পাতাঝরার শেষে……
©মৌপর্ণা
পর্ব – ৩) ট্রেন নম্বর ডাবল থ্রী, সিক্স, ফাইভ, ফোর….
“না! না! তুই আমাকে বল, এতটা ইরেস্পন্সিবল তুই কি ভাবে হতে পারিস…….
পাগলের মতন করছে কাকু, কাকিমা ফোন করে…..চল্লিশটার ওপর মিস কল….
চেক কর……তারপর তোর অদ্ভুতুড়ে বাড়িতে পড়াতে যাওয়া……অন্বেষা কবে তুই রেস্পন্সিবল হবি? তোর কোনো ধারণা আছে আমরা কি রকম চিন্তা করছিলাম……
তারপর পিজির কাকিমা শুরু করেছে – এটা ভদ্রলোকের বাড়ি…..etc etc……”
“সরি, রিয়া দি আর হবেনা…..প্লিজ তুমি আমাকে আর বকা দিওনা…প্লিজ……মা, বাবা ফোন করে এমনিই খুব বকা দিয়েছে…….বিশ্বাস করো ঝড় বৃষ্টিতে খুব বাজে ভাবে আটকে গিয়েছিলাম…..”
গলাটা নামিয়ে রিয়া বললো…
“বুঝলাম….তবে একটা ফোন করে তো বলা যায় সে কথা…..ছাড়…..চল ডিনার সেরে ফেলি….
”
“মানে! তুমি এখনো খাওনি……
এগারোটা বাজে তো!”
“তোকে ছেড়ে কখনো একলা খেয়েছি?”
অন্বেষা জড়িয়ে ধরে রিয়া দি কে….
“সরি! আর কোনোদিনও হবেনা……”
“বুড়ো বাপ্ মায়ের কথাটা ভাব, তাহলেই হবে!”
“সরি, বললাম তো!”
“হয়েছে! আর নিজের কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা…..শুকনো রুটি ও ডাল……
একটা ভালো ওয়েব সিরিজ ছাড়া খাওয়া যাবেনা…..দাঁড়া ট্রাইপড টা বের করি ….”
“রিয়া দি, আজকে ওয়েব সিরিজ না….
অনেক গপ্পো আছে…..
সিরিয়াসলি!”
“কার গপ্পো!” বেশ চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রিয়া? “ওই রাম গরুড়ের ছানার…..ওহ! প্লিজ…..আমি ওরম একটা পাগল লোকের গল্প শুনতে পারছিনা…..”
“রিয়া….দি…..প্লিজ……”
“জোর করেই শোনাবি বল!”
রিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই হেসে উঠলো ওরা দুজনে……
*********************************************************
“তুই সিওর?”
“সেন্ট পার্সেন্ট….সেম পার্সন….আমি তোমাকে বলছিলাম রাইট….কোথায় দেখেছি…আওয়াজটা শুনেছি……লোকটা ততটা খারাপ নয় যতটা আমি ভাবছিলাম….মানুষটা মন্দ নয়…..
হমম একটু রুড….”
“একটু! একদিনেই ভীষণ রুড থেকে একটু রুড হয়ে গেলো…..
তোর গাড়িতো এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতে দৌড়োচ্ছে রে! পরের দিনই এসে বলবি…
রিয়া দি, He proposed me….”
“ধ্যাৎ! তুমি কি যে বলোনা…..ধুর আমার অনেক টা পড়া বাকি রয়ে গিয়েছে!”
“সারাদিন তার কথা ভাবলে পড়া বাকি পড়বেই….”
“উউফ রিয়া দি…..তুমি প্লিজ লেগ পুল করাটা বন্ধ করবে?”
“বেশ বন্ধ করলাম, শোন ….লাইট বন্ধ করে নাইট ল্যাম্পে পড়তে হবেনা…..টিউব লাইট জেলেই পর…..আমি ঘুমিয়ে পড়লে কুম্ভকর্ণ….আর এখন এমনিতেই চোখ বুজে আসছে….সো গুড নাইট….”
হাসি মুখে চাদরে মুখটা ঢেকে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো অন্বেষার রিয়া দি…..
*******************************************************
হুড়হুড় করে এরই মধ্যে মাস খানেক কেটে গিয়েছে…..
