নতুন তুই আমি পর্ব-২৪

0
1669

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-২৪……………………….
তামান্নার গলায় এই প্রথম গান শোনলো সিয়াম।
বন্ধু মহলে সবার গলা-ই শোনা তাঁর।
কিন্তু তামান্না যে এতো ভালো গান গাইতে পারে জানা ছিল না ওর।
দুপাশেই নিরবতায়।
তামান্না গান গেয়ে আরও বেশী লজ্জায় পড়ে গেছে।
আর সিয়াম!!
তার তো তামান্নার গলার মুগ্ধতাই আটছে না এখনো।
বেশ কিছুক্ষণ তামান্নাই বলল,
“ঘুমাবি না??”
সিয়ামের ধ্যান ভাঙল এবার।
বলল,
“হুম….”
“বলছি ঘুমাবি না??”
“হ্যাঁ।বাট তোর কন্ঠ টা খুব সুন্দর…….”
“ছাই সুন্দর।কখনো গাই নাকি আমি!!”
“আমি কত লাকী!!!”
“লাকী!!কেনো??কি পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তোর?”
“এই যে তোর কন্ঠে গান শোনবো আমি।”
“আহা রে।আসছে…..তোকে গান শোনাতে বয়েই গেছে আমার…..”
“সেটা আমি বুঝে নিবো।একবার যেহেতু পেরেছি তো সারা জীবন ঠিক পারবো…..”
“ফোন রাখলাম আমি।থাক তুই।ঘুমাবো আমি…..”
“ঐ না……”
“জ্বি না….”
“তামান্নু!!!মাইর খাবি।”
“ঘুম পাচ্ছে তো।”
“খাইছিস??”
“উমহু….তুই???”
“না খেয়ে ঘুমাবি নাকি!!খাওয়ার প্রতি এতো এর্লাজি কেনো তোর??”
“তুই রাগ করে চলে গেছিস।বাসার কেউ ফোন দেয় নি।সব মিলিয়ে আমার খিদেও লাগে নি…..”
“থাপ্পর চিনিস??থাপ্পর খাবি।যা খেয়ে আয়…..”
“নাআআ….”
“তামান্না!!!”
“সকালে তো খাবোই….”
“তার আগে যদি আমার হাতে থাপ্পর খেতে না চাস তাহলে জলদি গিয়ে খেয়ে আয়….”
“উফফফ।খালি খাওয়া আর খাওয়া।তুই খাইছিস??”
“বাসায় এসে রাগে এক প্লেট বেশি খেয়েছি আরও….”
“হু!!খা তুই….”
“তামান্না।আমি বলছি কিন্তু….”
“উমমমহু….মা,জেঠিমনি,ভাবী সবাই যার যার রোমে শুয়ে পড়েছে।আমি কি করে খাবো?”
“তুই রান্না করতে পারিস।আর নিজে নিয়ে খেতে পারিস না??”
“খাবো না এখন।খিদে নেই….”
“সিরিয়াস??”
তামান্না যদি এই মুহুর্তে না তা হলে সিয়াম যদি আবার বাসায় চলে আসে।
বা রাগ করে বসে তখন!!
তাই তামান্না বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে।খাবো….”
“গুড…যা।খেয়ে আয় আমি কল করবো আবার।”
“হুম…রাখছি….”
!
তামান্না খাবার শেষ করে রোমে ফিরে আসে।
লাইট টা বন্ধ করে বিছানায় যাবে তখন সিয়ান ফোন করেছে।
রিসভ করল তামান্না,
“হ্যালো…”
“খেয়েছিস??”
“হ্যাঁ।খেয়েছি আর এই যে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।খাওয়া শেষ তো ঘুমাবো এখন…”
“দেটস গুড…..”
“হুম…..”
“অনলাইনে আয়।”
“কেনো??”
“ভিডিও কলে আসবো আমরা….”
