পাতাঝরার শেষে……পর্ব ৪

0
1387

পাতাঝরার শেষে……
©মৌপর্ণা

পর্ব – ৪) ক্লাস হলো আবার শুরু!

“হ্যালো…মিস্টার রায়?”

“বলছি মিস মিত্র, বলুন anything wrong ?”

“নাঃ সেরম কিছু নয়, আপনার সাথে একটা কথা ছিল….”

“আমি আসলে একটু ব্যস্ত আছি একটা মিটিং এর মাঝে! সেরকম আর্জেন্সি না থাকলে আজ রাতে বাড়ি ফিরে শুনছি…..আজ তো বৃহস্পতি বার….আপনি আজকে আসছেন তো?”

“হমম”

“ওকে দেন রাতে দেখা হচ্ছে…..বাই!”

উউফ চেয়েও কিছুতেই বলে উঠতে পারলোনা অন্বেষা একটা ছোট কথা যে আজ থেকে সে আর ও বাড়ি যাবেনা…..

মনে মনেই ঠিক করলো আজিই শেষ ক্লাস রিতিকার, সামনে সামনি পরিষ্কার করে বলে দেবে যে নিজের পড়াশোনার ক্ষতি করে সে আর রিতিকা কে পড়াতে পারবেনা!
এটাই সবচেয়ে ভালো কারণ হবে….

*******************************************************

আজ সন্ধ্যে সাতটার আগেই অন্বেষা পৌঁছলো রায় ম্যানশনে!

পৌঁছেই সাথে সাথে ক্লাস শুরু করে দিলো রিতিকার….

রিতিকা কে একবার পাঠালো রান্নাঘরে, বললো
“হারাধন জেঠু কে বলে এসো আজ আমি কিচ্ছু খাবোনা, আমি আজ খেয়ে এসেছি….”

শুরু হলো ক্লাস! মুহূর্তের মধ্য আবার কেটে গেলো দেড় ঘন্টা…..ঘড়িতে ঠিক সাড়ে আটটা…..
তখনও অবধি অন্বেষা কিছুতেই কথাটা বলে উঠতে পারেনি রিতিকা কে যে আজই তার শেষ ক্লাস!

অন্বেষা কোনোরকমে গলাটা পরিষ্কার করে মনে মনে কথাটা একবার গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করে

“রিতিকা, তুমি জানতো ডিসেম্বরে আমার এক্সাম আছে, ওকে? তাই এখন কিছুদিন…..মানে….আমি ভাবছিলাম…”

“সরি, মিস মিত্র! আজ অফিস থেকে ফিরতে বড্ডো লেট্ হয়ে গেলো, আপনি আর মিনিট পনেরো আছেন তো? আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তারপর শুনছি কেমন? ”
আবার অন্বেষা লক্ষই করেনি কখন মিস্টার রায় এসে দাঁড়িয়েছে অন্বেষার পেছনে…….

অরুণজিৎ রায় কে হঠাৎ দেখেই কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলো অন্বেষা…..বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁৎ করে উঠলো……

ভাঙা ভাঙা ভেজা গলায় অন্বেষা বললো
“না! মিস্টার রায়, আমাকে এক্ষুণি বেড়োতে হবে!”

“ওকে! চলুন…আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি….গাড়িতেই যা বলার….”

মিস্টার রায়ের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অন্বেষা বলে উঠলো
“না! আমি একা চলে যাবো আজ! প্লিজ আপনাকে রোজরোজ এতো কষ্ট করতে হবেনা…..”

“বেশ বলুন তবে কি বলছিলেন? ”

এবারে বেশ সাহস সঞ্চয় করে এক নিমেষে টানা বলে চললো অন্বেষা –
“মিস্টার রায়, আমার পক্ষে সময় ম্যানেজ করা ভীষণ চাপ হচ্ছে, বিশেষ করে সপ্তাহে তিনদিন নিজের পড়াশোনা হচ্ছেনা, তাই আজকের পর আমি আর আসবোনা….”
বলেই গতকালের দেওয়া চেকটা ফেরত দেওয়ার উদ্যেশে চেকটা মিস্টার রায়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো সে…..