রিতিকার অনেকটাই ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে শেষ এক মাসে…
টার্ম টেস্টে প্রাপ্ত নম্বর 77.5 পার্সেন্ট…..
আরও মাস খানেকের মধ্যেই 90 এর ওপর উঠবে নম্বর, বলে ধারণা অন্বেষা ও রিতিকার দুজনের….
গত মাসে আর অন্বেষার সাথে সেরম কথা বার্তা হয়নি মিস্টার রায়ের….
শেষ যেদিন গাড়িতে করে অন্বেষা কে পৌঁছে দিয়েছিলেন ঝড় বৃষ্টির রাতে, তারপরের দিন শেষ কথা হয় ফোনে…..
মিস্টার রায় ফোন করে বলেছিলেন বুধ ও বৃহস্পতি বার সোজা কলেজ থেকেই চলে আসতে…
রিরির ঘরে অ্যাটাচ বাথরুমেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যেন অন্বেষা ক্লাস শুরু করে দেয় , জলখাবার এর ব্যবস্থা করে দেবেন হারাধন দা!
প্রথমে অনেক আপত্তি করলেও তারপর নিজের ভালোর কথা ও রিয়া দির সাথে পরামর্শ করে মিস্টার রায়ের দেওয়া Proposal টাই ঠিক মনে হয় অন্বেষার…..
তারপর বাবা, মা ও খুশি, বেশি রাত হয়না….সাড়ে নটা থেকে দশটার ভেতরে পিজি তে ঢুকে যায় অন্বেষা….
আর সব চেয়ে বড়ো কথা সপ্তাহে দুদিন – বেশ ভালো ভালো জলখাবার পাওয়া যায় এখানে!
আজ আরও একটা বুধবার…
ঘড়িতে সন্ধ্যে সাতটা বেজে দশ মিনিট…..
আজ অসম্ভব হয়ে উঠেছিল রিতিকা কে পড়ানো…..
পাশের ঘরে বিভিৎস জোরে গান বাজছিলো…..
গান বাজনার পাশাপাশি মাঝে মাঝে বিভিৎস জোরে জোরে হাসাহাসির আওয়াজ পাচ্ছিলো অন্বেষা…..
মিনিট পাঁচেক পর খানিকটা বাধ্য হয়েই রিতিকা কে বললো –
“পাশের ঘরে গিয়ে বলে এসো যে এই ঘরে তুমি পড়ছো…..
আমার তোমাকে পড়াতে ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে তাই গানের Volume টা কিছুটা কমিয়ে দিতে…..”
রিতিকা কিচ্ছু বললোনা, মাথা নীচু করে বসে রইলো একইভাবে….
“রিতিকা….আমি তোমাকে কিছু বলেছি…..”
“মিস আমি দাদাভাই কে ডেকে দিচ্ছি….তুমি দাদাভাই কে বলো….প্লিজ….বা তুমি চলো না দাদাভাইয়ের কাছে…..”
যবে থেকে ট্রেনের ঘটনাটা মনে পড়েছে অন্বেষার, মানুষটাকে একটু বেশিই ভরসা করতে থাকে… অন্বেষা মনে মনে…
যদিও মানুষটা ভীষণ রুড, মুখে হাসির লেশমাত্র নেই তবু……
……. আগের দিন ঝড় বৃষ্টির রাতে দায়িত্ব নিয়ে সেই তো পৌঁছে দিয়ে এলো…..
নয়তো বোনের টিউশন টিচার, ঝড় বৃষ্টির রাতে বাস পেলো কি না পেলো তাতে কার কিই বা এসে যায়….
“মিস ……”
“চলো….”
বলেই অন্বেষা ঘর থেকে বেরিয়ে ডান দিকে করিডোর দিয়ে এগোতে শুরু করলো….
সাথে সাথেই শুনলো রিতিকার আওয়াজ….
“মিস দাদাভাইয়ের ঘর নীচে….. আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমায়…চলো…..”
অন্বেষা চলতে থাকলো রিতিকার পেছন পেছন…..
তারপর যে ঘরে অন্বেষার ইন্টারভিউ হয়েছিল, ঠিক সে ঘরের দরজায় একটু টোকা দিলো…..
