#পর্ব_১০
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃ_নাহিদ_হাসান
আমি আপনাকে ভালোবাসি, প্রথম দেখার পর থেকেই শুধু আপনাকেই ভেবে চলছি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই…!
আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না, আমি তো বিয়ে করতে পারবো না,এখনি যা বলছেন..? আশা করি এইসব কথা আর বলবেন না..?
ভালোবাসা কী অপরাধ, দোষের কিছু, আপনি কেন পারবেন না আমাকে ভালোবাসতে..? শুধু একবার রাজি হয়ে যান, বলেন আপনি আমার_আমি এই পৃথিবীর প্রতিটা ধুলিকণায় লিখে দিবো, আমি শুধু আপনার… বলেন আপনি রাজি??
মীম কিছু বলছে না চুপ করে আছে,সে কেনো ভালোবাসতে পারবে না,তার কোন উত্তর নাই তার কাছে..!
কি হলো চুপ করে আছেন ক্যান, উত্তর দেন..? আপনি আমাকে ভালোবেসেন আর না বাসেন, একটা কথা শুনে রাখেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি,আর আমি আপনাকে জিতে নিবো..!
নাহিদ চলে গেলো,মীম নীরব_কিছুই বলতে পারছে না..!
এই মানুষটারে দেখার পর থাইকা, আমিও তারে নিয়া ভাবি, হঠাৎ কইরা আমারও কী জানি হইয়া যায়..!
কিন্তু আমি তো সিদ্ধান্ত নিছি, জীবনে কাউকে বিয়া করমু না, জীবনের সব স্বপ্নকে তো আমি কবর দিছি, আমি পারমু না আবার নতুন স্বপ্ন সাজাতে..!
আজকেও টিউশনিতে যাওয়া হইলো না, মীম বাড়ির দিকে রওনা দিলো…
আজ শুক্রবার,প্রতি শুক্রবার নাফিসার বাবা আসিফ মন্ডল, মসজিদের নামাজ শেষে, বাড়ির সামনে বারান্দায় বসেন..! গ্রামের অনেক গরীব মানুষের সাহায্য করেন, আজকেও অনেক মানুষের আনাগোনা বাড়ির সামনে, নাফিসা তার রুমের একটা জানালা খুলে সব দেখছে, হঠাৎ নাফিসা খেয়াল করলো, কিছু অপরিচিত মানুষ”তাদের দেখে তো গরীব মনে হচ্ছে না,তার থেকে বড়ো কথা হলো,এরা এই গ্রামের কেউ নয়, কিন্তু তারা এইখানে ক্যান…
নাফিসা দেখলো,ওই অপরিচিত মানুষ গুলোকে দেখার সাথে সাথে তার আব্বা অনেক অস্থির হয়ে উঠলেন, গ্রামের মানুষদের তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিলেন..;
তড়িঘড়ি করে তাদের নিয়ে চললেন, বাড়ির পিছনে বাগানের দিকে…
নাফিসা এইবার আর ব্যাপারটা চেপে রাখতে পারলো না, কবীর তার ছোট বেলার বন্ধু তাই কবীরকে সব বলার জন্য”_বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লো…
পিছনে থেকে জুবিয়া বেগম ডাকলো এই নাফিসা কোই যাস?
এইতো আম্মা আসতাছি, এইটুকু বলেই নাফিসা চলে গেলো…
এই বাড়ির আর কারো সাথে পেরে উঠলাম না, কেউ আমার কথা শুনে না,এই বলে_জুবিয়া তার কাজে মন দিলো…
এই নাফু এতো দৌড়ে কোই যাস,পইড়া যাবি তো..!
নাফিসা দীর্ঘ শ্বাস নিলো,ধিরে আসতে বললো তোর কাছেই আসছিলাম..?
আমার কাছে ক্যান রে কোন দরকার নাকি??
দরকার আছে সেই জন্য তো আইছিলাম,আর তুই এই গুলো কি করোস..?
দেখোস না, আমি পোষ্টার লাগাইতাছি_”মাদক কে না বলুন_মাদক মুক্ত সমাজ গড়ুন””
এইসব কইরা কি হবো, তোর পোষ্টার কেডা পড়বো, আর কে এইসব শুনবো,কোন কাজ হইবো না..!
আমি জানি_এইসব দিয়া তেমন কাজ হইবো না..!যদি মাদক ব্যবসায়ীদের মুল গোড়াটা তুলে ফেলা যায়, তাহলে সম্ভব..! কি যেন বলতে চাইলি বল…?
আমাদের বাড়ির পিছনে বাগান আছে জানোস?
হ” জানি_ওই বাগানে নাকি জ্বিন ভূত থাকে.?
