পাতাঝরার শেষে……পর্ব ১

0
3109

পাতাঝরার শেষে……
©মৌপর্ণা

পর্ব ১) R̶e̶j̶e̶c̶t̶e̶d̶ সিলেক্টেড!

খবরের কাগজে দেওয়া বিজ্ঞাপনের ঠিকানার ছবিটা ফোন থেকে একবার মিলিয়ে নিলো অন্বেষা, পোস্টবক্সে লেখা ঠিকানাটার সাথে হুবহুব মিলে গেলো সেটা!
বাইরে বিশাল বড়ো একটা লোহার গেট! লোহার গেটের উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো বাড়িটার ঝুল বারান্দা, কয়েক টা বিভিন্ন রঙের
পাতাবাহার গাছ প্লাস্টিকের সৌখিন টবে ঝোলানো…..

ঘড়িতে ঠিক বিকেল চারটে, শহরতলীর আশেপাশে যে এমন একটা নিরিবিলি জায়গা আছে সেটা আজ অবধি জানা ছিলোনা অন্বেষার!
পশ্চিমে আকাশের সূর্য তখনও বেশ ঝলমল করছিলো আকাশ জুড়ে, এদিক ওদিক দেখে লোহার গেটে হালকা একটু টোকা দিলো অন্বেষা!

হালকা একটু টোকা দিতেই লোহার গেটের উল্টো প্রান্তের খানিকটা অংশ খুলে দিলো দারোয়ান, লোহার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ডান দিকের একটা ছোট্ট ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সিকিউরিটি…

“কি ম্যাডাম, ইন্টারভিউ?”

একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো অন্বেষা!
ক্লাস নাইনের একজনকে সাইন্স গ্রুপ পড়াতে হবে, ICSE স্টুডেন্ট, মূলতঃ কেমিস্ট্রি, যদিও ফিজিক্স টা পাশাপাশি দেখাতে পারলে আরও ভালো! স্যালারি নেগোশিয়েবেল….
সেটার জন্যে ইন্টারভিউ?

“কি ম্যাডাম, ছোট-দিদিমণি কে পড়ানোর জন্যে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন তাইতো?”

“হ্যাঁ!”

“চলুন আমার সাথে….”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই গেটের সিকিউরিটি দারোয়ান কে কিছু একটা ইশারা করে এগিয়ে চললো বাড়িটির দিকে!

অন্বেষা এগিয়ে গেলো সিকিউরিটির পেছন পেছন, লোহার গেট বন্ধ হওয়ার একটা আওয়াজ পেলো অন্বেষা, এতক্ষণে একটু ভয় – ভয় করছিলো অন্বেষার, এরকম একটা নিরিবিলি জায়গা তে শুধু একটা বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আসাটা বোধহয় উচিত হয়নি! তাও আবার একা, কিন্তু স্টুডেন্ট পড়াতে যাবার প্রথম দিন কথা বলতে কে নিজের বান্ধবী বা পরিবারের লোকজন কে নিয়ে যায়?

এতক্ষণে বাড়ির বাগানের খানিকটা অংশ পেরিয়ে অন্বেষা ঢুকে পড়েছিল বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে!
বিশাল বড়ো ডাইনিং, দামি দামি আসবাবপত্র, ডাইনিং টেবিলে বসে একটা মধ্যবয়স্ক মহিলা, পরণে বেশ দামি হাউসকোট,
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল অন্বেষার দিকে, অন্বেষার গলাটা বেশ
শুকিয়ে এসেছিলো ততক্ষণে….

“ম্যাডাম একদম কোণের ডান দিকের ঘরটায় চলে যান….”

