#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৮
#সুমাইয়া_আক্তার
দরজা খুলতেই দেখলাম,,,আমার মামা আর আমাদের বাংলা ম্যাম স্নিগ্ধা নগ্ন অবস্থায়… ছিঃ একি দেখলাম আমি!!! আমি দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলি… দ্রুত পায়ে হেটে চলে আসতেই আবার থমকে দাঁড়ালাম….
সাথে তো ফোন আছে কিছু প্রমাণ রাখলে ভালো হয়…আমি দরজার ফাকা দিয়ে ফোনের ক্যামেরা অন করে ভিডিও করছিলাম…ভিডিও করা শেষে চলে আসবো এমন সময় আমার হাত থেকে পানির বোতল পড়ে যায়….ভয়ে কাপতে থাকি আমি…ধরা খেলে শেষ হয়ে যাবো আমি…উফ কি যে করি আমি…???আমি পানির বোতল রেখেই দৌড়ে রুমে চলে আসি…রুমে এসেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ি…হাপাতে হাপাতে অনন্যা কে ফোন টা দিয়ে বললাম,,,আমাকে পানি দে…
এক নিঃশ্বাসে এক বোতল পানি শেষ করলাম…ওরা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে…নাফিসা বলে উঠলো,,,এই তুই না পানি আনতে গিয়েছিলি???তোর পানির বোতল কই???আর এভাবে হাপাচ্ছিস কেন???
আমি দম ফেলে অনন্যার হাত থেকে ফোন নিয়ে মামার সেই ভিডিও টা দেখালাম….ওরা সবাই ভিডিও টা দেখে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলো…
অনন্যা বলে উঠলো,,,ছি আমাদের স্নিগ্ধা ম্যাম এত টা নিচু কখনো ভাবতে পারিনি… আমি ও লজ্জায় মাথা টা উঠাতে পারছিলাম না…আর মামা কেও এসব দেখাতেও পারবো না…আমার মাথা কাজ করছে না…একটা মানুষ এত খারাপ হয় কিভাবে???
সেদিন রাতে আর ঘুম হলো না….তাই ফোন হাতে নিয়ে গেম খেলতে থাকলাম…কতক্ষন গেম খেলে ফোন রেখে দিয়েছি…না তাও ঘুম আসছে না…সারা রাত জেগেই কাটালাম…..আর মামার কথা ভাবতে লাগলাম…না আর ভাবতে পারছিনা…মামা আর স্নিগ্ধা ম্যাম এর কথা মনে পড়তেই গা ঘিন ঘিন করে উঠছে…
সকাল ছ টায় বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম…ফ্রেশ হয়ে এসে ক্যান্টিনে নাস্তা করতে গেলাম….নাস্তা করছি আর কাল রাতে ঘটে যাওয়া কথাগুলো ভাবছি….
আমার চিন্তায় ধাক্কা দিয়ে অনন্যা বলে উঠলো,,,এই ফাহমিন তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর…ক্লাসে যেতে হবে…আজ প্রথমেই বাংলা ক্লাস…কিন্তু ইচ্ছা করছে না ক্লাসে যেতে….
খাওয়া শেষ করে ক্লাসে গেলাম…স্নিগ্ধা ম্যামের দিকে তাকাতেই গা জ্বলে উঠছে…অসহ্য লাগছে…পুরো ক্লাসে আমরা কেউ ই মন দিতে পারলাম না…
ক্লাস শেষ করে আজ সবাই রুমেই বসে আছি…আজ আয়েশা,সামান্থা,রুশা, ফারিন, তানিয়া মিলে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম…এই আড্ডায় একটাই পার্থক্য আগে জীবিত থাকতে সবাই আড্ডা দিতাম আর আজ মৃত মানবী দের সাথে আড্ডা দিচ্ছি…দুনিয়া টা আসলেই অদ্ভুত…..
আমি আড্ডার মাঝখানে রুম থেকে বের হয়ে আসি…মন টা খুব খারাপ লাগছে…হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে আমার চোখ ধরে রেখেছে…জয় ছাড়া আর কেউ ই না…আমি হাসতে হাসতে বলি,,,জয় তুমিই এসেছো সেটা আমি ভালো করেই জানি….আমার সামনে এসো….
