সেই তখন থেকেই কাঁদছে। একটুও থামার নাম নেই। বেচারা নেগার ও নাফিসার কান্না দেখে কেঁদেই চলছে। আলবার্ট নাফিসার মাথায় হাত বোলাতেই নাফিসা গভীর নিদ্রায় ঢলে পরে।




– আলবার্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেনা। শুধু ওর জন্য আজ মারিয়াম কে জিবন দিতে হল। উত্তেজিত হয়ে কাজগুলো না করলেই কি হত না বাবা!………. কথাটি আলবার্টের ছেলে “শাহানাম” বলে উঠল।




– বাবা নাফিসা যে এলিনার মেয়ে এটা কেন আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে গেছেন? ও আমার আদরের ছোট্ট বোন এলিনার মেয়ে সেটা আজ ভরা জ্বীন সমাজের মাঝে শুনতে হল আমাকে……
– শাহানাম ভুল বোঝনা বাবা। নাফিসাকে সবার থেকে আড়াল করার জন্য এই ব্যবস্থা। দেখলেইতো ওর চারদিকে কেমন বিপদ। আমিও জানতাম না ওর অস্তিত্বের কথা। প্রথমে মারিয়াম ই আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু সে ও আজ নেই।




– আজ আলিক্সের সাথে জেনিফা ও এসেছে নাফিসাকে দেখতে। ওর জানা ছিলনা এটা এলিনার মেয়ে। এলিনা ওদের বন্ধু ছিল।




– আলিক্স আলবার্টকে বলল শক্তিশালী আদি জ্বীন গুলো বসে থাকবেনা। তাদের অপমানের প্রতিশোধ নিতে সব করবে। আমিও সেটা ভাবছি আলিক্স। একে নিয়ে কি করি বলতো?



– মাই লড আমারও জানা নেই। আজ রাতে আমি একটা কাজ করব দেখি নাফিসাকে প্রটেকশন দেওয়া যায় কিনা। তাছাড়া ওর অতীতও আমরা জানিনা। মারিয়াম চলে যাওয়ার পর নাফিসার অতীত সম্পূর্ন চাপা পরে গেছে। সেটা জানা কখনও সম্ভব নয়। কেউতো আছে যে নাফিসার শক্তির সম্পর্কে সব বলতে পারে সব কিছু জানে। কিন্তু আমরা তাকে খুজে পাব কি করে।




– রুপের শরীর নিথর হয়ে আছে। সব কিছু থেমে গেছে। আজগড় আর রোজ বাসা থেকে চলে যায়। লুসি মিনাকে বলল আন্টি কি হয়েছিল রুপের?
– তেমন কিছু না। কোন খারাপ স্বপ্ন হয়ত দেখছিল।
– আন্টি তোমার ছেলেকে বলে দিও ওর মায়া যেন রুম থেকে তুলে নেয়। আমি ও রুমে যাইতে পারিনা।
– কি কথা ও কবে থেকে এগুলো করল?
– অনেক আগে থেকে আন্টি।




৭ টা জ্বীন গোল হয়ে বসে কথা বলছে। ওর এত্ত বড় সাহস আমাদের আক্রমন করে! ও একটা শ্বেতপরী তাই অনেক শক্তি। কিন্তু বড়ই অদ্ভুদ মেয়েটা। ওর বাচ্চা কই থেকে এলো। ওর অতীত জিবন দেখতে হবে বলে ওরা এক সাথে চোখ বন্ধ করে বার বার দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু একটা নীল সরোবরে চোখ আটকে যাচ্ছে। অসম্ভব একটা মেয়ের জন্য তার বেড়ে ওঠা বলে একটা জিবনতো আছে। সেই জিবন কেন খুজে পাচ্ছিনা। আবার তারা চেষ্টা করে এবার তারা একটা সীমারেখা দেখতে পায়। এটা কি? হয়ত মেয়েটাকে এখানে সীমারেখা দিয়ে ওর অতীত জিবন বন্দী করা হয়েছে। ওকে ধংস করা এটাই একমাত্র উপায়। কিন্তু তারা জানেনা এটার জন্য তাদের কি অবস্থায় পড়তে হবে আর তার জন্য মারিয়াম সেই ব্যবস্থা করেই গেছে। নাফিসার অতীত কখনই কারো কাছে প্রকাশিত হবেনা। যা হওয়ার আশা ছিল মারিয়ামের সাথে সব চলে গেছে। যেটা শুধু একমাত্র মারিয়ামই জানত।




