#পর্ব_১৩ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
46

#পর্ব_১৩
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

একজন মহিলার তিনটা কন্যা সন্তান ছিলো, বছর না ঘুরতেই এবারও তিনি গর্ভবতী..!
এইবার তার স্বামী হুমকি দিয়েছে,যদি এইবার কন্যা সন্তান হয়_তাহলে সেই কন্যা কে আমি মে*রে ফেলবো?
অসহায় মা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন কান্নাকাটি করেন, কিন্তু আল্লাহ তার কথা শুনলেন না, এইবারও কন্যা সন্তান হলো..!

নিষ্ঠুর বাবা রাতের বেলা কন্যাটিকে চৌরাস্তার মোড়ে ফেলে আসলেন..!মা সারা রাত নামাজ পড়ে কোরআন পড়ে, আল্লাহর দরবারে মাথা ঠুকে রাত পার করলেন..!
সকাল বেলা দেখা গেলো,কন্যাটি সুন্দর ভাবে বিছানায় ঘুমাচ্ছে..! এইটা দেখে বাবা আরো রেগে গেলেন,পরপর তিন দিন, ফেলে আসার পরও যখন অবস্থায় কোন হেরফের হলো না,বাবা তার নিষ্ঠুর কাজের ইতি টানলেন..!

বছর না ঘুরতেই মা আবার গর্ভবতী হলো, কিন্তু মা এইবার ভিষণ চিন্তিত,যদি এইবারও কন্যা হয় তাহলে আর রক্ষা নাই, কিন্তু এইবার আল্লাহর দয়ায় পুত্র সন্তান হলো..!বাবা অনেক খুশি..! কিন্তু দুইদিন পর বড়ো মেয়েটা মারা গেলো..?
পরের বছর আরো একটা পুত্র সন্তান হলো, কিন্তু পরের দিন মেজো মেয়েটা মারা গেলো, তিনটা পুত্র সন্তান হলো,আর তিনটা কন্যা মারা গেলো..?
এই শোক সামাল দিতে না পেরে, কিছুদিন পর মা মারা গেলো ..?

যেই মেয়েটাকে বাবা মে*রে ফেলতে চেয়েছিল, সেই মেয়েটাই ছোট ছোট ভাইদের মায়ের আদর দিয়ে বড়ো করলো, আজকে সবাই নিজেদের মতো শহরে থাকে, বাবার খোঁজ খবর কেউ রাখে না, মনে চাইলে, বছরের দুই একবার দেখা করতে আসে,মন না চাইলে সেটাও করে না..!
বাবা এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছে,এখন সে কান্না করে, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চায় সেই মেয়ের কাছে..!
জানেন সেই মেয়েটা কে..? সেই মেয়েটা হলাম আমি..!
আমি বিয়ে করে,অন্যের বাড়িতে ঘর সংসার করলে, আমার আব্বা কে কেডা দেখবো, তাঁর খোঁজ খবর কে নিবো..?
আব্বা আমার সাথে অন্যায় করছে, কিন্তু এখন তো নিজের ভুল বুঝতে পারছে, এখন দুঃখ প্রকাশ করেন..
আমি আমার আব্বার জন্য, নিজেকে নিয়া কোন স্বপ্ন দেহি না,আর বিয়া করতে চাই না..!

এতোক্ষণ সবাই চুপচাপ ছিলো, নাফিসা নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো, বুঝতে পারছি আপা, কিন্তু চাচা আর কয়দিন বাইচা থাকবো,পরে তোমার ভবিষ্যৎ কী এইটা কি ভাবছো…?

আমাকে একবার মেনে নেন, আপনার আব্বা আমার বাবার মতো, আমি খোঁজ খবর রাখবো, আমি আপনাদের দুইজন কেই শহরে নিয়ে যাবো..!
আপনার আব্বা আমাদের সাথেই থাকবেন..

কবীর খুশিতে বলে উঠলো, মীম আপু রাজি হয়ে যাও, তাহলে তো মিটেই গেলো,চাচা তোমার সাথে থাকবো..

মীম কিছু বলছে না,তার নীরবতা বলে দিচ্ছে সে রাজি..!
আমি আজকে আমার বাড়িতে যাবো, এইখানে অনেক দিন ছিলাম, বাবাকে নিয়ে আমি আবার আসবো কালকেই আসবো, এসে তোমাদের নিয়ে যাবো…

তাহলে তো ভলোই হয়_নাফু এইদিকে আয়,বড়োদের মধ্যে এতো থাকা ভালো না..!
কবীর নাফিসা কে নিয়ে চলে যায়..

এখন বলেন, আপনি রাজি তো..!
মীম লাজুক কন্ঠে বললো জ্বি..!
এখন কী আপনি থেকে তুমি ডাকতে পারি..?
মীম মুচকি হাসলো, সেটা কী আর বলা লাগে..!

