#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 1
#সুমাইয়া_আক্তার
হঠাৎ দমকা হাওয়ায় আর কিছু একটার আওয়াজের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার…হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ি আমি…
উঠেই দেখি জানালা খোলা রয়েছে…জানালা দিয়েই দমকা বাতাস আসছে…
আমি তো জানালা বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম…আর আজ তো মেঘলা দিন ছিল না…তাহলে এমন বাতাস আসার কারণ??
এই কথা ভাবতে ভাবতে শোয়া থেকে উঠে জানালা লাগিয়ে দেই আমি…
আমার পাশেই অঘোরে ঘুমুচ্ছে রিদিতা…আমি রিদিতা কে ডাক দিতে গিয়ে আর ডাকলাম না..আবার শুয়ে পড়লাম…
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি রিদিতা কে ডাক দিতে লাগলাম…এই রিদিতা,,, শোন,,, কাল কি তুই জানালা খুলে শুইয়ে ছিলি???
রিদিতাঃ কই নাতো???তুই ই তো বন্ধ করেছিলি…
তাহলে জানালা খুলল কিভাবে???না আমার তো কখনো ভুল হয় না…
আমি ফাহমিন সুলতানা…সাইন্সের স্টুডেন্ট আমি…দুদিন হলো এই হোস্টেল টায় উঠেছি আমি…এই হোস্টেলের মালিক আমার বড় মামা…মামা ছাড়া তেমন কাওকেই চিনিনা আমি.. সবাই অপরিচিত…তবে একজন কে চিনতাম সে হলো আয়েশা…আমার দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন হয়…
ও এই হোস্টেলেই পড়তো…আর একদিন শুনি আয়েশা এই হোস্টেল এর একটা রুমে আত্নহত্যা করেছে…কিন্তু কেন করেছে?? কেউ আজো জানতে পারে নি…
আমি যে রুমটায় থাকি সেই রুমে আমরা পাঁচজন মেয়ে থাকি… রিদিতা, সায়মা,অনন্যা,নাফিসা…
এই কয়জন ই আমার সাথে থাকে…
আমি আয়েশার মৃত্যু নিয়ে অনেক সন্দিহান ছিলাম…তাই আয়েশা যে রুম টায় আত্নহত্যা করেছে ওই রুমটায় ঢুকতে চাইলে আমাকে কেউ ঢুকতে দেয়না…
কিন্তু কেন ঢুকতে দেয়না জানতে চাইলে বলে,,,এখানে নাকি আয়েশার আত্না আছে…এখানে ঘোরাফেরা করে…
আমি যেহেতু সাইন্সে স্টুডেন্ট তাই কখনোই ভূতে বিশ্বাস করতাম না আর বিশ্বাস করিও না…
হোস্টেলের দিনগুলো ভালোই কাটতে লাগলো আমার…ওদের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক ও হয়ে গেছে…
কিছুদিন পর পাশের রুমের একটা মেয়ে রাতের বেলা গায়েব হয়ে যায়… তার রুমে কোন কাপড় চোপড় ও পাওয়া যায়না…
কি অদ্ভুত কথা না???একটা মেয়ে রাতের বেলা কিভাবে গায়েব হয়ে যায়??আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এসব কথা…
পরদিন সকালে তানিয়ার মা বাবার কাছে নালিশ দেওয়া হয় তাদের মেয়ে বয়ফ্রেন্ড এর হাত ধরে পালিয়ে গেছে…
অনেক অপমান ও করা হয় তাদের…সবচেয়ে বেশি কথা শুনিয়েছেন রহিম স্যার…উনি বায়োলোজি ক্লাস নেন আমাদের…
আর ও কয়েকদিন কেটে গেলো…টার্ম পরীক্ষা চলছিল তাই রাত জেগে পড়ছিলাম আমি…আমার রুমের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে…
হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে…কিন্তু এত রাতে কে নক করবে??
দরজা খুলেই দেখি পাশের রুমের আরশি আমাকে বলছে দোস্ত তোর ইংরেজি বইটা দিবি একটু??
কাল তো তোদের ইতিহাস পরীক্ষা তাহলে ইংরেজি বই দিয়ে কি করবি তুই???
তোকে দিতে বলেছি তুই দিবি…
আচ্ছা দিচ্ছি…
আরশি তো কখনো এমন ভাবে কথা বলেনা আমার সাথে…তাহলে আজ এমন করলো কেন???
