#পারমিতা
পর্ব ২২
_নীলাভ্র জহির
রোদকে দেখে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম পারমিতার। ঢোক গিলে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো ও। রোদ বিস্মিত চোখে পারমিতার দিকে চেয়ে আছে। বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াল রোদ।
পারমিতা কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। ওর ঘনঘন শ্বাস পড়ছে। ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কয়েক সেকেন্ড রইল পারমিতা। রোদ পারমিতার সম্মুখে এসে দাঁড়াল। পারমিতা পিছিয়ে গিয়ে আলমারির দেয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়াল। রোদ বলল, কেন নিজেকে এভাবে আড়াল করে নিয়েছো পারমিতা?
পারমিতা চমকে উঠলো। শুধু চমকে গেছে তাই নয়, ভয়ানক বিস্মিত হয়েছে ও। কারণ এতদিনের পরিচয় ওদের, রোদের সঙ্গে কতবার কাছাকাছি এসেছে ও। অথচ রোদ কোনোদিনও ওকে তুমি করে সম্বোধন করেনি। আজকে ওকে তুমি করে বলছে! পারমিতা চোখ বড়বড় করে রোদের চোখর দিকে তাকিয়ে রইল।
রোদ জানতে চাইলো, কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? আর কেনই বা আমাকে কষ্ট দিচ্ছো? এসবের কারণ বলবা আমাকে?
রোদের কথার ধরণ ও সুর শুনে মনে হচ্ছে সে পারমিতার সবচেয়ে আপনজন। যার রয়েছে অনেক অধিকার, রয়েছে দায়িত্ব ও হারানোর ভয়। আপনজন না হলে কাউকে এভাবে প্রশ্ন করা যায় না। রোদের প্রশ্ন শুনেই পারমিতা খেই হারিয়ে ফেললো। কড়া করে কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। মুখ থেকেই কথা ভেতরে ফেরত চলে গেলো।
রোদ দুই কদম এগিয়ে এসে বলল, সবকিছুর উত্তর চাই আমি। তোমার ডিভোর্স, তোমার বাচ্চা, তোমার সমাজ, এই তিনটা জিনিসের বাইরে আর কিছু থাকলে বলতে পারো। এই তিনটা জিনিসের প্রতি আমার আগ্রহ নেই, আপত্তিও নেই। তুমি অন্যকিছু থাকলে বলো।
পারমিতা রোদকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মুহুর্তকেও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন। এতদিন পর মুখোমুখি হয়ে রোদ শুরুতেই এসব বলে আটকে দিলো ওকে। এই তিনটা জিনিসের বাইরে আর কোনো সমস্যা কি আছে পারমিতার? না নেই।
তবুও পারমিতা বলল, আপনি কেন এসেছেন এখানে?
– কেন এসেছি সেটার উত্তর তোমাকে দিতে হবে? বুঝো না তুমি? লাস্ট এক সপ্তাহ তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছো। কিসের জন্য? আমাকে শাস্তি দিতে? কিসের এত ইগো তোমার?
– ইগো! আমার ইগো!
পারমিতা অবাক হয়ে জানতে চাইলো। রোদ বলল, হ্যা ইগো। এটা তোমার ইগো ছাড়া আর কিছুই নয়। সেদিন আমাকে রেখে চলে যাওয়ার পর একবারও জানতে চেষ্টা করেছো আমি কিভাবে ছিলাম? বাসায় ভালভাবে পৌঁছেছি কিনা? অথবা আমি মানসিকভাবে কি অবস্থায় ছিলাম? কথা শেষ না করে নিজের যা ইচ্ছে বলেই চলে গেছো। আমার অবস্থার কথা একবারও ভাবার প্রয়োজন মনে করোনি।
– কেন! আমি তো ভেবেছি আপনি এসব মেনে নিতে পারেননি। তাই একবারও কল দেননি আমাকে।
– ভাব্বেই তো। কারণ তোমার ইগো তোমাকে আমার কথা ভাবতে দেয়নি। আমার অবস্থার কথা ভাবতে দেয়নি। তোমার ইগো শুধু নিজের দিকটা চিন্তা করেছে। তোমার ইগো চেয়েছে সেখান থেকে চলে গিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখতে। আমার ব্যাপারে সব ভাবনা বন্ধ করে দিতে। আরও কি কি চেয়েছে সেসব বলতে চাচ্ছি না।
– বলুন না। আমার ইগো আর কি কি চেয়েছে?