মিস্টার রায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন খানিকক্ষণ……তারপর বললেন
“আপনি আমার ঘরে আসুন…..প্লিজ…..”

অন্বেষা মুখের ওপর না বলতে পারলোনা, মিস্টার রায়ের পেছন পেছন সিঁড়ি বেয়ে নেমে ঢুকলো মিস্টার রায়ের ঘুপটি ঘরে…..
ঘরে ঢুকতেই আবার সেই ভ্যাপসা গন্ধ এলো অন্বেষার নাকে! গা গুলিয়ে উঠলো অন্বেষার!

“প্লিজ বসুন….”

“No Thanks…..মিস্টার রায়, আপনি প্লিজ আমাকে রিকোয়েস্ট করবেন না রিতিকার ক্লাস নেওয়ার জন্যে….আমার সত্যি টাইম এডজাস্ট করতে ভীষণ প্রব্লেম হচ্ছে….”

“তাহলে আপনি সপ্তাহে দুদিন করুন…..”

“না না….আপনি বুঝতে পারছেন না…আমার কলেজে খুব চাপ চলছে জানেন তো….খুব চাপ….আমার হবেনা….”

“বেশ তাহলে সপ্তাহে একদিন ফাইনাল কেমন! আসলে রিরি আপনার সাথে সেট হয়ে গিয়েছে, কমফোর্টাবেল, তারপর রেসাল্ট টাও ভালো ইম্প্রুভ করেছে…..”

“কিন্তু আমি কমফোর্টাবেল নই! আপনি কেন বুঝতে পারছেন না এটা…কেন?”
বেশ চিৎকার করে কথাটা বলে ফেললো অন্বেষা……

“uncomfortable zone টা কি? জানতে পারি?”

“আমি কোনো কৈফিয়ত দেবনা আপনাকে ওকে? রইলো আপনার চেক….. thank you!
…….”

বলেই দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেলো অন্বেষা চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে……

একিই লোহার গেটে তালা বন্ধ…..
কেন?
ভয়ে থরথর করে হাত পা কাঁপতে শুরু করে অন্বেষার…..
কোনোমতে… সাহস জুগিয়ে উল্টো দিকে ঘুরতেই দেখে মিস্টার রায় এগিয়ে আসছে তার দিকে….

ভয় সরিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে সে
“গেটে তালা বন্ধ কেন? কেন বন্ধ? জোর করে আটকে রাখবেন আমায়? ফোর্সফুলি…আমায়….”

অন্বেষার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে, নির্বিকার মুখে মিস্টার রায় এগিয়ে গেলো লোহার গেটের দিকে…..
হাতে থাকা চাবি দিয়ে মুহূর্তেই খুলে ফেললো তালা….
তারপর লোহার দরজাটা হাট করে খোলা রেখে দাঁড়িয়ে রইলো এক কোণায়….

অন্বেষা প্রানপন ছুট লাগলো বাস স্ট্যান্ডের দিকে…..

***********************************************************

পরের দিনের সকালে বেশ ফ্রেশ লাগছিলো অন্বেষার…..
কোনোমতে ওই অদ্ভুত মানুষ গুলোর থেকে পার পাওয়া গিয়েছে!

মুখ হাত ধুয়ে, স্নান, ব্রেকফাস্ট সেরে অন্বেষা দাঁড়োলা বাস স্ট্যান্ডে….
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই পেয়ে গেলো বাস…..

ভাগ্যক্রমে আজ একটা সিটও জুটে গেলো অন্বেষার!
বাসে উঠে কানে হেডফোন লাগাতেই বেজে উঠলো ফোন, আর তার সাথেই বেড়ে গেলো অন্বেষার হৃদস্পন্দন…..
মিস্টার রায়! আবার কেন ফোন করছে তাকে…..

মুহূর্তেই লাইন টা কেটে ব্লক করে দিলো নম্বরটা অন্বেষা…..
লোকটার সাথে কোনো শত্রুতা না থাকা সত্ত্বেও লোকটা দেখে কেমন যেন ভয় করে অন্বেষার!
তার ওপর উগ্র কাটখোট্টা মেজাজ, হাসি বিহীন মুখ, এবং অদ্ভুত সেই পাওয়ার, মেমোরি পাওয়ার, abnormally high memory strength!
সাইকোলজিক্যাল রেগুলার কাউন্সিলিং, তারপর নিজের লেখার সাথে বন্ধুক্ত!
তারপর ওতো বড়ো একটা বাড়িতে স্টোর রুমে থাকে সে….কিন্তু কেন?
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে শিওরে ওঠে অন্বেষা…..