– আলিক্স গভীর রাতে বসে একটা মায়ার সার্কেল বানানোর ট্রাই করছে কিন্তু সফল হচ্ছেনা। এটা বানানো খুব জরুরি।



– নাফিসার ঘুম ভেঙ্গে যায় কিছু খুটখুট আওয়াজে। পাশে তাকিয়ে দেখে নেগার নেই।
– জলদি উঠে খুঁজতে লাগে কিন্তু কোথাও নেই নেগার।
– নেগার মা আমার তুমি কই। বলে বারবার ডাকতে থাকে কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই নেগারের।
– নাফিসার ডাক শুনে অন্য রুম থেকে মার্ক আসে এবং বলে কি হয়েছে।
– মার্ক আমার মেয়েটাকে খুঁজে পাচ্ছিনা কই গেল।
– সব জায়গায় দেখেছিস?
– সব দেখেছি মার্ক বলেই আমি চোখ বন্ধ করে নেগারকে খোজার চেষ্টা করলাম।
– হুম পেয়েছি কিন্তু সাথে ওরা কে যারা নেগার কে ধরে রেখেছে আর নেগার মা মা করে ডাকছে। আমি চট করে চোখ খুললাম। ওর বিপদ আমাকে এখুনি যেতে হবে বলেই আমি ছুটতে লাগলাম।




– মার্ক গিয়ে আলিক্সকে সব জানিয়ে দিল। আলিক্স দ্রুত মার্ককে নিয়ে নাফিসার পিছে গেল আর আলবার্টের জন্য মাসেজ রেখে গেল যেন আলবার্ট বুঝতে পারে সব।


– আমি একটা খোলা মাঠে এসে দাড়ায়। এই জায়গাটা আগে দেখেছি বলে মনে হয়না। দুরে আমার মেয়েটা হাত পা ছুড়ে চিল্লাচাটি করছে। আমি নেগার বলে ডাকতেই ও চুপ হয়ে গেল। পাশে সেই ৭ জ্বীন কে দেখতে পেলাম। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম আমার মেয়েকে কেন টানাটানি করছো। ও তো কোন ক্ষতি করে নি তাহলে ওর সাথে কেন?




– বেশি কিছু না তোর জিবনটা শুধু চাই বলেই নেগার কে আমার দিকে ছুড়ে দেয়। আমি ওকে ধরতেই ওদের মধ্য একজন এসে আমায় প্রচন্ড শক্তিতে আঘাত করে। আমি নেগার কে নিয়ে পড়ে যাই। নেগার মা বলে চিল্লে উঠে। ওর মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে মেয়েটা।
– আমি দৌড়ে গিয়ে নেগার কে বুকে নিয়ে বলি মা কোথায় লেগেছে….. কষ্ট হচ্ছে বলতেই আমাকে ওরা আবার একসাথে আঘাত করে। আমি ঔ অবস্থায় ছিটকে পড়ে যাই কিন্তু আলিক্স এসে আমাকে ধরে ফেলে। মার্ক জলদি নেগার কে কোলে নেয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম টিচার ওরা আমার মেয়েকে মেরেছে। আমি ওদের একটাকেও আস্ত রাখবনা বলেই গা ঝেড়ে উঠে মাটিতে একটা থাবা দেই এতে মাটি ২ ভাগ হয়ে থরথর করে কেঁপে ওঠে।




