ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৩

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৩

আমি অনুযোগ করে বললাম,”তুমি সবসময় এমন থাকতে পারো না? কেন আমার সাথে ঝগড়া করো? তরুর সাথে যখন ছিলে তখন তো একেবারে কুল এটিটিউড নিয়ে ঘুরতে! যত ঝগড়া কেবল আমার সাথে!”

ধ্রুব থেমে গেলো। আমার দিকে পলকহীনভাবে চেয়ে থেকে মিষ্টি করে বললো,” বাব্বাহ্ এতকিছু নোটিশ করেছো তুমি?”

আমি লজ্জা পেলাম। কারণ ওর সাথে আমার ভাবখানা অনেকটা ডোন্ট কেয়ার টাইপ। আমি খুব সহজে ওর কাছে নিজের ফিলিংস প্রকাশ করি না। তার অবশ্য একটা কারণও আছে। আগেই বলেছি ওর খোঁচানোর অভ্যেস আছে।সুযোগ পেলেই খোঁটা দেয় সে। সেই ভয়েও অনেকসময় কিছু বলি না। ধ্রুব দুষ্টু হেসে বললো, “তুমি ঠিকই বলেছো আমি তরুর সাথে খুবই কুল ছিলাম। তার কারণ তরু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে খুবই কুল!”

—“আর আমি?”

—“তুমি? ওরে বাবা!”

বলেই ধ্রুব হো হো করে হাসতে শুরু করলো। আমি রাগে মুখ বিকৃত করে বললাম,” তরুর সাথে তোমার বিয়ে হলেই ভালো হতো। আমিও অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতাম, তখন দেখতাম তুমি কি করতে?”

—“কি আর করতাম? তোমাদের বাসাটা ছেড়ে দিতাম। তোমার বাবা ভাড়া অনেক বেশি নেয়!”

আমি চুপ করে গেলাম। ধ্রুবকে আর কিছু জিজ্ঞেস করে নিজের মেজাজ খারাপ করতে চাইলাম না। কারণ আমি এখন যে পরিমান রেগে আছি তার চেয়ে হাজারগুন বেশি রাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধ্রুবর আছে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই এত নিখুঁতভাবে ও কি করে মানুষকে রাগাতে পারে?

সুতরাং আমি মুখ ভার করে রইলাম।পাঁচতলায় উঠে ধ্রুব আমাকে কোল থেকে নামিয়ে বেল চাপলো। দরজা খুললো মা। ধ্রুব সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। আমার পা মচকানো ঘটনা খুলে বলে তাড়াতাড়ি আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে বললো।

মা আর সুলতানা মিলে অনেক কষ্টে আমাকে ভেতরে ঢোকালো। মায়ের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে ধ্রুবকেও ভেতরে ঢুকতে হলো। ধ্রুবকে দেখে খুশিতে আত্মহারা মা। নাশতা পানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জামাই আদর যাকে বলে! ধ্রুব কেবল মুখচিপে হাসছে। সুলতানা আমার পায়ের হলুদ পোড়া লাগিয়ে দিলো। আমি টিভি চালু করে সোফায় বসে মায়ের আদিক্ষেতা দেখছিলাম। আর ধ্রুব আমাকে দেখছিলো। যতবার চোখে চোখ পড়লো আমি ততবারই জোরালো ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এর মানে ‘আমি তোমার ওপর ভীষণ রেগে আছি।’

ধ্রুব বেরিয়ে যাওয়ার সময় মা আমাকে ইশারায় এগিয়ে দিতে বললো। আমি খোঁড়া পা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। ধ্রুব মিষ্টি হেসে বললো,”আসি?”

ওর এই হাসির পর রেগে থাকা আমার পক্ষে কেবল অসম্ভবই নয় অকল্পনীয়! আমি বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে বললাম,”এসো।” ধ্রুব গেলো না। আমার মুখোমুখি চেয়ে রইলো। আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম,”কি?” ও মাথা নাড়ালো। দুষ্টু হেসে বলল,”আমি কিন্তু একদম মিথ্যে বলি নি। তরু সত্যিই ভীষণ কুল! কিন্তু কি করবো বলো, ঠান্ডায় আবার আমার এলার্জি আছে। আমার পছন্দ হট, স্পাইসি অ্যান্ড আ লিটল বিট সসি! দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে! ঠিক তোমার মত!”
আমি মনে মনে খুশি হলেও মুখ প্রকাশ করলাম না। তাড়া দিয়ে বললাম,”হয়েছে এবার যাও। আর কতক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো?”
ধ্রুব চলে গেলে আমি দরজার দাঁড়িয়ে আপনমনে কতক্ষন হাসলাম। ধ্রুব কি সব বলে গেলো! হট, স্পাইসি, সসি! ধ্যাৎ!

পরেরদিন সকালে আন্টি আমাকে ডেকে পাঠালেন তরুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্ল্যান করার জন্য। আমি আর ধ্রুব মিলে খুব ভালোমতই সব কিছু প্ল্যান করলাম। সন্ধ্যার দিকে তরুকে ওর হাজবেন্ডের সাথে মার্কেটে পাঠিয়ে দিলাম। সেই ফাঁকে ধ্রুব আর আমি ভালোমত ঘর সাজিয়ে ফেললাম। তরুর ওপর আমার রাগ আছে সত্যি। আবার নেইও। বেচারি ছোটবেলাতেই নিজের বাবা মাকে হারিয়েছে। আপন বলতে আছে কেবল ধ্রুব আর আন্টি। তাই আমার জন্য আন্টির কিংবা ধ্রুবর সাথে ওর সম্পর্ক খারাপ হোক সেটা আমি চাই না!

