নীল চিরকুট পাঠ-১১

# নীল চিরকুট
# লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

১১.

‘ তোর কি মনে হয়? এতোকিছুর পরও ওই ফাজিলটাকে রিকুয়েষ্ট করবো আমি? ইম্পসিবল!’

নীরা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বিরক্ততে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,

‘ দরকারটা আমাদের নমু। তাই রিকুয়েষ্টটা আমাদেরই করতে হবে। এতো ইগো দেখালে কি চলে বল?’

নীরার কথায় রাগে গা জ্বলে উঠল নম্রতা। চোখের আগুনে নীরাকে ঝলসে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,

‘ ইগো? আমি ইগো দেখাচ্ছি? এটাকে ইগো নয় সেল্ফরেসপেক্ট বলে। মানুষের মিনিমাম সেল্ফরেসপেক্ট থাকা উচিত। আর আমার তা আছে। সো,আমি যাচ্ছি না। ব্যস!’

নীরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

‘ প্লিজ দোস্ত। দু’মিনিটের জন্য “সেল্ফরেসপেক্ট” ওয়ার্ডটা ভুলে যা। কাজটা হয়ে গেলে আবার মনে করে নিস। আপাতত এসাইনমেন্টটা কমপ্লিট করতে হবে। নয়তো… শেষ! এক্কেবারে ফেইল। প্লিজ দোস্ত!’

নম্রতা স্পষ্ট গলায় বলল,

‘ ফেইল হলে ফেইল তবুও ওই ব্যাটার কাছে যাবো না আমি। সামান্য একটা ডাক্তার হয়ে আকাশ ছোঁয়া ভাব। উনাকে দেখে কি মনে হয় জানিস? মনে হয়, এই দুনিয়ায় সেই একমাত্র ডাক্তার আর কোনো ডাক্তার এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে নি আর করবেও না। ব্যাটা, বেয়াদব!’

নীরা নম্রতা থেকে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়াল। আড়চোখে নম্রতার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ নতুন ডাক্তার তো তাই। মেডিক্যালের লেকচারারদের ভাব দেখানোটা স্বাভাবিক। তারওপর তুই যা করেছিস।’

নাক ফুলিয়ে নীরার দিকে তাকাল নম্রতা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

‘ আমি করেছি? কি করেছি আমি? বল কি করেছি? এখন তো সব দোষ আমাকেই দিবি। তুই আমার ফ্রেন্ড নামে কলঙ্ক। এই মুহূর্তে ওই ব্যাটার চামচার খাতায় নাম লিখা গিয়ে যা।’

নীরা মুখ কালো করে বলল,

‘ ধুর! শুধু শুধু বাজে বকছিস নমু। চল না প্লিজ। পরশো এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। না দিলে এক ইয়ার লস। আশরাফুল স্যারকে তো চিনিস। ব্যাটা কেমন স্ট্রিক্ট! এসাইনমেন্ট জমা না দিলে শুধু এফ গ্রেড না এর থেকেও বেইজ্জতের কিছু থাকলে তাই দিয়ে দিবে। তারপর মিলাদের গা জ্বলানো কথা। আমাদের ইমেজের প্রশ্ন চলে আসছে দোস্ত। বাসায়ও বাঁশ খেতে হবে। প্লিজ নমু , রাজি হয়ে যা না। প্লিজ, প্লিজ। বিপদে পড়লে কি এতো ভাবলে চলে?’

নম্রতা জোরে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। হসপিটালের দিকে চোখ রেখে খানিক ভেবে বলল,

‘ বেশ! চল। কিন্তু ওই ফাজিলটার সাথে একটা কথাও বলবো না আমি। যা বলার তুই বলবি। ওকে?’

নীরা খুশি হয়ে বলল,

‘ ওকে,ওকে।’

নিজের স্বার্থের কথা ভেবেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হসপিটালের ভেতরের দিকে এগিয়ে গেল নম্রতা আর নীরা। ডক্টরের চেম্বারের সামনে এসে দাঁড়াতেই তার এসিস্ট্যান্টকে ডেকে জিগ্যেস করল নীরা,

‘ এক্সকিউজ মি? ডক্টর.আরফান চেম্বারে আছেন?’