“এই না প্লিজ।”
“কল দিচ্ছি আমি…..”
বলে ফোন টা কেটে দিলো সিয়াম।
তামান্না বাধ্য হয়ে রোমের লাইট অন করল।
লেপটপ টা নিয়ে আসলো টেবিল থেকে।
বিছানায় বসে হাঁটুর উপর বালিশ রেখে সেখানে লেপটপ রেখে অন করল।
অনলাইনে ডুকার সাথে সাথেই সিয়ামের কল।
রিসিভ করল তামান্না।
কিন্তু দুষ্টুমি করে ক্যামেরা টা ঢেকে দিয়েছে।যেনো সিয়াম দেখতে না পায় তাকে।
কিন্তু সিয়াম ক্যামেরা ঠিক ঠাক ই রেখেছে।
যার জন্য সিয়ামকে খুব ভালো ভাবেই দেখতে পারছে তামান্না।
সিয়ামকে দেখা মাত্রই তামান্নার বুক টা ধুক করল উঠল।অসম্ভব একটা তড়িৎ প্রবাহ শুরু হচ্চে পুরো শরীর জোরে।
এমন টাই হওয়ার কথা।
কারণ তামান্না যে এই প্রথম সিয়ামকে এই অবস্থায় দেখছে।
শুধু একটা র্থি-কোটার পেন্ট।
আর কিচ্ছু না।বিষয় টা যদি বিয়ের আগে হতো তামান্না হাঁসতে হাঁসতে শেষ হয়ে যেতো।
কিন্তু এখন দই দৃশ্য দেখে হাঁসির চেয়ে আকর্ষণ টাই বেশি হচ্ছে।
সিয়াম নিশ্চয় বাসায় গিয় সাওয়ার নিয়েছে।তাই এতো সতেজ দেখতে লাগছে।
সিয়াম এমনিতে ছেলে হিসাবে যতটা ফর্সা হওয়ার কথা তার চেয়ে একটু বেশি।তবে মোটেও মেয়েলি সুন্দর না আবার!!ওর ফর্সা শরীরে যেনো পুরুষের সমস্ত কঠোর সৌন্দর্য দান করেছে আল্লাহ।
তামান্না সিয়ামের দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে।
কি সাবলীল একটা গঠন ছেলেটার!!
তামান্না মুঁচকি হাঁসলো।
তবে সিয়াম সেটা বুঝল না।
তামান্না সিয়ামের সারা শরীর পরখ করে দেখল।
খুব আর্কষণ অনুভব করছে মেয়েটা।
বিজ্ঞান গবেষণা তাহলে হয়তো ঠিকই আছে-“দুটো প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের প্রথম আর্কষণ টা দৃষ্টিপাত থেকেই হয়।”
ঠিক যেমনটা এখন তামান্নার হচ্ছে।
সিয়ামের সারা শরীরে কালো কালো পরশ গুলো ফর্সা দেহকে কি সুন্দর সাজিয়ে রেখেছে।
তামান্না অবাক হচ্ছে সিয়ামের শরীরে এতো লোম দেখে।
কই??ওর ভাইয়ার শরীরে তো এতো লোম নেই।ভাইয়াও তো কম হ্যান্ডসাম না!!ভাইয়াকে তো কত দেখছে এমন লোম নেই ভাইয়ার।
তবে সিয়ামের বুকে আর পায়ে অসম্ভব রকমের লোম।
তামান্না যেনো ঘোর লাগা চোখে সিয়ামকে দেখে যাচ্ছে।
আর এমন সময় সিয়ামও চুপচাপ কিছু বলছে না এতক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও।
কিন্তু তামান্না আরও কিছুক্ষণ তাকে দেখার পর সিয়াম আচমকা বলে উঠল,
“যদি দেখা শেষ হয় তাহলে ক্যামেরা টা ঠিক কর আমিও তোকে একটু দেখি……”
চমকে উঠল তামান্না।
সিয়াম কি বুঝে গেলো নাকি!!