*******************************************************

কলেজ গেটের সামনেই যেতেই বুকটা কেঁপে ওঠে অন্বেষার!
একিই মানুষটা পেছন পেছন কলেজ অবধি চলে এসেছে…..কি চায় কি লোকটার….!

মাথার ঠিক থাকেনা অন্বেষার….সোজাসুজি এগিয়ে যায় হনহন করে আর তারপর লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ চিৎকার করে বলে
“কি চায় আপনার? আপনার লজ্জা করেনা? ফলো করছেন আমাকে?”

“মিস মিত্র…..আমি শুধু….”

মিস্টার রায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবার চিৎকার করে বলতে থাকে অন্বেষা……

“আমি যাবোনা যখন বলেছি, তখন যাবোনা……
কেন যাবোনা সেটাও বলে দিচ্ছি…..
কারণ ওই বাড়িতে ঢুকতে আমার ভয় করে! ভয়! কেউ অদ্ভুত ভাবে চেয়ে থাকে, কেউ নোংরা দৃষ্টি দিয়ে গিলে খেতে চায় আমাকে!
আবার কেউ কেউ পাগলের মতন স্টক করে আমায়…..ইউ নো মিস্টার রায়, আপনি নয় আপনার পুরো আপনাদের পুরো পরিবার টাই সাইকোলোজিক্যালি ইল! অল অফ ইউ আর সিক!”

অন্বেষার চিৎকার শুনে লোক জমায়েত হয়ে যায় সাইন্স কলেজের সামনে…..
“কি দাদা? কি হয়েছে? কেন ডিস্টার্ব করছেন ওনাকে….”

“এক সেকেন্ড দাদা! সেরকম ব্যাপার নয়!”

“কি সেরকম ব্যাপার নয় হ্যাঁ!”
বলেই একটা লোক সাদা জামার কলারটা চেপে ধরলো……

মিস্টার রায়, কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই আলতো সুরে বললেন….
“দাদা, আমি শুধু ওনার ফাইলটা ওনাকে ফেরত দিতে এসেছে, ভুল বসত এটা আমার কাছে থেকে গিয়েছিলো…ব্যাস! এই ফাইলটা দিয়েই আমি চলে যাবো……”

এতক্ষণে অন্বেষার চোখে পড়লো মিস্টার রায়ের হাতের ফাইলটা!
হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে!
মুহূর্তেই মিস্টার রায় ফাইলটা অন্বেষার হাতে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অনেক দূর…

********************************************************

“অন্বেষা! প্লিজ! এবার তুই নিজেকে একটু চেঞ্জ কর, ফর গড সেক…..
প্রথম দিন চেক ফেলে এলি, দ্বিতীয় দিন Project Synopsis!
আজকে তোর ল্যাব ছিল রাইট…..”

“রিয়া দি…..আমি জানি..”

“না! না! আমি যেটা জিজ্ঞেস করছি তুই সেটার উত্তর দে আগে…..আজ তোর Project Synopsis
টা জমা দেওয়ার কথা ছিল…..হ্যাঁ কি না?”

“হ্যাঁ…”

“আর এতো ইম্পরট্যান্ট একটা ফাইল তোর স্টুডেন্টের বাড়িতে ফেলে চলে এলি….”

“ফেলে আসিনি….পেনটা ব্যাগের ভেতরে কোথায় ছিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তাই সব ফাইল, খাতা বের করে…..”

“আর তারপর ঢোকাতে ভুলে গেলি! কি ভাবে তুই এতটা ইরেস্পন্সিবল….
লোকটা তোকে ঠিকিই বলেছিলো – চাকরি করতে গেলে একটা রেস্পন্সিবিলিটি লাগে অন্বেষা….”