এসিস্ট্যান্ট মাথা নাড়লো। অতিরিক্ত ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,

‘ জ্বি না। স্যার, ক্লাসে আছেন। দুটোয় ক্লাস শেষ হবে।’

এসিস্ট্যান্টের কথা শুনে চোখ কপালে উঠল নম্রতার। কী বলছে এসব? দুটোই ক্লাস শেষ হবে? অথচ, এখন বাজছে মাত্র সাড়ে বারো। নম্রতা কপাল কুঁচকে নীরার দিকে তাকাল। নীরাও অসহায় হরিণীর মতো মুখ করে চেয়ে রইল। আবারও এক দফা রাগ গিয়ে পড়ল ওই মানুষটির উপর। ব্যাটা সবসময় কোনো না কোনো ঝামেলা পাকায়। সৃষ্টিকর্তা হয়তো এই লোকটিকে ঝামেলার ফুল প্যাকেজ হিসেবেই এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সাথে আস্ত বেয়াদবও বানিয়েছেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে করিডোরের চেয়ারে গিয়ে বসল নম্রতা। নীরা মুখ ফুলিয়ে নম্রতার দিকে তাকাল। নম্রতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ এই ব্যাটা ইচ্ছে করে এমন করছে। কোনো ক্লাস ফাস নাই বুঝলি? আমাদের পেরেশানি বাড়ানোর সূক্ষ্ম চেষ্টা চালাচ্ছে খাটাসটা। দেড়টা থেকে যে আলামিন স্যারের ক্লাস, মনে আছে তোর? মাসে একটা মাত্র ক্লাস নেয় স্যার। ক্লাসটা টু মাচ ইম্পোর্টেন্ট।’

নম্রতার কথায় চাপা আর্তনাদ করে উঠল নীরা। পাশের চেয়ারটাতে ধপ করে বসে পড়ে বলল,

‘ মনে আছে কিন্তু এটাও তো ইম্পোর্টেন্ট দোস্ত। আজ ইনফরমেশন না পেলে একদিনের মাথায় তো এসাইনমেন্টটা শেষও করতে পারবো না। তারপর আবার ডক্টরের রিকমেন্ডেশন লাগবে। আজ কথা না বলে গেলে এরজন্যও ঘুরতে হবে আমাদের।’

রাগে চোখ-মুখ কুঁচকে খানিক শক্ত হয়ে বসে রইল নম্রতা। বিরবির করে বলল,

‘ আশরাফুল স্যার কেন যে এই ডাক্তারের কাছ থেকেই রিকমেন্ডেশন নিতে বললো আল্লাহ জানে। ঢাকায় কি আর কোনো ডাক্তার ছিলো না?’

নীরা দুঃখী দুঃখী কণ্ঠে বলল,

‘ স্টুডেন্টদেরকে স্যারের ইচ্ছেমতো ছয়জন ডক্টরের আন্ডারে ভাগ করে দিয়েছেন স্যার। এই টপিক সম্পর্কে হয়ত এই ছয়জন ডক্টরই ভালো ধারনা দিতে পারবে। আর আমাদের ভাগ্যের দোষে এখানে এসে পড়েছি আমরা। তবে,দোষটা কিন্তু ডাক্তারের নয় তোর। লোকটার কতো অমায়িক ব্যবহার দেখেছিস?তুই যদি উনার সাথে ঝামেলা না করতি তো এতোটা পেরেশানি হতো না আমাদের। ‘

নম্রতা রাগী চোখে তাকাল। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ সেই! সব দোষ তো আমারই। আসলে, দোষ নয় ভুল। আমার প্রথম ভুলটা হলো, সাইকোলজির মতো ফাউল একটা সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করার ডিসিশন নেওয়া। আর দ্বিতীয় ভুল হলো, তোর মতো ডাফারকে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে মেনে নেওয়ার ডিসিশন নেওয়া। ডাফার একটা! ‘

নীরা আর কথা বাড়ালো না। দীর্ঘ দেড় ঘন্টা পর ডক্টর.আরফান আলম কেবিনে এসে ঢুকলেন। তারা দু-দুটো প্রাণী যে কেবিনের সামনে বসে আছে সেদিকে ভুলেও তাকালেন না। এমন একটা ভাব নিলেন যেন এই দুনিয়ায় কেবিনের দরজা আর উনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বস্তু নেই। ব্যাপারটা নম্রতার আত্মসম্মানে লাগল। দরজার উপর লেখা,

“ডাঃ আরফান আলম
এমবিবিএস, এমসিপিএস(মেডিসিন)
প্রভাষক
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ”

দেখেই নেইম-প্লেটটা করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গার পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল থেকে প্রবল হয়ে উঠল নম্রতার। নিজের রাগটা যথারীতি নিয়ন্ত্রণ করে নীরার দিকে তাকাল। নীরা ভাবাবেগ শূন্য গলায় আবারও এসিস্ট্যান্টকে ডাকল,

‘এক্সকিউজ মি? ডক্টর তো এসেছেন। উনাকে গিয়ে বলুন ভার্সিটি থেকে দু’জন স্টুডেন্ট এসেছে উনার সাথে দেখা করার জন্য।’