অন্বেষা কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে চললো ডান দিকের সব চেয়ে কোণের ঘরটার দিকে,
ঘরটায় ঢুকতেই একটা ভ্যাপসা গন্ধ ভেসে এলো নাকে!
ঘরের মধ্যে ঢুকতেই দেখলো সোফাতে বসে দুজন মেয়ে ও একটি ছেলে,
একটু ভয়টা কমলেও কিরকম যেন সব গোলমালে লাগছিলো অন্বেষার!
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো সে,
হঠাৎ একটা আওয়াজ ভেসে এলো –
“ভেতরে আসুন…..” বেশ ভরাট একটা পুরুষালি আওয়াজ! আওয়াজটা যেন চেনা….

এতক্ষণে অন্বেষার নজর গেলো সেই ভরাট গলার মানুষটির দিকে!
একি মানুষটা কে কোথায় যেন দেখেছে অন্বেষা! কিন্তু কোথায়? কিছুতেই মনে পড়লোনা অন্বেষার!

অথচ মানুষটার চেহারাটা একদমই আলাদা মানে বেশ আনকমন! আর দশটা ছেলের মতন নয়, তবে আলাদা চেহারা টা বেশ মাননসই ওভারঅল!

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বেশ অনেকক্ষণ আগেই অবচেতন মনে অন্বেষা বসে পড়েছিল সোফায়! সোফাটা বেশ বড়ো, অনায়েসে চার জন লোক পা ছড়িয়ে বসা যায় এখানে!
তবে এই ঘরটা বেশ আলাদা পুরো বাড়িটার তুলনায়!
কেমন যেন ঘুপচি, স্টোর রুমের মতন!
সারভেন্ট কোয়াটার নাকি?
নয়তো এই ঘরটা এতো আলাদা কেন!

ঠিকঠাক সূর্যের আলো পৌঁছয় না ঘরটা তে, ডাইনিং এর তুলনায়, আসবাবপত্র গুলো বেশ মধ্যবিত্ত্ব, একটা কাঠের টেবিল ও তিনটে চেয়ার… মধ্যবিত্ত সোফা,
ঘরে একটা রংচটা স্টিলের আলমারি, আলমারি তে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো একটা বহু পুরোনো
তানপুরা!
তানপুরাতার নীচে একটা ছোট্ট গদি সাদা চাদরে মোড়া…….

একটা দুটো কথা কানে ভেসে এলো অন্বেষার!
যেমন কোন ইয়ারে পাসআউট? কনফিডেন্ট কিনা ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি নিয়ে! ইত্যাদি ইত্যাদি!
এতক্ষণে আবার চিন্তার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো অন্বেষা! লক্ষ্য করলো টেবিলে খাতা ও পেন রাখা!
মানেটা কি?
কি লিখে চলেছে টেবিলে বসে থাকা ইন্টারভিউ-ই!
সিরিয়াসলি?
একটা ক্লাস নাইনের স্টুডেন্ট পড়াতে এসে এখন ফিজিক্স নিউমেরিকাল, কেমিস্ট্রি ইকুয়েশন, সল্ভ করতে হবে?
মাস্টারের পরীক্ষা প্রথম দিনিই!

ঘন্টা খানেকের অপেক্ষার পর, অন্বেষা কে ইশারা করে টেবিলে আসতে বললো টেবিলের ওপর প্রান্তের মানুষটি!

টেবিলে বসতেই একটা খাতায় নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কোয়ালিফিকেশন ভরতে বললো মানুষটি!

“কোয়ালিফিকেশন?”

“আমার Msc
সেকেন্ড ইয়ার কেমিস্ট্রি, সাইন্স কলেজ! ফিজিক্স পাস পেপারস….
কনফিডেন্ট টু টিচ বোথ!”
বেশ কনফিডেন্স নিয়ে সোজাসুজি উত্তর দিলো অন্বেষা!

“সাইন্স কলেজ? কেমিস্ট্রি? মাস চারেক আগে, আমাদের মানে রয় এন্ড রয় এর একটা ক্যাম্পাসিং ছিল ফর Analytical কেমিস্ট!
If I am not wrong then
আপনি খুব সম্ভতঃ মার্কশিটস আনতে ভুলে গিয়েছিলেন সেদিন!”

