পর্ব_০৪ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
100

#পর্ব_০৪
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

রহিম মিয়া মাইয়াকে কী বিয়া দিবা না,মাইয়া তো অনেক বড়ো হইয়া গেছে,ওর সাথে যারা ছিলো,সবাই তো সংসার করতাছে, আমার কাছে কয়টা ভালো সম্বন্ধ
আছে, তুমি বললে আলাপ করে দেখতে পারি..!

না ঘটক সাহেব, মেয়ের অনুমতি ছাড়া কেমনে বিয়া দেই,ওর একটা ও বিয়া করবো না, এখন আমি কেমনে জোর করি..?

মাইয়া ঘরে খুঁটি লাগাইবা নাকি,পরে কিছু হয়ে গেলে তোমার কিন্তু নাক কাটা যাইবো…

ঘটক সাহেব চলে গেলো, তিনি অনেক বার মীমের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন, রহিম মিয়ার কাছে, কিন্তু প্রতিবার তাকে ফিরে যেতে হয়েছে, মীম নাকি বিয়া করবে না, এইদিকে গ্রামের সবার নজর মীমের দিকে, দেখতে তো মাশাআল্লাহ, কেউ একবার দেখলে অপছন্দ করতে পারে না..!

দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে গেলো, কবীর সেই যে শহরে গেলো আর গ্রামে আসলো না, নাফিসা বায়জিদের খোঁজ নিতো প্রতিদিন…

আজকে নাফিসা আসছে কবীরের বাড়িতে,বায়জিদের খবর নিতে___

বায়জিদ ভাই আপনি আজকে এতো খুশি খুশি ক্যান,
এতো দিন তো এতো খুশি দেখি নাই..

কয়দিন আগে চিঠি পাইছি,আজকে নাকি কবীর আইবো, তাই ওর পছন্দের খাবার রান্না করার জন্য, বাজার করতে যাইতাছি..

আচ্ছা তাহলে যান, আমিও বাড়িতে যাই, আম্মু আবার চিন্তা করবো…

নাফিসার আম্মু জুবিয়া বেগম অনেক শান্ত শিষ্ট একজন মহিলা,তার কোনো কিছু নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই।

নাফিসা সেই ছোট বেলা থেকেই তার মাকে একটা, কথা জিগ্যেস করছে, কিন্তু উত্তর সবসময় একই রকম,
প্রতিবারের মতো আজকেও জিজ্ঞাসা করলো।

আচ্ছা আম্মু আমাদের বাড়ির পিছনে নাকি বাগান আছে, কিন্তু আমাদের কাউকে বাড়ির পিছনে যাইতে দেওয়া হয় না ক্যান..?

তোর আব্বা বলছে, বাড়ির পিছনে বাগানে একটা বড়ো আমগাছ আছে,ওইটায় নাকি জ্বিন থাকে,তাই কাউকে যাইতে দেওয়া হয় না,কে নাকি ভুল করে ওই বাগানে গেছিলো,সে পরের দিন থেকে ভালো করে হাঁটতে পারে না_আবার কথাও বলতে পারে না,তাই কাউকে বাড়ির পিছনে যাইতে দেওয়া হয় না। তুই ভুলেও ওই দিকে পা দিবি না…

নাফিসার মনে কেমন যেন সন্দেহ লাগে, ছোট থেকেই তাকে কখনো বাড়ির পেছনে যাইতে দেওয়া হয় নাই, কি আছে এই বাড়ির পেছনে, সেটা সে এখনো জানে না, আম্মুর কাছে শুনছে বাড়ির পেছনে নাকি একটা বড় বাগান আছে,ব্যাস এইটুকু জানে সে… মন্ডল বাড়িটা দুই তলা ছিলো, বাড়ির ছাদে উঠলে বড়ো বড়ো গাছ ছাড়া কিছুই তেমন দেখা যায় না,নাফিসার মনে হয় এই গাছ গুলো কোন রহস্যকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে,