– আমার চোখদিয়ে লেলিহান অগ্নিশিখা বের হতে লাগে আমি স্বশব্দে চিৎকার দিয়ে উঠি কাপুরুষ কুলাঙ্গের দলগুলো ছোট বাচ্চাকে নিয়ে আমার সাথে খেলিস। হিজড়া জ্বীনের দল গুলো আয় বলেই একসাথে হাজার হাজার ধারালো জাদুর ছুড়ি ওদের দিকে নিমিষেই নিক্ষেপ করলাম। মনে হয় ওরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে যার জন্য এই বিদ্যাটা কোন কাজে লাগলনা। আমি একা আর ওরা সাত আদি শক্তিশালী জ্বীন যেন আজ কোন একটা দল শেষ হয়ে যাবে।




– ওদের উদ্দেশ্য নাফিসাকে সামীরেখার বাহিরে বের করা। এমন সময় একটা জ্বীন সেই সীমারেখায় হাত দিতেই জ্বীনটির গায়ে আগুন ধরে যায় আর এতে এক নিমিষেই জ্বীনটি পুরে ছাই হয়ে যায়। বাকি জ্বীনগুলো রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগে। এদের সাথে ঐশোর্য
ও এসে যোগ দেয়। আলিক্স মার্ককে বলে জলদি প্রাসাদে যাও আর সবাইকে আসতে বল।



– মার্ক যাওয়ার আগেই ওরা চলে আসে। এ যেন ২ দলের মধ্য বাঁচা মরার লড়াই। একপর্যায়ে বাঁকি ৬ জ্বীন মিলে আলিক্স, মুনিকা আর আলবার্টকে বন্ধী করে ফেলে। এবার নাফিসার দিকে তাকায় ওরা। মার্ক নেগার কে অলিভিয়ার কাছে দিয়ে প্রকান্ড সাপের রুপ ধরে নাফিসার আগে দাড়িয়ে বলে অনেক করেছেন আপনারা এবার আমাদের পালা বলেই মার্ক হা করে বিষাক্ত ধোয়া ছাড়ে এতে ওদের চোখমুখ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা কিছুক্ষনের জন্য এর পর মার্ককে ওরা এমন ভাবে আঘাত করে যে এতে মার্ক মাটিতে লুটিয়ে পরে। নাফিসা ধপ করে মাটিতে বসে পরে।





– রুপ রুমের ভিতর আবার ছটফট করতে লাগে এবং ভিষন যন্ত্রনায় কুকড়ে যায়। রুপ বিছানার উপর ঠাশ্ করে পরে যায় আর ওর শরীর থেকে আলোর তীক্ষ্ণ রশ্মি বের হয়ে আসে আর সেটা অদৃশ্য হয়ে যায়।




– নাফিসা পরে যেতেই ওরা সবাই ওর সামনে এসে দাড়ায়। অলিভিয়াও নাফিসার সামনে এসে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মার্ককে ঐ অবস্থায় দেখে। আজ আর কারো রক্ষা নাই।




– এমন সময় ৬ জ্বীন আর ঐশোর্য আলোর ঝলকানিতে ছিটকে পরে যায়। একটা আলোকরশ্মির অবয়ক এসে ওদের সামনে দাড়ায়। যার শরীর থেকে তীক্ষ্ণ আলোক রশ্মি বের হচ্ছে মনে হয় চোখ অন্ধ করে দিবে এই আলোয়। নাফিসার হাত ধরে অবয়কটি…….. আর সাথে সাথে জোড়ে একটা শ্বাস নিয়েই লুটিয়ে পড়ে নাফিসা। ওদের ৪ জনকে নিয়ে সীমারেখা পার করে অদৃশ্য হয়ে যায়।




– ঐশোর্য এসে বলল ওরা কোথায় গেল বলে মাটিতে হাত চাপড়ালো। ৬ জ্বীন আলিক্স, মুনিকা আর আলবার্টকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।



