পর্ব_১১ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
59

#পর্ব_১১
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

পরন্ত বিকেলে নাহিদ বসে বসে ভাবছে মীমের কথা, তার কী একটুও মনে পরে না আমাকে,সে কী আমাকে নিয়ে ভাবে না..!একটু ভালোবাসলে কী খুব বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে..? আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি,_কিন্তু সেটা ও প্রকাশ করতে নারাজ..?
কিন্তু কেন..?কি এমন কারণ আছে, আমাকে সব জানতে হবে,এসব ভাবতে ভাবতেই কবীর পিছনে থেকে ঢাকলো..?
নাহিদ ভাইয়া কি এতো ভাবেন,কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত মনে হইতাছে..?
তেমন কিছু না, মীমের কথা ভাবছিলাম..!
মীম আপুর কথা বাদ দেন, আমি তো বলছিলাম,ও রাজি হইবো না, আমার কথাই ঠিক হইলো..!

আমার কথা বাদ দাও, কোথাও যাইতাছো মনে হচ্ছে..?
হ” একটু বাহিরে যামু, আচ্ছা আমি যাই দেরি হইতাছে…
ঠিক আছে যাও, কবীর চলে গেলো….

বাড়ির পিছনে নাফিসা অপেক্ষা করতেছে,কখন কবীর আসবে, কিছুক্ষণ পর কবীর আসলো…।
কিরে এতো দেরি ক্যান,সেই কখন থাইকা দাঁড়াই আছি, কোনো খবর নাই, এখন আসার সময় হইলো..?
এমনে তো মরন কুপে আমাকে ফেলতে চাস,তার উপরে এতো তাড়া কিসের,নে আইছি এখন কী করা লাগবো বল তাড়াতাড়ি…!

বাগানে ঢুকা লাগবো এখন..? বাগানে যা..!
পুরো বাগান তো উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা, এইখানে কেমনে ঢুকবো..?

ছোট বেলা থাইকা বাঁদরের মতো গাছে উঠলি, এখন বড়ো হয়ে কী এই দেওয়ালটা পার করবি না..?

আচ্ছা পাড়বো এতো বক বক করিস না, তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাক, আমি সামনের গাছে উঠে দেওয়াল টপকে ভেতরে যাইতাছি..!
আচ্ছা সাবধানে যা, আমি আছি..!
কবীর সামনের গাছে উঠে দেওয়াল টপকে ভেতরে গেলো, অনেক বড়ো সুপাড়ি বাগান, কবীর সামনে এগিয়ে গেলো, সামনে বিশাল ক্ষেত,গাধা ফুলের মতো গাছ গুলো দেখেই কবীর চিনে ফেললো_এইগুলো গাঞ্জা গাছ,এই গাছ গুলো আগে সে গাধা ফুল গাছ মনে করতো, কিন্তু শহরে দেখছে, একজন লোককে এই গাছ গুলো চাষ করার জন্য পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, কবীর এখন বুঝতে পারছে, গ্রামের মানুষ এতো মাদকাসক্ত কেনো হয়ে গেছে..!গাঞ্জা চাষ যদি মন্ডল বাড়িতে হয়, মাদকের চোরাচালান যদি মন্ডল বাড়ির মানুষ করে, তাহলে গ্রামের অবস্থা আর কী হবে..

কবীর সামনের এগিয়ে যায়, সামনে বিশাল রেন্ট্রি বাগান, বাগান বললে ভুল হবে একটা জঙ্গল,দেখে মনে হয়, অনেক যত্নে গড়ে তোলা হয়েছে এই জঙ্গল..!
কবীর সাহস করে জঙ্গলের ভেতর ঢুকলো, কিছুদূর যাওয়ার পর,লক্ষ করলো, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটা সুরু রাস্তা চলে গেছে সামনের দিকে, মনে হয় এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করা হয়,তাই এই জায়গায় ঘাস জন্মাতে পারে নাই..
কবীর ওই রাস্তা ধরেই এগিয়ে যেতে লাগলো, কিছু দূর যেতেই দূর থেকে চোখে পড়লো গুহা মুখ..?
সামনে দুইটা মশাল জ্বলছে, দুইজন লোক বসে আছে, মনে হয় পাহারাদার এরা, কবীর আস্তে আস্তে সামনে যেতে লাগলো, কাছাকাছি যাবার পর,লোক দুটো ফিরে তাকালো, যেহেতু সন্ধ্যা নেমে এসেছে,আর জঙ্গলে অন্ধকার ছিলো, কবীরকে তারা দেখতে পেলো না, কিন্তু তাদের সন্দেহ হয়ে গেলো, কেউ হয়তো এসেছে এই গোপন আস্তানায়…
দুইজনে মধ্যে একজন অন্ধকারে আন্দাজে কবীরের দিকে লাঠি ছুড়ে মারলো,লাঠি সোজা এসে লাগলো কবীরের কপালে, কবীর একহাতে কপাল চেপে ধরলো, ধুপ করে কিছুক্ষণ মাটিতে বসে থাকলো,আর সামনে এগিয়ে যাবার সাহস হলো না তার, কপাল কেটে গেছে,কিন্তু কবীর কোন শব্দ করলো না,আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসলো জঙ্গল থেকে..!

