নতুন তুই আমি পর্ব-২৩

0
1778

#নতুন_তুই_আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa.
পর্ব:-২৩…………………………..
শুয়ে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে তামান্না।
কিন্তু কিছুতেই শান্তি লাগছে না।
তখন যে কাঁদলো তার দুটো কারণ ছিলো। একটা মিটে গেছে।
কিন্তু আর একটা???
সেটা তো মেটে নি।
উঠে বসল তামান্না।
বারান্দায় যেতে ইচ্ছা করছে।
কিন্তু না-আবার চেয়েও যাওয়া হলো না।
ফোন করল সিয়ামকে।
পর পর দুবার রিং হয়ে কেটে গেলো।
আবার ফোন করে তামান্না।
এবার তো কেটেই দিলো সিয়াম।
ভালো লাগছে না তামান্নার।
এতো রেগে যায় ছেলেটা!!!
আবার ফোন করল।
একরকম বিরক্তি নিয়েই ফোন টা ধরলো সিয়াম।
ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল,
“হ্যালো…..”
“…….”
“হ্যালো…..”
“বল…কি বলবি??”
“সরি…..”
“রাখছি….”
“এই না না প্লিজ।সরি তো….আসলে না….”
“আমার ট্রায়াড লাগছে। ফোন রাখ।তোর আজাইরা কথা শোনার মতো সময় নাই আমার।”
তামান্না এবার কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা।কিন্তু কাঁদলো না।
ধীর স্বরে বলল,
“আমি কথা বলবো তোর সাথে…..প্লিজ…”
“ঘুমাবো আমি….”
“আমি কথা বলবো….”
“ঢং করবি না একদম।যতসব….ফোন রাখ….”
“না।রাখব না আমি…”
“তামান্না!!!!”
এবার আর কান্না আটকানো সম্ভব হলো না তামান্নার।
কেঁদে ফেলল।
সিয়াম তো থ!!!!
কি এমন বললো যার জন্য কাঁদতে বসলো এই মেয়ে।
“ঐ ঐ ঐ….চুপ চুপ….কাদছিস কেনো….”
“আম সরি…..”
কাঁন্নার জন্য ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না।
সিয়াম কি বলবে বুঝতে না পেরে দিলো আরেক ধমক,
“এই চুপ….একদম চুপ।কাঁদবি না বলছি…..”
তামান্না এবার চোখ মুছলো।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না আবারও গাল টা ভিজে গেলো।
বলল,
“আমায় বকিস কেনো এভাবে???সব সময় বকতে ভালো লাগে তোর??”
“কান্না থামাবি তুই??কান্না বন্ধ করে কথা বল।ফোন রাখবো না আমি।চোখ মুছে ফেল….”
তামান্না ওড়না দিয়ে চোখ-মুখ মুছে নিল।
তামান্নার সারা শব্দ না পেয়ে সিয়াম বলল,
“কি হলো??মুছেছিস চোখ??”
“হুমমমম….”
“এখন বল কি বলবি করলাম না।তোর প্রিয় রেস্তোরায় তুই খেলি না আমার জন্য…..”
“তামান্না,আমরা দুজনে একসাথে ডিনার করার জন্য গিয়েছিলাম।
আমি একা করবো বলে যায় নি….”
“হুম…..”
“কি হুম??”
“আসলে…..”
তামান্না বলতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে।
আবার চেষ্ঠা করল,
“আসলে আমি না ইচ্ছা করে যায় নি…..এমনটা না।”
“তাহলে কেনো গেলি না??রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসে কেউ জানতাম না…..”
“আমি কি তোর সাথে আগে রেস্টুরেন্টে যাই নি!!গিয়েছি তো অনেক বার।যাই নি বল??”
“হ্যাঁ।গেছিস…..”
“তাহলে আজ কেনো না করবো!!নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।তাই না??”
সিয়াম কিছু বলল না।
তামান্না বলল,
“আমি তো বাসা থেকে বরে হলাম হিজাব বেঁধে।কিন্তু তুই তো শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে চাইলি আমাকে।আর চুলও খোলা রাখতে বলেছিলি।তুই তো জা…….”
সিয়াম আটকে দিলো।বলল,
“এই ওয়েট ওয়েট…….কি বললি তুই??”
“কি??”
“মানে তুই হিজাবের জন্য!!!”
“তুই বল আমি কখনো খোলা চুলে বাইরে গেছি??কোনো দিন হিজাব ছাড়া দেখেছিস আমায়??”
