ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)পর্বঃ১১

0
605

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১১



“রাফসান ঢাকায় ফিরে আসে তার মেয়ে নাফিসাকে নিয়ে। রাফসান অনেক বড় ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে। আর এখানে সে থাকবেনা। মেয়েকে নিয়ে সূদুর লন্ডনে পাড়ি দিবে আজই। যেহেতু মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে ওকে যাইতে হয় তাই ভিসা বা পাসপোর্ট নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। ও জানেনা ছোট্ট মেয়েটাকে কেমনে সামলাবে। কিন্তু এদের সবাইকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত বলেই একজন কে ফোন করে সব রেডী করতে বলল।



” সুমি কেঁদেই চলছে। স্বামী বা সন্তান কেউ নেই ওর কাছে। রেহানা বার বার আস্বাস দিচ্ছে রাগ থেমে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে রাফসানের।
– আপা আমার মনে হয়না সব সহজ হবে এবার। তোর পাপের কর্মফল শুধু শুধু তোর ছোট্ট নাফিসাকে পেতে হবে মনে হয়। প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দিয়ে কথা বলেনারে।



“রুপ বাসায় ফিরে সোজা ওর মায়ের রুমে গেল। সিড ও মিনা ২ জনেই রুমে আছে।
-Mom মারিয়াম কে? ওর ডিটেলস্ আমার এক্ষুনি চাই।
– সিড আর মিনা ২ জনেই বেশ অবাক হয়ে গেল। কি বলবে তারা। এখন কিছু বলতে গেলে ” কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে যে”…..


-কি হয়েছে রুপ!
– কি হয়েছে! বলেই রুপ সামনে রাখা ট্রি টেবিলটা ছুড়ে মারল দেয়ালে। টেবিল টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
– Dad নাফিসা ভাল নেই ওকে আমার খুব প্রয়োজন। আমার চোখের সামনে থেকে ওকে নিয়ে গেল আমি কিছু করতে পারলাম না dad….বলেই ধপ করে বসে পড়ল।



– তুমি নাফিসাকে পেয়েছ!
– পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি সারা জিবনের জন্য হয়ত বলে উঠে চলে গেল রুপ।

– সিড ও মিনা ২ জনেই ওর পিছু পিছু গেল।
– রুপ রুমে এসে একের পর এক জিনিস ছুড়ে মারছে দেয়ালে। মারিয়াম কেন এটা করল। ও কি জানেনা এতে নাফিসার কতটা কষ্ট হচ্ছে।

– Relaxe relaxe কি হয়েছে আমাকে খুলে বলবে তো বলে পিছন দিক থেকে সিড রুপকে ধরে ফেলে।



– রুপ সব ঘটনা খুলে বলে সিড কে। রুপের কথা গুলো শুনে সিড চুপ হয়ে যায়। বড্ড দেরি হয়ে গেছে রুপ। তুমি সম্পূর্ণ ভাবে নাফিসাকে হারিয়ে ফেলেছ।



” প্রভু ভক্ত বোঝ! এ সেই মারিয়াম যে কিনা নিজের কাজ করার জন্য নিজের জিবন দিতে ২য় বার ভাববে না। ও বেঁচে থাকতে তুমি কোন দিন নাফিসার কাছে যেতে পারবেনা। তাছাড়া মারিয়াম বাধ্য হয়েই হয়ত কাজটি করেছে যার মাসুল শুধু নাফিসাকেই দিতে হবে সেটা মারিয়ামও জানে না সে কত বড় ভুল করে ফেলেছে। জানিনা নাফিসা বেঁচে ফিরতে পারবে কিনা এই অবস্থায় থেকে।



– রোজ দুর থেকে সব শুনে ভেঙ্গে পড়ে গেল। লাষ্ট মুহুত্বে সেও যে নাফিসার গায়ে হাত তুলেছিল কিছু না ভেবেই। যে মেয়ে সব কিছু ঠিক করে দিল সে আজ সবার মাঝে থেকে হারিয়ে গেল। এই মুখ ওকে বা আজগড়কে কি ভাবে দেখাবে সে।