নাফিসা অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছে, এখন তার চিন্তাও বাড়তে লাগলো, সন্ধ্যা নেমে এসেছে”_এখনো কবীর ফিরলো না,নাফিসার কেমন অস্থির লাগছে, কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে, হঠাৎ ধুপ করে একটা শব্দ হলো, নাফিসা ফিরে তাকালো, দেখলো কবীর পড়ে আছে, নাফিসা দৌড়ে কবীরের কাছে গেলে…!

কিরে এতো দেরি ক্যান..? এমনে পইড়া গেলি ক্যান..!
নাফিসা হন্তদন্ত হয়ে কবীরের কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে দিলো,দেখলো অনেক টুকু জায়গা কেটে গেছে, এইবার আর নাফিসা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, কান্না শুরু করলো..!

এমন বাচ্চাদের মতো কান্না না কইরা কপালটা বাইন্ধা দিলেও তো পারোস, আমার কোমড়ে গামছা বাঁধা আছে,ওইটা দিয়া বাইন্ধা দে.. আমি তো আর সিনেমার নায়ক না,ওড়না ছিড়া বেঁধে দেওয়া লাগবো..!

সবসময়ই ফাজলামি করোস,মাথা ফাইটা গেছে এখনো ফাজলামি বন্ধ হয় নাই,কি পোলা রে বাবা..!
নাফিসা গামছা দিয়ে কবীরের কপাল বেঁধে দিলো না..

নাফু জানোস আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে..
আমার কপাল ফাটছে ভালোই হইছে..!
পাগল হইলি নাকি, কপাল ফাটছে এইখানে ভালোর কী আছে…?
আরে কপাল না ফাটলে তো আর তোর কোলে মাথা রাখতে পারতাম না, কবীর হো হো হেসে উঠলো..!

নাফিসা কিছু বলতে পারলো,সেও অবাক এতো কাছ থেকে ছেলেটাকে কখনো দেখা হয়নি, ছোট থেকেই ওর প্রতি কী যে একটা টান ছিলো”_বলে বুঝাতে পারবো না..! কিন্তু কোনদিন প্রকাশিত হয় নাই..

কিরে নাফু কী এতো ভাবোস..?এইখানে শুয়ে তোর কোলে মাথা রাইখা যদি খোলা আকাশ দেখি,মন্ডল চাচা কাল আমাকে অন্ধকার কবর দেখাইবো..!
তাড়াতাড়ি বাড়িতে যা, আমাকেও বাড়িতে যাইতে হইবো, ভাই আবার চিন্তা করবো…?

আচ্ছা বাড়িতে যা, সাবধানে যাবি কিন্তু..? আমিও গেলাম..!
কবীর উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো..
নাফিসা আনমনে বাড়ির ভেতরে গেলো, সবার আড়ালে চুপ করে চলে গেলো নিজের ঘরে….
রাত অনেক গভীর পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে গেছে,নাফিসার চোখে ঘুম নেই, ঘরের একটা জানালা খুলে দিলো, বাহিরের শীতল বাতাস গায়ে লাগতেই, হালকা কেঁপে উঠলো..! শত শত তারার মাঝে চাঁদটা যেমন একাকী উঁকি দিচ্ছে,নাফিসার মনে হতে লাগলো, তারও খুব একা একা লাগছে, লুকোনো অনুভূতি গুলো যেন মনের দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে,সে চেষ্টা করছে আটকাতে কিন্তু পারছে না, মনে মনে ভাবছে, আমি যাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাই সেও কী আমাকে নিয়ে ভাবে..? আজ কী হলো হঠাৎ আমার,এই প্রনয়ের ঝড় কী থামবে কখনো…?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here