কিন্তু কি করে???
“কি রে???দেখা শেষ হয় নি নাকি???আচ্ছা দেখতেই তো পাবি।কিন্তু আমিও একটু দেখি…….”
“হু…..”
“হু হ্যাঁ…বাদ দিয়ে কাজটা কর…”
তামান্না তাই করল সিয়াম যা বলল।
তবে তামান্নাও যে ঘোরের বসে একটা ভুল করে ফেলেছে।
ক্যামেরা ঠিক করতেই সিয়াম তামান্নার মুখ দেখে হাঁসি মুখে বলে উঠল,
“কি ব্যাপার??আমা…..”
কথা আটকে গেলো সিয়ামের।
তামান্নার দিকে ঠিক মতো নজর পড়তেই মুখে যেনো শব্দ আটাকা পড়ে গেলো তার।
আর এর কারণ হচ্ছে ঘোরে বশে তামান্নার করা ছোট্ট ভুল।
তামান্না শুয়ে ছিল বলে একটা সাদা স্লিভলেস টপস আর প্লাজো পড়ে ছিলো।
সিয়ামের সাথে ভিডিও তে যাওয়ার সময় ওড়না টা পাশে রেখেছিলো ভেবেছিলো ক্যামেরা যখন ঠিক করবে তখন ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে তারপর কথা বলবে।
কিন্তু ঘোর লেগে যাওয়ায় সেটা আর করা হয় নি।
টপস টা তামান্নার শরীরে একদম ফিট।
সত্যি বলতে তামান্না যথেষ্ঠ ফর্সা। একটা মেয়ের সুন্দর হওয়ার জন্য যা যা দরকার তার আছে।কিন্তু একটা মেয়ের শরীরে গঠন এতোটা গাঢ় হতে পারে সিয়াম সেটা জানতো না।
ঢুক গিললো সিয়াম।
আর তামান্নার তো খেয়াল ই নেই এসব কিছু।সেও সিয়ামকে এই প্রথম এই অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
তামান্নার চুলগুলো খোপা করা তবুও ছোট ছোট চুলগুলো ওর গলায় আর গালে পড়ে আছে।বেশি লম্বা চুল হলে যা হয় আর কি!!!
সিয়ামের ভেতরে ঝড় উঠছে হয়তো।তামান্নার নেওয়ার নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সে তামান্নাকে খুব ভালোকরে নজরে নিয়ে নিচ্ছে।
না চাইতেও নজর টা তামান্নার বুকের উপর পড়ছে।
এতে সিয়ামের কোনো দোষ নেই!!!একটা ছেলের এমন হওয়াটাই স্বাভাবকি।
তারউপর মেয়ে যদি আবার বউ হয়।
তামান্না হঠাৎ খেয়াল করল সে সিয়ামকে এভাবে হাবার মতো দেখছে।বিষয়টা বুঝে লজ্জা পেলো বেচারী।
সিয়াম বুঝতে পারল বিষয় টা।তামান্না বেখেয়ালি ভাবে এমন করে ভিডিও তে এসেছে সেটাও ধরতে পেরেছে সিয়াম।
সিয়াম মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে চোখ টা বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো একটা।
ঘোর কাঁটিয়ে নিলো হয়তো।
তারপর আবার মনিটরের দিকে তাঁকাল।
তামান্নার মুখটা লাল হয়ে আছে।বেচারী মাথা নিচু করে আছে।
গম্ভীর গলায় বলল,
“তামান্নু,ওড়না পড়ে নে…..”
কথাটা শোনা মাত্রই তামান্না চমকে উঠল।বুকের ভেতর ধুক করে উঠল।
নিজের দিকে খেয়াল করতেই সে আকাশ থেকে পড়ল।
এই ভাবে ভিডিও কলে সে!!!!