আমি দরজা লাগিয়ে আবার ও পড়তে বসলাম…
কিছুক্ষন পর আবার ও দরজায় নক করে…দরজা খুলতেই আরশি আমাকে বলছে,,দোস্ত ইংরেজি একটা টপিক বুঝছি না আমাকে একটু বুঝিয়ে দিবি???
আচ্ছা আমি আসছি…
হঠাৎ আরশি আমাকে ওর রুমে না নিয়ে ডিরেক্ট ছাদে নিয়ে গেলো…
আমি বললাম,,,কিরে ছাদে নিয়ে এলি কেন এত রাতে???
মুহূর্তেই আরশির মুখ কালচে হয়ে গেলো…আর চোখ দুটো লাল রক্তবর্ণে পরিণত হয়েছে…
আমি চিৎকার দিয়ে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই…এরপর আর কিছু মনে নেই আমার…
সকালে যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি আমার রুমে ছিলাম…আমার পাশে রিদিতা,সায়মা,অনন্যা,সায়মা,নাফিসা,আর আরশি ও ছিল…আমি আরশিকে দেখেই চিৎকার দিয়ে বলি,,,তুই এখানে কেন???
সবাই সমস্বরে বলে উঠে,,, কি বলছিস তুই???আর তুই ছাদে কখন গেলি??? তোকে রুমে না পেয়ে আমরা অনেক খুজে তোকে ছাদে অজ্ঞান অবস্থায় পাই…
কি হয়েছে তোর???একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো সবাই…
আমি বললাম,,,তোরা সবাই চুপ কর তারপর বলছি…কাল রাতে আরশি আমার কাছে ইংরেজি বই নিতে এসেছিলো…তারপর হঠাৎ আমাকে ছাদে টেনে নিয়ে যায়…
ওকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আরশির চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যায়…আর আমি চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি…
আরশি আমার কথা শুনে যারপরনাই অবাক হয়ে যায়…
এই ফাহমিন কি বলছিস তুই???আমি কেন তোর কাছে আসবো???আমি তো কাল রাত আটটায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…
তাহলে আমার ইংরেজি বইটা??ওটা তো তোর কাছেই আছে…
দেখ ফাহমিন ফাইজলামির একটা সীমা আছে…তোর ইংরেজি বইটা তোর টেবিলেই আছে এই যে দেখ…
আমি এতটাই অবাক হয়ে যাই যে তাহলে কে ছিলো আমার সাথে???
তাহলে কি আয়েশার আত্না??না কি ভাবছি আমি…এ কখনো হতে পারেনা….
সেদিন অনেক স্ট্রেস নিয়ে পরীক্ষা দিলাম….সারাদিন ভাবতে লাগলাম কি হচ্ছে আমার সাথে???
রাতে আমার শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে রিদিতা আমাকে খাইয়ে শুইয়ে দিলো…
শরীর ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে যাই আমি…হঠাৎ মনে হলো কেউ গুনগুন করে গান গাইছে….আর নূপুরের আওয়াজ হচ্ছে…
কোথা থেকে আওয়াজ আসছে জানার জন্য বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গেলাম…জানালা খুলে দেখলাম কেউ আছে কিনা???
কিন্তু কাওকেই দেখলাম না…তারপর মেয়েলী কন্ঠে কেউ আমার নাম ধরে ডাকছিল…
আমি দরজা খুলে বাইরে গেলাম… এখনো আমাকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কে ডাকছে আমাকে এত রাতে???
আমি ছাদে উঠতে লাগলাম আস্তে আস্তে…ছাদে উঠে দেখি একটা সাদা সালোয়ার কামিজ পড়ে কেউ দাড়িয়ে আছে…কামিজের কিছু অংশে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে আছে…
আমি মেয়েটাকে বললাম,,,এই কে তুমি??? এত রাতে কি করছো এখানে???
মেয়েটা আমার দিকে ঘুরে তাকাতেই আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না….
(চলবে)
বিঃদ্রঃ জানি না গল্প টা কন্টিনিউ করতে পারব কিনা…আমি অনেক ভীতু…অনেক ভয়ে লেখছি গল্প টা…মনে হইতেছে কেউ আছে আমার পাশে… আল্লাহ গো…ভয়েই মইরা যামু আমি…