অন্বেষা কিছু উত্তর দিলোনা, কাছের মানুষ বকলে মুখে মুখে উত্তর দেওয়া যায়না, তর্ক করা যায়না…..
আর এই এতো বড়ো শহরে রিয়াদি ছাড়া অন্বেষার জীবনে কেই বা ছিল!
একবার মনে হলো বলুক কাল ওর মানসিক অবস্থা ঠিক ছিলোনা…..
ভয় লাগছিলো ওতো বড়ো বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কে…..সেই জন্যেই হয়তো!
তবে ভুল তো অবশ্যই হয়েছে অন্বেষার…..

মনটা একটু খারাপ করে চুপচাপ বসে রইলো খানিকক্ষণ খাটের ওপরে, তারপর ব্যালকনি তে গিয়ে দাঁড়ালো অন্বেষা…..
পঞ্চমীর এক ফালি চাঁদের আলো এসে পড়েছে বারান্দায়!
ব্যালকনি থেকে মুক্ত আকাশের দিকে চেয়ে দেখলো সে!
একটা একলা তারা তখনও জ্বলজ্বল করছে আকাশে!
বোধহয় ওটা শুক্র…..ভেনাস……
অজান্তেই মনে একটা প্রশ্ন উঠে এলো….
ভেনাস তো গ্রহ! তবে শুকতারা কেন বলে ডাকা হয় তাকে?

“অন্বেষা….”

“রিয়া দি! বলো….”

“তোকে খুব নিজের মনে করি রে! তাই এতগুলো কথা বললাম! একটু দায়িত্ব নিতে শেখ! কেমন!”

অন্বেষার ঠোঁটের কোণায় একটা হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো…..
বললো –
“একশো বার বকবে! ভুল করলে নিশ্চই বকবে! তবে আজকে খুব Guilty feel করছি জানো….”

“সেটাই স্বাভাবিক! তবে Guilty Feel করছিস বলে আবার টিউশন শুরু করার দরকার নেই! আমি তো বলি তোকে…তুই প্রতিমাসে আমার থেকে এখন ধার কর! বছর খানেক বাদে চাকরি পেলে সব শোধ করে দিস….”

“তা হয়না গো! এসব ছাড়ো! আমাকে বলো এখন কি করবো, সকালে যাচ্ছেতাই অপমান করেছি, একটা মস্তান মতন লোক কলার চেপে ধরেছিলো, লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিলো….”

“কি বলিস?”

“হমম…….তারপর দেখি ফাইল দিতে এসেছে! কি করি বলি তো রিয়াদি! একটাবার ফোন করে sorry না বললে …..”

“তাহলে বলে দে Sorry….”

“এখন?”

“হ্যাঁ! এখন তো সবে দশটা….”

রিয়ার কথা শেষ হতেনা হতেই অন্বেষা ঘর থেকে ফোনটা নিয়ে এসে আবার বারান্দা তে এসে দাঁড়ালো…..
তারপর রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো –
“কি বলবো? বলবো Sorry! আর কি বলবো?”

“আর কি বলবি? ব্যাস Sorry এন্ড Thank
You”

অন্বেষা দ্রুত ফোন থেকে ডায়াল করলো আবার মিস্টার রায়ের নম্বর…..
দু তিনটে রিং শেষ হওয়ার আগেই শুনলো সেই চেনা আওয়াজ
“হ্যাঁ বলুন….”

“মিস্টার রায়! আজকে যেটা ঘটেছে তার জন্যে আমি মন থেকে দুঃখিত….আসলে…”

“ইটস ওকে! নো প্রব্লেম….”
মিস্টার রায় কথাটা শেষ করতেই অদ্ভুত ভাবে ফোনের দুটো প্রান্তের মানুষিই ফোনটা কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ….
তারপর গলাটা ঝেড়ে অন্বেষা বললো

“রিতিকার জন্যে অন্য কোনো টিচার পেলেন?”

“না….আপাতত আমি নিজেই বসেছি অফিস থেকে ফিরে….দেখা যাক কতটা কি ম্যানেজ করতে পারি..”

“সেদিন তো অনেকেই ইন্টারভিউ দিয়েছিলো….”