এতক্ষণে অন্বেষার মনে পড়লো ইনিই সেই!
সেই মানুষ –
যাকে বারবার রিকোয়েস্ট করেও মানাতে পারেনি অন্বেষা!
উল্টে শুনতে হয়েছিল অনেক কটু কথা
, উনি বলেছিলেন ব্যাপারটা মার্কশিটের নয়, ব্যাপারটা ইরেস্পন্সিবিলিটির!
এরকম ইরেস্পন্সিবল এমপ্লয়ী উনি Hire করতে পারবেন না!

কান দুটো লাল হয়ে এলো অন্বেষার!
মনে মনেই
ভাবে Analytical কেমিস্ট এর ইন্টারভিউয়ের পর সোজা একটা টিউশনির ইন্টারভিউ?

তবে কোনো কাজ ছোট বা বড়ো হয়না!
টেবিলের উল্টো প্রান্তে বসে থাকা মানুষটার মতন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি সে, তাছাড়া চাকরিটা সেদিন পেলেও কোর্স কমপ্লিশনের আগে তো জয়েনিং আসতো না, অথচ এখন টাকার প্রয়োজন আছে!

মাসে মাসে দুর্গাপুর থেকে দশ হাজার টাকা করে পাঠানো অন্বেষা দেড় মতন মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে অনেক টা বড়ো ব্যাপার!
পিজি তেই চলে যায় সাড়ে ছয় হাজার মতন, যদিও থাকার সাথে খাওয়া দেওয়া হয় সেই টাকার মধ্যেই,
তবে পরের মাস থেকে সাত হাজারের কথা বলে রেখেছেন পিজির কাকিমা….
জিনিস পত্রের দাম অনেক বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে!

বইপত্র, বিকেলের জল খাবার আর এদিক ওদিক যাতায়াত মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার বড্ডো কম পরে অন্বেষার জন্যে! তাই এই টিউশনি টা ম্যানেজ করে, করতেই হবে!

“তা, Analytical কেমিস্ট থেকে টিউশন টিচারের চাকরি করার ব্যাপারটা হঠাৎ করে কি ভাবে মাথায় এলো আপনার? প্রফেশনালি তো ছাত্র পড়ান না! তবে?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো সামনের মানুষটা!

“কোনো চাকরি ছোট বা বড়ো হয়না স্যার….! আর তাছাড়া আমার পড়াতে ….”

“কল মি মিস্টার রয়! বাই দা ওয়ে –
আমি কিন্তু একবারও বলিনি ছোট বা বড়ো চাকরির কথাটা! কোনটা ছোট কোনটা বড়ো সেটা মানুষের নিজেস্ব মতামত!
সব কাজের দাম আছে, সেটা যে কাজই হোকনা কেন! আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি প্যাশনেটলি কি করতে চান?
চাকরি? টিউশনি? না কি হাইআর স্টাডিজ?”

“মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে প্যাশনটা খুব বেশি ম্যাটার করেনা….মিস্টার রায়!
যে কোনো প্রকারের সম্মানীও রোজগার যথেষ্ট আমার জন্যে!
টিউশন করছি আপাতত! পরে চাকরি পেলে করবো……
যেখান থেকে রোজগার টা বেশি হবে সেটাই করবো!”

“আর তারপর চাকরি টা পেয়ে গেলে রিরির পড়াশোনা মাথায় উঠবে! আর তারপর আমি আবার আরও একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে আবার মাস্টার খুঁজবো!”

“এতটা ইরেস্পন্সিবল আমি নই…..”

“হ্যাঁ সেদিন দেখেছিলাম আপনার রেস্পন্সিবিলিটি……..”

