#পর্ব_০৬
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
নদীর পাড়ে আজকে অনেক মানুষের ভিড়, জেলেদের মাছ ধরার জালে একটা অল্প বয়সী মেয়ের লাশ উঠে এসেছে,বয়স ১৭-১৮বছর হবে..
লোকজনের মধ্যে একজন বলে উঠলো,আরে এটা তো আমাদের গ্রামের ঐশী পা”গ’লির মেয়ে, একবছর আগে নিখোঁজ হয়ে গেছিলো, মেয়ে হারানোর শোকে মা ও মা’রা গেছে কিছুদিন আগে..!
কিন্তু এতো দিন পর এই লাশ এই নদীতে কীভাবে আসলো??
কয়েকজন বললো,দেখে তো মনে হচ্ছে দুইদিন আগে মা’ই’রা গেছে..!
ভীড় ঠেলে পুলিশ আসলো লাশের কাছে,বডি চেক করে দেখলো,গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, শরীরের অনেক জায়গায়,পোড়া দাগ..!
পুলিশেরা এর আগেও এইরকম অনেক লাশ পেয়েছে,লাশ গুলো বেনামি হওয়ার জন্য,আর কোন স্বাক্ষী প্রমাণ না পাওয়ার কারণে কেস গুলো কিছুদিন পর অফ হয়ে গেছে…
পুলিশ লাশ নিয়ে চলে যায়…
নাহিদ কবীরকে বলে,এর পিছনের মনে হয় বড়ো কোন দলের হাত আছে, এইভাবে আর কতোদিন চলবে, আমার তো মনে হচ্ছে,যারা এইসব করতেছে তাদের টার্গেট হলো অসহায় মেয়েরা..!
ঠিক বলছেন নাহিদ ভাইয়া,ওরা বিভিন্ন জায়গার অসহায় মেয়েদের দিকেই নজর দিচ্ছে,যাতে তাদের ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
ঐশী পা’গ’লির মেয়ের কথাই ধরা যাক, মেয়ে হারিয়ে যাবার পর,মা তেমন কিছুই করতে পারে নাই..!
মেয়ের শোকে নিজেই ম”রে গেছে..!
হ্যাঁ সেটা আমিও ভাবছি,চলো এখন যাই..
আচ্ছা চলেন…
মীম আমি তোরে কতো দিন ধরে বলতাছি ভালোবাসি, আমার কথা কী গায়ে লাগতাছে না,এতো ভাব ক্যান,এতো দেমাগ ভালো না, আমি আসিফ মন্ডলের একমাত্র ছেলে, আমার আব্বার যতো সম্পত্তি আছে_সব আমার একার,রাজি হয়ে যায় আমার কথায়,যা চাইবি তাই দিমু..
কিছুদিন ধরে মীমের পিছনে ঘুরঘুর করছে আসিফ মন্ডলের ছেলে রায়হান মন্ডল, কিন্তু প্রতিবার মীম পাশ কাটিয়ে চলে যেতো।
মীম দাঁড়া কোই যাস, অনেক দিন ছাইড়া দিছি’ আজকে আর ছাড়তে পারমু না।
আমি আপনাকে ভালোবাসি না, আপনি কী বুঝেন না।
আমাকে ভালোবাসোস না”তাই কী হইছে আজকে আমি, আমার ভালোবাসা আদায় করে নিমু..!
আমার টিউশনে যাইতে দেরি হইতাছে আমাকে যাইতে দেন,রাস্তা ছাড়েন।
কিসের এতো ভাব,এই সুন্দর চেহারা নিয়ে এতো দেমাগ, আমি কিন্তু এই সুন্দর চেহারা শেষ কইরা দিমু, এমন অবস্থা করমু,রাস্তার কুত্তা তোর দিকে তাকাবো না..!
রাস্তা ছাড়েন বলতাছি,পরে কিন্তু ভালো হইবো না।
কি করবি তুই দেখি, আমিও দেখমু কী করতে পারোস?
হুট করে রায়হান মীমের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে…
কী করতাছেন,হাত ছাড়েন আমার,ছাড়েন বলতাছি’
রায়হান কথা শুনে না, টেনে নিয়ে যেতেই থাকে, মীম রায়হানের সাথে পেরে উঠে না,রায়হানকে গ্রামের মানুষ হাতি বলে ডাকে, চেহারা তো হাতির মতোই,আর শক্তিও হাতির মতো,মন্ডলের ছেলে বলে কথা, বাহিরে সবাই সম্মান করলেও,মন থেকে কেউ তারে পছন্দ করে না।
দাঁড়ান.! পিছনে থেকে একটা পুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসে। রায়হান থমকে দাঁড়ায়,রাগে দাঁত কটমট করতে করতে পিছনে তাকায়,কার এতো বড়ো সাহস, তার এলাকার তাঁর কাজে বাঁধা দিবার মতো বুকের পাটা কার আছে। সামনে তাকিয়ে দেখে ২৩বছর বয়সী একজন সুদর্শন পুরুষ,ঘন কালো চুল, গায়ের রং ফর্সা, মুখে হালকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মায়াবী মুখ,ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হয়…
রায়হান রাগি কন্ঠে চোখ রাঙিয়ে বললো…
এলাকায় নতুন মনে হয়,চিনোস আমি কে..?
