নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :২০

0
609

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব_২০
#সুমাইয়া_আক্তার

আমি আয়েশার কথা শুনে বললাম,,আমেনা খালা কে কোথায় নিয়ে আসবো আমি???

আয়েশা বলল,,,আমাকে যেই জঙ্গল এর কাছে খুন করা হয়েছিল সেখানে নিয়ে আসবি…বাকিটা আমি দেখে নিব…এরপর আমি বিদায় নিব এই দুনিয়া থেকে…

কেমন যেন খারাপ লাগছে ওদের জন্য….একে একে সবাই চলে যাচ্ছে……জয় ও তো চলে যাবে আমাকে ছেড়ে….এই কথা ভাবতেই আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে….এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে…..

আয়েশা আমাকে ডেকে বলল,,,ফাহমিন তুই আমেনা খালা কে এখন ডেকে নিয়ে আসবি…আর বলবি তার মেয়ে অসুস্থ….কে যেন খবর পাঠিয়েছে…তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে হাসপাতালে….

আচ্ছা যাচ্ছি আমি….আমি গিয়ে আমেনা খালা কে বললাম,,,খালা তোমার মেয়ে খুব অসুস্থ… ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে…একজন লোক এসে খবর দিয়ে গেছে তাড়াতাড়ি চলো….

খালা আমার কথা শুনে ঘাবড়ে যান…আমার সাথে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যান…আমি জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাই…ওখানে আয়েশা, জয়, ফারিন, রুশা, আর তানিয়াও ছিল….

আয়েশা খালা কে দেখে বলল,,,কি খালা কেমন আছো???আমাকে মনে আছে তোমার??কি করে পারলে তোমার মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করতে???

খালা ভয়ে কাঁপছে… আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,এ মা তুমি আমাকে কই নিয়ে আসছো???আয়েশা তো মইরা গেছে…বাচলো কেমনে????

আয়েশা খালার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,,হু আমাকে খুন করা হয়েছিল…আর খুন করেছে তোমার সাহেব মানে যার হাতে সামান্য কয়টা টাকার লোভে আমাকে তুলে দিয়েছিলে….আজ তোমার শেষ দিন….তোমাকে খুন করে প্রতিশোধ নিব আমি….

খালা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,,মা আমারে মাফ কইরা দেও…আমি এই কাজ আর ভুলেও করব না…মাফ কইরা দেও….

আয়েশা এবার রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,,,,বেচে থাকলে তো এই কাজ করবে…আজ আর পালিয়ে যাবে কোথায়???আজ তোমার মরতেই হবে….
এই কথা বলেই আয়েশা খালার দুইহাত একটানে টেনে খুলে ফেলল…. আর চোখ দুটোও আঙুল দিয়ে তুলে ফেলল…. ইশ কি হৃদয়বিদারক মৃত্যু…..আমেনা খালা ছটফট করতে করতেই সেখানে মারা যায়….আর আয়েশা তার প্রতিশোধ নিয়ে চলে গেলো আমাদের ছেড়ে….

আমি রুমে এসে শুয়ে আছি…..অনন্যা এসে বলল,,,কি হয়েছে বলতো??? সব ঠিক ঠাক আছে তো???
আমি মাথা নেড়ে বললাম,,,হু আমেনা খালা মরে গেছে…আর আয়েশাও চলে গেছে….এখন বাকি থাকলো রহিম স্যার, দারোয়ান আঙ্কেল আর আমার মামা….মরতে হবে ওদের ও…সময় হয়ে এসেছে….
এই কথা শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াই…. সামান্থা,জয়,রুশা, ফারিন, তানিয়া এসেছে…ওদের মুখে হাসি… আমি ওদের হাসি দেখে বললাম,,,এবার খুশি তো তোমরা???

তখন জয় বলে উঠলো,,,উহু এখনো খুশি হইনি খুশি হবো সেদিন যেদিন রিটন আহাম্মেদ কে মারব….ওকে না মারা পর্যন্ত আমাদের কারোই শান্তি আসবে না…..

ভোর ছয়টায় আমেনা খালা হোস্টেল এর ক্যান্টিনে কাজ করে কিন্তু আজ খালা নেই….সবাই খালা কে খোঁজাখুঁজি করছে…অনেক খুজেও যখন কেউ খালা কে পেলো না…তখন খালার বাড়িতে পাঠানো হয়…খালা সেখানেও যায়নি….খালার গায়েব হওয়ার খবর শুনে মামা ছুটে এসেছে… মামা সহ পুলিশ অফিসার রাশেদ খান খালা কে খোঁজাখুঁজি শুরু করে….শেষ পর্যন্ত সেই জঙ্গলে খালার লাশ পাওয়া যায়….খালার টেনে খুলে ফেলা হাতের মুঠোয় একটা কাগজ পাওয়া যায়…কাগজে লেখা এই দুই হাত দিয়েই তো পাপের টাকা নিয়েছিলি…. তোর হাত উপড়ে ফেললাম…আর এই দুই চোখ দিয়েই তো আমাকে এই পথে এনেছিলি তাই চোখ দুটো ও খুবলে নিয়ে নিলাম….

মামা আর পুলিশ অফিসার রাশেদ খান প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছে….লাশ পোস্টমর্টেম এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়…কিন্তু রিপোর্টে কোনো তথ্যই বের হয়ে আসেনি…

কে মারছে?? কেন মারছে??এই প্রশ্নের উত্তর আমরা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানে না….আমরা সব জানা স্বত্তেও নিরব দর্শকের মতো সব দেখে যাচ্ছি….

বিকেলের দিকে মামা আমাকে টিচার্স রুমে ডেকে পাঠায়….আমি গেলাম মামার কাছে….দেখলাম মামা মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আছে…আমি মামা কে ডাক দিতেই বললেন,,,হু এসেছিস???আচ্ছা তুই কি এই খুনের ব্যাপারে কিছু জানিস???

না মামা কি বলছো তুমি??আমি কি করে জানব???

মামা কি ভেবে যেন আমাকে বলল,,,আচ্ছা তুই যা…রুম থেকে বের হওয়ার দরকার নাই….আমিও মামার কথা শুনে রুমে চলে আসি….শুনেছি মামা হোস্টেল এ পাহারায় রেখেছে… দুজন কনস্টেবল রাতের বেলা হোস্টেল এর মেইন গেইটে পাহারা দেয়….

এখন তো চিন্তা বেড়ে গেলো…কিভাবে আমরা রাতে বের হবো???জয় একটা উপায় বের করেছে… যখন কনস্টেবল দের চা দেওয়া হয় তখন ওদের চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হবে তাহলে আর আমাদের বের হতে অসুবিধে হবে না….

আজ রাত থেকে এই মিশন শুরু….রুশা,ফারিন,তানিয়া, সামান্থা, জয় বসে ডিসকাস করছে কিভাবে কি করবে???
আজ রাতে রহিম স্যার কে মেরে ফেলার প্ল্যান করা হয়েছে…

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here