পর্ব_১২ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
62

পর্ব_১২
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

কবীরের রাত থেকেই অনেক জ্বর, বায়জিদ রাতে ঘুমাতে পারে নাই, শরীর মুছাই দিছে, মাথায় জল পট্টি দিছে..! রাতের বেলা গ্রামে ডাক্তার পাওয়া মুস্কিল,যদিও বা ডাক্তার আসে,তার ভিজিট বেশি..?

কোন মহা কাজ করতে গেছেলি, কপাল কেমনে ফাটলো,নাকি কেউ মারছে, সত্যি কথা বল..!
কবীর কিছু বলে না, চুপ করে থাকে… এখনি ভাইকে কিছু বলা যাবে না, সবকিছুতে জল ঢেলে দিবে..
সকালে উঠে বায়জিদ বকাবকি করতে করতে,ডাক্তার আনতে চলে গেলো..

নাহিদ কবীরের কাছে আসলো, জিগ্যেস করলো_মাথায় আঘাত কেমনে লাগছে, বায়জিদ ভাই কে কিছু না বলতে পারো, আমাকে বলো..?

কবীর একটু সাহস করে বললো, কমু তো সব কিছু কমু, কিন্তু এহন না, কাহিনী অনেক,পরে একসময় বলা লাগবো,ভাই শুনলে আর ওইদিকে যাইতে দিবো না, কিন্তু আমি ওইখানে যামু, আমাকে সব জানা লাগবো..?

কোন জায়গায় কথা বলছো, আমিও তোমাকে সাহায্য করতে চাই, আচ্ছা আগে সুস্থ হও পরে বইলো, আমি এখন একটু বাহিরে যাই…

আচ্ছা যান, গ্রামের অবস্থা কিন্তু ভালো না, সাবধানে থাইকেন…
চিন্তার কিছু নাই, নাহিদ বেড়িয়ে গেলো…

নাহিদ বাহিরে বেড়িয়ে দেখলো,নাফিসার সাথে মীম আসতেছে এই দিকে,দূর থেকে মীম নাহিদকে দেখে মুখ ঢেকে ফেললো, কিন্তু কাছে আসতেই নাহিদ ডাকলো এই যে শুনছেন..?
নাফিসা মীম কে বললো,আপু তুমি এইখানে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলো, আমি ভেতরে থেকে কবীরকে দেখে আসতাছি…!
আরে আমাকে রেখে যাস না, আমিও সাথে যাই..?
এতো লজ্জা কিসের,নাফিসা একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো..!

আমাকে কী ভয় লাগে আপনার..?
ভয় ক্যান লাগবো, আপনে বাঘ নাকি ভাল্লুক..!

আমি বাঘ ভাল্লুক কিছুই না, একজন সাধারণ মানুষ, তাহলে আমার সাথে কথা বলতে ভয় কেন লাগছে,চলে যেতে কেন ধরলেন…?
এমনি, এখন বলেন কী বলবেন..?

কথা তো একটাই, আমি আপনাকে ভালোবাসি,যদি আমাকে মেনে নেন, আমি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকতে রাজি..!
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকতে চান,পরে কী থাকবেন না.??
এই পারে আমাকে রেখে দেন,ওই পাড়েও আমি আপনাকেই চাই…!
যদি বলি, আপনার বুকের ভেতর জন্ম নেওয়া ভালোবাসা,ওই বুকেই কবর দেন..!
আমার ভালোবাসা তো মৃত নয়,কবর দিবো, কিছুদিন থেকে এইখানে আছি, আমাকে বাড়িতে যেতে হবে..?
কিন্তু আমি আবার আসবো, আমি আপনাকে জিতে নিয়ে তবেই ফিরবো…!
পরিবেশ যেন নীরবতা পালন করছে, কেউ আর কিছু বলতে পারছে না…!

নাফিসা কবীরের কাছে গেলো, কবীর শুয়ে আছে, নাফিসা গিয়ে মাথায় কাছে বসলো…

কিরে নাফু, সকাল সকাল আমাগো বাড়িতে,আর তোর চোখ গুলো এমন ফোলা ফোলা ক্যান..?
গতকাল রাতে ঘুমাতে পারি নাই..!
ঘুম কেডা বাইন্ধা রাখছিলো, ঘুমাতে পারস নাই ক্যান.?

সব সময় কিন্তু ফাজলামি ভালো লাগে না, এমন ক্যান তুই,সব কিছুতেই মজা নিস..?

ভূল হইছে মহারানি, এখন মাফ করেন, বলেন কী হইছে, আপনার চোখে জল টলমল করছে ক্যান..!

