#পর্ব_১৫ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
47

#পর্ব_১৫
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় বসে সিগারেট টানছেন আসিফ মন্ডল, বাড়ির সামনে একটা ভ্যান এসে থামলো, আসিফ মন্ডল বেরিয়ে আসলেন….!!
রুবেল বাবা যে, কেমন আছো.? এতো দিন পর আমাগো কথা মনে পড়লো, তোমার আব্বা মারা যাবার পর গ্রাম ছাইড়া সেই গেলা আর খোঁজ খবর নাই, তোমার আম্মা কেমন আছে, শরীর ভালো তো..?

আম্মা আল্লাহর রহমতে ভালো আছে, আপনি তো সব জানেন চাচা এই জায়গায় ৭বছর আগে কতো কিছু হয়ে গেছে, আমি আর কেমনে এইখানে আসি…
অতীত এতো মনে রাখা লাগে না বুঝলা,আহো বাড়ির ভিতরে যাই..?
হুম চলেন চাঁচা..!
দুইজন বাড়ির ভেতরে যায়..
কোই গো নাফিসার আম্মা তাড়াতাড়ি বাহিয়ে আহো..
জুড়িয়া বেগম দৌড়ে আসলেন, তিনি মানুষটা সহজ সরল, আবার আসিফ মন্ডলকে অনেক ভয় পান,ভয় পাবেন না কেনো_কেউ না জানলেও তিনি তো জানেন তার স্বামীর চরিত্র..!
চাচি আম্মা কেমন আছেন..?
এইতো বাবা ভালোই আছি, তুমি কেমন আছো, আসার সময় রাস্তার কোনো সমস্যা হয় নাই তো..!
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, কোনো সমস্যা হয় নাই।

এইহানে দাঁড়াই কথা কইবা নাকি পোলাডারে একটু বিশ্রাম করতে দিবা,যাও ওরে থাকার জন্য ঘর দেখাই দেও..
জুড়িয়া বেগম আর কথা বাড়ালো না, রুবেল কে তার ঘর দেখিয়ে দিলো..!
রুবেল হলো আসিফ মন্ডলের বড় ভাইয়ের ছেলে ৭ বছর পর গ্রামে ফিরছে আজকে…
রুবেল ঘরে এসে কাঁধ থেকে ব্যাগ রেখে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো, ফিসফিসিয়ে বললো_সব শেষ করবো আমি, আসিফ মন্ডল আমি তোর যম দূত হয়ে এসেছি…!

——-

হায় নাফু, তুমি এসেছেন তাই ফুলেরা সুভাষ ছড়িয়েছে_এইটা কী সত্যি..?নাকি ভ্রমরে গুজব ছড়িয়েছে..!

হায় আল্লাহ_আমার হবু স্বামী দেহি কবি হয়ে গেছে..
আমি তো আগে থেকেই কবি_কবীর থেকে ‘র’ বাদ দে!
সেটাও তো কথা, নাফিসা খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে শুরু করলো…
দেখ নাফু হাসা বন্ধ কর, অনেক ধইরা বইসা আছি, তোর খবর নাই, এখন যে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে সেটার কি হইবো, এতো দেরি ক্যান আসতে..?
শহর থাইকা ভাইয়া আসার কথা ছিলো না,একটু আগে আসলো,পরে বাড়ি থাইকা বের হইছি..!
ও আচ্ছা,তাহলে শয়তান হাজির_আমি ভাইয়ের কাছে শুনছিলাম,ওর কারণে নাকি ওর নিজের বোন মারা গেছে..!যাই হোক সাবধানে থাকিস..?

এতো চিন্তা করা লাগবো না,কবি মশাই কিছু কবিতা শুনাও..!
কী আর শুনামু কবিতা, কিছু ভাবতে গেলেই আমার খালি লাগে শুধু খিদা…!

থাক তাহলে আর কিছু ভাবতে হইবো না,বেশি বেশি খিদা লাগবো, নাফিসা মুখ বাঁকা করে এক পাশে ঘুরে বসলো..!
হায় হায় নাফু দেহি রাগ করছে..!
রাগ তো করমু, আজকে শাড়ি পড়ছি কিছুই তো কইলি না, আবার তোর কিছু ভাবলে তো খিদা লাগে..!

দেহি দেহি কেমন দেখা যাইতাছে আমার বউটারে..!
মুচকি একটা হাসি দিয়ে, নাফিসা কবীরের দিকে ঘুরে বসলো..!
শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা পড়িয়ে দিতে দিতে কবীর বললো..
আমার বউ পড়ছে আজকে শাড়ি_সত্যি কইতাছি তোমারে লাগতাছে আসমানের পরী..!!
ওগো প্রেয়সী, ইচ্ছে তো করে তোমার ওই কাজল কালো চোখের মায়ায় হাজার বার মরি..!

ম’রা লাগবো না কবি সাহেব_সারা জীবন পাশে থাকবেন এটাই আমি চাই..
আচ্ছা নাফু জামাই কে কেউ তুই ডাকে নাকি, সম্মান দিবি সম্মান_হবু জামাই লাগি..!
ছোট বেলা থেকেই তুই ডাকছি এখন কী এতো সহজে ছাড়া যায়,আর ডাকমু না, মাঝে মধ্যে ভুল হইতে পারে, তখন সেটা ক্ষমা করবেন জামাই মাহাশয়…!
কবীর নাফিসার কোলে রেখে বললো..?
নাফু তোর জল্লাদ বাবা যদি খবর পায় তার মেয়ে_ আমার মতো একটা বেকার পোলার প্রেম সাগরে ডুবে গেছে, পিটাইয়া কিন্তু প্রেমের ভূত ছাড়াই ফেলবো..!

