পদ্মফুল #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা |১৬|

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৬|

পদ্ম আমতা আমতা করে বললো,

‘ক-কিছু না।’

রুবি হোসেন কপাল কুঁচকে এসে ফোনটা পদ্ম’র কাছ থেকে নিয়ে নিলেন। তারপর পদ্ম-কে বললেন,

‘তুমি উপরে যাও। আমি আদিদের সাথে কথা বলছি।’

পদ্ম মুখ কালো করে উপরে উঠে গেল।

‘কেমন আছো, আদিদ?’

‘ভালো আছি, মা। তোমরা কোথায় ছিলে? তখন থেকে তোমাদের নাম্বারে কল করছি, ধরছিলে না কেন?’

‘আসলে একটু ব্যাংকে গিয়েছিলাম, কাজ ছিল।
তোমার কী খবর, আবার কবে আসছো?’

‘সিউর নেই মা। দেখি, সময় পেলে চলে আসবো। আচ্ছা, বাবা আর কোথায়?’

‘এই তো আছে আমার সামনেই।’

‘আচ্ছা। আর ঐদিকে সব ঠিক আছে তো? পদ্ম-কে নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?’

‘উমম, না তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি আর তোমার বাবা মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর ব্যাপারে।’

আদিদ অবাক হয়ে বললো,

‘কী সিদ্ধান্ত?’

‘বলবো, তুমি বাসায় আসলে তোমাকে সব বলবো।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে। রাখছি, মা।’

‘আচ্ছা বাবা, তাড়াতাড়ি আবার বাসায় এসো। তোমাকে আমরা খুব মিস করছি।’

‘আচ্ছা। চিন্তা করো না, খুব তাড়াতাড়িই চলে আসবো ।’

কথা শেষ করে রুবি হোসেন বাঁকা চোখে আকবর সাহেবের দিকে তাকালেন। রাগি গলায় বললেন,

‘ঐ মেয়ে আদিদ-কে কী বলতে চাইছিল?’

আকবর সাহেব ঢোক গিললেন। শুকনো মুখে বললেন,

‘তা আমি কী করে বলবো।’

রুবি হোসেন তখন চোয়াল শক্ত করে বললেন,

‘শুনো, তোমাকে লাস্ট বারের মতো সাবধান করছি। ঐ মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকো। নয়তো তোমার জন্য আমাকেও ফাঁসতে হবে।’

আকবর সাহেবকে শাসিয়ে রুবি হোসেন নিজের রুমে চলে গেলেন। আকবর সাহেব ভীত প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় বউ-কে আর কিছু বলতে পারলেন না। বউয়ের মুখের উপর কথা বলার সাহস তার কোনো কালেই ছিল না। হয়তো কখনো হয়েও উঠবে না।

.

পুরোটা সকাল পদ্ম তার রুমে কাটাল। কেমন যেন এক অবসাদ তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। সে বুঝতে পারছে তার শরীর, মন কিছুই ঠিক নেই। সবকিছু এলোমেলো, অগোছালো লাগছে। তার সাথে কিছু ঠিক হচ্ছে না। তার ভীষণ অসহায় লাগছে। এইভাবে এই বাড়িতে থাকতে পারবে না সে, আজই সে পালিয়ে যাবে।

তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। পদ্ম জিগ্যেস করে,

‘কে?’

‘পদ্ম আমি, বড়োমা। দরজাটা খুলো।’

পদ্ম উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। রুবি হোসেন প্রসন্ন হেসে ভেতরে ঢুকলেন। পদ্ম-কে বললেন,

‘কী হয়েছে পদ্ম, মন খারাপ?’

পদ্ম মাথা নাড়িয়ে “না” করলো। রুবি হোসেন আলতো হেসে বললেন,

‘জানি, মন খারাপ। আচ্ছা, তোমার মন’টা ভালো করে দিব?’

পদ্ম অবাক কন্ঠে বললো,

‘কীভাবে?’

রুবি হোসেন মুচকি হাসলেন। বললেন,

‘আরাফাতের সাথে কথা বলবে?’