“হ্যাঁ, তবে রিতিকা কে হ্যান্ডেল করতে পারবেনা, কারুর তো আবার নলেজ গ্যাপ ও রয়েছে!
আমি দেখি কতটা কি হয়, আসলে সোমবার কেমিস্ট্রির একটা এক্সাম আছে….সেই জন্যেই….আমাকে বসতে হচ্ছে…..”

“ওঃ! হ্যাঁ তাইতো! এই সোমবার তো কেমিস্ট্রি আছে ….উইকলি… টেস্ট…..”

“হ্যাঁ…..নো প্রব্লেম মিস মিত্র….আমি ম্যানেজ করে নেবো…নো প্রব্লেম…..”
ফোনটা নিমেষেই কেটে গেলো তারপর….

********************************************************

“রিয়া দি! বলোনা কি করবো?”

“অন্বেষা খাবারটা তাড়াতাড়ি শেষ কর! এই শুকনো রুটি নিয়ে কতক্ষণ বসে থাকবি?”

“বলোনা….প্লিজ….”

“দেখ আমি কেমন করে বলবো…..
তুই নিজেই বললি তোর ভয় লাগে ওখানে যেতে, তুই কমফোর্টাবেল নোস…….রাইট?
এখন নিজেই বলছিস মিস্টার রায় লোকটা ভালো, হার্মফুল নয়…..অথচ নিজেই সেদিন বললি তোর মনে হয়েছে লোকটা তোকে কনভিন্স করানোর চেষ্টা করছে যাতে তুই ওনার সাথে বন্ধুক্ত করিস….মানে বারবার বলেছে উনি একা…..বলেছে ফ্রেন্ড সার্কেল নেই, আবার বলেছে উনি হার্মফুল নয়……”

“তুমি আমাকে বলো ওরম অদ্ভুত ভাবে কেউ তোমাকে কখনো বলেছে…..আমি হার্মফুল নই..
…..আমি হার্মফুল নই……..”

“অন্বেষা….রিলাক্স…..এতো ভাবিসনা প্লিস…..তুই নিজেকে জিজ্ঞেস কর, তোর কি করা উচিত…..নিজের মন কে জিজ্ঞেস কর…..
দেখ আমার মনে হয়, আমি হলে হয়তো যেতাম! হয়তো…..বা এটা বলা ভালো আমি হয়তো এতটা ভয় পেতামনা……মানে ঠিক আছে….
লোকটাকে পছন্দ না হলে লোকটাকে এভোয়েড করতাম…..আমি জানিনা অন্বেষা…..
যা করবি ভেবে চিনতে কর…..”

*************************************************************

আজ….. শনিবার…….
কলেজ বন্ধ অন্বেষার, সকাল থেকে দুপুর অবধি পড়াশোনা শেষ করে, লাঞ্চ সেরে আবার এসে দাঁড়ালো বারান্দায়…..
আজ আকাশ টাতে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে চারিদিক থেকে!
কেমন যেন গুমোট ধরে আছে আকাশটা…..
রোদও নেই, বৃষ্টিও নেই, তবে অন্ধকার হয়ে এসেছে কেমন…..

অন্বেষার মনে হলো আকাশটাও যেন আজ অন্বেষার মতন এক মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়িয়ে!
এক অন্ধকারের কালো ঘনত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চারিদিকে….!

এদিকে বাড়িতে বেশ বড়ো মুখ করে বলেছিলো মা কে গতমাসে, যে বাবাকে আর দশ হাজার পাঠাতে হবেনা,
পাঁচ হাজারেই দিব্বি ম্যানেজ করে নেবে সে! সে তো একটা টিউশন পেয়েছে….
আজ মাসের চার তারিখ…..

দিন চারেক আগে, পাঁচ হাজার বাবা deposit
করেছে তার ব্যাংকে!
এখনো পিজির রেন্ট বাকি…..
ব্যাংকে যা সেভিংস আছে তাতে এই মাস টা টেনে যাবে ঠিকিই….
কিন্তু পরের মাস আর চলবেনা…..

আজ হয় বাড়িতে ফোন করে বলতে হবে, পরের মাস থেকে দশ হাজার পাঠাতে, নয়তো খুঁজতে হবে নতুন টিউশন…..বা ফিরতে হবে রিতিকা রায় কে পড়াতে রায় ম্যানশনের অদ্ভুত বাড়িতে!