ভাবতেই পিলে চমকানোর অবস্থা তার।
সিয়ামের দিকে না তাঁকিয়েই ধপাস করে লেপটপ টা বন্ধ করে দিলো তামান্না।
ওড়নাটা শালের মতো পেঁচিয়ে নিলো।সারা শরীর কাঁপছে।
কি হলো এটা!!!!
তামান্না লজ্জায় পুরো কুকড়ে যাচ্ছে।যে মেয়ে কোনো ছেলের সামনে হিজাব ছাড়া যায় নি সে কিনা টপস পড়ে ওড়না ছাড়া!!!
ভাবতে গিয়ে চোখে পানি এসে গেছে তামান্না।
শুয়ে পড়ল বিছানায়।
কান্না পাচ্ছে খুব।
সিয়াম কি ভাববে!!!!
!
আর এদিকে সিয়াম।
তামান্নার কান্ড দেখে মোটেও অবাক হয় নি।সে জানে তামান্না কতটা লাজুক!!
আর তামান্না তার বলা শেষ কথাতে জীবনের শ্রেষ্ঠ লজ্জা পেয়েছে বলে সিয়ামের মনে হচ্ছে।
দু হাত মেলে লেপটপ টা বুকে শুয়ে পড়ল সিয়াম।
“আহ্!!!পাগলী……..”
বলে মুঁচকি হাঁসল সে।
তারপর ভাবল-ক্যাম্পাসে তো বেশির ভাব মেয়ে এমন ওয়েস্টার্ন পোশাকে ঘুরে বাড়ায়।তখন তো তাদের দিকে এক বার চোখ পড়লে ফিরে তাঁকানোর আর ইচ্ছা হয় না।
তাহলে?? আজ কি হলো??
তামান্নার দিকে বারবার কেনো তাঁকাতে ইচ্ছা করল।
সিয়াম পরক্ষণেই অট্ট হেঁসে নিজের মাথায় একটা ঘাট্টি মেয়ে বলল,
“আরে পাগলা!!বউ তোর….দেখতে তো মন চাইবেই…..”
বলে আবারও হাঁসল।
সিয়াম যতই হাঁসুক না কেনো আজকে রাতে তামান্না আর শান্তি পাবে না।সিয়ামকে দেখে যে সে এতটা রেমান্চিত হয়েছিল সে নিজেকেই সামলাতে ভুলে গেছিল।
লজ্জায় চোখে যে পানি এসে গিয়েছিল ওড়নায় মুছে নিল।
খারাপ লাগার চোখের পানি নয় এটা!!লজ্জায় কারো সামনে কুঁকিয়ে উঠার সারাচিহ্ন।
তামান্না কম্বল নিয়ে নিলো গায়ের উপর।
তার বিছানায় সব সময় কোল বালিশ থাকলেও সে কখনো ধরে না তবে আজ কেনো জানি মু্ঁচকি হেসে পাশা থাকা কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরল।
তারপর লজ্জায় লাল হয়ে মুঁচকি হাঁসলো।
কি না কি করে ফেলল সে আজ!!ভাবতেই হাঁসি পাচ্ছে এখন।যাক যা হওয়ার হয়েছে নিজের বর ই তো।
ভেবে কোলবালিশ টা শক্ত করে আকড়ে নিলো।
চোখ বন্ধ করে খোলা মাঠে সিয়ামের প্রতিটা হৃৎস্পন্দন আর স্পর্শ অনুভব করতে লাগল।
বার বার শিহরিত হচ্ছে তামান্না আজকের প্রতিটা মুহুর্তের কথা ভেবে।
আনন্দ-লজ্জা আর ভালো লাগর তীব্র অনুভতিতে নিজেকে রাতের আধারের একটা ছোট্ট তারা মনে হচ্ছে তামান্নার।ঠিক তার চেয়ে আরও বেশি উজ্জল একটা তারার পাশে।যাকে সে সিয়াম রূপেই কল্পনা করতে চাইছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here