নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :৩

0
621

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 3
#সুমাইয়া_আক্তার

অনন্যা এক প্রকার গরম হয়ে বলে,,,কি শুরু করছিস তুই???তুই কি পাগল হয়ে গেছিস???

আমি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম…. কিচ্ছু বলার ছিল না আমার…আমি নিঃশব্দে কান্না করছিলাম…

অনন্যা আমার কান্না করা দেখে শান্ত হয়ে বলল,,,দেখ তুই এখন অসুস্থ… আমরা জানার চেষ্টা করছি কে করেছে তোর সাথে এসব???তোর আরাম প্রয়োজন… তুই প্লিজ এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না…আমার ক্লাস আছে..আমি ক্লাসে যাচ্ছি…তুই বিছানায় শুয়ে হূমায়ূন আহমেদ এর “মিসির আলী “বই টা পড়…ভালো লাগবে…

অনন্যা আমার সিনিয়র…ওকে আপু ডাকিনা তুই করেই বলি… অনেক ভালো মনের মেয়ে অনন্যা…আমার অনেক খেয়াল রাখে…আমার রুমমেট রা সবাই আমাকে অনেক কেয়ার করে…অনেক ভালোবাসে আমাকে…

সেদিন বিকেলে খবর পাই যে মেয়েটা মানে রুশা হোস্টেল থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল সেই মেয়েটার লাশ পাওয়া যায় আমাদের হোস্টেল এর কিছু দূরে…

কি হচ্ছে এসব???কেন খুন হচ্ছে এভাবে??কেউ মারছে ওদের??

পোস্টমর্টেম এর পর জানা যায় রুশাকে ধর্ষণ করা হয়…
পুলিশ খোজার চেষ্টা করছে খুনীকে…পুলিশ আমাদের ইনকুয়েরী করতে হোস্টেল এ এসেছিলো…

আমরা যা জানি,যতটুকু জানি বলেছি…সেদিন রাতের বেলা আবার সেই গানের সুর…আমাকে পাগল করে দিচ্ছে…আমি বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গেলাম… জানালা খুলে দেখি সেই মেয়েটা আমাকে বলছে আমাকে বাঁচাও প্লিজ….

আমি যেতে চাইলে রিদিতা বলল,,এই কিরে এত রাতে জানালা খুলেছিস কেন??বন্ধ কর…

আমি জানালা বন্ধ করতে যাবো তখন দেখি মেয়েটা সেখানে নাই…মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে একটা কালো বিড়াল আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে…আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি জানালার সিটকিনি লাগিয়ে দিলাম…আজকের রাতটা ও যেন কেমন নেশা মাখানো রাত…আমার মধ্যে নেশা কাজ করছে…মনে হচ্ছে কেউ ডাকছে আমাকে…

বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম…ঘুম আসছে না আমার…কি করব কিছুই বুঝতেছিনা….

সকালে সবাই যে যার যার মত ক্লাসে চলে গেলো…আমাকে ক্লাসে যেতে নিষেধ করছে মামা…বলল,,,আর ও কয়েকদিন পর যেন ক্লাসে যাই…

আমি শুয়ে শুয়ে “মিসির আলী” বইটা পড়ছিলাম…পড়তে পড়তে পানির পিপাসা লাগে… রুমে যে বোতল থাকে ওই বোতলে পানি শেষ হয়ে গেছে…

তাই ক্যান্টিনে গেলাম পানির বোতল নিয়ে… রিনা খালাকে বললাম,,,খালা এক বোতল পানি দেও…
খালা পানি দিলো…আমি পানি নিয়ে চলে আসছি উপরে…পানির বোতল টেবিলেই রাখতেই দেখলাম পানিগুলো রক্তে লাল হয়ে আছে…
এই মাত্রই তো ভালো পানি আনলাম…আমি পানির বোতল নিয়ে আবার ও ক্যান্টিনে গেলাম খালা কে দেখাবো বলে…

খালাকে দেখাতেই বলল,,,এ কি বলছ গো মণি??আমি তো ভালো পানিই দিলাম…এই যে দেখো পানি তো পরিস্কার…

আমি বোতল এর দিকে তাকাতেই দেখি পানি ঠিক আছে…আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ক্যান্টিন থেকে চলে আসি…

রুমে এসে বিছানায় বসতে যাবো তখন দেখি দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা,,, আমাদের খুন করে তোরা পার পাবি ভেবেছিস???তোদের পর্দা ফাঁস করবো…

আমি রুমে চিল্লাতে থাকি,,, কে ওখানে কে???কে করছে এসব??এত সাহস থাকলে আমার সামনে আয়…

কেউ ই আসলো না…লেখাগুলো আস্তে আস্তে মুছে গেলো… আমি ভয়ে সূরা পড়তে থাকি… ভয়ে খাটের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছি আমি…পুরো শরীর ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে গেছে….

মামা এসেছে আমাকে দেখতে…আমাকে এই অবস্থায় দেখে বলল,,,এই ফাহমিন কি হয়েছে তোর???আর নার্স কোথায়???

