#পর্ব_০৯
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
কালকে আব্বা কে বাগানে থেকে আসতে দেখলাম, যদি বাগানে জ্বিন ভুত থাকে, তাহলে আব্বা কেন মাঝে মধ্যে বাগানে যায়..!আজকের আমি যাবোই,দেখবো বাগানে কী আছে, নাফিসা চুপি চুপি বাগানের দিকে যেতে শুরু করে, বাড়ির পিছনে সারি সারি সুপারি গাছ, নাফিসা হাঁটতে থাকলো, সুপারি বাগান পেরিয়ে সামনে একটা ক্ষেত দেখলো,গাধা ফুলের মতো পাতা ওয়ালা অনেক গুলো গাছ, কিন্তু দেখে তো গাধা ফুল মনে হয় না,ক্ষেত পেরিয়ে রেন্ট্রি গাছের সারি,গাছ গুলো এতো ঘনো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সূর্যের আলো যেন মাটিতে পড়ে না, দিনের বেলায়ও কেমন আবছা অন্ধকার,রেন্ট্রি গাছ গুলো যেন একটা জঙ্গল তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছে, নাফিসা সাহস করে সামনে এগিয়ে গেলো, কিন্তু জঙ্গলের ভিতরে ঢুকার সাহস তার হলো না,সে অন্ধকারে অনেক ভয় পায়।
হঠাৎ করো কথা শুনতে পেলো, নাফিসা এক মূহুর্ত আর দেরি করলো না, বাড়িতে চলে আসলো,সে যা দেখেছে,তার মধ্যে তো কোনো রহস্য আছেই, কিন্তু এই রহস্য সে একা উন্মোচন করতে পারবে না, কাকে বলা যায় এই ব্যাপারে ভাবতে লাগলো….
নাহিদ বসে বসে আনমনে ভাবছে কাল রাতের কথা, বায়জিদের জীবনের গল্প শোনার পর তার নিজের মধ্যে কি যেন হয়ে গেছে, মানুষ তো কতো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে বাঁচে। প্রতিটা মানুষের জীবনে দুইটা গল্প থাকে, একটা সে মানুষ কে শুনায় আর একটা সে মানুষের থেকে লুকায়..?
নাহিদের জীবনেও একটা গল্প আছে যেটা তার খুব লুকোনো একটা গল্প,সে আর মনে করতে চায় না সেই অতীত, কিন্তু মানুষের কষ্ট দেখে নিজের কষ্টও মনে পড়ে যায়, আবার মাঝে মধ্যে নিজের কষ্টকে কষ্ট মনেই হয় না, মানুষ তো সবসময়ই নিজের কষ্টকে বড়ো করে দেখে, কিন্তু মানুষ যদি অন্যের কষ্টকে উপলব্ধি করতে পারতো তাহলে নিজের কষ্টকে একটু হলেও ভুলতে পারতো..!
নাহিদ শিখে নিয়েছে অন্যের কষ্টকে উপলব্ধি করতে,তাইতো নিজের কষ্টকে ভুলে গেছে…
সেই ছোট্ট বেলায় আম্মু মারা যায়,বাবা আমাকে যত্নে রাখার জন্য, নতুন “মা” নিয়ে আসে..!
কিন্তু নতুন “মা” আমার জীবনে নরক হয়ে পদার্পন করে, সেই কষ্টের দিনগুলোর কিছু কথা এখনো দোলা দেয় মনে, কনকনে শীতের দিনে নতুন আম্মু আমাকে শুধুমাত্র একটা শার্ট পরিয়ে”_ইস্কুলের জন্য রেডি করে দিতো…!,ইস্কুলের জাহিদ স্যার আমার প্রতি সদয় ছিলেন,বাবা তো ব্যবসার কাজে বাহিরে থাকতেন অনেক সময়,স্যার আমার খোঁজ খবর নিতেন,আজ আমি এইখানে আছি, শুধুমাত্র স্যারের জন্য..!
জীবনের কতো ইতিকথা মনের জানালায় উঁকি দেয়, ভুলতে চাইলেই সব কী ভোলা যায়, আহ্ জীবন কতোটা অসহায়…!
নাহিদ এইসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে..!