– রুপ রুম থেকে জানালা দিয়ে এক লাফে নিচে নেমে আসলো। রুপ যেন পাগল হয়ে গেছে। ও জাষ্ট একবার নাফিসাকে ছুতে পেরেছে। নাফিসার শেষ মুহুত্ব টা ওকে বড্ড পোরাচ্ছে। বাসা থেকে এক দৌড়ে নিমিষেই
একটা খোলা মাঠে এসে পড়ে। নাফিসা প্লিজ ফিরে এসো। আমি কবে থেকে তোমাকে ছেড়ে ঘুমাতে পারিনা। তোমাকে ছাড়া আমার জিবন অসম্পূর্ণ। ফিরে আসে একবার তোমার এই বরের কাছে। তোমার বরটা একটুও ভাল নয়। তোমায় অনেক আঘাত করেছে। তোমার কোন কথা শুনে নি। নাফিসাকে ছাড়া রুপের অস্তিত্ব নেই। তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে…..



” একটা পুরুষ মারিয়ামের গলা ধরে ছুড়ে ফেলে দুরে। এতে মারিয়ামের গলা থেকে গল গল করে রক্ত বের হতে লাগে।
– মারিয়াম অনেক কষ্টে বলে উঠল মালিক আমি ওকে ২৫ বছর ধরে দেখছি। আগলে রাখছি। ওর জন্য কি আমার মায়া নেই! আপনি এই প্রথম দেখলেন ওকে। আপনি জানতেন না যে আপনার নাফিসা নামক একটা অস্তিত্ব রয়েছে। আমি যোগাযোগ করে দিছি। এটা মনে রাখেন নাফিসা ছাড়া আমার পৃথিবীতে কেউ নেই। আমার ভুল হয়ে গেছে। আগে ওকে ঠিক করার ব্যবস্থা করেন দয়া করে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সব শেষ হবার আগে সব কিছু থামিয়ে দেন।



– এই পুরুষ টি আর কেউ না। এলিনার পিতা কিং আলবার্ট। নাফিসা তার একমাত্র নাতনী হন। অনেক কষ্টে তিনি একে খুজে পেয়েছেন। তার বংশের মধ্য এই একটায় মেয়ে আছে বংশধর হিসাবে। তাছাড়া সবই ছেলে জন্মে তার বংশে এতদিন ধরে।


– কিং আলবার্ট নাফিসাকে নিয়ে একটা আবছা অন্ধকার রুমে প্রবেশ করে।
” সামনে এটা স্বচ্ছ নীল পানির সরোবর সেখানে জাষ্ট নাফিসাকে ছুড়ে ফেলে দিল।


– মালিক ওকে কি করলেন। ওতো মরে যাবে বলে মারিয়াম সরোবরের পানিতে ঝাঁপ দিল। ডুব দিয়ে বার বার নাফিসাকে খুঁজতে লাগল।


– মারিয়াম খোঁজা বাদ দিয়ে উপরে উঠে আস। ওকে আর কেউ খুঁজে পাবেনা।যতক্ষণ না ও ঠিক হচ্ছে। প্রার্থনা কর ওর জন্য বলে আলর্বাট চলে গেল।
– মেয়েটির জন্য বার বার কাঁদতে ইচ্ছা করছে আলর্বাটের। ও জানেইনা তার মেয়ে তার জন্য এই মেয়েটিকে উপহার হিসেবে রেখে গেছে।



– মারিয়াম পানি থেকে উঠে বসে কাঁদতে লাগল। মেয়েটি জন্মের পর থেকে একের পর এক আঘাত পেয়েই যাচ্ছে। আজ সেও তাকে কষ্ট দিয়ে ফেলল। নাফিসার যে বড় একটা ক্ষতি হবে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে মারিয়াম।



– মারিয়াম ওভাবেই ওখানে বসে পড়ে এবং মন্ত্র পড়তে লাগে এবং নাফিসার চারদিকে অদৃশ্য বলয় তৈরি করে। যাতে ওকে কেউ ছুতেও না পারে।


– রুপ একের পর এক নিজের শরীরে আঘাত করেই যাচ্ছে এবং শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে মাটিতে পড়ছে। রুপ নিজেকে অপরাধী ছাড়া কিছুই ভাবছেনা আজ। ওর জন্য সব হয়েছে।