পদ্ম যেন বিস্মিত হলো। সে চেনে না জানে না একটা ছেলের সাথে কেন কথা বলতে যাবে? পদ্ম ইতস্তত কন্ঠে বললো,

‘না না বড়ো মা। আমি উনার সাথে কেন কথা বলতে যাবো? উনাকে তো আমি চিনি না। এমন অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে আমি কীভাবে কথা বলবো?’

‘কথা বললেই না অচেনা মানুষ চেনা মানুষ হওয়ার সুযোগ পাবে। একবার ওর সাথে কথা বলেই দেখো না। তখন বুঝতে পারবে, ছেলেটা কেমন। জানো তো, মানুষের ব্যবহারই বংশের পরিচয়। শুধু একবার কথা বলে দেখো, তারপর তুমি যা খুশি তা সিদ্ধান্ত নিও।’

পদ্ম অস্বস্তিতে পড়ে গেল। এইভাবে হুট করেই একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলা যায় নাকি? আর সে কী কথাই বা বলবে? খালি খালি তাকে লজ্জায় পড়তে হবে।

পদ্ম-কে চুপ থাকতে দেখে রুবি হোসেন বললেন,

‘কী হলো? এইভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? শুনো, জীবন এইভাবে চলে না। জীবনে সবসময় এগিয়ে যেতে হয়। আর সেই এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা প্রোপার গাইড লাইন। আর সেই গাইড লাইন’টা কেবল দিতে পারে, একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী। শুনো মা, তোমাকে আমি আজীবন আমার বাসায় রাখতে পারবো, আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, আমি জানি একসময় তুমি নিজে থেকেই আর এখানে থাকতে চাইবে না। কারণ তখন তোমার নিজেকে নিজের কাছে বোঝা মনে হবে, মনে হবে তুমি আমাদের জন্য একটা বাড়তি চাপ। তখন তুমি নিজেই আর এই বাড়িতে থাকতে চাইবে না। কিন্তু এছাড়া আর যাবে কোথায়? মামা, মামীর কাছেও আর ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা কি সম্ভব? না, সম্ভব না। বাধ্য হয়ে তোমাকে এখানে থাকতেই হবে। আর তাই শুধুমাত্র তোমার কথা ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্ত’টা নিয়েছি। ইনফেক্ট, আদিদও এটাই চায়। আমি একটু আগেই এই ব্যাপারে আদিদের সাথে কথা বলেছি। আর সে খুব খুশিও হয়েছে। ছেলের সমস্ত ইনফরমেশন আমি ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি যেন সে ও ঐদিক থেকে একটু খোঁজ খবর নিতে পারে। তোমাকে তো আর যার তার হাতে তুলে দেওয়া যায় না, সবকিছু দেখে শুনে তারপর আমরা এগুবো। তাই বলছিলাম, ছেলের সাথে তুমি আগে কথা বলো। নয়তো, তুমি বুঝবে না ছেলে কেমন। কথা বললে তোমার নিজের কাছেই সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’

পদ্ম’র মস্তিষ্ক এবার ভরে গেল একগাদা চিন্তায়। নিউরনগুলো সব জেগে উঠেছে। প্রচুর ভাবতে হবে তাকে। কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ডাক্তারবাবু ও যেখানে মত দিয়েছে, সেখানে তার একবার হলেও ব্যাপার’টা নিয়ে ভাবা উচিত। সত্যিই তো এইভাবে তো চলা যায় না। আর মেয়েদের জীবনে তার একমাত্র আশ্রয়’ই হলো শ্বশুরবাড়ি। যদি সেই বাড়ির মানুষগুলো ভালো হয় তবে তো সেই মেয়েকে আর পেছন ফিরে তাকাতেই হয় না। তার জীবন ধন্য। তবে কি তারও জীবনকে একবার সুযোগ দেয়া উচিত? এইবার যদি সত্যি সত্যিই ভালো কিছু হয়? যদি সত্যি সত্যিই তার জীবন ঐ একজন মানুষের জন্য বদলে যায়, তবে খারাপ কী তাতে? এমন ছন্নছাড়া জীবনের চেয়ে, একটা পরিপূর্ণ জীবন চাওয়া’টা কি উত্তম নয়?

