#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৬
#সুমাইয়া_আক্তার
আচ্ছা সব ই বুঝলাম…তাহলে নবনী কি চাও??আরো কয়েকদিন থাকবে???
নবনী মাথা নিচু করে হ্যা সূচক জবাব দিলো…নবনী ভয়ে চুপসে গেছে…ভয়ে হাত দুটো কচলাচ্ছিলো…
মামা বলল,,,,আচ্ছা তাহলে আর দুইদিন থাকো…দুইদিন পর এসে নিয়ে যাবো আমি…তখন আবার অজুহাত দেখাইয়ো না…এই কথা বলেই মামা রুম থেকে বের হয়ে গেলো…
মামার কথা শুনে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম…. নবনী ও অনেক টা খুশি হয়েছে…নবনী ছুটে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,তুমি অনেক সুইট…আর আমার গাল টেনে দিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে…
আমি মুচকি হেসে দিয়ে রুম গোছাতে শুরু করি…. আগামীকাল হোস্টেল যাওয়ার কথা…ভাবছি আজকেই যাবো…কারণ আজ মামা এসেছে..মামা ছাড়া আর কেউ নাই যে আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসবে…তাই মামা কে ছাড়া আর কাওকে বলতেও পারবনা হোস্টেল এ দিয়ে আসার কথা… মামা কে বলতে হবে যেন আমাকে হোস্টেল এ দিয়ে আসে…কিন্তু কথা হচ্ছে নবনী কি আমাকে ছেড়ে থাকবে??আর আমি না গেলেও মামার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ বের করতে পারবো না…
নবনীর সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়???নবনী বাথরুম থেকে বের হতেই বললাম,,,আচ্ছা আমার তো হোস্টেল যাওয়ার দরকার…চেয়েছিলাম আগামীকাল যাবো…কিন্তু আজ যেতে চাইছি…আর আমি না গেলেও মামার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ বের করতে পারবো না…কি করব বুঝতে পারছি না???
নবনী বলল,,,আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না….আমি এখানে থাকতে পারবো…তুমি যাও…আর সাবধানে থেকো….
আচ্ছা তাহলে মামা কে বলছি,,,যেন আজ দিয়ে আসে আমাকে… আর কাপড় গোছাতে হবে…যাই গুছিয়ে নেই…আবার মামা চলে যাবে…তুমি নিচে যাবে না তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসবো???
না থাক আমি যাচ্ছি নিচে…নবনী চলে গেলো…আমি কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছিলাম হোস্টেলে যাবার জন্য…কাপড় গুছিয়ে নিচে যাচ্ছিলাম…মামা আর নবনী ডায়নিং টেবিলের এক পাশে বসে নাস্তা করছিলো….হঠাৎ মামা নবনীর পায়ে পা দিয়ে খোচা দিচ্ছিলো…আর নবনী টেবিলের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে…মামা আবার ও নবনীর পিঠে খারাপ ভাবে হাত বুলাচ্ছিলো…এবার নবনী কিছুটা রাগ দেখিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে আসে…নবনীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে…কিছু বলার সাহস হচ্ছেনা আমার…কিইবা বলব???
আমি আসলে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা… আমার মামা এতটা খারাপ হবে ভাবতে পারিনি কখনো…আমি মামার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,মামা নবনী এভাবে খাবার ফেলে উঠে গেলো কেন???
মামা কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল,,,,কই কিছু নাতো…খাওয়া শেষ তাই উঠে চলে গেছে…আচ্ছা তুই বস খেয়ে নে….
আমি আর কথা বাড়ালাম না…খেতে খেতে মামা কে বললাম,,,মামা আমি হোস্টেলে যাবো…আমাকে দিয়ে এসো…
মামা বললেন,,,তোকে না বলেছি আগামীকাল যেতে??আজ যেতে হবে কেন???
মামা আমার ক্লাস আছে…ক্লাস করা হয়না অনেকদিন…আর আমার সব বই খাতা হোস্টেলেই পড়ে আছে…আমার যাওয়াটা জরুরি..
আচ্ছা ঠিক আছে….তুই রেডি হয়ে নে….
আমি রেডি হয়ে মা কে বলতে গেলাম… মা আমাকে তো ছাড়তেই চাইছিলেন না…তাও এক প্রকার জোর করেই এসেছি…আর সাথে চুরি করে মায়ের স্মার্টফোন নিয়ে এসেছি যাতে মামার পর্দা ফাস করতে পারি…
প্রায় দু ঘন্টা পরে হোস্টেলে পৌছালাম…. অনেকদিন পর অনন্যা,সায়মা, রিদিতা কে দেখ্ব খুব ভালো লাগছে…সবগুলা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো…
সেদিন অনেক আনন্দেই কাটালাম…অনেক টাই ভুলে গেছি এতোদিন আমার সাথে যা ঘটেছে তা…
রাতের বেলা ঘুমাতে যাবো তখন মনে হলো কেউ ডাকছে আমাকে…এই ফাহু,ফাহু…
এই ডাক টা একমাত্র জয় ই ডাকে….আমি ওদের কিছু বুঝতে দেইনি…যদিও জয়ের কথা ওদের বলি,, আমাকে বিশ্বাস তো করবেই না আবার ওর কাছে যেতে দেওয়া দূরে থাক….