সিয়ামের সমস্ত রাগ যেনো নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো।
সে মুঁচকি হাঁসলো।বলল,
“তাহলে আমি দেখলাম কি করে???”
তামান্না কিছু না ভেবেই জোর গলায় বলে ফেলল,
“তুই তো আগে দেখিস নি।বিয়ের পর দেখেছিস।পর পুরুষ তো নেই আর।”
“এখন কি??”
তামান্না এবার খেয়াল হলো সে কি বলল!!!
“কি রে??বল??পর পুরুষ না আমি।তাহলে কি??”
তামান্নার লজ্জা লাগছে।
মুহুর্তেই সিয়ামের সাথে কাটানো সুন্দর লাজুক মুহুর্তগুলো চোখে ভেসে উঠল।তাতে যেনো আরও লজ্জা লাগছে।
সিয়াম বুঝতে পারছে তামান্নার লজ্জা লাগছে।
তাই বলল,
“আচ্ছা।বাদ দে।বলতে হবে না।তবে আমার খেয়াল ছিলো না যে তুই হিজাবের জন্য বাইরে বের হচ্ছিলি না।আর বারবার গাড়ির দরজা কেনো লাগাচ্ছিলি সেটা বুঝলাম এখন…..”
তামান্না স্বাভাবিক হয়ে বলল,
“হুম।শুধু শুধু রাগ দেখিয়েছিস।”
সিয়াম হুট করে প্রতিত্তুরে বলল,
“তার আগে তো একটু আদরও করলাম।শুধু রাগ টাই হিসাব করলে চলবে??
আদর টাও হিসাবের খাতায় তুলে রাখ…..”
তামান্না যেনো আর এই পৃথিবীতে নেই।লজ্জায় ডুবে হয়তো অন্য কোনো গ্রহে চলে যাচ্ছে।
সিয়াম সত্যিই পাগল হয়ে গেছে।তা না হলে এমন করে বলে।
দুষ্টিমির হাঁসি হাঁসছে সিয়াম।
তামান্না চুপচাপ ফোন টা কানে ধরে রেখেছে।পা দিয়ে চাদর আকড়ে ধরে রেখেছে।
বুকের ভেতরে কেমন একটা উদাসীপনা খেলা করছে তার।
“ঐ…..ভাবুনী বুড়ি,এতো ভাবতে হবে না।শোন…..”
“…….”
“হ্যালো…..”
“হ্যাঁ??”
“যে কারণেই হোক তুই তো আমার রাগ উঠিয়েছিলি।তো এখন সেটার মাশুল তো তোকে দিতেই হবে…..”
“মানে??”
“মানে কিছু না।এখন একটা গান গেয়ে শুনবি তুই আমায়।তাহলে তোর শাস্তি লাঘব করা হবে।তা না হলে তোকে আমি আজকের কাজের জন্য শাস্তি তো দিবোই……”
“গান!!!!!”
“ইয়াহ।শুরু কর……”
“অসম্ভব…..”
“তাড়াতাড়ি শুরু কর।আমি জানি তুই গান গাইতে পারিস।
আমি শোনবো।বল…..”
“সিয়াম,না আমি পারি না।”
“বলছি আমি…..হারি আপ…..”
“পারবো না….”
“পারতে হবে….”
“প্লিজ……”
সিয়াম দৃঢ় গলায় বলল,
“বাসায় আসবো এখন তোর??”
তামান্না ভয় পেয়ে বলল,
“নাআআআ।আমি গাইবো….”
হাঁসল সিয়াম।
বলল,
“ওকে।আমি শুনছি…..”
দু পাশেই খানিক নিরবতা।
তামান্না খুব কষ্টে গলা টা একটু ঝেড়ে নিয়ে পানি খেল।
সিয়াম বলল,
“পুরো টা শেষ করতে হবে…..”
তামান্না বুকে হাত দিয়ে একটা ঢুক গিলল।
কিছুসময় পর গাইতে লাগল।
তার প্রিয় একটা গান।
যেটা প্রায় সময়ই সে শোনে,
“শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে আমার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে ভ্রমর কইয়ো গিয়া……..
ভ্রমর কইয়ো গিয়া-
কইয়ো কইয়ো কইয়ো রে ভ্রমর কৃষ্ণ রে বুঝাইয়া,
মুই রাধা মইরা যাইমু
কৃষ্ণ হারা হইয়ারে ভ্রমর……..
ভ্রমর রে….আগে যদি জানতাম রে ভ্রমর যাইবা রে ছাড়িয়া,
আগে যদি জানতাম-
মাথার কেশর দুই ভাগ করি রে রাখিতাম বান্ধিয়া রে ভ্রমর কইয়ো গিয়া।
ভ্রমর রে……
অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে ভ্রমর কইয়ো গিয়া…..
অঙ্গ যায় জ্বলিয়া-ভ্রমর কইয়ো গিয়া……..”

লেখিকার গ্রুপ : https://facebook.com/groups/646951215765318/

সেরা সব গল্পের লিংক পেতে :https://www.facebook.com/SeraGolpo500/
RiaZ UddiN ShaKiL ✌️👈

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here