পর্ব_২০ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
44

#পর্ব_২০
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

ভোরের আলো ফুটে গেছে, চারদিকে পাখিদের গুঞ্জন.. সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে.. বায়জিদ নদীর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময়, খেয়াল করলো কেউ একজন উপুড় হয়ে পড়ে আছে.. কাছে গিয়ে মুখটা দেখেই চমকে উঠলো,আরে এটা তো আসিফ মন্ডলের ভাতিজা রুবেল, কিছু দিন আগেই,শহর থেকে গ্রামে আইছে..!
কিন্তু নদীর পাড়ে এইভাবে পড়ে আছে ক্যান..নদী থেকে পানি এনে মুখে দিতেই জ্ঞান ফিরলো..
মাথার পেছনে গভীর ক্ষত, কেউ হয়তো শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করছে..!
বায়জিদ রুবেল কে মন্ডল বাড়ির কাছাকাছি রেখে আসলেন..
রুবেল কে এমন নাজেহাল অবস্থায় দেখে জুবিয়া বেগম দৌড়ে আসলেন..! রুবেল বাবা তোমার এই অবস্থা ক্যান, রাতে কোই ছিলা,কি হইছে তোমার…?
চাচি ওঁরা আমার শিমুকে নিয়া গেছে, আমি বাঁচবো না আমার শিমুল ফুলকে ছাড়া.. রুবেল হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো…!

জুবিয়া বেগম কিছুই বুঝতে পারছেন না, তিনি রুবেল কে ঘরে নিয়ে গেলেন..! মাথার ঔষধ লাগিয়ে দিলেন.. রুবেল আবল তাবল বকতে বকতে ঘুমিয়ে গেলো…

পরন্ত বিকেলে নাফিসা আসলো বাড়িতে, আসিফ মন্ডল তখন বাড়িতে ছিলো না,বায়হান তো সবসময়ই বাড়ির বাহিরে থাকে…!
পুরো বাড়ি ফাঁকা ছিলো, নাফিসা রুবেলের ঘরে গেলো, আস্তে আস্তে ডাকলো, ভাইয়া ঘুমাইছেন, কথা আছে উঠেন..
রুবেল ধরফরিয়ে উঠে বসলো, আমার শিমু কোই ওর কোন খোঁজ পারছো, আচ্ছা ভাইয়া এই শিমুটা কে..?
যাই হোক আপনি নদীর পাড়ে আসেন সবাই অপেক্ষা করতাছে…!

রুবেল উঠে দাঁড়ালো নাফিসার পিছু পিছু হাঁটা দিলো নদীর পাড়ে…?
নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসে আছে, নাহিদ, কবীর, মীম… নাফিসা এসে ওদের সাথে বসলো…
কবীর বললো, রুবেল ভাই তুমিও বসো,আর বলো কী হয়েছিল কাল রাতে..? তুমি নদীর পাড়ে পড়ে ছিলা ক্যান..?
আমি তোমাদের একটা কথা বলি নাই, আমি একজন কে অনেক ভালোবাসি,ওর নাম হলো শিমু..!
আমি আদর কইরা শিমুল ফুল ডাকতাম… শহরে আমরা একসাথে পড়াশুনা করছি, সেইখানে থেকে আমাদের পরিচয়, শুরু থেকেই ওরে আমার অনেক ভালো লাগতো, গায়ের রং একটু শ্যামলা, কিন্তু এই শ্যামবতী আমার মনের রাজ্যের রানি.. আমার মন বাগানে ফুটন্ত গোলাপ.. শুরুতে ও আমাকে পাত্তা দিতো না,বলতো আরেহ শ্যামলা মেয়ের সাথে আপনার যায় নাকি…! আমি অনেক কষ্টে আমার শ্যামবতীর মন জয় করছিলাম, শুরু হয়েছিলো আমাদের প্রেমে গল্প…!
একদিন শুনলাম ও গ্রামে যাইবো ওর চাচাকে দেখার জন্য..!আমি যখন শুনলাম ও মন্ডল পাড়া গ্রামে যাইতাছে..? আমার বুক কেঁপে উঠে…! আমি জানতাম গ্রামটা ভালো না, নতুন কেউ আসলেই তাদের উপর নজর পড়ে যায় শুকুনদের…
পুরোনো কষ্ট চাপা দিয়ে, নিজের ভালোবাসা কে আগলে রাখতে আমিও চলে আসি এই গ্রামে…
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আমি যা নিয়ে ভয় আর চিন্তা করছিলাম, আমার চোখের সামনে সেটাই হয়ে গেলো,ওরা আমার শিমুল ফুলকে নিয়ে গেলো.. আমি ওরে ছাড়া কেমনে থাকবো..!‌ আমি ওরে ছাড়া কেমনে ফিরবো শহরে…?