লোকটি চরম বিরক্তি নিয়ে ভেতরে গেলো। মুহূর্তেই ফিরে এসে বলল,

‘স্যার মাত্রই ক্লাস নিয়ে ফিরলেন। এখন লাঞ্চ করবেন। আগামী আধঘন্টা কারো সাথে দেখা করবেন না।’

নম্রতার রাগটা এবার আকাশ ছুঁলো। ক্ষেপে গিয়ে বলল,

‘ আশ্চর্য তো! দুটো মেয়ে সেই দুপুর থেকে ওয়েট করছে আর সে খাবার নিয়ে পড়ে আছে? পাঁচ মিনিট পর লাঞ্চ করলে কি মরে যাবে নাকি? লাঞ্চ তো আমরাও করি নি কই আমরা তো তার মতো খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি না। আজাইরা!’

নীরা নম্রতার ডানহাতটা শক্ত করে চেপে ধরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে জোরপূর্বক হেসে বলল,

‘ ইট’স ওকে। আমরা অপেক্ষা করছি।’

ডক্টর.আরফানের এসিস্ট্যান্টকেও তার মতোই বেয়াদব বলেই মনে হলো নম্রতার। নম্রতাদের থাকা না থাকা তার কাছে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব পেলো বলে মনে হলো না। নম্রতাদের দিকে বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হেলতে দুলতে চলে গেলো। এসিস্ট্যান্টের এমন ব্যবহারে মেজাজটা আরো দু ডিগ্রি তেতে গেলো নম্রতার। নিজেদেরকে ফেলনা প্রাণীর মতো মনে হতে লাগলো। “ডক্টর” নামক শব্দটির উপরই একধরনের বিতৃষ্ণা জন্মাতে লাগলো। মনটা কালো রঙের পর্দায় ঢেকে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে। সকাল সাতটাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে হল থেকে বেরিয়েছিল দু’জনে। ক্লাস শেষ করে দু’ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করে চলেছে শুধুমাত্র পাঁচ মিনিট সময় পাওয়ার অপেক্ষায়। অথচ সেই পাঁচ মিনিটের জন্যও দেখা দিতে পারছেন না ডক্টর.আরফান আলম। তার প্রতি বিদ্বেষটা নম্রতার নতুন নয় তবে আজ যেন তা প্রকাশ পাচ্ছে এক নতুন রূপে। ঘড়ি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে আরো আধাঘন্টা পাড় করল নম্রতারা। ক্ষুধা আর বিরক্তিতে শরীর মিইয়ে পড়ছে প্রায়। এমন সময় তার এসিস্ট্যান্ট এসে বলল,

‘ এখন রোগী দেখার সময়। আপাতত বাড়তি মানুষের সাথে দেখা করা সম্ভব নয়। বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রোগী দেখেন না স্যার। হাসপাতালেই থাকে না। পাঁচটা বাজতে মাত্র আড়াই ঘন্টা বাকি। এর মধ্যে রোগী দেখা শেষ করতে হবে। রাউন্ডেও যেতে হবে। আপনারা সাড়ে সাতটার দিকে দেখা করতে পারবেন। আপনারা অপেক্ষা করতে পারেন। নয়তো চলে যেতে পারেন।’

এটুকু শোনার পর মেজাজটা ঠিক রাখা একবারেই দুষ্কর হয়ে উঠল। আরে বাবা, দেখা না করতে চাইলে আগে বললেই হতো এভাবে ভোগান্তিতে ফেলার মানেটা কি? কি মনে করে সে নিজেকে? প্রিন্স চার্মিং? নাকি মহাজান্তা? দেখতে তো আস্তা হনুমান আর গুণে আস্ত একটা বেয়াদব।

‘ দেখেছিস? লোকটা কেমন ঠান্ডা মাথায় বদলা নিচ্ছে। সেদিন এতোকিছুর পরও উচ্চবাচ্য করেননি। আজও না। চুপচাপ থেকে তার থেকেও বেশি নাচিয়ে ছেড়ে দিলেন।’

নম্রতা বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ তুই কি এখানে ওই লোকের প্রসংশা করার জন্য বসে আছিস? ব্যাটা পাঁচটা থেকে সাতটা পার্সোনাল টাইম স্পেন্ড করে। ওই সময়টুকু থেকে পাঁচ মিনিটও আমাদের দেওয়া যেত না? সেই বারোটা থেকে বসে আছি। ন্যূনতম মানবিকতাটা থাকা উচিত।’

নীরা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তো? কী করবি এখন? সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবি?’