সায়মা কে বললাম,,,,আচ্ছা তোরা শুয়ে পড়… আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো…
রিদিতা বলে উঠলো,,,না আমিও যাচ্ছি তোর সাথে…তোকে একা যেতে দেওয়া ঠিক হবেনা…
রুমের সবাই রিদিতার কথায় তাল মিলালো…
আমি পড়লাম মহাবিপদে…কিভাবে কি করি?? উফ এই রিদিতা যে কি করে??আমাকে ঝামেলায় না ফেললে চলছিলো না ওর…
আচ্ছা শোন তোদের এত ব্যস্ত হতে হবেনা…আমি একাই যেতে পারবো…চিন্তা করিস না কিচ্ছু হবে না আমার….ওদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম…
রুম থেকে বের হতেই কে যেন আমার ডান হাত হেচকা টানে দেয়ালে ঠেসে ধরলো…আমি চোখ বুজে আছি…আমার কপালের উপর কয়েকটা চুল এসে পড়েছে…আর কেউ সেই চুলগুলো হাত দিয়ে কানে গুজে দিচ্ছে…আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলি…হু,,আমি ঠিক ধরেছিলাম….জয় এসেছে….জয় এখনো আমাকে ঠেসে ধরে আছে…আমার নড়ার সাধ্যও নেই….
আমি নিচু গলায় বললাম,,,কি হচ্ছে জয়???ছাড়ো আমাকে…ব্যাথা পাচ্ছি আমি…
জয় রাগী কন্ঠে বলল,,,,তুমি যে আমাকে ব্যাথা দিয়েছো??সেটার কি হবে???
আমি অবাক হয়ে বললাম,,, কিভাবে ব্যাথা দিলাম???আর কোথায় ব্যাথা দিয়েছি???
হু ব্যাথা দেওনি??আমাকে এভাবে ভুলে গেলে… একবার ও আমাকে মনে করলে না…
আমি মুচকি হাসি দিয়ে জয়কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললাম,,,ওহ ভূত মশাইয়ের এইজন্যই রাগ হয়েছে???আচ্ছা শোন… আমি যদি তোমার কথা ওদের বলি তাহলে ওরা আমাকে নিয়ে হাসবে…আর কিভাবেই বা তোমার সাথে দেখা করতাম???আমাকে এখন একা ছাড়তেই চাইছিলো না…ওদের মিথ্যা বলে এসেছি…
এবার আমাকে ছাড়ো… দেরি হয়ে গেলে ওরা আবার চিন্তা করবে আমার জন্য…আমি তো এখানেই আছি…তোমার যখন ইচ্ছা হয় তখনি আমাকে দেখতে এসো…উফ হাত টা ছাড়ো..হাত টা তো ব্যাথা করে দিলে….
জয় আবারো আমাকে দেয়ালে ঠেসে ধরলো…দেয়ালে ঠেসে ধরেই ধীরে ধীরে জয়ের মুখ টা আমার ঠোটের সামনে আনতেই,,,, আমার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে….খুব জোরে নিঃশ্বাস ফেলছি আমি…
তারপর জয় নিজেই দূরে সরে গেলো…. মুখ নিচু করে বলছে,,,সরি ভুল হয়ে গেছে…প্লিজ মাফ করে দেও…
আমি হাসতে হাসতে বলি,,,এইযে ভীতু ভূত প্রেমিক…. এত লজ্জা পেতে হবে না…আমি কিচ্ছু মনে করিনি… তারপর জয়ের চুলে হাত নাড়িয়ে দিয়ে চলে আসতেই আবারো জয়,, আমার হাত টেনে ধরলো…
কি হলো???আবার হাত ধরলে কেন???
শোনো তোমার বান্ধবী রা যদি কিছু জিজ্ঞেস করে সত্যিটা বলে দিও…আর বাকিটা আমি দেখে নিবো….
আমি জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখি,,,ওরা কেউ ই ঘুমায়নি….আমার দিকে অনন্যা, নাফিসা,রিদিতা, সায়মা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে…
আমি এক গ্লাস পানি খেয়ে ঢোক গিলে বললাম,,,কি হয়েছে তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন???তোরা কি দিনে দুপুরে ভূত দেখছিস নাকি???
অনন্যা জবাব দিলো,,, হু ভূত ই তো দেখছি…. তুই কার সাথে কথা বলছিলি???তাও আবার হেসে হেসে??এই একদম চুপ করে থাকবি না…জবাব দে….
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসলাম….হু,,তোরা যেহেতু জানতে চাইছিস আমি বলব…কিন্তু সব শোনার পর আমাকে কিছু বলতে পারবিনা বলে দিলাম…
আমি বলা শুরু করলাম…ওরা সবাই মুখ হা করে আমার কথা শুনছিলো….হয়তো বিশ্বাস করতে চাইছে না…কি বিশ্বাস হচ্ছেনা তো আমার কথা???আচ্ছা অপেক্ষা কর একটু পর ই দেখতে পারবি….
আমি জয় কে ডাকতে লাগলাম…জয় আমাদের সামনে দেখা দিতে শুরু করলো…
(চলবে)