নাহিদ বললো, কী হয়েছিল গতকাল রাতে, কিভাবে এতো কিছু হয়ে গেলো..?

গতকাল রাতে সবাই যখন মীমদের বাড়িতে থেকে গেলেন, আমি ভাবলাম শিমুর সাথে দেখা করে আসি…
এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে, হাঁটা দিলাম সাইফুল মাস্টারের বাড়ির দিকে.. মাস্টার তখন গভীর ঘুমে অচেতন.. জানালায় টোকা দিতেই শিমু জানালা খুলে দিলো,ও জানতো আমি আসবো”_তাই এতো রাতেও জেগে ছিলো…! কিছু সময় কথা বলার পর, হঠাৎ কেউ আমার মাথায় আঘাত করলো..!
আমি চিৎকার করে বললাম শিমুকে ঘরের বাহিরে আইসো না..! কিন্তু ও আমার কথা শুনলো না..
ও আমার কাছে ছুটে আসতেই কিছু লোক ওর মুখটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো… আমার আর কিছুই মনে নাই..! আমি কিছু জানি না, আমি আমার শিমুকে চাই, আমি ওরে নিয়া ফিরতে চাই শহরে…!
জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে আমার,ও যদি হারিয়ে যায় আমি বাঁচতে পারবো না… রুবেলের গগন কাঁপানো চিৎকার আমি বাঁচতে পারবো না_আমার শিমুল ফুলকে ছাড়া,ওরে আমার কাছে আইনা দেন..?

নাহিদ উঠে দাঁড়ালো, কপালের ঘাম মুছে বললো_আপনি কান্না করবেন না, আমি কথা দিচ্ছি, আপনার ভালোবাসাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবো ইনশাল্লাহ…!

কবীর বললো আমরা আজই যাবো ওদের আস্তানায়, ধ্বংস করে দিবো সবকিছু, শিমুকে উদ্ধার করে আনবো আজকেই, আপনি কোন চিন্তা করবেন না…!
নাফিসা বললো, আমি আম্মুকে বলছি, আব্বার খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ দেওয়ার জন্য, চিন্তা নাই আম্মু আমাদের সাথে আছে..! আজকে সন্ধ্যায় আমরা সবাই যাবো..!মীম বললো আমিও যেতে চাই…!

পাঁচজন হাতে হাত রাখলো,এক কঠিন শপথ করলো সবাই, হয়তোবা মারবো,না হয় পাপের রাজত্ব ধ্বংস করবো… কখনো ভয় পেয়ে পিছুটান দিবো না, দিবো না…!

সময়টা খুব উত্তপ্ত,সবার চোখে মুখে যেন আগুনের ফুলকি ঝড়ে,এক কঠিন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠলো তরুণ কিছু প্রান…!
এখন হয়তো বেশি দেরি নেই, হবে এই পাতাল পুরীর অবসান…!

—————

গোধূলির শেষ আলো ছড়িয়ে গেছে চারদিকে,পালা এখন বিদায়ের…
নাহিদ মীমকে নিয়ে গেলো রহিম মিয়ার কাছে, বিনীত অনুরোধ করে নাহিদ বললো_বাবা আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি, তাঁকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই, বিয়ে আমরা ঢাকায় করে নিবো, আপনার উপর এতো চাপ দিতে চাই না, কিছুদিন পর এসে আপনাকে সাথে নিয়ে যাবো…!

রহিম মিয়া চোখের পানি ছেড়ে দিলেন, হয়তো এই অশ্রু আনন্দের..! তার মেয়ে সুখি হবে,পিতা হয়ে আর কী চাওয়ার আছে..! মীম কখনো বিয়ে করতে চায় নাই, কিন্তু বাবা ও তোমাকে পছন্দ করছে, তোমার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে, আমি আর আপত্তি করতে পারি না, আমার মেয়েকে সুখি রাইখো,আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব তোমার কাছে..! রহিম মিয়া মীমকে নাহিদের হাতে তুলে দিলেন..! দুইজন পা ছুঁয়ে সালাম করলো..”

