পর্ব_০৭ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
80

#পর্ব_০৭
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

তোর এই অবস্থা কে করছে,নাক দিয়ে রক্ত ক্যান পড়তাছে,এই কে কোই আছোস,ডাক্তার খবর দে..!

থাক আব্বা,ডাক্তার লাগবো না,আমি ঠিক আছি!
কার এতো বড়ো বুকের পাটা, আমার বাপজানের গায়ে হাত দিছে, আমি ওর শরীর থাইকা হাত দুইটা আলাদা কইরা দিমু।বল কেডা সে..?

আব্বা মাথা ঠান্ডা করো,এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নাই, আমাদের যে ডিলটা করা হইছে,মাল গুলো আগে জায়গা মতো পৌঁছে দেওয়া হোক,সব কাজ ভালো মতো হয়ে গেলে পরে, ওরে দেখা যাইবো।

আচ্ছা যা ভালো মনে হয় কর, এখন যা মুখ ধুয়ে নে,ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে নে।

আসিফ মন্ডল বাড়ির পেছনে, বাগানের দিকে পা বাড়ালো, রায়হান ঘরে চলে গেলো…
নাফিসা আড়াল থেকে সব দেখছিলো,তার গুনধর ভাইকে কে মারলো, গ্রামে তো কারো বায়জিদের গায়ে হাত তোলার সাহস নাই,আর যদিও কেউ এইটা করে তাহলে তার আর রক্ষা নাই,যাই হোক এইসব নিয়া আমার না ভাবলেও চলবো…

এই যে নাহিদ কোথায় গেছিলা, কবীরকে সেই কতোক্ষণ হয় খুঁজতে পাঠাইছি,কারো দেখি খোঁজখবর নাই,কোই ছিলা এতোক্ষণ..?

গ্রাম ঘুরতে গেছিলাম, তাই একটু লেট হয়ে গেছে।
এখন দুইজন খাইতে আসো, আমি সব রেডি করতাছি!

নাহিদ আর কবীর হাতমুখ ধুয়ে খাইতে গেলো..
বায়জিদ ভাই একটা বলবো,যদি কিছু মনে না করেন?
বলো কি বলবা, তুমি শহরের মানুষ, আমাদের মতো গরীবের খাবার পছন্দ হইতাছে না..!

আরে ভাই কী বলেন, পছন্দ হবে না ক্যান।
বাদ দেও,এখন বলো কী বলতে চাইলা।

আপনি এইভাবে একা আর কয়দিন সবকাজ করবেন,
বিয়া করে ঘরে বউ নিয়া আসেন,ভাবি ঘর সামলাবে, আপনি না হয় বাহিরে কাজ করবেন…!

আমি ভাই কে অনেক বার বলছি, কিন্তু ভাই তো আমার কথা শুনে না, নাহিদ ভাই আপনি একটু বুঝান..!

বুঝলা নাহিদ, জীবন তো একটাই,এই জীবনে মৃত্যু একবার হইবো, জীবনে প্রেম ভালোবাসা বিয়া একবার ওই হয়, দুইবার কোনো কিছু হয় না, দুইবার যদিও প্রেমে পড়া যায় ,বিয়া করা যায়, কিন্তু আগের মতো আর হয় না, কোথাও না কোথাও কী জানি কমতি থাইকা যায়।

তাহলে কি আপনি বিয়া করছেন আগে?
বায়জিদ কেমন যেন চুপসে গেলো, কিছুই বলতে পারছে না।
খাওয়ার সময় কথা কইতে নাই, আগে খাইয়া নেন,পরে কথা হইবো।
কবীরের কথা শুনে, নাহিদ আর কিছু বললো না, খাওয়া শেষ করে,ঘরে চলে গেলো।

————————————————————

মীম কোইরে মা এক কাপ চা দিয়া যা, কোথায় গেলি।

এইতো আব্বা এই নেও তোমার চা..
চায়ের কাপ হাতে দিয়ে, মীম ঘরের দিকে পা বাড়ায়, পিছনে থেকে রহিম মিয়া ডাকলে।
মা শোন?
বলো আব্বা কিছু বলবা..?
বাড়িতে আসার পর থেকে দেখতাছি কেমন মন খারাপ করে আছোস, কিছু হইছে নাকি?
না আব্বা, তেমন কিছুই হয় নাই।
মীম ঘরে চলে গেলো, আব্বাকে কেমনে বলি রায়হানের কথা, আব্বা তো চিন্তা করবো,থাক এখন কিছু বলবো না।

এই অচেনা গ্রামটা কেমন যেন লাগে নাহিদের কাছে, গ্রামের মানুষ এক একজন একটা রহস্যময় গোলক ধাঁধা,সবার মাঝেই লুকিয়ে আছে, অজানা কতো কষ্ট,ওই যে মেয়েটা মীম,ওর ঠোঁটের মুচকি হাসিটা খুব অদ্ভুত, মনে হয় ওই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক বেদনা, মানুষ বড়োই অদ্ভুত’হাসির আড়ালে কষ্ট লুকিয়ে, কেমন করে বাঁচে, বাহিরে থেকে দেখে মনে হয়, কিছুই হয় নাই,এইতো দিব্বি সুখে আছে….
নাহিদ এইসব ভাবতে ভাবতে বাহিরে আসলো, দূরে বায়জিদ কে দেখতে পেলো…

ভাইয়া আপনি এইখানে কেন? এতো রাতে?
ঘুম আসতাছে না, তাই'”আকাশ দেখতাছি,দেখো আজকের আকাশটা অনেক সুন্দর,তারা গুলো কেমন ঝলমল করতাছে।

প্রকৃতির আকাশে তো তারা ঝলমল করে_কিন্তু ভাইয়া আমি কী জানতে পারি, আপনার মন আকাশে কেন অন্ধকার বিরাজ করে..!
বায়জিদ নাহিদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, বললো_আমার মন আকাশের তারা গুলো অনেক আগেই খসে পড়ে গেছে, তাহলে তো অন্ধকার বিরাজ করবে, তবে একটা তারা এখনো মিটমিট করে জ্বলেছে,সেই তারাই এখন আমার ভালো থাকার কারণ!

আচ্ছা আমি কী জানতে পারি, আপনার মনে এই বিষাদের ছায়া কেন,এই ছোট্ট জীবনের কতো বড়ো গল্প নিজের মধ্যে চেপে রেখেছেন,যদি বলতেন..!

জীবন ছোট্ট কিন্তু জীবনের গল্প গুলো অনেক বড়ো হয়, জীবনের কিছু ঘটনা খুব কষ্ট দেয়, দুপুরে জিগ্যেস করছিলা আমি বিয়ে করছিলাম নাকি, আমি তখন কোনো উত্তর দিতে পারি নাই, কিন্তু আমি এখন বলতে চাই আমার জীবনের গল্প…

জ্বি বলেন, আমিও শুনতে চাই…
নির্জন একটা প্রহর,খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে দুইজন মানুষ, একজন বলতে চায় তার জীবনে অন্ধকার অতীত,অন্য জন শুনতে চায়, তাহলে দেখা যাক,কী ঘটনার স্বাক্ষী হতে চলছে,এই নিস্তব্ধ প্রহর!!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here