“দাদাভাই….” খুব মৃদু স্বরে ডাকলো রিতিকা….
মুহূর্তেই খুলে গেলো দরজা……
দরজাটা খুলতেই কেমন যেন একটা গন্ধ এলো অন্বেষার নাকে…….
একটা ভ্যাপসা গন্ধ, এই একই গন্ধ সে ইন্টারভিউয়ের দিনও পেয়েছিলো, তবে গন্ধটা এতো চড়া ছিলনা সেদিন……..
“বল! ওঃ! মিস মিত্র…..রাইট…. আপনার চেকটা দেওয়া হয়নি এই মাসে…..”
“আমি চেক নিতে আসেনি মিস্টার রায়…..”
“ওকে Then?”
“ওপরের রিতিকার ঘরের পাশে ভীষণ লাউড পার্টি হচ্ছে….আমার পড়াতে ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে…..ওদের কে গিয়ে বলুন volume
টা একটু কমিয়ে দিতে…..”
“আজ শঙ্খর জন্মদিন….তাই….ওরা একটু পার্টি করছে….”
“হমম করুক! আমি বলেছি সাউন্ড টা একটু কমিয়ে দিতে…..যান গিয়ে বলে আসুন….”
“সেটা সম্ভব নয় মিস মিত্র, আজকের দিনটা আপনি আমার ঘরে পরিয়ে নিন, একটু হয়তো এডজাস্ট করতে প্রব্লেম হবে…..কিন্তু একটা দিনের ব্যাপার……আমি বাইরের ডাইনিংয়ে এসে বসছি…..রিরি….তুমি ওপর থেকে সব বই খাতা, ম্যাডামের ব্যাগ, সব নিয়ে এসো গুছিয়ে…..”
অন্বেষা একটু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো মিস্টার রায়ের দিকে, আজ যেন কেমন একটা মনমরা মনে হলো লোকটাকে….
আজ কথা বলার সুরটাও আলাদা…..
অন্বেষা কথা না বাড়িয়ে ঢুকে এলো মিস্টার রায়ের ঘরে…..
আগেরদিনের সোফাটা আসলে সোফাকাম বেড….
খাটটা খোলা থাকলে ঘরে পা ফেলার সেরকম জায়গা নেই, স্টিলের রংচটা আলমারির কাঁচ গুলো কেমন যেন ঝাপসা…..
ভ্যাপসা গন্ধ……
আলমারির পাশে সেই তানপুরা হেলান দিয়ে লাগানো একিই ভাবে….
খানিকক্ষণের মধ্যেই টেবিলের ওপর থেকে ল্যাপটপ ও কিছু ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো মিস্টার রায়…..
রিতিকার ক্লাস শুরু হলো….
আরও মিনিট পাঁচেকের মধ্যে হারাধন বাবু নিয়ে এলো চা, চিরের পোলাও….
“হারাধন দা….আমার জন্যে এক গ্লাস জল নিয়ে আসবে…..” মিষ্টি সুরে কথাটা শেষ করলো রিতিকা…
“রিরি! কতবার মনে করাবো আমি তোমাকে…..কথাটা আবার গুছিয়ে বলো…”
হালকা ধমকের সুরে কথাটা শেষ করলো মিস্টার রায়…
উনি কখন এলেন ঘরে খেয়াল করেনি কেউই…
এরকম হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে বুকের ভেতরটা কেমন যেন ছ্যাৎ করে উঠলো অন্বেষার…..
রিতিকা আবার কথাটা গুছিয়ে বলা শুরু করলো
“হারাধন জেঠু! একটা গ্লাস জল নিয়ে আসবে?”
অন্বেষা বুঝলো হারাধন দা নয়, হারাধন জেঠু বলতে শিখিয়েছিলো মিস্টার রায়….কিন্তু কবে শেখালো এমনটা? কারণ আগের দিনগুলো তে তো হারাধন বাবু কে হারাধন দা বলেই ডাকতে শুনেছে অন্বেষা….
তবে আজ হঠাৎ!
হারাধন বাবু মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরোলে…মিস্টার রায় গলাটা পরিষ্কার করে বললেন –
“আপনার চেকটা…..” বলে চেকটা বাড়িয়ে দিলেন অন্বেষার হাতের দিকে……
গলাটা পরিষ্কার করে অন্বেষার দিকে তাকিয়ে
আবার বলে উঠলেন….