*******************************************************

সারাটাদিন অনেক ভাবনা চিন্তার পর, ভ্যাকেন্সির সব নিউসপেপার Column চেক করার পর, অন্বেষা আবার ডায়াল করলো মিস্টার রায়ের নম্বরটা….
দুচারটে রিং হতেই শুনলো চেনা আওয়াজ….

“মিস মিত্র…আমি একটা মিটিংর মধ্যে ….”

“আমি আপনার এক মিনিট সময় নেবো…..প্লিজ!”

বেশ ঠান্ডা গলায় উত্তর এলো
“বলুন….”

“আমি কাল থেকে কন্টিনিউ করবো আবার……..

“বেশ! আমি আপনাকে আধঘন্টা পর ফোন করি? একটু দরকার ছিল…..”

“ওকে..”

আধঘন্টার আগেই অন্বেষার ফোনটা বেজে উঠলো আবার….

“হ্যাঁ হ্যালো মিস্টার রায় বলুন…..”

“কাল থেকে কন্টিনিউ করবেন বললেন তো?”

“হ্যাঁ….”

“একটা রিকোয়েস্ট করবো? শুনবেন?”

“বলুন….”

“আপনি উইকে একদিনিই আসুন….রবিবার বিকেল….যেমন আসেন তার চেয়ে ঘন্টা খানেক পর!
…..আর বাকি দুদিন ফোনেই টুকটাক হেল্প করে দেবেন…..আমি ভাবছিলাম রিরি কে একটা Android ফোন কিনে দেব….
মানে সেরকম ডাউট হলে ভিডিও কল করে অনলাইন ক্লাস নিয়ে নেবেন….বা রবিবার ধরুন একটু বেশিক্ষণ সময় দেখিয়ে দিলেন
পাঁচটা থেকে আটটা, সাড়ে আটটা….”

“সেই ক্ষেত্রে ফিস টা….”

“ওটা যা কথা হয়েছিল তাই….আমি রিরির ইমপ্রুভমেন্ট টা নিয়ে কন্সার্ন…..”

“ওকে”
ফোনটা রেখে অনেকটা শান্ত হলো মনটা…..
তবে কেন রবিবারই ক্লাস নেওয়ার কথা বললেন মিস্টার রায় বুঝলো না অন্বেষা…..

******************************************************

রবিবার যখন ঢুকলো অন্বেষা রায় ম্যানশনে, অদ্ভুত ভাবে পুরো বাড়িটা ফাঁকা, হারাধন বাবু দরজাটা খুলে একটা হালকা হাসি হেসে চলে গেলেন রান্না ঘরের দিকে,
বুকটা আবার ঢিপঢিপ করে উঠলো অন্বেষার….
যে মহিলা মাঝেমাঝে বসে থাকেন ডাইনিং এর সোফায় সে আজ উধাও…..
তারপর আরও দুজন ছেলে যারা মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকে অন্বেষার দিকে, কখনো আড়চোখে, কখনো সামনাসামনি তাদেরও লেশমাত্র গলা পাওয়া যাচ্ছেনা আজ! ওপরের শুধু রিতিকার ঘরে আলো জ্বলছে, বাকি ঘরগুলো সব অন্ধকার…..
স্টোররুমের ঘুপটি ঘরটা বন্ধ, ভেতর থেকে,
ডাইনিং এর ঝলসানো আলো তে বোঝা গেলো না ঘুপটি ঘরটাতে আলো জ্বলছে কিনা!

একটা ঢোক গিলে, অন্বেষা হুড়হুড় করে উঠে গেলো সিঁড়ি বেয়ে দোতলায়…..
রিতিকার ঘরে ঢুকতেই দেখলো, রিতিকা এক গাল একটা হাঁসি নিয়ে বসে খাটের ওপর…
হর্সটেল বাঁধা চুল, চোখে একটা চশমা, মুখে সরলতার ছাপ…..
মৃদু একটা সরু সুরে বললো
“গুড ইভনিং মিস!”

একটা বড়ো স্বস্তির নিস্বাশ ফেললো অন্বেষা…..

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here