– রুপের রক্তের ঘ্রান বহু দুর থেকে একদল মানুষ রুপী নেকড়ে মানব পেয়ে যায়। ছুটে তারা রুপের চারদিকে এসে দাড়িয়ে যায়।
– রুপ ওদের দেখে ওভাবেই বসে থাকে। আজ আর ওর বাঁচার আশা নেই। কার জন্য বাঁচবে। বাঁচা নামক প্রান টাকেই যে ও হারিয়ে ফেলেছে।



– নেকড়ে গুলো মানুষের রুপ ধারন করে এবং সেখান থেকে একটা নেকড়ে গিয়ে রুপকে আঘাত করে। নেকড়েরা আনন্দে আ-উ-উ-উ-উ বলে একেকটা হাঁক ছাড়ে। দুরে যে নেকড়ে গুলো ছিল তারাও একই শব্দ করে ফেটে পড়ে এবং এক নিমিষেই রুপের সামনে হাজির হয়।



– নেকড়ের ডাকগুলো মিনা শুনতে পায়। মিনা রুপ বলে চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে রুপকে খোঁজার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে দেখতে পায় রুপ কে ঘিরে আছে অনেক গুলো নেকড়ে মানব। মিনা চোখ খুলেই সিড কে চিৎকার দিয়ে ডাক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে রুপের কাছে চলে যায়।
– একদম রুপের সামনে গিয়ে দাড়ায় এবং ওর আসল চেহারায় এসে ২ টা পাখা মেলে ধরে হুংকার ছেড়ে বলে কাপুষের দল আমার সন্তান কে একা পেয়ে আঘাত করিস। আয় কে আছিস আমার সাথে লড়াই করে ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করিস। ওর MoM এখনও বেঁচে আছে। আয় হে বলেই একটা নেকড়ের হাত ধরে দুরে ছুড়ে মারে।



– নেকড়ে গুলো একসাথে বিকট চিৎকার দিয়ে আ-উ-উ-উ বলে ডাকতেই আরও ২ দল নেকড়ে এসে হাজির হয়।
– এতগুলো নেকড়ে কে দেখে মিনা বেশ ভয় পেয়ে যায়। এমন সময় রোজ আর সিড এসে হাজির হয়।


– অচমকায় আজগড় ও এসে হাজির হয় ওদের দলে।
আজগড় নেকড়েদের বলে বাহ্ আমাদের সীমানায় তোদের রাজত্ব বেশ বেড়ে গেছে দেখছি। আয় তোদের কার গায়ে কত জোর আছে।



– নেকড়ে গুলো একসাথে ওদের আক্রমন করে। আরও দলে দলে নেকড়ে আসে। ৭০/৮০ টার মত নেকড়ে ওদের একসাথে আক্রমন করে।
– একটা নেকড়ে মিনাকে খুব জোড়ে আঘাত করে এতে মিনা ধপ করে পড়ে যায়। মিনা পড়ে যেতেই রোজ মম বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।



– সিড আর আজগড়ও মিনার দিকে তাকাতেই ওদের আক্রমন করার সুযোগ পেয়ে যায় নেকড়ে গুলো।
– রোজ আর কোন উপায় দেখে মিনার কাছে দৌড়ে যায়।


– রুপম এদের খুঁজতে খুঁজতে নেকড়ে গুলোর সামনে এসে পড়ে। একটা নেকড়ে রুপম কে ধরে ওর হাত নখ দিয়ে চিরে রক্ত খেতে লাগল।
– কোন একটা অদৃশ্য শক্তি রুপকে নাড়া দিয়ে যায়। রুপ এক পলকে রুপমের কাছে হাজির হয়ে নেকড়ের গলা চিপে ধরতেই নেকড়েটি ভষ্ম হয়ে যায়।



– আমি চুপ করে আছি বলে ভাবিস না আমি দুর্বল বলেই হা করতেই আগুনের লাভা মুখ দিয়ে বের হতে লাগল। যে সামনে আসে সেই পুরে ভষ্ম হয়ে যায় সাথে সাথে।



– সামনে যত নেকড়ে ছিল সব ভয় পেয়ে যায়। যে যার মত ছুটে যায় এদিক সেদিক ভয়ে।
– রুপ এক পর্যায়ে মাটিতে ক্লান্ত গয়ে পড়ে যায় এবং নাক-চোখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।