তরু মার্কেট থেকে ফিরে এসে এতসব কিছু দেখে অবাক। খুশিতে কেঁদে ফেলার মতন অবস্থা। আন্টি জানালেন সব আমি আর ধ্রুব মিলে করেছি। তরু আমার হাত ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গেলো। দুঃখ প্রকাশ করে বললো,” তোমার ওপর আমার অনেক রাগ ছিলো নিশাত।ধ্রুব ভাইয়া যেদিন তোমার জন্য আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো না সেদিন তোমার ওপর আমার খুব রাগ হয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো তোমাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারলাম তোমার ওপর রাগ করা বৃথা। যে আমার ছিলোই না তারজন্য তোমার ওপর রাগ করে কি লাভ! বিশ্বাস করো এখন তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই। তুমিও আমার ওপর কোন রাগ রেখো না বোন।”

—“তারমানে তুমি আগে থেকেই আমার এবং ধ্রুবর সম্পর্কের কথা জানতে?”

—“কিছুটা । তবে সিউর ছিলাম না। কিন্তু হলুদের সিউর হয়ে গেলাম।ধ্রুব ভাইয়া কিসের টানে নিজের হলুদ অনুষ্ঠান ফেলে তোমার কাছে ছুটে গেছিলো সেটা আর কেউ না বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।”

আমি হাসলাম। এখন আর তরুর ওপর একটুও রাগ নেই। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ও আমার সাথে যা করেছে পুরোটাই জেলাসি থেকে করেছে। একসময় ধ্রুব হারানোর ভয়ে আমিও জেলাস হয়ে গেছিলাম। তাই ওর কষ্টটা আমি বুঝি।

কেক কাটার সময় আন্টি ধ্রুবকে ভিডিও করতে বললো। খেয়াল করলাম ধ্রুব আমাকে বাদ দিয়ে বাকি সবাইকেই ভিডিও করছে। কেবল আমিই বাদ পড়ছি। আমি যতবারই ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়াই শয়তানটা উলটো ঘুরে যায়। মনে মনে ভাবলাম কি কপাল আমার! সারাজীবন মুভিতে দেখে এসেছি বয়ফ্রেন্ড কেবল গার্লফ্রেন্ডকে ভিডিও করছে আর আমার বয়ফ্রেন্ড!.ধ্রুবকে চোখ দিয়ে শাসালাম। এর মানে ‘আমি তোমাকে দেখে নেবো!’ কিন্তু তার ফলাফল যে এমন হবে আমি ভাবতেও পারি নি।

তরুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে ছবি দেখতে বসলাম সবাই মিলে। ধ্রুব অনুষ্ঠান শেষেই বাইরে গেলো ওর কি জরুরী কাজ সারতে। আমি আন্টি, সুমাইয়া, তরু সবাই সোফায় বসে ছবি দেখছিলাম। ছবি দেখতে গিয়ে খেয়াল করলাম সব ছবিতে আমি অর্ধেক। আমার অর্ধেক দেখা যাচ্ছে বাকি অর্ধেক কাটা পড়েছে। মেজাজ খারাপের পরিমান বলার বাইরে। ধ্রুব ইচ্ছে করেই এমন করেছে। অসভ্য ছেলে! আমার একটা ছবিও ভালো আসে নি। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। সবার মাঝখান থেকে উঠে গিয়ে বাসায় চলে গেলাম। দরজা বন্ধ করে ধ্রুবর নাম্বারে ডায়াল করলাম।

—“হ্যাঁ বলো।”

—“শয়তান। বদমাশ, অসভ্য! কেন করছে এমন?”

ধ্রুব চেপে চেপে হাসছে। ওর হাসিতে রাগ আরো বেড়ে গেলো। ফোন কেটে দিলাম। সাথে সাথেই কল ব্যাক করলো ও। রিসিভ করতেই বললো,”তোমার ভালো ছবি আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে তোমাকে দেখতে দিতে পারি। কিন্তু নিতে পারবে না।”

কাউকে দেখাতে না পারলে সেই ছবি দিয়ে আমি কি করবো। রাগে অভিমানে চেঁচিয়ে উঠে বললাম,”তুমিই দেখো। লাগবে না।”

ফোন কেটে সুইচড অফ করে দিলাম। এত কষ্ট করে সাজলাম অথচ একটা ছবি পর্যন্ত তোলা রইলো না। ধ্রুবকে আমি জীবনেও মাফ করবো না।

সকালে ফোন রিস্টার্ট করতেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো। হোয়াটস আপে মেসেজ এসেছে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম ধ্রুব ছবি পাঠিয়েছে। রাতেই পাঠিয়েছিলো। ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম তাই বলতে পারবো না।

ছবিগুলো দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। সাথে সাথে ধ্রুবকে মেসেজ পাঠালাম, “আই লাভ ইউ।”

রিপ্লাই এলো, “আই হেইট ইউ। তোমার সব ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে থেকে ব্রেক-আপ!”
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here