বেঁচে থাকো মা সুখি হও,বুড়ো বাবাকে ভুলে যাইয়ো না..মীম বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো.. এইদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে…
বিদায় নেবার সময় এসে গেলো… অশ্রু ভেজা চোখে দুঃখি বাবা মেয়েকে বিদায় দিলেন…
হয়তোবা সুখ আসতে চলছে আমার মেয়ে জীবনে….

————
দুই গ্রামের মাঝে বট গাছের নিচে পাঁচজন একসাথে হলো, রুবেল বললো_আমি পাতাল পুরীর সবকিছু চিনি, ওখানে থেকে বের হবার একটা গুপ্ত রাস্তা আছে…
সবাই মিলে বুদ্ধি করলো, রুবেল শিমুকে আর যতো বন্দি মেয়ে আছে, সবাইকে নিয়ে গুপ্ত রাস্তা দিয়ে বেড়িয়ে আসবে, ঘাটে দুইটা নৌকা বাঁধা আছে_একটা নৌকায় সবাইকে নিয়ে শহরের দিকে রওনা দিবে রুবেল..আর পরের নৌকায় নাহিদ যাবে মীমকে নিয়ে..

কবীর বলে উঠলো আমরা কী করবো, আমাদের কী মন্ডল আস্ত রাখবে…

নাহিদ বললো তোমাদের চিন্তা নাই, আমরা শহরে গিয়ে সব ব্যবস্থা করে ফেলবো,পরে তোমাদের নিয়ে যাবো..
তোমরা শুধু দুইটা দিন কষ্ট করে এইখানে থাকো…

আর একটা কথা, রুবেল কে নৌকায় তুলে দিয়ে কবীর নাফিসা কে নিয়ে বাড়িতে চলে যাবা কোনো দেরি করবা না..পরের নৌকায় আমরা চলে যাবো…!

সব সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ, রুবেল ব্যাগ থেকে বের করলো পাঁচটা ছোট ছোট টর্চ লাইট,সবার হাতে একটা করে লাইট দিলো…!
একটা ক্যামেরা, একটা বোতল… তিনটা লাঠি…
কবীর হেসে হেসে বললো, আচ্ছা ভাইয়া ক্যামেরা দিয়ে কী হবে, আমরা কী বেড়াইতে যাইতাছি…!

আরে না বেড়াতে ক্যান যাবো,এই ক্যামেরা নিয়ে যাইতাছি,মন্ডলের সব ভালো ভালো কাজের ছবি নেওয়ার জন্য,পরে তো পাবলিকের কাছে তার চরিত্রের বর্নণা দেওয়া লাগবে,তার জন্য কিছু প্রমাণ থাকা চাইই..

আচ্ছা বুঝলাম, রুবেল ভাইয়া এই বোতলে কী নিছেন..?
এই বোতলে অজ্ঞান করার ঔষধ আছে, দরকারে কাজে লাগবে…!
নাহিদ বলে উঠলো সবাই তৈরি তো, এবার যাওয়া যাক…?
সবাই বলে উঠলো আমরা তৈরি চলেন…!
যাবার আগে, নাহিদ সবার উদ্দেশ্যে বললো, আমরা যাচ্ছি মরণ কুটির ভেতরে, কেউ কোন সময় ভয় পাবে না,আর কারো হাত কেউ ছাড়বে না..!সবাই সাবধানে থাকবে সবসময়…?

নাফিসা কবীরের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,মীম নাহিদের হাতটা ধরলো..
জোছনা রাত, একটা ব্যাগ কাঁধে রুবেল এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে, পিছনে ওরা চারজন…!

সবাই এসে দাঁড়ালো মন্ডল বাড়ির সামনে, নাফিসা আসতে করে ডাকলো, আম্মু_জুবিয়া বেগম বেড়িয়ে আসলেন, বললেন”তোর আব্বা ঘুমিয়ে গেছে, ভাতের সাথে ঘুমের ঔষধ দিছি,কোন চিন্তা নাই, রায়হান কাজে বাহিরে গেছে_আজকে মনে হয় আসবো না…!
তোরা সাবধানে যা.. আল্লাহ তোদের সাথে আছে,সফল তোরাই হবি…!

সবাই টর্চ লাইট হাতে নিলো, গুটি গুটি পায়ে যেতে শুরু করলো বাগানের দিকে…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here