আমি বলি,,, মামা নার্স তো আজ সকালে আসেই নি…মামা ক্রুদ্ধ হয়ে নার্স কে ফোন করে অনেক বকাঝকা করলেন…

কিছুক্ষন পর নার্স এসেছে…

মামা থাক আর বকো না ওকে… আমি ঠিক আছি…

মামা আমাকে রেখে চলে গেলো…নার্স আমার পাশে বসে গল্প করছিলো…

হঠাৎ হাড্ডি চাবানোর মতো শব্দ আসছিলো…আমি নার্স কে বললাম,,,আপনি কি কোন শব্দ শুনছেন???হাড্ডি চাবানোর মতো???

নার্স বলল,,,নাতো এমন শব্দ আসবে কেন???হয়ত তোমার ভুল হচ্ছে…

আমি আবার ও সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছি…মনে হচ্ছে আওয়াজ টা জানালার পিছন থেকে আসছে…

আমি জানালা খুলেই দেখলাম,,,একটা মেয়ে পিছন দিকে ফিরে কিছু একটা খাচ্ছে…মেয়েটার পরনে হালকা সবুজ রংয়ের টপস ছিলো…আমি আওয়াজ দিলাম কে ওখানে???

তখন মেয়েটা পিছন থেকেই তার মাথা টা ঘুরিয়ে সামনে আনলো…চেহারা টা পুরো থেতলে আছে…খুব বিশ্রী লাগছে… আমি ওর চেহারা দেখেই বমি করতে করতে বেসিনে চলে গেলাম…বেসিনের আয়নার দিকে তাকাতেই আয়নার ভিতর থেকে এক টা কালো চামড়া ছাড়া হাত আমার মুখ চেপে ধরলো…আমি চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি…

ঠিক কতক্ষন আমার হুশ ছিলোনা আমি জানিনা…যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে…নার্স তখন আমার পাশে বসা…তিনি আমাকে বললেন,,তুমি হঠাৎ বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছো…

আমি খুব অবাক হয়ে যাই…নার্সের সামনেই এত কিছু ঘটলো,,,আর নার্স কিনা বলছে আমি এমনিতেই বমি করছিলাম???

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নার্স কে জিজ্ঞেস করলাম,,,আপনি কি সত্যি আর কিছু দেখেন নাই???

নার্স বলল,,,না কি দেখবো আমি???কি দেখার কথা বলছো তুমি???

আমি বললাম,,,,আয়নার ভিতর থেকে একটা বিশ্রী হাত আমার মুখ চেপে ধরে… তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই…

আমার রুমে থাকা সবাই অবাক হয়ে বলছে,,,এই ফাহমিন কি হয়েছে তোর???মনে হয় তোকে কোন জ্বীন আছড় করেছে…দাড়া কাল এক হুজুর দেখাবো…

আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি…কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না…

রাত টা কোনমতে পার করলাম….সকাল বেলা আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে…তখন পাঁচটা বাজে…

এই ফাহমিন,,, আমি রিনি…একটু বাহিরে আসবে???তোমার সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে….

আমি দরজা খুলতেই দেখি রিনি দাঁড়িয়ে আছে… এত সকালে কে আসবে???

জানিনা তো…উনি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে…তোমাকে যেতে বলল….

আচ্ছা যাও আমি আসছি….

চোখ মুছতে মুছতে পুকুর পাড়ে চলে গেলাম…ওখানে কাওকেই দেখতে পেলাম না…খুব রাগ হচ্ছিলো…এতো সকালে এরকম করার কি মানে হয়???

রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে যাচ্ছিলাম…তখনি রিনি এসে আমার হাত ধরে রেখেছে…আমি রিনিকে ধমক দিয়ে বললাম,,,এই রিনি আমার হাত ছাড়ো…কি হচ্ছে এসব???

রিনি হাসতে হাসতে বলল,,,আজ তুই বাঁচতে পারবি না…তুই আজকেই মরবি…এই কথা বলেই,,,রিনি হো হো করে হেসে উঠলো…

তার হাসির সাথে সাথে আর ও দুইজনের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম…

আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন আমাকে আটকে রেখেছে… আমার নাড়াচাড়া করার কোন শক্তি নেই…

রিনির চেহারা অসম্ভব রকমের বিশ্রী দেখাচ্ছে….রিনি তখনো হেসেই যাচ্ছে…আমার সামনে আর ও দুইটা কালো ছায়া এগিয়ে আসছে…

আমার কোন শক্তি নেই সেখান থেকে পালিয়ে আসার…মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ ও বের হচ্ছেনা আমার…আমি যেন বোবা হয়ে গেছি…

ওরা তিনজন মানে তিনটি কালো ছায়া… আমাকে ঘিরে ধরেছে…ওদের ধারালো নখ দিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করছে…মনে হচ্ছে আমার শরীরে কাটা বিধে যাচ্ছে…আর সহ্য করতে পারছিনা ….চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত…হাত পা ক্রমশ অবস হয়ে আসছে…চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আমার…কিছু দেখতে পাচ্ছিনা আমি……

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here