“মিস মিত্র…..
একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাজ শুধু সাবজেক্টের কিছু জিনিস পড়ানো নয়, পাশাপাশি জীবনের ছোট থেকে বড়ো সব ভুল গুলো শুধরে দেওয়ার দায়িত্বও কিন্তু একজন শিক্ষকের……”
অন্বেষা আকাশ থেকে পড়লো, কিছুই বুঝতে পারলোনা মিস্টার রায়ের কথা….ফ্যালফ্যাল করে খানিক চেয়ে রইলো মিস্টার রায়ের দিকে…..
তারপর বললো
“মানে?”
“মানে ……
আপনি আগের দিন হারাধন দা কে হারাধন জেঠু বলে ডাকলেন ফোনে,
রিরি আপনার থেকে অনেকটাই ছোট, তবু ও আমার দেখাদেখি হারাধন দা…..হারাধন দা….বলে ডাকে ওরম একজন বয়স্ক মানুষকে…..
এটা তো ভুল তাই না?
ওকেও এরকম ছোট খাটো জিনিস গুলো শিখিয়ে দেবেন….কেমন?
জীবনের সব ঠিক ভুল আমি জানিনা মিস মিত্র!
আপনি জানেন…..হয়তো….!
তাই এরকম ছোট বড়ো ভুল শুধরে দেবেন…..
আমার ভুল শুধরে নেওয়ার বয়েস পেরিয়ে গিয়েছে তাই চাইলেও আমি আর আমার ডাক টা শোধরাতে পারবোনা…..হারাধন জেঠু বলে হয়তো আর ডাকতে পারবোনা…..
কিন্তু রিরি ছোট…..ওর শুধরে নেওয়ার বয়েস আছে এখনো! ওর বয়েসে আমাকেও কেউ ঠিকটা শেখালে আমি শুধরে নিতাম…..
এন্ড রিগার্ডিং স্টাডিজ, আমায় আপনার ছাত্রী প্রমিস করেছিল এবারে ৮০% পাবে, প্রমিস ও রাখতে পারেনি তবে চেষ্টা করেছে……I’am
Happy…..
এভাবেই ওর পাশে থাকুন…..
থ্যাংক ইউ ……”
“মিস্টার রায়! আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল….একটা অন্য ব্যাপারে, ধরে নিন আপনার রিরির ভালোর জন্যে….”
“হ্যাঁ সিওর বলুন….”
অন্বেষা রিতিকার দিকে তাকিয়ে ফের তাকালো মিস্টার রায়ের দিকে….
তারপর বললো
“পরে কখনো!”
“আজ ……আমি আপনাকে ড্রপ করে দি….তখন যা বলার বলবেন…..কেমন? ”
অন্বেষা না বলতে চেয়েও না বলতে পারলোনা….কোথায় আটকালো না বলতে সে বুঝলোনা…..মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মিস্টার রায়ের কথায়………
চা আর চিরের পোলাও কোনোটাই আজ খেতে পারলোনা অন্বেষা!
গা টা কেমন যেন গুলিয়ে উঠছিলো বারবার, অথচ রিতিকার কোনো হেলদোল নেই…..
এরকম একটা ভ্যাপসা ঘরে কেউ কি ভাবে থাকতে পারে?
*******************************************************
ঝড় বৃষ্টির সেই রাতের পর আবার অন্বেষা ড্রাইভিং
সিটের পাশে…..
গাড়ি টার্ন নিলো ক্রসিং থেকে ডান দিকে….
অন্বেষা মিস্টার রায়ের দিকে তাকিয়ে বললো –
“আগেরদিন চিংড়িঘাটা পাঁচমাথা অবধি স্ট্রেট ড্রাইভ করলেন….তারপর বোধহয় জিজ্ঞেস করেছিলেন লেফট না স্ট্রেট…..
জানলেন কি ভাবে ওই অবধি আমি যাই…..
”
“প্রথমদিন খাতায় address লিখেছিলেন…..
Memory টা প্রয়োজনের থেকে বেশি স্ট্রং! অনেকে বলে আমার IQ টাও more than normal!”