– একটা ফাঁকা মাঠে এসে পরে নাফিসারা এবং অবয়ক টা অদৃশ্য হয়ে যায়। অলিভিয়ার ঙ্গান আগে ফিরে। উঠে দেখে মার্কের অবস্থা খুবই খারাপ। নাফিসাকে ডাক দিতেই ও চোখ খুলল। একটা অপিরিচিত জায়গা। নাফিসা মার্ককে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এমন সময় একটা বাজ পাখি এসে হাজির হয়। আর নাফিসার কাছে এসে বাজ পাখির মুখ নাফিসার গালের সাথে ঘেষে। মনে হয় কত দিনের চেনা পাখিটি।
– নেগার উঠে বলল মম এটা কি?
– জানিনা বাবা এটা এখানে কেন……
– অলিভিয়া চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করে তারা কোথায় আছে।
– নাফিসা আমরা রাফসানের দেশে আসছি। চল ওর বাসায় যাই মার্ককে নিয়ে।
– তুই যেতে পারবি?
– হুম চল বলেই অদৃশ্য হয়ে গেল সবাই। আর বাজ পাখিটি উড়ে গেল কোন এক অজানা জায়গায়।




– নাফিসারা রাফসানের বাসায় হাজির হল। আমরা এখানে কেন রুমে চল( নাফিসা)
– আরে এরা মানুষ তাই নক করে দরজা ভেদ করে যেতে হবে।
– আমি গিয়ে কলিং বেল জোড়ে জোড়ে বাজাতে লাগলাম।
– রাফসান কেবল রেডী হয়েই হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। এমন সময় কলিং বেল সুনে দরজা খুলেই দেখে নাফিসা দাড়িয়ে আছে।




– আমাকে দেখেই রাফসান হতবাক হয়ে গেল। তুমি! বলেই এসে আমাকে কোলে নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকেই ওর মেয়েকে ডাকদিয়ে বলল নাফিসা বেটা দেখে যাও কে এসেছে।
– অলিভিয়া মার্ক আর নেগার কে নিয়ে বাসায় ঢুকল।





– সুমি রাফসানের চিৎকার শুনে এসে দেখে একটা অতিব সুন্দরী বিদেশী মেয়েকে রাফসান কোলে নিয়ে নাফিসাকে ডাকছে।
– সুমি বেশ অবাক হয়ে যায় যখন ওর মেয়ে নাফিসা মা বলে দৌড়ে এল।
– রাফসান নাফিসাকে নেমে দিতেই রাফসানের মেয়ে নাফিসার কোলে একরকম ঝাঁপই দেয়। ও মা কেমন আছো তুমি বলেই একের পর এক কিস করে নাফিসার গালে।



– অলিভিয়া মা তুমি কেমন আছো আর মার্ক বাবার কি হয়েছে। এবার রাফসান মার্কের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তো ওর কি হয়েছে।
– ও একটু অসুস্থ ওকে একটু রুমে নিতে হবে। চলতো রাফসান।(অলিভিয়া)
– অলিভিয়া তোমার কোলে মেয়েটা কে?(রাফসান)
– নাফিসার মেয়ে…..
– রাফসান নাফিসার দিকে তাকিয়ে মার্ককে রুমে নিয়ে গেল।




– নিজের মেয়ে কোনদিন সুমিকে মা বলে ডাকেনি কিন্তু ২ টা মেয়েকে সহজেই মা বলে ডাকছে। এই ২ টা মেয়ে কে। রাফসান এদের কে…………….
নাহ্ মাথায় কিছু ঢুকছেনা।



– অলিভিয়া মার্ককে খাটে সুয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল আর আমায় অন্য রুমে রাফসান নিয়ে গেল। তাহলে বিয়ে করেছ নাফিসা!
– নাতো!
– তাহলে আকাম কুকাম করে ………..
– ছিঃ ছিঃ কি বলছো?
– এটা আমার নিজের মেয়ে না।