পদ্ম রাজি হয়। রুবি হোসেন খুশি খুশি গলায় বললেন,

‘কই, তোমার মোবাইল’টা দাও তো; আমি আরাফাতের নাম্বারে কল লাগাচ্ছি।’

পদ্ম ফোনটা এগিয়ে দিলে, রুবি হোসেন উনার কাঙ্খিত নাম্বারে কল দিলেন। দু’বার বাজতেই কল’টা কেটে গেল। রুবি হোসেন বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘কেটে দিল কেন?’

সঙ্গে সঙ্গেই আবার ফোন’টা বেজে উঠল। রুবি হোসেন তখন হেসে বললেন,

‘এই যে কল ব্যাক করেছে।’

কল’টা তিনি রিসিভ করলেন। ওপাশের মানুষ’টা হয়তো উনাকে সালাম দিয়েছে তাই তিনি সালামের জবাব দিয়ে কথা শুরু করলেন,

‘আমি রুবি হোসেন বলছি। ভালো আছো বাবা?’

‘….’

‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি। তোমার বাসার সবাই ভালো আছেন তো?’

‘….’

‘যাক, শুনে ভালো লাগল। আচ্ছা তো যেই জন্যে কল দিয়েছিলাম, আসলে তুমি চাচ্ছিলে না পদ্ম’র সাথে আগে থেকেই একটু কথা বলে নিতে, আর পদ্ম ও এখন রাজি হয়েছে তোমার সাথে কথা বলতে। ও এখন আমার সামনেই আছে, নাও তুমি ওর সাথে কথা বলো।’

রুবি হোসেন পদ্ম’র দিকে ফোন’টা এগিয়ে দিলেন। পদ্ম’র ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সে কাঁপাকাঁপা হাতে ফোনটা নিল। রুবি হোসেন তখন হেসে বললেন,

‘তুমি কথা বলো, আমি আমার রুমে যাচ্ছি।’

পদ্ম ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে লাগাল। তখন ওপাশ থেকে সে কারোর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের সালামের ধ্বনি শুনতে পেল। সে চোখ বুজে তখন জোরে নিশ্বাস নিল। আস্তে করে সালামের জবাব দিয়ে বললো,

‘কেমন আছেন?’

চলবে…

(আমি আজকে মাত্র বাড়ি থেকে এসেছি। এতদিন অনেক অনিয়মিত ছিলাম। গল্প লেখার মতো সময় সুযোগ কিছুই পাইনি। তাও যেই দুই এক পর্ব দিয়েছি সেটাও খুব কষ্টে। সেই জন্য যে আপনারা ভীষণ ক্ষেপে আছেন তা আমি জানি। আপনাদের কমেন্ট আমি পড়ি। আমার মতো এই ক্ষুদ্র একটা মানুষের গল্প পড়ার জন্য ও যে কেউ এত এত অপেক্ষা করতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না। আমি আপনাদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ। বিশ্বাস করুন, আপনাদের অপেক্ষা করিয়ে রাখতে আমার নিজেরও ভালো লাগেনা। কিন্তু, আমি সত্যিই নিরুপায় ছিলাম। কোনো ভাবেই সময় মেলাতে পারছিলাম না যে একটু কিছু লিখবো। যাই হোক, এখন বাসায় এসেছি। এখন থেকে আমি নিয়মিত গল্প দিব। আর যাদের মনে হচ্ছে গল্পটা এগুচ্ছে না, আসলে আমিই এতদিন ঠিক মতো সময় পাচ্ছিলাম না বলে বেশি কিছু লিখে উঠতে পারছিলাম না। এই গল্প নিয়ে আমি অনেক কিছু ভেবে রেখেছি। আপনারা তাই শুধু দোয়া করবেন, আমাকে যেন আর অনিয়মিত না হতে হয়, আর আমি যেন খুব মনোযোগ দিয়ে লিখে যেতে পারি। আর হ্যাঁ, আমার শত শত ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here