নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :১৯

0
723

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব_১৯
#সুমাইয়া_আক্তার

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে রুমে আবিষ্কার করি…. সবাই আমার মাথার পাশে মনমরা হয়ে বসে আছে…আর জয় রুমের মধ্যে অস্থির ভাবে পায়চারি করছে….

আমি চোখ কচলিয়ে বিছানায় উঠে বসি…জয় আমার উঠে বসা দেখে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এসে বসে….চিন্তিত দেখাচ্ছে জয় কে…আর জয়ের চিন্তার কারণ আমিই….কান্না অবস্থায় বলে,,,এই তুমি ওখানে কেন গেছো???তুমি তো ভয় পাও তাই আমিও যেতে নিষেধ করেছিলাম আমি…কেন গেছো??? সব কিছুতে বেশি বুঝো তাইনা???কথা বললে কথা শুনোনা কেন তুমি???

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে জয়…আমি জয়কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,,আমি ঠিক আছি…কিচ্ছু হয়নি আমার…একটু অজ্ঞান হয়ে গেছি আরকি…এই দেখো কিচ্ছু হয়নি আমার….

জয় আবারো ধমক দিয়ে বলল,,,চুপ একদম একটা কথাও বলবা না…চুপ করে শুয়ে রেস্ট নেও…বাহিরে বের হতে দেখলে তোমার সাথে কথা বন্ধ আর দেখতেও পাবেনা আমাকে…বুঝেছো????

এই কথা বলেই জয় রুম থেকে বের হয়ে যায়…আমি নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছি…. মুখ দিয়ে কোন কথাও বের হচ্ছেনা…আমি রিদিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,কাল রাতে কি হয়েছিল রে????

রিদিতা ভয়ে ভয়ে বলল,,,কাল কি হয়েছে আমিও জানি না রে…তুই অজ্ঞান হওয়ার পর তোকে নিয়ে আমরা এখানে চলে আসি…
তাহলে ওই পুলিশের কি হলো???তাকে কি মারে নি????

অনন্যা বলে উঠলো,,,, হুম ওকে একাই মেরেছে আমাদের আশিক স্যার…আশিক স্যার পুলিশ কে মেরেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে…আর আসবে না…দেখাও হবে না আমাদের সাথে….
আমি মন খারাপ করে খাটের এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছি…

ওরা সবাই শুয়ে পড়েছে…হঠাৎ জয় এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,,,সরি তোমাকে এভাবে বকেছি বলে…
আমি কান্নারত অবস্থায় জয়কে জড়িয়ে ধরি…জয় আমাকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,,এই যে মহারাণী এখানে যে আপনার বান্ধুবীরা আছে ভুলে গেছেন????

আমি জিহবায় কামড় খেয়ে জয় কে ছেড়ে দেই….এদিকে অনন্যা, রিদিতা, নাফিসা, সায়মা মুখ টিপে টিপে হাসছে…আমি ওদের দিকে চোখ রাঙাচ্ছিলাম…তাও ওরা হেসেই যাচ্ছে…জয় লজ্জা মুখ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়….

অনন্যা হাসি থামিয়ে বলল,,,,তোর কি ভাগ্য বলতো… এরকম একজন কে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার….আচ্ছা যখন জয় একেবারে চলে যাবে তখন কি করবি তুই????

আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,,,বেচে থাকব কিনা জানিনা… তবে আমার জীবনের অর্ধেক অংশ জুড়ে জয় বসবাস করছে আমার মনে…
নাফিসা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,হু বেচে থাকবি না বললেই হলো???মরা কি এতই সোজা??? জয় চলে গেলে ওর স্মৃতি আকড়ে ধরে বেচে থাকবি…আর দোয়া করবি যেন জয় ওপারে ভালো থাকে…..বুঝেছিস গাধি???

আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,,,হুম বুঝেছি…তোদের মতো বান্ধুবী পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের….

এরপর অনন্যা আমাকে ধমক দিয়ে বলল,,,এই যে ভূতের বউ আজ কি আর ঘুমাবেন না???সকালে ক্লাস আছে ভুলে গেলেন নাকি???তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন না হয় আবার আপনার ভূত জামাই এসে হাজির হবে…

আমরা সবাই স্বজোরে হেসে উঠি….আচ্ছা ঘুমাচ্ছি…আর হ্যা আমি ভূতের বউ….এরকম ভূতের বউ হতে কয়জনে পারে বলতো????

তারপর সবাই শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলাম…গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি…. সকাল ছয়টায় ঘুম ভাঙ্গে আমার…ওমা আজ দেখি ওরা সবাই ঘুম…ব্যাপার কি???
আমি ওদের ডেকে তুললাম….এই তোরা এখনো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিস কেন??ওঠ তারাতারি…
ওদের ডেকে দিয়ে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম…ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই মিলে ক্যান্টিনে নাস্তা করতে গেলাম…আজ সকাল থেকেই জয়কে দেখছিনা…কোথায় গেলো ছেলেটা???