– তোমার ইগো চেয়েছে আমিই তোমাকে খুঁজে বের করি। চায় নি? আই এম সরি। আমি এটা বলে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।
সরি বলতে বলতে একদম কাছে এগিয়ে এলো রোদ। চোখ বন্ধ করে অনুশোচনার সুরে বলল, সরি। রাগ সামলাতে পারিনি। মাফ করে দাও।
– সরি কেন বলছেন? আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে একটা ব্যাপার কি জানেন? আমার এই ইগো আছে বলেই আমি নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানি। তাই আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখিনি।
– আকাশের চাঁদ যদি মাটিতে নেমে আসে তখন সেটাকে যত্ন করতে হয় পারমিতা। তুমি এটা ভালো বোঝো আমি আশাকরি। কিন্তু তারপরও কেন এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছো? অভিমানে?
পারমিতা চুপ করে রইল। এর উত্তর রোদকে বলা যাবে না। রোদ একটু আগেই সেটা বলে দিয়েছে। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইল ও। কিন্তু রোদ বুঝতে পারল না সেটা। রোদের মনে হলো সে পারমিতাকে আঘাত করে কথা বলছে। তাই এই প্রশ্ন বাদ দিয়ে শান্ত গলায় বলল, আমি সেদিন বাড়িতে যাইনি। সারা রাত ওই একই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। যে জায়গাটায় তুমি আমাকে ফেলে গিয়েছিলে। মনে হচ্ছিল পায়ের নিচে শিকড় গজিয়েছিল আমার। তোমার হয়তো মনে হবে আমার মতো ম্যাচিউর, এই বয়সের একটা ছেলের অত আবেগ এলো কোথা থেকে? আবেগ নয়। আমি আসলে লাইফে কিছুই পাইনি জানো? আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কষ্ট আছে। যেগুলো জানেনা কেউ। আমি যখন জীবনে তোমাকে আপন করার চেষ্টা করলাম, তুমিও আমাকে অবজ্ঞায় ঠেলে দিলে। হয়তো তোমার জন্য সেটাই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি সেদিন আর বাসায় ফিরতে পারিনি। ভোরবেলা ড্রাইভার এসে আমাকে নিয়ে যায়। সারাদিন মাথাব্যথা, জ্বর, হ্যালুসিনেশনে আমি বিছানায় শুয়ে রইলাম। রাতে যখন তোমার নাম্বারে কল দিলাম, দেখি নাম্বার বন্ধ। এরপর থেকে এতবার কল দিয়েছি, নাম্বার বন্ধ। আমি কতটা দুশ্চিন্তা করেছি তোমাকে বলে বোঝানো সম্ভব না। অফিসে গিয়ে মাহতাবের কাছে শুনি তুমি এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছো। তোমার বাসায় গিয়ে দেখি দরজায় তালা দেয়া। তারপরও আমি পরপর চারদিন তোমার বাসায় গিয়েছি। দারোয়ান জানেনা তুমি কোথায় গেছো। আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। যদি কখনো ফিল না করো।
পারমিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদের বলা প্রত্যেকটা কথা ওর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। যেন আকাশ ছোঁয়া কোনো স্বপ্ন ওর হাতে ধরা দিয়েছে। অবিশ্বাসের সুরে তাকিয়ে আছে পারমিতা।
অনেক্ষণ পর শান্ত হয়ে বিছানায় গিয়ে বসল রোদ। পারমিতাও বিছানায় এসে বসল। দুজনের দৃষ্টি মেঝেতে। কেউই কোনো কথা বলছে না।
প্রায় মিনিট চারেক পর পারমিতা জিজ্ঞেস করল, এখানকার ঠিকানা আপনি কিভাবে জানলেন? আমি এখানে আছি সেটা আপনাকে কে বললো?
– আমি চতুর্থবার তোমার বাসায় গিয়ে দারোয়ানকে খুব রিকোয়েস্ট করি তোমার রুমমেটের নাম্বার ওনার কাছে আছে কিনা। উনি সামান্তার নাম্বার দিয়েছেন। এরপর সামান্তাকে কল দিয়ে জানতে পারি তুমি এখানে। সামান্তাই আমাকে ঠিকানা দিয়েছে। নিজে থেকে দেয়নি। অনেক জোর করার পর দিয়েছে।
পারমিতা চুপ করে আছে। এমন সময় দৌড়ে ঘরে এলো প্রীতুল। পারমিতার কাছে এসে বলল, আম্মু জানো কি হয়েছে?
পারমিতা এক পলক রোদকে দেখে প্রীতুলের দিকে মুখ ফেরালো, কি?
– একটা ছোট্ট বেবি হেলিকপ্টার নিয়ে খেলছে। আমি যখনই ওর হেলিকপ্টার নিয়ে খেলতে গেছি, একটা পাখা খুলে পড়ে গেছে। হেলিকপ্টার আর উড়ছে না। বেবিটা কান্না করছে। এর মা আমাকে বকে দিয়েছে। সবাই বলছে আমি নাকি ভেঙেছি। কিন্তু আমি ভাঙিনি আম্মু। ওটা এমনি এমনি খুলে পড়ে গেছে।
পারমিতা রেগে বলল, তোমার বাসায় এত খেলনা তবুও তোমার হয়না? আরেকজনের খেলনা নিয়ে কে বলেছিল খেলতে?