আব্বা এইসব মিছা কথা কইছে,যাতে কেউ ওইদিকে না যায়, আব্বা আর ভাইকে তো আমি মাঝে মধ্যে ওই দিকে যাইতে দেখি__আর আজকে কিছু মানুষকে সাথে নিয়ে যাইতে দেখলাম, আমি কয়দিন আগে চুপ করে বাগানে গেছিলাম, বাগানে তেমন কিছুই পাই নাই, তবে আমার মনে হয় ওই রেন্ট্রি বাগানে কিছু একটা আছে.!
আমি ওইখানে ঢুকার সাহস পাই নাই, তুই একটু চেষ্টা করে দেখ, কিছু জানতে পারোস নাকি.? আমার দিন দিন শুধু সন্দেহ বাড়তাছে, কিছু তো আছেই ওইখানে..!
আমাকে অল্প বয়সে মারার বুদ্ধি করছিস নাকি? আমি এখনো বিয়া করি নাই,যদি আমার কিছু হয়ে যায়, আমার ভবিষ্যৎ বউয়ের কী হইবো রে….একটু ভাব নাফু ও তো বিয়ার আগেই বিধবা হয়ে যাবে..!
তোর বউ বিধবা হয়ে গেলে, বিধবা ভাতা করে দিমু নে, কোনো চিন্তা নাই..!
নাফু এইটা তুই বলতে পারলি…
দেখ তো ঢং করিস না_মেয়েদের মতো”,থাক তোরে আর যাইতে হবে না, আমি একাই দেখবো ওইখানে কি আছে..?
হায় হায় ক্ষুব্ধ বাঘিনী না হয়ে, বিলাই হয়ে যায়, আমার তো ভয় লাগে..! আচ্ছা আজকে সন্ধ্যায় দেখবো ওইখানে কি আছে, তুই এখন বাড়িতে যা…
নিজের খেয়াল রাখিস,আর সাবধানে যাইস,ধরা পড়লে কিন্তু শেষ..
আচ্ছা যা, চিন্তা করিস না..
নাফিসা চলে গেলো, কবীর ভাবছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে,একা যাওয়া কি ঠিক হবে, নাহিদ ভাইকে সাথে নিলে হয়তো ভালো হইতো, কিন্তু নাহিদ ভাইকে এখনি কিছু বলা যাইবো না, আগে একা যাইয়া পরিবেশ টা দেখে আসা উচিত…!
রাত তখন ১২টা, মীমের চোখে ঘুম নেই, ঘরের একটা জানালা খুলে দিলো, বাহিরে সুন্দর জোছনা_আকাশটা আজকে অনেক পরিষ্কার একটুও মেঘ নেই, তারা গুলো মিটিমিটি জ্বলছে, মীম কোনদিন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে, জোছনা মাখা রাত উপভোগ করছে নাকি মনে নেই..! অনেক মেয়ে তো স্বপ্ন দেখে, তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে এইরকম একটা রাতে হাতে হাত রেখে মেঠো পথে হাঁটবে, দুইজন কতো গল্প করবে,আরো কতো কিছু, কিন্তু মীমকে ভাগ্য সেই সুযোগ দেয় নাই, তাঁর মন কে সে নিজেই বলে দিয়েছে স্বপ্ন দেখা বারণ..! জীবনটা এমন না হলেও পারতো,আট দশটা মেয়েদের মতো হলেও পারতো??
নিয়তি কেনো এমন করলো_তার কী খুব বড়ো দোষ ছিলো, এইসব ভাবলেই মীমের মাথা ঝিমঝিম করে..! গ্রামের তো অনেক ছেলে তাকে বিয়া করতে চাইছে, অনেক জন বলছে ভালোবাসি, কিন্তু মীমের কারো প্রতি অনুভূতি কাজ করে নাই..!
কিন্তু আজকে ওই ছেলেটার কথা গুলো ক্যান জানি, মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার মনের মাঝে দোলা দিচ্ছে, বারবার তাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে, তাহলে কি আমিও ফেঁসে যাচ্ছি নাকি ভালোবাসা নামক জালে..!
পিছন থেকে রহিম মিয়া ডাকলেন, কিরে মা”এমন মন মরা লাগছে ক্যান তোকে, কতো রাত হয়েছে ঘুমাস নাই ক্যান..?
তেমন কিছুই না আব্বা, এমনে ঘুম আসতাছে না…
এইভাবে আর কয়দিন থাকবি, আমার অনেক ভয় হয় তোকে নিয়া, আমার কথা আর ভাবিস না “মা” আমাকে আমার পাপের শাস্তি পাওয়া দরকার, আমাকে শাস্তি পেতে দে..! নিজের জীবন নষ্ট করিস না, এইবার তো জীবনটাকে নিজের মতো সাজা…!
মীম কিছু বললো না, আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো…
চলবে….