নাহিদ ভাইয়া এতো কী ভাবছেন বসে বসে,এতো চিন্তা করলে অল্প বয়সে চুল পেকে যাবে,ভাবি তো বুইড়া জামাই পছন্দ করবে না, এইসব বলেই কবীর হো হো করে হেসে উঠলো, কবীর কে দেখে নাহিদও হাসলো।
আমার কথা বাদ দেও, তোমার কী খবর কী করছো বর্তমান?
এখন তো কিছুই করি না, তবে আমি ভাবছি আমার গ্রামটা কে আমি মাদক মুক্ত করবো, আমি আসার পর থেকে দেখতাছি, গ্রামের ছেলেরা অল্প বয়সেই মাদকাসক্ত হয়ে গেছে..।
খুব ভালো কাজ_সমাজ সেবা করবা ভালোই তো, আমিও খেয়াল করছি এই গ্রামের মানুষ অনেক বেশি মাদকাসক্ত, এইভাবে তো আমাদের যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে…!
আপনার শরীরের অবস্থা কেমন এখন..!
আগের থেকে অনেক ভালো আছি, আচ্ছা কবীর তোমাকে একটা কথা বলতে চাই,যদি কিছু মনে না করো..!
বলেন কি বলবেন, আমি তো আপনার ছোট ভাইয়ের মতো,যা ইচ্ছা বলেন..?
ওই যে মীম নামের মেয়েটা ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই, তুমি কী সাহায্য করবা।
মীম আপুর সাথে আপনার কী কথা,প্রেমে পড়ে গেছেন নাকি..? আমার তো মনে হয় প্রেমে পইড়া কোনো লাভ নাই, গ্রামের তো অনেক ছেলে আপুকে বিয়ার প্রস্তাব দিছে, কিন্তু আপু বলছে বিয়া করবো না।
আচ্ছা বিয়ে কেন করবে না, কোন সমস্যা নাকি..?
আমি তো জানি না, তবে মনে হয় কোন সমস্যা আছে।
আরো দেখা যাবে, আমিও দেখবো আমাকে কেমনে ফিরিয়ে দেয়।
তাহলে চেষ্টা করেন, আপনি কেমন প্রেমিক পুরুষ ওইটা তো দেখা যাইবো..!
নাহিদ একটু মুচকি হাসলো, আমি প্রেমিক পুরুষ নাকি জানি না, কিন্তু ওই রহস্যময়ী মেয়েকে আমি জিতে নিয়ে ছাড়বো, মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করো..!
আরে নাহিদ ভাই এতো চিন্তা কইরেন না, আপনাকে দেখতে নায়কের মতোই লাগে, মনে হয় না_মীম আপু আপনাকে ফিরাই দিবো..! তবে আমার যদি একটা বোন থাকতো তাহলে আপনাকেই দুলাভাই করতাম..! কিন্তু কপালের দোষ বোন নাই…কবীর জোরে একটা হাসি দিলো..
হয়েছে হয়েছে অনেক ফাজলামি করছো,এখন মনে করো মীম তোমার বোন, তাহলে সেই সুবাদে আমাকে দুলাভাই করো…!
আমি এখনো ছোট মানুষ, আমি এইসবের কিছু বুঝি না..!
২০বছরের দামড়া ছেলে নিজেকে ছোট বলে, এখন বিয়া দিলে তো তোমার ওই ছোট ছোট বাচ্চা হয়ে যাবো..!
কবীর আর কিছু বললো না, তাহলে ভাইয়া চলেন, নদীর পাড়ে যাই, নদীর পাড় দিয়া মীম আপু প্রতিদিন টিউশনি করতে মন্ডল পাড়ায় যায়..!
দুইজন হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়, সময়টা এখন বসন্ত কাল, চারদিকে এলোমেলো বাতাস বয়, পরিবেশটা অনেকটা মোহময়..
নাহিদ দূর থেকে মীমকে আসতে দেখলো,মীম যতো কাছে আসছে, নাহিদ বুঝতে পারে তার হৃদ স্পন্দন ততোই বেড়ে চলেছে।
মীম কাছে আসতেই, নাহিদ সাহস করে ডাকলো,এই যে শুনছেন..?
জ্বি বলেন…!
আমি আপনাকে প্রথম দেখেই ভালোবাসে ফেলছি..!
মীম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো…?
চলবে….