#পর্ব_১৬
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
রুবেল কোন কথা না বলে এগিয়ে আসছে নাফিসার দিকে, নাফিসা ধিরে ধিরে পিছনে যাচ্ছে,হুট করেই রুবেল নাফিসার গলা চেপে ধরলো_বললো, সবাইকে মেরে ফেলবো আমি,কেউ বাঁচবি না..!
নাফিসা চমকে উঠলো,কী সব ভাবছি আমি_রুবেল ভাইয়া তো ঘরেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমাকে না, এই ঘরটাকে খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে মনে হয়_মনে হয় কোন গুপ্ত ধন আছে এই ঘরে, নাফিসা রুবেলের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ দেখলো রুবেল হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো,দুই চোখে পানি…
ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন,কী হয়েছে আপনার..?
কিছুক্ষণ পর মাথা উঠিয়ে রুবেল বললো,যা হবার অনেক আগেই হয়ে গেছে,এখন সময় এসেছে সব ঠিক করার..!
অনেক আগে কী হয়েছে, আপনি কী ঠিক করতে চান.?
অনেক কিছুই হয়েছে তখন তুমি ছোট ছিলা,আর এখন বলেও বা লাভ কি..?
বলেন আমি সব শুনতে চাই..?
এইখানে বলবো না, আমার সাথে ছাদে যাবে..?
আচ্ছা চলেন..!
দুইজন ছাদে যায়….!
এখন যদি তোমাকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে দেই..?
আমার বিশ্বাস আছে আপনি দিবেন না..!
যদি এই বিশ্বাস থাকে আমি তোমাকে ফেলে দিবো না, তাহলে এটাও বিশ্বাস রাখো আমি তোমাকে একটা কথাও মিথ্যা বলবো না..?
আপনি বলেন কি বলতে চান..!
ছাদের কোনায় কিছু একটা পড়ার শব্দ শোনা গেলো, দুইজনেই সেই দিকে তাকালো কিন্তু কিছু দেখতে পেলো না, চাঁদের আলোতেও আবছা অন্ধকার ছিলো….
আজ থেকে ৭বছর আগের কথা, তুমি যেই ঘরটায় এখন থাকো, ওই ঘরটায় একসময় আমার বোন রুমা থাকতো..!
অনেক সুখি পরিবার ছিলো আমাদের, কিন্তু কথায় আছে না _মানুষের সুখের বেশিদিন স্থায়ী হয় না, আমাদের ও হয় নাই..!
স্কুল থেকে ফেরার পথে বখাটে ছেলেরা রুমাকে বিরক্ত করতো, অনেক দিন আমার কাছে আমার বোন বিচার দিছে ভাইয়া ওরা আমাকে বাজে কথা বলে, আমি অনেক দিন ছেলেদের বুঝাইছি,ভয় দেখেছি_মন্ডল চাচাকেও বিচার দিছি, কিছুতে কিছু হয় নি..! কিছুদিন বোনকে ইস্কুল থেকে নিজের সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছি, কিন্তু এইভাবে কয়দিন চলে..!
আমিও তো টুকটাক কাজ করতাম…?
কিছুদিন পর খবর পেলাম,ওই ছেলেদের এতো সাহসের পিছনের কারণ তোমার ভাই রায়হান মন্ডল..!
অবাক লাগছে তো নিজের ভাইয়ের নাম শুনতে, আমারও অনেক অবাক লেগেছিলো…!
বায়হানের সাথে অনেক বড়ো একটা ঝগড়া হয়, চাচার কাছে বিচার দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি তার আদরের ছেলেকে কিছু বলতে নারাজ…!
এভাবেই চলছিলো দিন, রায়হান আমার উপরে রেগে ছিলো _একদিন হুমকি দিয়ে বসলো,বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর বোনকে হারাবি..!
আমি সেই দিন বড়ো গলায় বলেছিলাম,যা দেখা যাবে কী করতে পারিস..?
আমার সেই দিনের ওই কথাটাই আমার বোনের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়…! প্রতিদিন ওরে ইস্কুল দিয়ে আসতাম নিয়ে আসতাম, হঠাৎ শরীরটা খুব খারাপ করলো, বোনকে বললাম আজকে ইস্কুল যাস না..?
কিন্তু ও আমার কথা শুনলো না,ওর নাকি পরিক্ষা আছে,জেদ করেই চলে গেলো..? বললাম সাবধানে
যাবি,আসার সময় অন্যদের সাথে চুপচাপ চলে আসবি,কেউ ডাকলে যাবি না,কারো সাথে কোন কথা বলবি না..!রুমা হুম হুম করে চলে গেলো…?
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো,রুমা আর বাড়ি ফিরলো না, সারা গ্রাম খুঁজে ফেললাম কোথাও নেই..?
আম্মা কান্না শুরু করলো শান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলাম না.. আমি খুঁজেই চলছি সারাদিন,আমার কলিজার টুকরো বোনকে,ওকে ছাড়া আমি ক্যামনে থাকবো..?
আমার বোনটা যে আমার খুব আদরের,ওর কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাবো..?
কে আমাকে প্রতিদিন সকালে বকা দিবে _এই ভাইয়া ষাঁড়ের মতো পড়ে পড়ে আর কতো ঘুমাবি ..!
আমার খাওয়া-দাওয়ার খোঁজ খবর কে নিবে..?
আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না, দৌড়ে গেলাম রায়হান মন্ডলের কাছে,সে অস্বীকার করে বসলো সে কিছু জানে না..! আমি রাগের মাথায় ওকে থাপ্পর দিয়ে বসলাম,ও শয়তানি হাঁসি দিয়ে বললো কাজটা ঠিক করলি না…!
আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো ওর কথায়,ও আমার বোনের কিছু করে ফেলবে এই ভেবে..!
নিজের সম্মানের কথা ভুলে, আমি রায়হান মন্ডলের পা ধরে মাফ চাইলাম, আকুতি করলাম আমার বোনকে ফিরিয়ে দেবার জন্য..ও কিছু না বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো..!
পরের দিন সকালে খবর এলে, নদীতে একটা মেয়ের লাশ দেখা যাচ্ছে…! বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো…আমি একটুও দেরি করলাম না, দৌড়ে গেলাম নদীতে..
তোমার নরপশু ভাই আমার বোনকে তো ফিরিয়ে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু লাশ বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে…
বোনের অর্ধ নগ্ন দেহেটাকে কাপড়ে জড়িয়ে, চিৎকার করে কান্না করেছি আমি…!
কী দোষ ছিলো আমার বোনের, কী পাপ করেছিলো..!
কেনো ওকে এমন শাস্তি পেতে হলো….?
যদিও কোন প্রমাণ নেই, এইসব রায়হান করছে, কিন্তু আমার পূর্ন আস্থা রায়হান ওই সব করছে…!
আমার বোনকে কবর দিতে হবে,ও একলা মাটির ঘরে থাকবে, ভাবতেই আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে যাবার মতো ব্যাথা, আমি কেমনে থাকবো আমার কলিজার টুকরো বোনকে ছাড়া….
সবাই বুঝ দিলো,যা হবার হয়ে গেছে কেঁদে আর কি হবে..? কেঁদে মরলেও তো তোমার বোন আর ফিরে আসবে না…!
রুবেল নাফিসার দিকে তাকালো জিগ্যেস করলো, তোমার ঘরে কেন গেছিলাম জানো..??
নাফিসা জল ছলছল নয়নে তাকিয়ে বললো, জানি না ভাইয়া…?
ওই ঘরটা আমার বোনের ছিলো,ওর সব স্মৃতি মনে পড়ে, ওই ঘরটা দেখলে,ও মাঝে মধ্যে ওই ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নার মুখ দেখে খিলখিলে হাসতো…!
আজকে এই বাড়িতে এসে, ওর কথা খুব পড়েছিলো গিয়েছিলাম ওঁর ঘরটা দেখতে..যেই বোন আমার হাঁসি খুশি থাকার কারণ ছিলো_সে আজ আমার দু চোখ নোনা জলের সমুদ্র বানিয়ে দিয়ে গেছে…!
রুবেল কান্না শুরু করলো হাউ হাউ করে,নাফিসাও চোখের পানি ফেলছে….
কেটে গেলো কিছু মূহূর্ত, নীরবতা ভেঙে নাফিসা বলে উঠলো_আপনি মন্ডল বাড়ি থেকে চলে গেলেন কেনো..? এইখানে থাকলেও পারতেন..!
বোন মারা যাবার পর আমি ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম, কিছুই ভালো লাগতো না…কোন এক বন্ধু একদিন এসে বললো,এতো চিন্তা করিস না, শান্তিতে থাকার ওষুধ আমার কাছে আছে,এই বলে সে আমাকে নিয়ে গেলো..! আমিও গেলাম দেখি কী দেয়..?
সে আমাকে ড্রাগ দিলো,তখন জানতাম না এইটা ড্রাগ..! কয়েকদিন দিন সে ফ্রিতে দিলো, কিন্তু কয়দিন পর যখন আমার নেশা হয়ে গেলো,তখন সে টাকা চাওয়া শুরু করলো,পড়ে গেলাম মহা ঝামেলায়, আব্বার কাছে কিছুদিন টাকা নিলাম, কিন্তু কিছুদিন পর আব্বা জিগ্যেস করলো এতো টাকা নিয়ে কী করোস,জবাব দে…?
আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না….!
আব্বা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলো… নেশা আমায় এতোটাই পাগল করে দিলো যে, একদিন না ড্রাগ না নিলে থাকা যায় না, কিন্তু টাকা কোথায় পাবো,তাই
বাড়ি থেকে এটা ওটা চুরি করে বাজারে বিক্রি করে,ড্রাগের পিছনে খরচ করতাম…
বোনের মারা যাওয়া, আমার এমন ছন্নছাড়া ভাব,বাবা আর সইতে পারলেন না, হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন কিছুদিনের মধ্যে..মন্ডল চাচা মাকে বাড়ির কাজের লোক বানিয়ে দিলো…
এইবার আমার টনক নড়ে উঠলো, আমি সব হারিয়ে ফেলছি, আমি কী করতেছি, আমার মায়ের এতো কষ্ট আমার আর সইলো না…
মাকে নিয়ে চলে গেলাম গ্রাম ছেড়ে….!!
আচ্ছা ভাইয়া আপনি কী মন্ডল বাড়ির পেছনের রহস্য জানেন..!
হ্যাঁ সব জানি আমি..!সব কিছু জানি বলেই এইবার আমি এসেছি সব শেষ করতে..!
নাফিসা ভয়ে ভয়ে বললো আমিও আপনার সাথে আছি…!
অন্ধকার এর মধ্যে ছাদের কোনা থেকে একটা পুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো_আমিও সাথে থাকতে চাই…?
ছাদের দরজার পাশে থেকে একটা মেয়ালি কন্ঠ শুনা গেলো আমিও সব জানি…! আমি সাহায্য করবো তোদের….
চলবে….