পাশের বাড়ির মীম আপুর কাছে নাফিসা শুনছে, তাদের বাড়ির পেছনে বাগানে নাকি কোন রহস্য আছে, সে নাকি মাঝেমধ্যে সেখানে লোকের আনাগোনা দেখছে।

নাফিসা আজকে সিদ্ধান্ত নেয় সে দেখবে বাগানে কী আছে, চুপিচুপি সে বাগানের দিকে পা বাড়ায়, কেমন সবকিছু নিস্তব্ধ,নাফিসার ভয় লাগছে কিন্তু সে যাবেই,

এমন সময় পিছনে থেকে ডাক দেয় রায়হান মন্ডল,নাফিসার বড়ো ভাই…

এই নাফিসা তুই এই জায়গায় ক্যান,যা তাড়াতাড়ি বাড়ির ভেতর, আব্বা জানতে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবো।
নাফিসা কিছু না বলে, বাড়ির ভেতরে চলে যায়,সে যতো বার বাগানে যাবার চেষ্টা করছে,কেউ না কেউ দেখে ফেলছে, এইবারও সে ব্যার্থ…

——————————————————–
রহিম চাচার মেয়ে মীম আপু, মেয়েটা কেমন যেন রহস্যময়, সবার সাথে এমন ভাবে হাঁসি মুখে থাকে যেন মনে হয় অনেক সুখি, কিন্তু আমি তারে গোপনে অনেকবার কাঁদতে দেখেছি, জিজ্ঞাসা করেছি অনেকবার আপু কি হয়েছে,বলো আমাকে_কিন্তু সে প্রতিবারই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলতো কই কিছুই তো হয় নাই…। তার মুচকি হাঁসিটাও যেন কতো রহস্যময়।এই হাসিতে লুকিয়ে আছে কতো কষ্ট…

বাস্তব তো এটাই, যে সবার সামনে হাসে বেশি, সে গোপনে কাঁদেও বেশি, যে নিজেকে খুব হ্যাপি দেখায় আসলে তার জীবনে দুঃখের কোন শেষ নাই..

ওর পছন্দের সবকিছু রান্না করা শেষ, কিন্তু কবীর এখনো আসতাছে না ক্যান_সন্ধ্যা হইয়া যাইতেছে,
দেখি নদীর পাড়ে আগাই যাই।

বায়জিদ একটা হারিকেন হাতে নিয়ে নদীর পাড়ে গেলো, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর, দূর থেকে একটা নৌকা আসতে দেখলো,চাতক যেমন বৃষ্টির জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে, বায়জিদও তেমনি অপেক্ষা করতো তার ভাই আসার, আজকে খুশিতে যেন দুই চোখে বর্ষার বৃষ্টি নামবে,বায়জিদ নিজেকে সামলে নিলো,
নৌকাটা আসতে আসতে কাছে আসলো, হারিকেনের মৃদু আলোতে কবীরের মুখটা দেখা গেলো, আমার সেই ছোট ভাইটা কতো বড়ো হয়ে গেছে, বায়জিদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, কবীরকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।

ভাই তুমি এমনে কান্না করতাছো ক্যান ছোট বাচ্চাদের মতো, আমি তো আইছি,আর যামু না তোমারে ছাইড়া, এইখানে কানবা নাকি, বাড়িতে চলো।

বায়জিদ চোখের পানি মুছলো,চল বাড়িতে যাই।

এমন সময় পাশের ঝোপ নড়ে উঠলো,কে যেন দৌড়ে এসে আছাড় পড়লো, বায়জিদ হারিকেন নিয়ে সেই দিকে এগিয়ে গেলো, পিছনে পিছনে কবীবও গেলো।

দেখলো রক্তাত্ত অবস্থায় একটা ছেলে ঝোপের আড়ালে পড়ে আছে, বায়জিদ চাঁপা কন্ঠে জিগ্গেস করলো,কে তুমি কোথায় থেকে আইছো…

অচেনা ব্যাক্তি বললো, আমি নাহিদ…
আর কিছু বলতে পারলো না…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here