প্রীতুল মায়ের বকা খেয়ে দূরে সরে দাঁড়াল। অভিমানী মুখ করে বলল, বললাম তো আমি ভাঙিনি। তুমিও বিশ্বাস করছো না।
মন খারাপ করে ঘরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল প্রীতুল। পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রোদ বসে রইল। পারমিতাকে ডাকতেও পারল না, আর পারল না পিছুপিছু যেতে। অপেক্ষা ছাড়া আর কিইবা করতে পারে সে।
বাড়ির কাজে সহযোগিতা করে পারমিতা রুমে এসে দেখল কেউ নেই। রোদ কি তবে চলে গেছে! এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করলো পারমিতা। কিছুক্ষণ আগে রোদের সঙ্গে কথা বলার পর থেকেই ওর মনে সুখের পরশ লেগেছে। একটা ভাললাগার সুক্ষ্ম আবেশ ছড়িয়ে পড়েছে হৃদয়ে। এখন রোদকে দেখতে না পেয়ে ওর মন ভারী হয়ে উঠল। ওকে না জানিয়ে কখনোই চলে যাবে না রোদ। হয়তো আশেপাশেই কোথাও আছে। পারমিতার চোখ দুটো শুধু রোদকেই খুঁজে চলল।
ড্রয়িং রুমে এসে পারমিতা দেখল প্রীতুল একটা নতুন হেলিকপ্টারের বাক্স বাচ্চাটার হাতে দিয়ে রুমের দিকে এগোচ্ছে। পারমিতা ওর পিছুপিছু এসে বলল, হেলিকপ্টার পেলি কোথায়?
রোদ হাতে থাকা ব্যাগ থেকে আরও একটা খেলনা হেলিকপ্টার বের করে ফ্লোরে রাখল। ওর আনন্দে নাচানাচি দেখে পারমিতা জিজ্ঞেস করল, কোথায় পেয়েছিস এগুলা?
– রোদ কিনে দিয়েছে
– রোদ কিনে দিয়েছে! রোদ কোথায়?
– বাসার নিচে। বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বলল রোদ এখন হারিয়ে যাবে। মেঘ এসে রোদকে ঢেকে দিয়ে যাবে।
– কী! রোদ বলেছে তোকে?
– হুম।
– আর কি বলেছে?
– বলেছে আমি যদি ভদ্র বাচ্চা হয়ে থাকি তাহলে ও আমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবে।
– তুই বলিস নি তুই একটা ভদ্র ছেলে?
– না। আমিতো জানিনা ভদ্র ছেলে কিভাবে হয়? বলেছে তুমি আমাকে শেখাবে।
– তুই রুমে বসে খেলা কর। আমি রোদকে থ্যাংক ইউ বলে আসি।
– আম্মু রোদকে বোলো আমিও ওকে থ্যাংক ইউ বলেছি
পারমিতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। বাসার নিচে এসে দেখলো বাগানে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। সামান্য কিছু অংশ জুরে সামান্তার মায়ের শখের বাগান। বাসার গেট থেকে প্রধান দরজা পর্যন্ত ফাঁকা জায়গাটায় তিনি গাছ রোপণ করেছেন। বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ। লাল ঝিলমিল বাতিতে আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। গাছের আড়ালে কিছুটা অন্ধকার। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে রোদ।
পারমিতা বলল, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
– মশার কামড় খাই।
– এটা খাওয়ার মতো কিছু?
– হুম। মশা আমাকে খায়। আমি কামড় খাই। তুমি নিচে কেন?
– জানেন না কেন? প্রীতুল আপনাকে থ্যাংক ইউ বলেছে।
– আর প্রীতুলের মা?
– কিছু বলেনি। প্রীতুলের মা রেগে আছে। আপনি কেন ওকে দুইটা হেলিকপ্টার কিনে দিলেন?
– বাচ্চা মানুষ। খেলবে।
– যাইহোক, থ্যাংক ইউ। ছোট বাচ্চাটা হেলিকপ্টার পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। কান্না থেমেছে ওর।
– পারমিশন ছাড়া প্রীতুলকে বাইরে নিয়ে গেছিলাম বলে আমাকে শাস্তি পেতে হবে নাকি?
– না। তেমন কঠিন কোনো অন্যায় করেননি। কিন্তু প্রীতুলকে কি সারপ্রাইজ দেবেন বলেছিলেন?