– রুপ কে বিছানায় সুয়ে দেয় সিড আর আজগড়।
– আজ রুপের এরকম মায়া বিদ্যার কাজ দেখে সিড বেশ ভাবনায় পড়ে যায়। নাফিসা আর রুপের শারিরীক মিলনের ফলে রুপের শরীরে নাফিসার মত শক্তি এসে গেছে। এই জন্য শ্বেতপরী দের কোন পরিবার, সন্তান থাকার নিয়ম নেই। উপর থেকে এদের শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ চলে আসে।



– রুপের এই পরিবর্তন আজগড়ের ও বেশ ভাবনার কারন হয়ে পড়েছে।নেকড়ে গুলো এটা দেখে ফেলেছে তার মানে নাফিসা যেখানেই থাকুক না কেন সেখানে খবর টা যাওয়া মানেই ওকে মেরে ফেলার হুকুম দিয়ে দিবে।



– Dad রুপকে স্বাভাবিক মানুষের মত চলাফেরা করতে বলবেন। যদি ও নাফিসার ভাল চায় তাহলে কাজটি করতেই হবে ওকে বলে আজগড় চলে গেল।



– সুমি বার বার রাফসানকে কল করেই যাচ্ছে। রাফসান শেষে কল রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে সুমি ডুকরে কেঁদে উঠল। just অসহ্য লাগছে সুমিকে রাফসানের।
– রাফসান প্লিজ ফিরে আসো। এমন করনা। আমি ভুল করেছি তার সাজা কেন আমাদের মেয়েকে দিবে।আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিওনা।



– এই তোর শয়তানী চ্যাল আরও বাঁকি আছে দেখছি। যাদের সাথে প্লান করে আমার জিবন নষ্ট করেছিস তাদের নিয়ে সারা জিবন সংসার কর। কত সংসার করতে পারিস কর। আমার জিবন থেকে যেমন সব কেঁড়ে নিয়েছিস এবার তোর জিবন থেকে সুখ নামক সফটওয়্যার ডিলেট করেই ছাড়ব। দেখবি প্রিয় জিনিস কেড়ে নিলে কেমন করে মানুষ দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খায়। তোকে ছাড়া আমি এবং আমার মেয়ে ২ জনেই অভিশাপ মুক্ত হব। নাফিসা তোর পা ধরে কেঁদেছিল আমাদের বিয়ের আগে তখন কি তোর মনে দয়া হয়েছিল না আমার রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটানো দেখে তোর কষ্ট হয়েছিল। তোদের জন্য আজ ওর জিবন নষ্ট হয়ে গেছে বলেই রাফসান ফোন দেয়ালে ছুড়ে মাড়ল এবং মেয়েকে নিয়ে লন্ডনের পথে রওনা দিল।



– নাফিসার নানা আলবার্ট তার স্ত্রী কে বলল তোমার কাছে একটা কিছু চাইব দিবা তুমি!
আলবার্টের স্ত্রী রানী মুনিকা বলল যা বল তাই কবুল করব। বলে দেখুন তো।
– আমি এখানে একটি মনুষ্য কন্যা রাখতে চাই কিছু দিনের জন্য। তুমি ওর সব ধরনের নিরাপত্তা দিবা।
– মনুষ্য কন্যা! বলেই মুনিকা শিউরে উঠে বলল সবাই যদি জানে এর পরিনাম কি হবে আপনি তো জানেন তাহলে কেন তাকে রাখতে চাচ্ছেন?
– এই জন্যই তোমার কাছে তার নিরাপত্তার দাবী রাখছি।



– মুনিকা স্বামীর কথা আর ফেলতে পারলনা। কিছু শর্ত দিয়ে রাখে এর জন্য। বাধ্য হয়ে আলবার্ট সব শর্ত মেনে নেন।



– এভাবে পুরো ৫৮ দিন নাফিসাকে পানির মধ্য রাখা হয়। আলবার্ট এবং মারিয়াম ২ জনেই সেই সরোবরের নিকট আসে।
– আলবার্ট বিভিন্ন মন্ত্র পড়তে শুরু করে দেয়। প্রায় ঘন্টা খানেক আপ্রান চেষ্টা করার পর সরোবরের পানিতে বলক উঠতে শুরু করে দেয়। একপর্যায়ে একটি শরীর পানির উপরে ভাসতে থাকে।