‘ সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হলে ফিরব কখন? আর সাড়ে সাতটায় যে এই ভদ্রলোক আমাদের সাথে দেখা করতে রাজি হবেন তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে? মাঝে থেকে হলের ম্যামের কাছে পানিশমেন্ট খেয়ে বসে থাকব।’

দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে আরও আধ ঘন্টা মতো বসে রইল তারা। তারপর সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। আরফান নিয়মমাফিক রোগী দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল পাঁচটায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে ঠিক সাতটায় আবারও হাসপাতালে ঢুকল সে। নীরা ঘড়ি দেখে বিরবির করে বলল,

‘ বেশ পানচুয়াল।’

নম্রতা রাগী চোখে তাকাতেই চুপ হয়ে গেল নীরা। ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত নীরা-নম্রতার ডাক পড়ল রাত আটটা কুড়ি মিনিটে। হিমশীতল কেবিনে বসে থাকা আরফান তার থেকেও হিমশীতল কন্ঠে বললেন,

‘ বসুন।’

নীরা, নম্রতা চেয়ার টেনে বসল। দুজনেই ক্লান্তিতে পর্যুদস্ত। চুল উসকো-খুসকো , এলোমেলো। আরফান সেসব কিছু পাত্তা না দিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

‘ আপনারা হয়ত সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছেন। স্যারের মেইল পেয়েছি আমি। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। বলুন, কিভাবে সাহায্য করতে পারি।’

নম্রতা অত্যন্ত ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকাল। এই লোকটির সাথে সাক্ষাৎ-ই তার ঝামেলাপূর্ণ। শুধুমাত্র এই ব্যক্তির জন্য নতুন করে হারানোর কষ্টে কাঁদতে হয় তাকে। তার ওপর আজকের এই ভোগান্তি! নম্রতাকে চুপ থাকতে দেখে। নীরাই আলোচনা এগিয়ে নিল। সবরকম তথ্য নিয়ে আলোচনা শেষ করতে করতে ঘড়িতে সাড়ে নয়টার ঘন্টা বাজল। আরফানকে ধন্যবাদ দিয়ে অনেকটা দৌড়েই কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো তারা। আরফান তাদেরকে গাঢ় দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিল। নম্রতার ঘৃণাভরা দৃষ্টিটা কি চোখে পড়েছিল তবে? নম্রতারা হলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দশটা বাজল। যথারীতি তাদের ঢুকতে দেওয়া হলো না। গেইটের দারোয়ানকে টাকা খাইয়েও ভেতরে ঢুকার সু্যোগ হলো না। শেষমেশ বাধ্য হয়েই সাড়ে দশটার দিকে ধানমন্ডিতে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো তাদের। সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে ভারি রাগ নিয়ে বলল নম্রতা,

‘ এতো রাতে একা কোথায় গিয়েছি আমরা? বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে এগারোটার বেশি বাজবে। রাস্তাঘাটে কোনো দূর্ঘটনা হলে? সব দোষ এই ডাক্তারের। এই লোকটাকে আমার সহ্যই হচ্ছে না। বেয়াদব!’

নীরা জবাব দিল না। নম্রতা তেজ নিয়ে বলল,

‘ কী হলো? বোবা বনে গেলি কেন হঠাৎ?’

নীরা শূন্য দৃষ্টিতে নম্রতার দিকে তাকাল। কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল,

‘ আমরা তো একটা ভুল করে ফেললাম নমু।’

নম্রতা ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

‘ কী ভুল?’

‘ ওই লেকচারার, আই মিন নিষাদ নামক ছেলেটা তো ডক্টর আরফানের বন্ধু। আমরা উনার থেকে নিষাদের ঠিকানা নিতে পারতাম। ওই সময়ে মনেই ছিল না।’

নম্রতার মুখে কালো ছায়া দেখা গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,

‘ চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী? পরশু তো আমরা আবারও আসছি। তখন টেকনিক্যালি জিগ্যেস করলেই হবে। ব্যাটাকে একবার পেয়ে গেলে বুঝাব মজা।’

নম্রতা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। হঠাৎ করেই আবিষ্কার করল মনটা ভালো নেই তার। সব মিলিয়ে নিজের উপরই ভীষণ বিরক্ত সে। এই অসহ্যকর জীবনটা আর এক দন্ডও ভালো লাগছে না তার। সেই ‘সে’ কে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত সে। ধৈর্য্যের বাঁধ এবার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। আর কত সহ্য করে যায় এই বিষাদ?

#চলবে…

[ পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। আগের লেখাটুকুই দেওয়া হয়েছে। আজ লিখতে পারি নি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here