– অহ বলেই নেগারকে কোলে নিয়ে বলে বাবা তোমার নাম কি?
– নেগার……
– বাহ্ ভিষন মিষ্টি মেয়েতো! একদম তোমার মত।
-অলিভিয়া আমাকে এসে ডেকে নিয়ে গেল মার্কের কাছে। ছেলেটা নিথর হয়ে পড়ে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে চোখ বন্ধ করে শরীরে হাত বুলে দিতেই ও সুস্থ হয়ে যায়।




– রাফসান তোমার সাথে কথা ছিল( সুমি)
– হুম বলো?
– মেয়েটা কে?
– ও নাফিসা আমার জান…..
– সুমি বলল কি বলছো ওটা নাফিসা হতে যাবে কেন?
– ও তো একটা বিদেশী মেয়ে।
– হুম কেন নাফিসা কি পৃথিবীতে একটাই আছে?
– মানে….. তুমি নাফিসা আর আমাকে আমাদের ২ জন কেই ধোকা দিয়ে এই বিদেশী নাফিসাকে নিয়ে থাকবে?
– হুম ওকে নিয়েই থাকব। দেখছো না তোমার মেয়েও ওকে চায় তোমার থেকেও……… বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে যাওয়ার সময় বলল সুমি তুমি হয়ত জানো না নেগার আমারই সন্তান।
– সুমি যেন আকাশ থেকে পড়ল। এটা কি বলে গেল রাফসান আগেতো বলেনি। ওরে নাফিসা তুই চলে গিয়ে বেঁচে গেছিস আমি ফেঁসে গেছিরে বলেই কাঁদতে লাগল।



– রাফসান আড়াল থেকে সুনে হাঁসতে হাঁসতে চলে গেল। বেশ হইছে।


– দুপুরে আমরা সবাই খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছি। আমি নেগার আর নাফিসা ( রাফসানের মেয়ে) ২ জন কেই খাওয়াই দিচ্ছি। এমন সময় বাসায় কেউ আসল। একটা মহিলা আর পুরুষ এরা রাফসানের বাবা মা।
– আমাদের দেখে ভিতরে চলে গেল। হয়ত সুমি এদের ডেকেছে।
– খাওয়া শেষ করে ২ মেয়েকে নিয়ে আমি রুমে গেলাম।
– নেগার মার্কের সাথে ফাজলামি করছে আর রাফসানের মেয়ে অলিভিয়ার কাছে। আমি ফোন চাপছি। এমন সময় মনে হল কেউ রাফসানের সাথে ঝগড়া করছে। আমি চোখ বন্ধকরে দেখার চেষ্টা করলাম। হুম সুমি আর ওর শাশুড়ি আমরা আসাতে খুব বিরক্ত। এটা নিয়ে রাফসানের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
– মার্ক এরাতো আমাদের নিয়ে বিরক্ত। তুই তো সুস্হ তাহলে এখানে থেকে কি হবে। আমরা বরং চলেই যাই বলে মার্কের দিকে তাকালাম।
– অলিভিয়া বলল এই মানুষ জাতটাই খারাপ। একদিন না হতেই কেমন করছে।
– অলিভিয়া মা তোমরা কি মানুষ না?
– রাফসানের মেয়ের কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম।




– রাফসান এমন সময় এসে বলল মার্ক তুমি কি সুস্থ?
– হুম কিছু বলবে?
– না চল তোমাদের কক্সবাজার ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। যাবে আজ?
– আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম। আমি বললাম হ্যাঁ হ্যাঁ চল আমরা আজই যেতে চাই।




– আমরা বিকেলে সবাই রেডী হলাম। রাফসান এসে বলল নাফিসা এগুলো কি ড্রেস পড়েছ! এটা বাংলাদেশ তাই সাবলীল পোষাক পড়তে হবে।
– আমার এধরনের সব ড্রেস রাফসান। আর নেই।




– আমি নেগার কে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসতেই রাফসানের মায়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। হ্যালো বলতেই উনি ওখান থেকে চলে যায়। আচ্ছা খচ্চর মহিলাতো কথাও বলে না আর এর পেট থেকে রাফসানের মত মানুষ বের হয়েছে। বেশ স্ট্রেঞ্জ!