“বেশ! তাহলে একটা সোজাসুজি প্রশ্ন করি, আমাদের প্রথম দেখা কোথায় বলুন তো….?”
বেশ সুর করে প্রশ্নটা জিজ্ঞেশ করলো অন্বেষা….
অন্বেষা খুব কনফিডেন্টলি প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলো মিস্টার রায়ের দিকে চেয়ে…..
মনে মনেই ভাবল উত্তরটা আসবে সাইন্স কলেজের অডিটোরিয়াম, ক্যাম্পাসিং এর দিন…..
মিস্টার রায় কোনো উত্তর দিলেন না, গিয়ারটা
চেঞ্জ করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলেন খানিকটা…..
“মিস্টার রায়…..”
“আই গেস আমাদের এটা আলোচনা করার কথা ছিলোনা, রিরি কে নিয়ে আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন, স্টিল ইফ ইউ ইনসিস্ট……
………………………………………………..
আমাদের দেখা হয়েছিল ট্রেন নম্বর ডাবল থ্রী, সিক্স, ফাইভ, ফোরে…….
স্টেশন দুর্গানগর…….হাবড়া শিয়ালদাহ লোকালের একটা জেনারেল কোচে….. চার নম্বর কোচ….ইঞ্জিনের পরে….
কিছু খারাপ লোক আপনাকে ………
………….,…মানে খুব খারাপ টাচ করছিলো আপনাকে খুব সম্ভবত, আমি এগিয়ে গিয়ে আপনাকে হেল্প করেছিলাম, আপনি নেমে গিয়েছিলেন দমদম junction……”
অন্বেষা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো পাশের মানুষটির দিকে…..ট্রেন নম্বর! সব মনে আছে লোকটার? কি ভাবে ?
“আপনি কি Daily ট্রাভেল করতেন একিই ট্রেনে..মানে ট্রেন নম্বর ডাবল থ্রী, সিক্স, ফাইভ, ফোর….এটা কি ভাবে…..”
কথাগুলো জড়িয়ে এলো অন্বেষার!
“না! ওই ট্রেন টাতে আমি দুবার যাতায়াত করেছি, দুবারই হাবড়া থেকেই উঠেছিলাম, এক দূরসম্পর্কের মাসির বাড়ি হাবড়ায়….
এতো অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই…..
রেগুলার ডাইরি লিখি……
ট্রেন নম্বরটা সেখানে লেখা ছিল…..প্রতি রাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের লেখা গুলো পড়ি….কোনো বন্ধুবান্ধব নেই জানেন!
তাই নিজের লেখা গুলোই আমার বন্ধু….. They’re my friends!
আলমারির ঝাপসা কাঁচটা আমার বন্ধু! She is also my friend!
আমি সাইকোলোজিকালি একটু অসুস্থ…..
weekly কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়…..তাই বলে আমি হার্মফুল নয়…..এতো অবাক হবেন না…..”
অন্বেষা কিছু বলতে পারেনা….বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকে ড্রাইভিং সিটের পাশে……
মনে মনেই ভাবতে থাকে –
“…. সাইকোলোজিকালি ইল! অবশ্যই ইল!
না হলে ক্যাম্পাসিংয়ের দিনের কথা মনে রাখা, হাজার হাজার ক্যান্ডিডেটের মধ্যে একজন মেয়ে মার্কশিট নিয়ে আসতে পারেনি সেই কথাটা মনে রাখা, এমন কি ট্রেন নম্বর!
সব চেয়ে বড়ো কথা….উনি সবটা জানতেন…..তবু সবটা নিজের মনের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলেন সেই ক্যাম্পাসিং এর দিন থেকে…
মানুষ যত বড়োই ইন্ট্রোভার্ট হোকনা কেন তাই বলে একটা চেনা মানুষকে দেখে অচেনা হওয়ার ভান করা তাও কোনো কারণ বা উদেশ্য ছাড়া…এটাকি সম্ভব?
” মাথাটা কাজ করছিলো না অন্বেষার….
অন্বেষা চেয়ে রইলো বাইরের দিকে….বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিল কপালের ভাঁজে….
গাড়িটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো…
“একই গাড়িটা বন্ধ করলেন কেন?”
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা….