– আলবার্ট মারিয়ামের মুখে নাফিসার পুরো অতিত শুনেছে। তার এই প্রিয় রক্তের অস্তিত্ব টা জিবনে অনেক কষ্ট সহ্য করে ফেলেছে। আর না। পুরো জিবন চেঞ্জ করে দিব। একটা নেত্রী বানাব সবার জন্য, ওকে রাজত্ব দান করব, ওকে প্রস্তুত করব আমার থেকেও শক্তিশালী রুপে, ওর জিবন থেকে সমস্ত অতীত মুছে দিব। যে জিবন কষ্টময় সেটা ওকে আরও প্রখর ভাবে অনুভব করা শিখাবো। বিপদের সময় কেমন করে ধৈর্য ধরতে হয়। ওর পরিচয় শুধু আমিই জানব আর কেউ না। ওকে নিরাপত্ত দেওয়ার এই একটাই উপায় অতীত সম্পূর্ন মুছে দেওয়া।



– নাফিসা ভাসতে ভাসতে একটা কক্ষে প্রবেশ করে এবং একটা বেদীর উপর এসে পরে। কিন্তু ও পুরো আবৃত একটা নীল খোলসে।



– আলবার্ট আবার বিভিন্ন মন্ত্র পড়তে শুরু করে এতে নাফিসার শরীর থেকে খোলস খুলে পড়তে শুরু করে দেয়। একপর্যায়ে সম্পূর্ন খোলস অদৃশ্য হয়ে যায়। একজন ২১ বছরের মত পরিপূর্ন নারীর রুপে আসে। আগের থেকে সুন্দর অমায়িক চেহারায় একটি মেয়ে বসে আছে বেদীর উপর। মারিয়াম ওকে দেখে আবিভূত হয়ে যায় এবং বলে এটা কে?



– সী ইজ ডটার অফ এলিনা/নাবিলা যা বলো।
– She is Nafisa!

– No she is Nafisa Smith



-আলবার্ট ওর সামনে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরী করে বলে মারিয়াম এই সীমা রেখা কখনও ওকে পার হতে দিবানা। যদি হয়ে যায় তাহলে ওর অতীত জিবনের কাছে ও ধরা পরে যাবে। সেখান থেকে আর ফেরত আনতে পারবনা কখনও। তাই সর্তকতার সাথে থাকবে। শত্রুরা বার বার ওকে এই সীমা রেখা পার করানোর জন্য চেষ্ট করবে ওকে দুর্বল বানানোর জন্য। কিন্তু আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। তুমি সম্পূর্ন ভাবে তোমার রুপ পরির্বতন করে ফেল তাছাড়া সবাই জেনে যাবে সব কিছু।



– নাফিসাকে নিয়ে আলবার্ট তার রাজ্যতে প্রবেশ করে এবং সোজা ওর স্ত্রী মুনিকার কাছে হাজির হয়।
– মুনিকা ওকে কিছু দিনের জন্য তোমার হেফাযতে রাখ। ওকে তোমার জন্য উপহার সরূপ এনেছি।
– মুনিকা নাফিসার দিকে একবার চেয়ে আবার বলল কত দিনের জন্য!
– ২ পক্ষ পর্যন্ত। ওর চারদিকে অনেক বিপদ তাই যে কোন পর্যায় থেকে ওকে হেফাযতে রেখ। ওর সাথে একটা মেয়েকে রাখছি বলে মারিয়াম কে দেখিয়ে দিল।


– আমি অদ্ভুত ভাবে সামনে থাকা ২ টি নারীর দিকে চেয়ে আছি। আমি কোথায় কি অবস্থায় সেটাও বুঝতে পারছিনা।
– আলবার্ট চলে গেলে মুনিকা বলে এই মেয়ে তোমার নাম কি!
– নাফিসা স্মিথ ওর নাম বলে মারিয়াম মুনিকার দিকে তাকাল।
– তুমি বলছো কেন ও কথা বলতে পারেনা!
– দুঃখিত রানী মা ও খুব অসুস্থ। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।