নাস্তা সেরে রুমে আসলাম…ক্লাসে যাওয়ার জন্য বই খাতা নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলাম…অনন্যা,রিদিতা, নাফিসা, সায়মা ক্লাসে চলে গেছে…আমি রুমে গুনগুন করে গান গাচ্ছিলাম…সব কিছু গুছিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনি জয় এসে হাজির…রুমের দরজা আটকে দিয়ে… আমাকে দেয়ালে ঠেসে ধরে… তারপর আমাকে কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,সরি আর এভাবে বকবো না…মাফ করে দেও…এই যে কান ধরলাম আর করব না এমন…

আমি হাসতে হাসতে জয়ের গাল টেনে দিয়ে বললাম,,,এই পাগল আমি রাগ করিনি… তুমি আমাকে এভাবে শাসন করো আমার খুব ভালো লাগে…ওর মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললাম,,,আমি ক্লাসে যাচ্ছি… পরে কথা হবে…

আজকে আবার ও প্রথমে স্নিগ্ধা ম্যামের ক্লাস…উফ অসহ্য… স্নিগ্ধা ম্যাম কে দেখলেই আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আসে..কোনমতে ক্লাস শেষ করলাম…

ম্যাম বের হয়ে যাওয়ার পর বাহিরে হৈ চৈ এর আওয়াজ পাওয়া যায়…কি হয়েছে কি জানি??? তাই আমরা সবাই বুদ্ধি করে ছাদে চলে যাই…ছাদ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,গতকালের সেই পুলিশ টার লাশ পুকুরের পানিতে ভেসে উঠেছে… ইশ কি বিচ্ছিরি ভাবে মেরেছে!!!উনার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে…মাথা একপাশে ভেসে আছে… চেহারা টা পুরো আগুনে ঝলসে দেওয়া হয়েছে…

উফ এত জঘন্য লাগছে…. আমি ছাদ থেকে নেমে এসে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই…আমার চোখের সামনে ভাসছে সেই লাশ টা…আমি বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই…আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা…. নিজেকে অনেক কষ্টের সামলাই….তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসি…আজ আর ক্লাস হয় নি… আমার মামাও এসেছে হোস্টেলে…

মামাকে খুব চিন্তিত লাগছে…ভয়ে মামার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে…আমি মামার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম… মামা আমাকে দেখে চমকে উঠে…আমি মামা কে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে মামা??এতো ভয় পাচ্ছো কেন???

মামা কিঞ্চিৎ হেসে বলল,,,কই কি হবে?? কিছু নাতো???তারপর আমার আর মামার সামনে দেয়ালে লেখা ভেসে উঠেছে….এই তো সবে শুরু….তুই ও মরবি…তোকে আর ও কস্ট দিয়ে মারব…অপেক্ষায় থাক তুই…তোর শাস্তি তুই পাবি…

মামা আরো ভয় পেয়ে যায়…দ্রুত পায়ে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে যায়…আমি বুঝতে পেরেছি কে লিখেছে লেখা টা…তারপর জয় আমার সামনে আসে…জয় আমাকে দেখে বলল,,,,দেখেছো??তোমার মামা একদম বেলুনের মতো চুপসে গেছে…ওকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবেনা…পালিয়ে যাবে কোথায়??? ঠিক খুজে বের করব….

আমি আর কথা না বলেই রুমে চলে আসি…ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে ভাবছি,,,শেষে কি মামার ও এভাবে মৃত্যু হবে???এর বিভৎস মৃত্যু কিভাবে দেখব আমি???শত হলেও সে আমার মামা…রক্তের সম্পর্ক…

আমার ধ্যান ভেঙে দিয়ে রিদিতা বলল,,,এই কি ভাবছিস???জানিস ওই পুলিশের লাশের গায়ে একটা কাগজে লেখা,,,তোর পাপের শাস্তি দিয়ে গেলাম….বাকি যারা আছিস সবাই মরবি… কেউ বাঁঁচবি না…

আজ সারাদিন সেই লাশের কথাই মাথায় ঘুরছে…ভালোমতো খেতেও পারিনি…খেতে বসলেই সেই লাশের ছবি চোখের সামনে ভাসছে…সন্ধ্যায় জয়,আয়েশা,সামান্থা, রুশা,তানিয়া, ফারিন এসে হাজির…

আয়েশা বলছে,,,আজ রাতে আমেনা খালার মৃত্যু হবে…আর আমেনা খালাকে আনার দায়িত্ব ফাহমিনের…তুই এই কাজ টা করে দে…বাকিটা আমরা দেখে নিব….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here