নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :১৭

0
676

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৭
#সুমাইয়া_আক্তার

জয় হাসতে হাসতে বলল,,,ফাহমিন যা বলছে তাই সত্যি…তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই…আমরা তোমাদের ক্ষতি করতে আসিনি…..

রিদিতা আমার জামা খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে…. সবাই স্বমস্বরে বলে উঠলো,,,আমরা মানে???আরো ভূত আছে নাকি???

আমি হাসতে হাসতে বললাম… হুম আছে তো… অপেক্ষা কর…এক্ষুণি দেখতে পারবি….

তারপর ধীরে ধীরে আশিক স্যার, নিশিতা,আয়েশা,রুশা,ফারিন,তানিয়া, সামান্তা দেখা দিতে শুরু করলো…ওদের দেখেই শুধু অনন্যা ছাড়া সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে…অনন্যাও দাঁড়িয়ে প্রচুর কাঁপছে… এই বুঝি এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে পড়বে….

আমি অনন্যার পাশে গিয়ে অনন্যা কে ধরে বিছানায় বসালাম….সায়মা,রিদিতা,নাফিসার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম…ওরা সবাই চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে…

আমি ওদের ধরে বিছানায় বসালাম…তারপর শান্ত গলায় সব কথা বুঝিয়ে বললাম…রিদিতা একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,তাহলে তোর সাথে এতোদিন যা হচ্ছিলো সব ই সত্যি??

হুম.. তবে আমাদের মিশন আজ থেকে শুরু…আমার মামার বিরুদ্ধে তোরা সবাই মিলে প্রমাণ খোজা শুরু কর….

তখন শুভ বলে উঠলো প্রমাণ দিয়ে কি হবে???কি ভাবছো তুমি??তুমি প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশের কাছে যাবে আর পুলিশ তোমার মামাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে ঢুকাবে তাই
তো??এইসব চিন্তা বাদ দেও যা করার আমরাই করব…আর এ কাজে সাহায্য করবে তোমরা সবাই…কথা কি ক্লিয়ার না ভেজাল আছে????

আমরা সবাই স্বজোরে হেসে উঠলাম….তারপর মিটিং শুরু হলো কিভাবে কি করব???আমাদের প্ল্যান শেষ…কার কি কাজ সব বলে দেওয়া হয়েছে…মিটিং শেষে সবাই যে যার যার মতো চলে গেলো….

আমরাও শুয়ে পড়লাম…কিন্তু ঘুম আসছে না কোনমতে… জয়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে খুব….ইদানিং জয়ের জন্য মন যেন কেমন উড়ু উড়ু করে…এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি…

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে ক্লাসে চলে গেলাম…আজ অনেক দিন পর ক্লাস করছি….তাই ক্লাসে মন বসছে না…স্যার ক্লাস করাচ্ছেন আর আমি জয় কে নিয়ে ভেবে যাচ্ছি….হঠাৎ দেখি জয় আমার পাশে বসা…আমি জয়কে দেখেই চিৎকার দিয়ে বলি,,,তুমি এখানে???এখানে কেন এসেছো???

ক্লাসের উপস্থিত সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে….আমি জিহবায় কামড় দিয়ে বললাম,,,সরি স্যার…

কেউ আমার এই কাজের মানে বুঝলো না…এদিকে জয় উচ্চস্বরে হেসেই চলেছে…আর এত রাগ হচ্ছে বলার বাহিরে… ইচ্ছা করছে জয়কে গিয়ে ঠাস করে কয়টা থাপ্পড় দিয়ে আসি…কিন্তু চিন্তা টা মাটি চাপা দিলাম…চুপ চাপ ক্লাস শেষ করলাম…

টিফিন টাইম এখন…সবাই খেতে গেলাম…এবার ও জয় আমার পিছু পিছু গিয়েছে… আমি খেতেও পারছিনা জয়ের জন্য…অপলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে…কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায় বলেন??? উফ এই জয় কে নিয়ে আর পারিনা…. কোনমতে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম…

জয় কে ধমক দিয়ে বললাম,,,,এই তোমার সমস্যা কি বলো তো???আমার পিছু পিছু আসছো কেন??? তুমি জানো এখানে সবাই আছে চাইলেও কথা বলতে পারব না…তুমি এখন যাও প্লিজ..

জয় আমার কথার উত্তর না দিয়েই চলে গেলো…ইশ জয় কে ধমক দিয়ে এখন নিজের ই খারাপ লাগছে…টিফিনের পর আর ক্লাস করতে যাইনি… রুমে এসে শুয়ে আছি…ভালো লাগছে না…জয় আসুক তারপর না হয় সরি বলে দিব…
আমাকে ক্লাসে না দেখে রিদিতা, সায়মা আর নাফিসা এসে আমাকে দেখে গেছে…

রিদিতা এসে বলছে,,, কিরে তোর কি শরীর খারাপ?? ক্লাসে যাস নি কেন??