তাহলে শেষ পর্যন্ত তোমার মনে জায়গা করেই নিলাম, এখনো পুরোপুরি জয়ী হতে পারিনি,যেদিন লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আমার ঘরে বউ হয়ে আসবা,সেই মনে হবে, আমি বিশ্ব জয় করে ফেলছি, সেইদিন আমার খুশি আর কে দেখে…?

কারো দেখা লাগবে না, আমি দেখলেই হইবো.. আচ্ছা আপনার বাবা গ্রামের মেয়ে পছন্দ করবো তো..?

পছন্দ কেন করবে না,ছোট থেকে বাবার কাছে যা চেয়েছি,সব পাইছি_আশা করি বাবা আমার এই চাওয়াটা পূর্ণ করবেন…

আল্লাহ যা চায় তাই হবে…

আচ্ছা তুমি বাড়িতে যাও, বায়জিদ ভাই আসলে আমিও বাড়ির দিকে রওনা দিবো…

সাবধানে থাইকেন, নিজের খেয়াল রাখবেন..
সাবধানে তো থাকবোই তোমাকে যে এখনো পাওয়া বাকি…! কিন্তু ভরসা তো এখনো পাইলাম না, এখনো বলো নাই ভালোবাসি..!

লজ্জা মাখা মুখে মীম বললো ভালোবাসি,এখন তো বলছি ভালোবাসি, নিজের অজান্তেই আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ফেলছি, আপনি ফিরে আসবেন কিন্তু, আমি অপেক্ষায় থাকবো..!

আহ্ কি শান্তি, যাক অবশেষে শোনা গেলো, রাজকুমারী আমাকে ভালোবেসে.. বাড়িতে যাও, নিজের খেয়াল রাইখো..!
মীম বাড়ির দিকে রওনা দিলো, নাহিদ বসে বসে ভাবছে বাবাকে কীভাবে রাজি করানো যায়..?

নদীর পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে কবীর উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলো..
কিরে পড়ে গেলি ক্যান,কী ছেলেরে বাবা_খালি উষ্টা খায়, নাফিসা হাসা শুরু করলো..!
নাফু তোর প্রেমে পড়ে পড়ে গেছি,উষ্টা খাই নাই,তোল আমাকে তাড়াতাড়ি..!
উষ্টা খাইয়া পড়ছে,এখন আবার প্রেমের দোষ হইলো..

এতো কথা বলিস না, দাঁত পড়ে যাবো,চল সামনে বসি;
দুইজন নদীর পাড়ে বসলো,পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ের শীতল বাতাস,নাফিসার চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে, নাফিসা চুল সামলাতে ব্যাস্ত…

কবীর এক পলকে তাকিয়ে আছে তার মুখে দিকে, এইভাবে কোনদিন দেখা হয় নি, হালকা বাতাস কিছু চুল, অবাধ্যের মতো উড়ছে, ও যখন হাসে গালে টোল পড়ে, থুতনিতে ছোট্ট একটা তিল, মুখটা মায়াময়ী,ওই ঢাগর ঢাগর কাজল কালো চোখের খাদে আজীবন পড়ে থাকতে মন চায়…

‍ এমনে কইরা কী দেখোস,নজর লাইগা যাইবো তো..?
আমার বউ আমি দেখমু,নজর লাগার কী আছে..!

আচ্ছা তুই দাঁড়ি রাখোস না ক্যান, এমনে তোরে পিচ্চি পিচ্চি লাগে, নাফিসা খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বললো..
আমি তো পিচ্চি,বুইড়া হয়ে গেছি নাকি,বুইড়া হইলে দাঁড়ি রাখমু…
তোর সাথে কথায় পারা যায় না,এখন বল_সেইদিন কি হইছিলো, আঘাত কেমনে পাইলি,আর কি দেখছোস?

আমি ভাবছিলাম গ্রাম মাদক মুক্ত করমু, কিন্তু যেখানে মন্ডলের বাড়িতে আড়ালে গাঞ্জা চাষ হয়, সেখানে এইসব চিন্তা করা তো বিলাসিতা..
গাঁদা ফুলের মতো গাছ গুলো হইলো গাঞ্জা গাছ, এইটা আমি নিশ্চিত,আর ওই বাগানের ভিতর নিশ্চয়ই গোডাউন খুলে রাখছে অবৈধ সব কারবারের…
আমি ভেতরে যাইতে পারি নাই, ভেতরে আন্দাজের চেয়েও বড়ো কিছু থাকতে পারে, আমি মন্ডল চাচাকে ভালো মানুষ মনে করছিলাম, কিন্তু এমন ছদ্মবেশী ভাবি নাই, তিনি তো উপরে উপরে লোকের উপকার করেন,আর ভেতরে যুবসমাজ ধ্বংসের নিয়ে যাচ্ছেন..

নাফিসা কিছু বলছে না,তার বাপ ভাইয়ের এইসব কর্ম কান্ডের কথা শুনে সে হতভম্ব,কি বলবে বুঝতে না…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here