“সেদিন আর আজকের দিনটার মধ্যে ফারাক আছে মিস্টার রায়! সেদিন রেস্পন্সিবিলিটি ছিলোনা! ভুল করেছিলাম সেদিন!
কিন্তু ভুল করেছি বলে সারাজীবন তো সেই ভুলটা নিয়ে বয়ে বেড়াবোনা
সেদিনটা যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছে আমায়! তাই শুধরে নিয়েছি সেই ভুল!”

কথা না বাড়িয়ে মিস্টার রায় এগিয়ে দিলেন একটা সাদা খাতায় কিছু ফিজিক্স – কেমিস্ট্রির প্রশ্ন!
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সমস্ত প্রশ্নের
উত্তর শেষ করে অন্বেষা এগিয়ে দিলো খাতাটা মিস্টার রায়ের দিকে!

পরের দু তিন মিনিট মিস্টার রায় কিছু বললেন না! অন্বেষার ইকুয়েশন, রিএকশন…..
গুলো মন দিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকলেন!

অদ্ভুত ভাবে কেমিস্ট্রি বই থেকে, পিরিয়ডিক টেবিলের এলিমেন্টের অ্যাটমিক নম্বর জিজ্ঞেস করতে থাকলেন!
কোন পৃথিবীর মানুষ তিনি কে জানে?

তারপর বুলেটের মতন আবার এগিয়ে এলো ফিজিক্সের প্রশ্ন!
নিউটনস ফার্স্ট ল, সেকেন্ড ল, থার্ড ল, এস্কেপ ভেলোসিটি, বার্নৌলি প্রিন্সিপল , আর্কিমিডিস প্রিন্সিপল!
তার সাথে রিয়েল লাইফ এক্সাম্পল!

মিনিট পনেরো পর সব বই খাতা বন্ধ হলো!

মিস্টার রায় অন্বেষার চোখে চোখ রেখে বললেন

“কবে থেকে জয়েন করতে পারবেন?”

“যবে থেকে আপনি বলবেন….”

“আজ থেকে পারবেন?”

“হ্যাঁ নিশ্চই!”

“ফাইন দেন! উইকে কিন্তু তিন দিন সময় দিতে হবে atleast….. ”

“নো প্রব্লেম!”

“কবে কবে আসতে পারবেন?”

“রবিবার, বুধবার, বৃহস্পতি বার…..
তবে বুধ ও বৃহস্পতি বার রাত আটটার পর…..”

“বেশ! বৃহস্পতিবার যদিও ওভারল্যাপ করছে তবে আমি…”

“আসলে বৃহস্পতিবার ল্যাব থাকেনা………”

“নো এক্সপ্লানেশন…..প্লিজ! আই উইল সী……
আপাতত দুদিন কন্টিনিউ করুন, বৃহস্পতিবারে হিন্দি স্যারের সাথে কথা বলে চেঞ্জ করে দেব!
ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির বিভৎস অবস্থা!”
কথা গুলো শেষ করতে করতে খাতায় কিছু একটা লিখতে শুরু করলো মিস্টার রায়….

ড্রয়ের থেকে চেকবুক টা বের করে জিজ্ঞেস করলো

“চেকটা কার নামে হবে? নামের স্পেলিংটা খাতায় লিখুন!”

অন্বেষা খাতায় নিজের নামটা শেষ করতে না করতেই চেকবুকে দেখতে পেলো নিজের নাম,
…….প্রথম উপার্জন!
অরুণজিৎ রায় এতক্ষণে পুরোনামটা দেখতে পেলো অন্বেষা…..

“ফাইভ থাউসেন্ড….? ওকে?”

“হমম…?”

“ফাইভ থাউসেন্ড ওর ইউ নিড মোর?”

এতক্ষণে অন্বেষা বুঝলো ফিসের কথা বলছেন মিস্টার রায়!
ফাইভ থাউসেন্ড?
এটাকি স্ট্যান্ডার্ড? নাকি রয় এন্ড রয় গ্রূপের মালিক বলে…..এতটা বেশি…..