জয় ও মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,কি করে বুঝো যে আমি এসেছি???
এইটা ভালোবাসা রাজা মশাই…তুমি বুঝবে না…
হু তুমিই তো ভালোবাসা বুঝো তাই না!!!আচ্ছা শুনো রুমে চলো কথা আছে….
জয়ের কথামতো রুমে চলে গেলাম…আশিক স্যার আর নিশিতা ও আছে রুমে…আশিক স্যার বলে উঠলো…এবার প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এসেছে…সবার আগে মরতে হবে ওই পুলিশ কু**বাচ্চা টাকে…..
এখন শোন কিভাবে কি করতে হবে???পুলিশ টা কে জয় নিয়ে আসবে কিন্তু অন্য রূপে…আমি সব ভেবে রেখেছি…যা হবার কাল হবে…আর সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবে…
আমি ভয় পেয়ে বললাম…না আমি পারবো না থাকতে…সহ্য করতে পারবো না আমি এসব….আমার খুব ভয় করছে…
তখন জয় বলে উঠলো….আচ্ছা তোমাকে থাকতে হবে না…তুমি রুমেই থেকো….আর কাল রাতেই ওকে খুন করব আমরা…আমাদের সাথে কে কে থাকতে চাও????
তখন অনন্যা,সায়মা আর নাফিসা বলে উঠলো আমরা থাকবো….দেখতে হবে তো শয়তান টার কস্ট…ওদের কস্ট পেতে দেখলে আমরা শান্তি পাবো…আর কেউ না পারুক ওকে শাস্তি দিতে…আপনারা ওকে শাস্তি দিতে পারবেন এতেই খুব খুশি লাগছে…ওর মতো জানোয়ারগুলো কে এভাবেই মরতে হবে….
আমরা অপেক্ষায় রইলাম কিভাবে কি হবে????আমার খুব ভয় কাজ করছে….আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে…
তারপরের দিন রাতে জয় রহিম স্যারের রূপ নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছে….পুলিশের কাছে গিয়ে বলেছে,,,,স্যার আপনি তাড়াতাড়ি চলুন…রিটন স্যার আপনাকে জরুরি তলব করেছে…
আচ্ছা,, চলুন….
জয় মানে রহিম স্যার,,, পুলিশ কে হোস্টেলের পাশের পুকুর টায় নিয়ে গেছে…. আমি আর রিদিতা রুমে বসে উশখুশ করছি…কি জানি কি হচ্ছে ওখানে???আমি হা পা কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম… পায়চারি করছি আমি…পুরো শরীর কাঁপছে আমার…আমি কাপা কাপা গলায় রিদিতা কে বললাম,,,চল রিদিতা আমরা যাবো ওখানে…রিদিতা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে গেলাম….
আমরা ধীরে ধীরে পুকুর পাড়ের সামনে এসে দাঁড়ালাম… ওদের থেকে অনেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছি আমরা….দূর থেকে সব দেখছি…জয় ধীরে ধীরে রহিম স্যারের রূপ থেকে নিজের রূপে ফিরে এসেছে…
আশিক স্যার, নিশিতা,আয়েশা, সামান্তা,রুশা,ফারিন,তানিয়া, জয় সবাই উপস্থিত আছে….পুলিশ ওদের সবাইকে দেখে ভয়ে কাপতে থাকে…কাঁপতে কাঁপতে হিসু করে দেয়….কাপা গলায় বলে,,,,তোমরা এখানে কেন???তোমরা তো মারা গেছো….
তখন আশিক স্যার বলে উঠলো,,,তোদের সবাই কে মারতে এসেছি…তোদের মেরে আমরা এখান থেকে যাবো…
আশিক স্যার এক হাত দিয়ে পুলিশের গলায় চেপে ধরে…. তারপর আশিক স্যারের চেহারা এত বিভৎস হয়ে যায়…আমি চিৎকার দিয়ে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই….
(চলবে)