আসলে অনেক দিন ক্লাস করা হয়নি তাই আর কি ক্লাসে মন বসছে না…কাল থেকে ক্লাস করবো…তোরা ক্লাস কর…

তখন সায়মা চোখ টিপ্পনি দিয়ে বলল,,,ওহো বুঝেছি জয় ভাইয়া বুঝি এখানেই আছে??ওক্কে সমস্যা নেই তোরা রোমান্স কর আমার বরং ক্লাসে যাই…
রিদিতা আর নাফিসাও হো হো করে হেসে উঠলো…
এই যাবি তোরা??তোরা এমনিতেও এক লাইন বেশি বুঝিস…যাহ ভাগ…

ওরা চলে গেলে মনে মনে জয়কে অনেকবার ডাকতে লাগলাম… কিন্তু না জয় এলো না…এবার আমি ফ্যাচ করে কেদেই ফেললাম…কেঁদে কেঁদে বলছি,,,, জয় তুমি কোথায়??? আমার ভুল হয়ে গেছে…মাফ করে দেও প্লিজ…আর এমন করবো না….

জয় এসে আমার পাশে এসে বসলো…আমি জয়কে ধরেই কান্না জুড়ে দেই…জয় হাসতে হাসতে বলে,,, এই পাগলী কান্না করছ কেন??আমি কিছু মনে করিনি…আমি তোমার পাশেই ছিলাম…আর কান্না করতে হবেনা…

এখন শুয়ে আরাম করো…আমি আসছি….

না তুমি থাকো এখানে…আমার একা একা ভালো লাগছে না…তুমি থাকলে ভালো লাগবে…

না পাগলী…আমি থাকলে তোমার বান্ধুবীরা কি মনে করবে বলো???তুমি আরাম করো… আমি আবার কাল সকালে আসবো…

জয় চলে যেতেই ঘুমিয়ে পড়েছি আমি…বিকাল 5টায় ঘুম ভাঙ্গে আমার…রিদিতা এসে ডেকে তুলেছে…কিরে আজ কি হয়েছে তোর???শরীর খারাপ হয় নি তো তোর???

আরে না কিছু হয় নি…গতকাল রাতে ভালো ঘুম হয় নি…তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…

আচ্ছা তো তোর আশিক কোথায়??তাকে দেখছি না কেন???ঝগড়া করেছিস নাকি??

ধুর ঝগড়া করব কেন??ওর ইচ্ছা হলেই আসবে…এত জ্বালাচ্ছিস কেন বলতো???

বাব্বাহ মহারাণী দেখি রেগে গেছে…জয় বেচে থাকতে তোদের প্রেম হলো না…আর এখন সেই ভূতের সাথেই প্রেম করছিস…কি ভাগ্য রে তোর…

উফ তুই যাবি??? না মার খাবি???

হু যাচ্ছি…

আমি ফ্রেশ হয়ে ক্যান্টিনে গেলাম নাস্তা করতে… নাস্তা সেরে এসে… বই নিয়ে বসলাম… মাথা ব্যথা করছে…আবার বই রেখে বাহিরে গেলাম…আজ হালকা বাতাস আছে আর শীত ও লাগছে…উফ আবার ও ভুলে গেছি শাল আনতে…শাল আনতে যাবো তখনি জয় বলে উঠলো,,,এই যে মহারাণী.. নিন আপনার শাল…নিজের যত্ন করতে তো শিখো…আমি তো কয়দিন পর ই চলে যাবো…তখন কে খেয়াল রাখবে তোমার??

উহু…এত কথা বলো কেন??চুপ করে থাকবে… আর চলে যাওয়ার কথা বললে কিন্তু মেরেই ফেলব…

আমাকে আর কি মারবে বলো??? আমি তো মৃতই….আচ্ছা এখানে থাকার দরকার নেই যাও রুমে যাও…

আমি জয়ের কথামতো রুমে চলে আসি…হঠাৎ মায়ের ফোনের কথা মনে পড়লো…ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করলাম…রাত ন টা বাজতে চলল…হোস্টেলে রাত দশটার পর রুমের বাহিরে যাওয়া নিষেধ…

পানির বোতল নিয়ে আর সাথে ফোন টা হাতে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম….ক্যান্টিনের পাশেই কমন রুম…মনে হলো কমন রুমে কেউ আছে…রুমে আলো জ্বলছে..আর কারো কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে…

আমি ধীরে ধীরে কমন রুমের দিকে গেলাম…আমি দরজা হালকা ধাক্কা দিলাম…দরজা খুলতেই আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here