অবচেতন মনেই মুখ থেকে বেরিয়ে পড়লো অন্বেষার –
“এনাফ!”

এতক্ষণে সোফায় বসে থাকা মেয়েটির আওয়াজ শুনতে পেলো অন্বেষা!

“ডোন্ট মাইন্ড মিস্টার রয় বাট আপনি আমার ইন্টারভিউটা না নিয়েই ওনাকে কি ভাবে ফাইনাল করতে পারেন?”

“সরি টু কিপ ইউ ওয়েটিং ফর সো লং মিস…
মিস…. হোয়াট এভার! একচুয়ালী ইওর ড্রেস কোড ইজ নট সুটেবল ফর দিস জব! সো থ্যাংক ইউ!”

অন্বেষা ঘুরে তাকালো মেয়েটির দিকে!
মেয়েটির পরণে পার্পেল ক্রপটপ, একটা লো ওয়েস্ট জিন্স, চুল গুলো স্ট্রেইটনিং করা! ফর্সা চেহারার ওপর কাটা কাটা চোখ, মুখ, নাক, বেশ সুন্দরী!
অথচ কি অনায়েসে অপমান করে দিলো
মিস্টার রয়!

মেয়েটা বেশ কটাক্ষ সুরে বললো –
“তো বিজ্ঞাপনে ড্রেস কোডটার কথা মেনশন করলেই পারতেন! টিউশন টিচার এর জন্যে আবার ড্রেস কোড, ইন্টারভিউ! আদিখ্যেতার শেষ নেই……”
বলেই মেয়েটি বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে!

মেয়েটার এতো কিছু বলার পরও কোনো উত্তর দিলেন না মিস্টার রায়! নির্বিকার ভাবে চেক নম্বরটা ভরতে থাকলেন চেকবইয়ের প্রথম পাতায়, তার সাথে ডেট, লম্বা ডেসক্রিপশন…..
চেকবইয়ের পাতাটা ছিঁড়ে এবার হাতে দিলেন অন্বেষার, তারপর ইন্টারকম তুলে বললেন
“রিরি – ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বই গুলো গুছিয়ে বস, ম্যাডাম যাচ্ছে উইদিন ফাইভ মিনিটস ……
……কেন? আজকে থেকে পড়তে তোমার কোথায় অসুবিধে?….. হমম গুড……..”

আসুন রিরির ঘরটা আজকে দেখিয়ে দি আপনাকে…..

**********************************************************

মিস্টার রায়ের পেছন পেছন চলতে শুরু করলো অন্বেষা…..
ঘর থেকে বেরোতেই আবার দেখলো বৃহৎ ডাইনিং….
এবার চোখে পড়লো বিশাল ঝাড়বাতি…..
ফ্লস সিলিং!
ঠিক যেমন কোনো সিরিয়াল, সিনেমাতে দেখেছিলো অন্বেষা….

ডাইনিং একপাশের বাঁকানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো দোতলায়….
তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠেই ডান দিকের একটা ঘরে ঢুকে পড়লো অন্বেষা…..
ঘরে ঢুকতেই দেখলো একটা ববি প্রিন্টের স্কার্ট ও একটা ফুল স্লিভেস টপ পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে, ঠোঁঠে মিষ্টি হাসি, মাথায় হর্সটেল, চোখে চশমা, দেখে কে বলবে মেয়েটা নাইনে পরে, দেখে মনে হবে খুব বেশি হলে ক্লাস সেভেন!

“গুড ইভনিং মিস!”

“গুড ইভনিং রিরি!”

“ওই নামে শুধু আমি ডাকি ওকে! ওই নামে ওকে ডাকবেন না! রিতিকা…..ওর ভালো নাম…..”
মিস্টার রায়ের কথাটা শুরু হতেই চুপটি করে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো অন্বেষার নতুন স্টুডেন্ট…..