প্রেমের ভূত ধরে নাই, আমি তো প্রেমের সাগরে সাঁতার কাটতাছি,যদি তুমি হাত ছাইড়া দেও তাহলে এখানেই ডুবে ম..!
কবীর নাফিসার মুখ চেপে ধরলো,আর যদি কখনো ম’রা’র কথা মুখে আনো, সামনে নদী দেখতাছো না_ওই নদীতে ঝাঁপ আমিই দিমু..!
এখন যে নদীতে ঝাঁপ দিবার কথা তুমি কইলা, এইটা কী দোষের হইলো না,খালি আমি কিছু কইলেই দোষ?
যাও তোমার সাথে কথা কমু না, তুমি ছাইড়া যাইতে চাও, একটুও ভালোবাসো না, আমি তোমার কিছু লাগি না..?

ফুল, গন্ধ, হাওয়া, সবকিছু জুরে আছো তুমি..!
বৃষ্টির রিমঝিমও তুমি_আর বিদ্যুৎ এর ঝলকানিও তুমি
এই মাটি_ আকাশ জুড়েও তুমি..!
এই জগৎও তোমার ওই জগৎও তোমার..!
ঘুম উঠিয়েছে যে_সেই যাদুকর ও তুমি..?

আজকের সময়টাও তোমার_আর আমার মনে তেও শুধু তুমি_সব জায়গায় শুধু তুমি আর তুমি, ওগো মায়াবতী তাহলে কেমনে বলতে পারলা তোমার কী লাগি আমি…!

নাফিসা আর কিছু বললো,রাগ করে থাকার আর উপায় নেই..
কবীর জিগ্যেস করলো, মীম আপুর খবর কী.. কথা হইছে আপুর সাথে..?
না আপুর সাথে কথা হয় নাই, নাহিদ ভাই বাড়িতে গেলো সেই দুই দিন হইয়া গেছে_এখনো তো কোন খবর নাই..বলছিলো তো পরের দিনই আসবো..?

মনে হয় কোন ঝামেলা হইছে, বাড়িতে যাও_আমার একটু কাজ আছে..!
আচ্ছা সাবধানে কাজ কইরো..?
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বাড়ির মধ্যে যে শয়তান ঢুকছে তার থাইকা সাবধানে থাইকো, নিজের খেয়াল রাইখো..

নাফিসা আর কথা না বাড়িয়ে,বাড়ির দিকে রওনা দেয়

—–

মালিক আপনার ছেলের জ্ঞান ফিরছে, ঘরে খাবার দিছি কিন্তু কিছু খাইতাছে না..!
ওরে ওই ভাবেই থাকতে দেও আমিও দেখমু কতোদিন না খাইয়া থাকতে পারে, যতোদিন না ও আমার কথা শুনবো,যা বলবো সব মানবো, সেইদিন ওর মুক্তি হইবো ওই ঘর থাইকা তার আগে না.. বারেক খন্দকার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন…


কতো আশা নিয়ে বাবার কাছে আসছিলাম, আমার ভালোবাসার কথা বলার জন্য, আমার স্বপ্নের রাজকন্যাকে আমার ঘরে রানি করে আনবো বলে..?
নিয়তি কেন এমন করলো আমার সাথে, আমার কী খুব বড়ো দোষ ছিলো, আমি কেন এতো অসহায়,সৎ মা তো একবারও খোঁজ খবর নিলো না, নিজের থাকলে কী এমন করতো..?
দুই হাত দিয়ে মুখ ছাপিয়ে চাপা কন্ঠে নাহিদ কাঁদছে..!
কিছু সময় যাবার পর_নাহিদ নিজেই নিজের মনকে শান্তনা দেয়_কান্না কোনো কিছুর সমাধান না,চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে ওই মেয়েটির করুন মুখ, বিদায়ের সময় কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল, “আপনি আসবেন তো…?আমি অপেক্ষা করবো..!
সে হয়তো এখনো আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে, আমি আসবো, আমাকে আসতে হবেই…!

——
রহিম মিয়া বাজার থেকে আসছেন, খেয়াল করলেন মীম আনমনে দাঁড়ি আছে, বাড়ির বাহিরে….
কিরে “মা”এমন কইরা ক্যান দাড়াই আছোস…?

কিছু না আব্বা, এমনে ভালো লাগতাছে না…!
বাহিরে থাকিস না,আয় বাড়ির ভেতরে যাই..!
রহিম মিয়া মেয়েকে নিয়ে ঘরে আসলেন…!

তিনি দুইদিন থেকে লক্ষ্য করছেন,মীম সারাদিন কিছু একটা নিয়ে ভাবে, খুব চিন্তিত থাকে মেয়েটা, কিন্তু কী নিয়ে,সেটা এখনো বুঝতে পারছেন না… মীমকে জিগ্যেস করলেন সে কিছু বলেও না…

মীমের মাথায় এখন একটাই চিন্তা ওনি আসবেন তো..!

—–
সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার, নাফিসা নিজের ঘরের ভেতর বসে আছে, হঠাৎ খেয়াল করলো, দরজার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, নাফিসা কিছু বুঝে ওঠার আগেই, একটা ছায়াকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলো..!
কাছাকাছি আসতেই নাফিসা বলে উঠলো, রুবেল ভাইয়া আপনি..?
আপনি এই সময়ে আমার ঘরে ক্যান??
কী চান এইখানে…?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here