চুপচাপ এই জায়গায় থেকে সরে পর,যদি নিজের ভালো চাস..!
ছেলেটা বললো, মেয়েটাকে ছেড়ে দেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??
কোথায় নিয়ে যাই ওই কৈফিয়ত কী তরে দেওয়া লাগবো, আমার এলাকায় মাতাব্বরি করতে আসিস না,জান নিয়ে ফিরতে পারবি না..?
ওর হাতটা ছাড়েন, আমি আর একবার বলবো, হাত ছাড়েন..!
ছাড়বো না কী করবি দেখি?
নাহিদ বায়হানের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারলো,বায়হান নিজেকে সামলাতে পারলো না,দুই হাত দূরে ছিটকে পড়ে গেলো?
নাক থেকে হাত সরিয়ে, চিৎকার দিয়ে উঠলো রক্ত, তুই আমাকে মেরে রক্ত বের করে দিছোস,এই গ্রাম থেকে তুই লাশ হয়ে ফিরবি।
যা যা দেখা যাবে, কোথায় কী করতে পারিস।নামটা শুনে যা,পরে আমাকে খুঁজতে সুবিধা হবে,”রাগলে আমি কাউকে মানি না,করিনা কোন হিতা হিত,আদর কইরা বাবা আমার নাম দিছে নাহিদ”..!
তোরে দেইখা নিমু, রায়হান চলে গেলো…
নাহিদ মীমকে জিগ্গেস করলো, আপনি ঠিক আছেন?
লাজুক কন্ঠে মীম বললো,
হ্যাঁ ঠিক আছি, আপনি না থাকলে যে কী হতো,কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো সেই ভাষা নাই..
আরে মানুষ তো মানুষের জন্য,ধন্যবাদ জানানোর কিছু নেই”। আপনি মনে হয় কোন জায়গায় যাচ্চিলেন..?
হুম, আমি এক বাসায় টিউশনি করাই, কিছু বাচ্চা পড়াই, আজকে আর যাওয়া হলো না, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আচ্ছা আপনি হঠাৎ এই জায়গায় ক্যান..
গ্রাম ঘুরতে আসছিলাম, আপনাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর..! আচ্ছা আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানলাম না,আর এই ছেলেটা কে ছিলো?
আমি মীম, বাবা ছাড়া আর কেউ নাই আমার এই দুনিয়াতে, তিনজন ভাই আছে, কিন্তু তাঁরা থেকেও না থাকার মতো, তাঁরা নিজেদের মতো জীবনযাপন করতে ব্যাস্ত, আমাদের খবর তারা রাখে না।
আব্বার বয়স হয়েছে, এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারে না,তাই আমাকেই টিউশনি করতে হয়, এইটুকু বলেই মীম দীর্ঘ শ্বাস নিলো।
জীবন যুদ্ধে একজন সৈনিক সে,জানে না কতো দিন এইভাবে চলবে, তবে মীম খুশি,সে জানে ভাগ্য যা দেয়,তাই হাঁসি মুখে বুকে জড়িয়ে নিতে হয়,সে বিশ্বাস করে,এই দুঃখের নদী পেরিয়ে একদিন সুখের নদীর দেখা পাবে। কিন্তু আবার ভয় পায়,যদি সুখের নদীটা শুকিয়ে যায়।
নাহিদ বললো,কী ভাবছেন এতো,দেখে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে, আমাকে বলতে পারেন সবকিছু..!
তেমন কিছু না, আপনার সাথে ওইদিন কথা হয়েছে.। আপনার সম্পর্কে তো কিছুই বললেন না..
আমি নাহিদ হাসান,বাবা ব্যবসা করেন, আমিও বাবার সাথে তার কাজে সাহায্য করি।
আচ্ছা মন্ডলের ছেলে আপনাকে জ্বালাতন করে কেন?
ওর কথা বাদ দেন,ধনী বাবার বখাটে ছেলে, গ্রামের মেয়েদের বিরক্ত করাই তার কাজ, আমি ওকে পাত্তা দেই না, আপনি সাবধানে থাইকেন, আপনার ক্ষতি করতে পারে, ওরা ভালো না।
ওরা আমার কিছু করতে পারবে না, চিন্তা করবেন না।
নাহিদ ভাইয়া আপনি এইখানে,কতোক্ষণ থেকে খুজতাছি, বাড়িতে চলেন।
হাঁটতে হাঁটতে এইদিকে চলে আসছি,চলো বাসায় যাই, মীম আপনিও বাসায় যান..!
নিজের খেয়াল রাখবেন, সাবধানে থাইকেন এই বলে মীম চলে গেলো..!
নাহিদ তাকিয়ে রইলো, মীমের চলে যাওয়ার দিকে, অপরিচিত এই মেয়েটাকে দেখলেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়,কেন জানি আপন আপন মনে হয়..!
ভাইয়া কোন চিন্তার জগতে হারিয়ে গেলেন,চলেন যাই।
হ্যাঁ চলো কবীর ভাই…
চলবে……