**********************************************************************

ক্লাস যখন শেষ হলো তখন ঘড়িতে ঠিক সাড়ে-ছটা……

ক্লাস শেষে, রয় ম্যানশন থেকে বেরিয়ে,
খানিকটা হেঁটে অন্বেষা পৌঁছলো বাস স্ট্যান্ডে!
রয় ম্যানশন এই নামটা তখন লক্ষই করেনি অন্বেষা, তখন সে ব্যস্ত ছিল বাড়ির বাইরে লাগানো পোস্টবক্সের ঠিকানা টা মেলাতে …

শেষ দু ঘন্টা তে বেশ পছন্দ হয়েছিল অন্বেষার নিজের প্রথম স্টুডেন্ট টি কে!
প্রথম মাস্টার ভয়ানক ফাঁকিবাজ ছিলেন, তাতেই বেচারা পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা!
কলকাতার বেশ নামি দামি স্কুলে পড়লেও ক্লাসে যে সেরকম কিছুই পড়াশোনা হয়না, সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগলোনা অন্বেষার!

মেয়েটি বেশ চটপটে, দ্রুত ধরে ফেলছিলো বোঝানো পড়াগুলো, তবে লিটারেচার পড়তে বেশি ভালোবাসে……..

সব মিলিয়ে রবিবারের বিকেলটা বেশ কাটলো অন্বেষার! তারপর আবার পাঁচ হাজার মাইনে….

মাথায় শুধু কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকলো…
লোকটা কে আজ সে প্রথম দেখেনি, দেখেছিলো কলেজ ক্যাম্পাসিং এর দিন, একদিনিই মাত্র দেখা হয়েছিল এর আগে, তাও মিনিট পাঁচেকের জন্যে!
তবু কেন মনে হচ্ছিলো, আওয়াজটা খুব কাছের একজন মানুষের, আওয়াজ টা খুব চেনা,
মানুষটা খুব চেনা,
কোথায় ক্যাম্পাসিংয়ের দিন তো লাগেনি, যদিও তখন বিভীৎস্য টেনশনে ছিল অন্বেষা…..
প্রথম চাকরি আবার তারপর মার্কশীট ফাইল নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলো সে….
তাই আওয়াজটা লক্ষ্য করেনি!
চেহারা টাও লক্ষ্য করেনি ভালো করে হয়তো, এমনিও সামনে সেদিন পাঁচ জন লোক ছিল প্যানেলে…..
তাছাড়া খুব সম্ভবত সেদিন একটা রিমলেস চশমা ছিল মানুষটার চোখের ওপর……..
তাই বোধহয় পরিচিত চেহারাটা চিনে উঠতে পারেনি অন্বেষা!
কিন্তু পরিচিত কি ভাবে? কোথায় দেখেছে তাকে এর আগে!
কেন সেই আওয়াজটা এতো চেনা?

একটা ভিড় বাস এসে দাঁড়ালো বাস স্ট্যান্ডে….
গত দুবছরে ভিড় বাসে যাতায়াত করা অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো অন্বেষার…..
তাই ভিড় ঠাঁসা বাসেই উঠে পড়লো সে,
কানে হেডফোন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বাসের রডটা ধরে……

হঠাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন এলো –
“রিরি মানে রিতিকা – সম্পর্কে অরুণজিৎ রায়ের কে?

বোন…..?
বয়েসের তফাৎ এতটা বেশি…..
রিরি সবে ১৪ কি ১৫,
অরুণজিৎ রায়ের বয়েস ২৮ তো হবেই, মানে রয় এন্ড রয় গ্রূপের….
রয় এন্ড রয় গ্রূপের কি? ওনার কোম্পানি? পার্টনারশিপ? এমপ্লয়ী? …..প্রশ্ন গুলো গুলিয়ে যেতে থাকলো অন্বেষার…….”

(চলবে) ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here