– রাফসানের বাবাকে দেখে হ্যালো বলতেই উনি মিষ্টি হাসি দিয়ে কাছে এলেন এবং অনেক কথা বললেন।হুম রাফসান এনার মত হয়েছেন। ছোট্ট নাফিসা আমাদের সাথে আসতে চাইল কিন্তু সুমি আসতে দিল না। আমার প্রচুর রাগ উঠে গেল সুমির উপর।
– এই মেয়ে ওকে আসতে দিচ্ছোনা কেন?
– আমি ওর মা। তাই আমার ইচ্ছা আমি আমার মেয়েকে কোথায় যেতে দিব আর না দিব।
– এটা আমারও মেয়ে ৩ বছরের বেশি আমার কাছে ছিল তাই আমি আমার মেয়েকে আমার সাথেই নিয়ে যাব বলে ওকে টেনে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠলাম দেন গাড়ি স্ট্রার্ট করল। আমরা কক্সবাজারের পথে রওনা দিলাম।




– রুপের সেন্স কিছুক্ষন আগে ফিরেছে। ও বসে আছে….. এমন সময় বাজ পাখিটি ওর কাছে হাজির হয় আর অদ্ভুদ ভাষায় কথা বলে। যা শুধু রুপই বোঝে। কিছু একটা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারছেনা বাজ পাখিটি। রুপের কেমন জানি লাগছে। মনে হচ্ছে ওর খুব আপন জন ওর কাছে আসছে।





– আমরা চিটাগাং এ ব্রেক নিলাম। একটা বিলাশবহুল হোটলে উঠে রাত্রি যাপন করলাম।
সকালে রাফসান বলল এই এখানে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি মিলে ফটো শুটের পিকচার প্রর্দশন করছে তোমরা কি দেখতে যাবে?
– অলিভিয়া বলল অফ কোর্স এটা আমার খুব ভাল লাগে। কেউ না গেলে আমি যাবো।
– আমি যাবোনা তোরা যা বলেই শুয়ে পড়লাম।
– মার্ক এসে নাফিসাকে টেনে তুলে বলল চল ঢং দেখাতে হবেনা।
– আমার ভাল লাগেনা রে…….
– না লাগুক তবুও যাবি বলে আমাকে দাড় করিয়ে বলল রেডী হয়ে নে।
– কি আর করা একটা স্কার্ট আর টপস্ পরে নেগার আর ছোট্ট নাফিসাকে রেডী করে ওদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম।৩ মিনিটের পথ হেটে শো রুমে ঢুকলাম।




– আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম দেয়ালে একটা ছবি যা রাফসানের বুক সেলফে এই মেয়ের অন্য রকম একটা ছবি দেখছিলাম। আমি রাফসান কে ডেকে বললাম রাফসান এদিকে এসো তো। ও আমার কাছে এসে পিকটা দেখে আকাশ থেকে পড়ল। নাফিসা কই থেকে আসল?



“- মেয়েটার নাম নাফিসা?
– হুম আমার নাফিসা বলেই ঐ পিকের কাছে এগিয়ে আসল।
– আমি দাড়িয়ে আছি এমন সময় কে যেন পিছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল নাফিসা……….
– অদ্ভুদ একটা অনূভুতি আমার শরীরে এসে ধাক্কা খায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি অত্যন্ত সুন্দর একটা সুদর্শন ছেলে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি এমন মায়াবী ছেলে খুব কম দেখেছি। কিন্তু সে আমাকে কিভাবে চিনে……….

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here