খুব শান্ত একটা গলায় উত্তর এলো –
“আগের দিন তো বলেছিলেন এই নীল বাড়িটা….”
অন্বেষা জানালার বাইরে তাকাতেই বুঝলো একদম পিজির সামনেই গাড়িটা দাঁড়িয়ে…..
একটা ঢোক গিলে কোনোরকমে বললো
“থ্যাংক ইউ, গুড নাইট…”
“মিস মিত্র! রিরির ব্যাপারে কিছু একটা বলবে বলছিলেন….”
“অন্য কোনোদিন….আজকে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে…..”
কথাটা বলতে বলতে সিট্ বেল্টটা টেনে খোলার চেষ্টা থাকলো অন্বেষা…..
একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছিলো অন্বেষার মনে….
“আমি হেল্প করে দি…”
“No thanks! ” কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো অন্বেষা…..
“আপনি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন মিস মিত্র….আমি কিন্তু হার্মফুল নই মিস মিত্র…..”
অন্বেষা দেখলো অদ্ভুত দুটো স্থির চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে…..
মিস্টার রায় বলে চললেন….
“আমি আর দশটা মানুষের মতন….জাস্ট এটাই তফাৎ আমার কোনো ফ্রেন্ড সার্কেল নেই, আর এই একাকিত্ব টাই কাউন্সিলিং এর কারণ! জাস্ট এইটুকুই…..and nothing more
……..আর হ্যাঁ সাধারণ জিনিস গুলো আমার একটু বেশি মনে থাকে, যেটা হয়তো সাধারণ মানুষের…..”
“গুড নাইট মিস্টার রায়….” সিট্ বেল্টটা কোনোরকমে খুলে এক ঝটকায় অন্বেষা খুলে দেয় গাড়ির দরজা…..তারপর ঢুকে পরে নীল বাড়িটায়…..
*******************************************************
“অন্বেষা…কি হয়েছে বাবু….তুই বেশি ভাবছিস এবারে জানিস.. তো….শোন না আমার দিকে দেখ…..একবার দেখ…..কাউন্সিলিং করায় তো কি!
কাউন্সিলিং নরমাল মানুষেরাও করায়….
আরে এতো বড়ো একটা কম্পানির মালিক….বা….ধরে নিলাম মালিক নয় তবে বেশ ওপরের পজিশনের একজন…..সে নিশ্চই পাগল নয়…..হমম এগ্রিড, হয়তো একটু আলাদা, ডিফারেন্ট…তার মানে এটা নয় যে মানুষটাই পাগল….
আর আমরা এটা নিয়ে কেন এতো ভাবছি বলতো….
তুই কোথায় ঘর সংসার করতে যাচ্ছিস ও বাড়িতে…
সপ্তাহে তিন দিন পড়াতে যাস, পড়াবি, চলে আসবি…..এতো টেনশন করছিস কেন?
আর শোন যদি না ইচ্ছে করে তাহলে ছেড়ে দে……বলে দে তুই আর যেতে পারবিনা…..ব্যাস প্রব্লেম সল্ভড…..”
“ও বাড়ি টাই খুব অদ্ভুত রিয়া দি……
বাড়ির প্রতিটা মানুষ অদ্ভুত এক্সসেপ্ট রিতিকা, হারাধন জেঠু…..
যাকে একটু নরমাল লাগছিলো শেষ দুয়েক সপ্তাহ তার বন্ধু তার নিজের লেখা…..
তার বন্ধু আয়না!
ট্রেন নম্বর মনে থাকে, তাও বছর খানেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা! How?
আর তারপর কিরকম অদ্ভুত ভাবে বললো তুমি বিশ্বাস করবে না….বললো আমি কিন্তু হার্মফুল নই……একটা অদ্ভুত চোখের চাহুনি…….
আমি জানিনা কেন আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো জানো….অথচ সেরকম নোংরা দৃষ্টি নয়….আমি তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারছিনা…..আমার….”
“রিলাক্স……….তুই একটা কাজ কর, ফোন কর কাল সকালে, বলে দে আর পারবিনা তুই রিতিকা কে পড়াতে, ব্যাস ডান…….
অন্বেষা….তুই শুনছিস…..”
“হমম ওকে…..”
(চলবে…….)