আমার সব দোষ আমার জন্য তোর আজকে এই অবস্থা, আমি এইসব করতে না বললে, তুই এতো কষ্ট পাইতি না..! নাফিসা কান্না শুরু করলো..!
নাফু দেখি মুখটা এইদিকে তাকাঁ, নাফিসা কবীরের দিকে তাকালো..!
আরে তোর চোখে আবার পানি, একটা ব্যাপার বুঝলাম না,ব্যাথা পাইলাম আমি,আর কান্নাকাটি করোস তুই..!

আপন মানুষের কষ্ট হইলে,ওই কষ্টটা কলিজায় লাগে তুই কেমনে বুঝবি সেই ব্যাথা..!

কেডা তোর আপন মানুষ, আমি কোন দিন তোর আপন হইছি,ভুলে যাস না_তুই মন্ডলের মাইয়া, এইসব আবেগ
তোর আব্বার সামনে কোন কাজ করবো না…!

নাফিসা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, কবীরের বুকে মাথা দিয়ে কান্না শুরু করলো..!
আলুর বস্তার মতো ওজন তোর,আরে ওঠ তাড়াতাড়ি,কেউ দেখলে আমি শেষ…!
নাফিসা কথা শুনছে না, কান্না করেই যাচ্ছে, আজকে আর কোন কিছুতে মন বাঁধা মানতে চায় না..?
নাফু রে চোখের পানি নাকের পানি এক সাথে করে আমার কাপড় ভিজাই দিলি, অনেক হইছে_কিছু চোখের পানি জমা রাখ,পরে তো আরো কান্না করা লাগবো, ভালোবাসলে কান্না করতে হয়..!

তুই কি আমাকে ভালোবাসিস..?‌ নাকি আমি একাই প্রেমানলে পুড়ি..!
বুকের ভেতর তো মাথা রাখা আছে, এখন কান পেতে শোন হ্নিদয়ের কতো কথা,হ্নিদয় কী বলে নাই ভালোবাসি..!
এতো দিন পর দুইজনের লুকোনো অনুভূতি প্রকাশিত হলো, এই বুকে মাথা রেখেই যেন স্বর্গের সুখ পাওয়া যায়..! নাফিসা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো..!
কবীর এতো দিন শুধু মনে মনে ভালোবাসা পুষতো, কোনদিন প্রকাশের সুযোগ হয়নি, কিন্তু আজকে তার পোড়া হ্নিদয়ে প্রেমের জল পড়ছে,কবীরেও জড়িয়ে রাখলো কিছুক্ষণ…!
কান্না তো অনেক হইছে, মহারানি এখন একটু হাসেন, নাফিসা মুচকি হাসলো..!

বাহিরে করো পায়ের আওয়াজ শুনা গেলো, নাফিসা উঠে দাঁড়ালো, নিজেকে স্বাভাবিক করলো..!

বায়জিদ ডাক্তার নিয়ে ঘরের ভেতর আসলো,ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে চলো গেলো…

নাফিসা যে, কখন আইছো??
এইতো ভাইয়া একটু আগে আসলাম..!
আচ্ছা বসো তাহলে আমি একটু দোকানে যামু..?

আচ্ছা যান..? বায়জিদ চলে গেলো..!

ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাবি,না হলে খবর আছে..!
আমার খবর করার তুই কেডা রে..?
আমি তোর ঘরের বউ লাগি বউ,আর কোন কথা আছে,যা কমু সব শুনবি..!
আচ্ছা মহারানি, এখন আয় বাহিরে যাই..

দুইজন বাহিরে গেলো, দূরে নাহিদ আর মীম দাঁড়িয়ে আছে..!
মীম দূর থেকে নাফিসা আর কবীরকে ডাকলো…
নাফিসা এদিকে আর কবীর তুইও আয়..?
জ্বি আপু বলো..?

এতো দিন সবাই জিগ্যেস করতি, আমি ক্যান বিয়া করি না,কি সমস্যা আমার, আজকে আমি সবাইকে একটা গল্প শুনাবো,শুনবি তো…?

কবীর বললো,বলো কি গল্প, শুনবো, আগে চলো ওই মাচার উপর বসি..! চারজন গাছতলায় মাচার উপর বসলো…

তিনজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে,কী বলবে মীম,কী এমন করুন ইতিহাস আছে তার, সেইজন্য এখনো বিয়া করা হয়নি…
গ্রামের মেয়েদের তো ১৬ বছর বয়সে বিয়া করে স্বামীর বাড়ি যাইতে হয়, কিন্তু মীমের তো ২১ বছর হয়ে গেছে, এখনো ক্যান বিয়ার কথা মুখে আনে না…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here