– সেটা তো প্রীতুলকেই দেবো। তোমাকে কেন বলবো?
পারমিতা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, দেখুন। আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি সেটা মোটামুটি রেস্ট্রিকটেড ফ্যামিলি। আমি আগে কখনো স্বাধীনতার স্বাদ পাইনি। তবে কখনো অভাবও বুঝতে পারিনি। বিয়ের পরে আরও নয়। রাজরানীর মতো ছিলাম কিছুদিন। তারপর থেকেই মানসিক যন্ত্রণা, শারীরিক যন্ত্রণা..
– শারীরিক যন্ত্রণা?
পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, রাসিফ নেশা করে বাসায় ফিরলে বিকৃত যৌনাচারে মেতে উঠত। আমি এসব সহ্য করতে পারিনি বলেই ওকে ডিভোর্স দিয়েছি।
– কিহ!
রোদ বেশ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে পারমিতার দিকে তাকিয়ে রইল। পারমিতা বলল, অভাব জিনিসটা তারপর থেকেই বুঝতে পারি। রাসিফের ফ্যামিলি প্রীতুলকে রাখতে চেয়েছিল। আমি দেইনি, জোর করে নিয়ে এসেছি। আমার মায়ের বাসায় উঠতে চেয়েছিলাম, মা আমাকে বাসায় উঠতে দেয়নি।
– কেন!
– মা চায়নি আমি ডিভোর্স দেই। সবসময় আমাকে বোঝাত। বলত, ছেলেরা টাকা পয়সা আয় ইনকাম করলে এরকম নেশা টেশা করে। মেনে নিয়ে সংসার কর। সহ্য কর। মেয়েদের জীবনটাই হচ্ছে সহ্য করার।
– অদ্ভুত!
– হুম। সহ্য করেছি অনেকদিন জানেন? তারপর আর পারিনি। ওর আচরণ এত চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল.. বাধ্য হয়েছি ছেড়ে আসতে। কিন্তু বিয়ের পর আমার যে পড়াশোনাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেটা আর চালু হয়নি।
রোদ বলল, এসব ভেবে আর কি হবে বলো? জীবনটাকে নতুন করে দেখো। পুনরায় সাজাও।
– আর কি সাজাবো? আপনি চাকরি না দিলে আমাকে না খেয়ে থাকতে হতো৷ প্রীতুলকে নিয়ে দুর্দশায় পড়ে যেতাম।
– সব ঠিক হয়ে যাবে পারমিতা।
– প্রীতুল বড় হচ্ছে। মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করে ওর বাবা নেই কেন। একটা মেয়ের জন্য এই সমাজে টিকে থাকা, বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। খুব।
– আমি জানি পারমিতা। প্লিজ এসব কষ্ট ভুলে যাও। নতুন করে স্বপ্ন দেখো।
পারমিতা চমকে উঠলো। রোদের চোখে চোখ রাখলো ও। রোদ চোখ সরাল না। স্থির গলায় বলল, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
– কিসের!
রোদ পারমিতার চোখে চোখ রেখে বলল, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। প্রীতুল আমাদের দুজনের ছেলে হিসেবে বড় হবে। ওকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না। তোমার কি আপত্তি আছে আমাকে বিয়ে করতে?
পারমিতা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হল না। সামান্তার ধারণাই সঠিক হলো। রোদ সত্যিকার প্রেমিক, সত্যিকার মানুষ। সে অযথাই ভুল বুঝেছিল রোদকে। কিন্তু সে এখন বিয়ে করতে চায় না। রোদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে তার স্ট্যাটাস যায় না। এই বিষয় গুলো মেনে নিতে পারবে না ও।
পারমিতা বলল, কিন্তু আমি বিয়ে করতে পারবো না। সরি।
একটা নিশ্বাস ফেলে রোদ বলল, তাহলে জোর করবো না। অপেক্ষা করবো।
রোদ গেটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। পারমিতা জানতে চাইলো, চলে যাচ্ছেন?
– হুম। বাসায় যাচ্ছি। পারলে ফোন খোলা রেখো।
পারমিতা উত্তর দিলো না। ওর খারাপ লাগছে। কেন লাগছে বুঝতে পারছে না।
রোদ বলল, গুড বাই।
রোদের চলে যাওয়াটা মুহুর্তেই পারমিতার জন্য বিরহের হয়ে উঠলো। এমন তো লাগেনি আগে। কোনো আয়োজন ছাড়াই রোদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেবে এটা স্বপ্নের মতো লাগছে ওর। মানুষটা সাধারণভাবেই সবকিছু ভাবছে। সাধারণের মাঝেও অসাধারণ। পারমিতা বিষণ্ণ মনে দাঁড়িয়ে রইল।
চলবে..