– নাফিসা এদের সাথে বসবাস করতে লাগল। রুম থেকে একদম বের হয়না। খাওয়া দাওয়া সব কিছু রুমেই।
– একদিন বিকেলে নাফিসা একটি অদৃশ্য মায়ার টানে রুমের বাহিরে বের হয়। কোন একটি জায়গা তাকে টানছে। হাঁটতে হাঁটতে একটা কক্ষের সামনে দাড়ায়। হাত দিতেই দরজা খুলে যায়। একটা অপূর্ব কক্ষ। রূপকথা রাজ্যর রাজকন্যার রুমের মত।


– রুমটা দেখে আমি আবিভূত হয়ে যাই। আমার পাগলামো যেন বেড়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে পালঙ্কে সুয়ে পরি। এটা ওটা নাড়াচারা করি। একটা মেয়ের ছবি রুমের অনেকাংশ জায়গায় জুড়ে আছে। মেয়েটা অপূর্ব দৃষ্টিতে মনে হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


– মারিয়াম রুমে নাফিসাকে না দেখতে পেয়ে ওর বুক দুর দুর করতে লাগল। সোজা গিয়ে আলবার্ট কে খবর দিল।

– আমি ছবিটা তে হাত দিতেই একটা শক্তি এসে আমাকে আছাড় মারে দেয়ালে। আমি আর উঠতে পারলাম না। আমার সামনে মুনিকা রানী চিৎকার করে বলে আমার মেয়ের কক্ষে ঢোকার অনুমতি তোকে কে দিল বলেই আমাকে আবার আঘাত করল। আঘাতের উপর আঘাত টা আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। ঙ্গান হারিয়ে পরে গেলাম।
– মারিয়াম নাফিসা বলে পিছন থেকে চিৎকার দিয়ে উঠল। আলবার্ট এসে মুনিকাকে ধরে ফেলে।
– ছেড়ে দাও আমাকে বলে মুনিকা চিৎকার করে উঠল ওর সাহস কি করে হয় এই কক্ষে প্রবেশ করা এবং সব জিনিসে হাত দেওয়া।
– মুনিকার চিৎকারে আলবার্টের ছেলে সহ অনেকে এসে দেখে একটা মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
– আলবার্ট এবার মুনিকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নাফিসার কাছে গিয়ে ওকে নিয়ে এক নিমিষেই ওর রুমে গেল।
– সবাই মেয়েটিকে দেখে ফেলেছে এখানে আর ওকে রাখা সম্ভব না। তুমি কি করেছিলে মারিয়াম। ওকে সামলে নিতে পারনি!
– মুনিকা রুমে এসে বলল আলবার্ট একটা সামান্য মনুষ্য কন্যাকে আমাদের রুমে আবার আমাদের পালঙ্কে রাখো কোন অধিকারে।

– যার রুমে ঢুকেছে… সে রুমে যাওয়ার অধিকার যদি মেয়েটার থাকে আর সে যদি এলিনার কন্যা হত তুমি কি তাকে এভাবে নিজের অস্তিত্বকে আঘাত করতে পারতে! এটার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। তোমাকে ওর রক্ষক করে রেখেছিলাম ভক্ষক হতে বলিনি।কোন সাহসে তুমি ওর গায়ে হাত দাও….
– আলবার্টের কথা শুনে মুনিকার বুকের ভিতর তুলপাড় করতে শুরু করল। এলিনা তার জাহানের টুকরা ছিল ওর রুমে একে দেখে নিজেকে শান্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।


– এই কে আছিস ওকে আমার চোখের সামনে থেকে সরাও বলে আলবার্ট রাগিত ভাবে বলল।
– মুনিকা চলে গেলে আলবার্ট বলে উঠল আমি দুঃখিত আমার অস্তিত্ব তুমি প্রথম বার আমার প্রাসাদে এসেছো কিন্তু আমি তোমার নিরাপত্তা দিতে পারিনি। নিজের মায়ের রুমে ঢোকার শাস্তি এভাবে যে কোন মেয়ে পায় তা এই প্রথম মুনিকা করে দেখাল।


-মারিয়াম ওকে আর এখানে এক মুহুত্বে ও রাখা যাবেনা। এখনি রওনা দাও ওকে নিয়ে বলে রুমের ভিতর একটা অজানা জগতের দ্বার এসে উপস্থিত হল এবং মারিয়াম নাফিসাকে নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে।
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here