পারমিতা” পর্ব-৪৬ শেষ পর্ব

0
4537

#পারমিতা
নীলাভ্র জহির

প্রীতুলকে নিয়ে রাসিফের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে পারমিতা। একটা চেনা রেস্তোরাঁ, যেখানে কয়েক বছর আগে প্রায়ই খেতে আসতো রাসিফ ও পারমিতা। একটা টেবিলে পারমিতা ও প্রীতুল বসে আছে। দূর থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে রাসিফ। প্রীতুল বারবার জানতে চাচ্ছে, বাবা কোথায়? কখন আসবে?
প্রত্যেকবার পারমিতার বুকের ভেতর কেমন যেন ধক করে ওঠে। কিছু একটা হারানোর নেশায় অস্থির লাগতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত রাসিফ ও প্রীতুল মুখোমুখি হচ্ছে।

টেবিলের কাছাকাছি এসে রাসিফ অনেকক্ষণ হতবিহ্ববল হয়ে তাকিয়ে রইল। সামনে বসা বাচ্চাটি তার ছেলে, তার নিজের সন্তান। চোখ দুটো যেন হঠাৎ করে পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। পারমিতা মাথা নিচু করে রাখল। এই পরিস্থিতিতে ভীষণ অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ওর।
প্রীতুল পারমিতাকে জিজ্ঞেস করল, আম্মু উনি কি আমার বাবা?
পারমিতাকে ভীষণ অসহায় দেখাচ্ছে। তার জীবনে এটা একটা করুণ বিব্রতকর পরিস্থিতি। তার সন্তান একজন অপরিচিত লোককে দেখিয়ে জানতে চাইছে আম্মু এটা কি আমার বাবা। একজন মায়ের জন্য এর চাইতে কষ্টের মুহূর্ত আর কি হতে পারে!
পারমিতা মাথা নিচু করা অবস্থাতেই বলল, হুম । উনিই তোমার বাবা।
কথাটা বলেই পারমিতা রাসিফের মুখের দিকে তাকালো। রাসিফে মুখে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ। সে ধীরেধীরে সামনের চেয়ার টেনে বসল ।
কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল নীরবে। কারো মুখে কোন রা নেই। প্রীতুলের একটা কথায় এই সমস্ত নীরবতা ভেঙে খান খান হয়ে গেল, আপনি কি আমার বাবা? আপনি যে আমার বাবা সেটা আমি কেন বিশ্বাস করব ? আমি তো কোনদিনও আপনাকে দেখিনি। সবার বাবা সবাইকে স্কুলে নিয়ে যায়, বাইরে খেলতে নিয়ে যায়, আপনি কোনদিনও আমাকে নিয়ে যাননি। সবাই তার বাবা মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমায়। আপনি তো আমাকে আর আমার মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাহলে আপনি কিভাবে আমার বাবা হলেন?
পারমিতা প্রীতুলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, চুপ কর বাবা। বাবাকে কখনো এসব বলতে নেই ।
– উনি একটা খারাপ বাবা ।
আঙ্গুল তুলে কথাটি বলল প্রীতুল। পারমিতা স্তব্ধ হয়ে গেল। কথাটি শুনতে খারাপ লাগলেও গর্বে ভরে উঠল পারমিতার বুক। তার ছেলে প্রতিবাদ করতে শিখেছে। তার ছোট্ট প্রীতুল এখন আর অবুঝ শিশুটি নেই। হয়ত এ কারণেই সারারাত আজকে ঘুমাতে পারেনি প্রীতুল। অস্থিরতায় ছটফট করে কাটিয়েছে ।
রাসিফ বলল, ছেলেকে এসব শিখিয়ে দিয়েছো তুমি তাই না ? আমাকে কিভাবে ছোট করতে হবে কিভাবে অপমান করতে হবে এসব না শেখালেও পারতে।
পারমিতা শান্ত স্বরে উত্তর দেয়, বাস্তবতা কখনো কাউকে স্পষ্ট করে শিখিয়ে দিতে হয় না। মানুষের জীবনে যখন কঠিন বাস্তবতা এসে হানা দেয়, তখন পরিস্থিতিই মানুষকে শিক্ষা দিয়ে যায়।
রাসিফ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ প্রীতুল তুমি ঠিকই বলেছ । আমি একটা খারাপ বাবা । এই খারাপ বাবাকে মেনে নিতে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে?
– আমি আপনাকে বাবা বলে ডাকবো না ।
রাসিফ চমকে উঠে জানতে চাইল ,কেন?
– আমি অন্য একজনকে বাবা বলে ডাকবো ভেবে ঠিক করেছি। উনি আমার সত্যিকারের বাবা। সবার বাবা তাদেরকে যেভাবে আদর করে উনি আমাকে ঠিক সেভাবেই আদর করে। তাই উনিই আমার বাবা।

রাসিফ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রীতুলের দিকে। পারমিতা ভীষণ চমকে গেল। ছোট্ট প্রীতুলের মুখে আজকে এসব শুনে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে পারমিতার কাছে ।
রাসিফ বিস্ময় কাটিয়ে উঠে বলল, তাই নাকি পারমিতা? এতদিনে আসল কথাটা জানলাম । আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না। জানলে হয়তো তোমার নতুন জীবনে এসে পথ রোধ করে দাঁড়াতাম না। কালকে যে লোকটাকে দেখলাম তাকে কি বিয়ে করেছ তুমি ?
পারমিতা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকে । তারপর উত্তর দেয়, তোমাকে এসবের কোনো কিছু বলেই লাভ হতো না । তুমি যদি ভেবে থাকো আমি ওকে কোন কিছু শিখিয়ে দিয়েছি তাহলে ভুল করছ। আমি ওকে কিছু শেখাই নি । যাই হোক , প্রীতুল সোনা, এভাবে বাবাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে নেই । তুমি ওনার কাছে যাও । ওনাকে একটু ছুঁয়ে আদর করে দাও। উনি তো তোমার আব্বু ।
প্রীতুল অনেকক্ষণ চোখের পলক না ফেলে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ছল ছল চোখে উত্তর দেয়, কিন্তু আম্মু উনি তো তোমাকে আর আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি তো উনাকে একটুও পছন্দ করতে পারছি না আম্মু।
পারমিতার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো । আবেগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল তার পক্ষে। কয়েক মুহুর্ত প্রীতুলকে বুকে চেপে ধরে থেকে ছেড়ে দিলো পারমিতা। প্রীতুল একটু একটু করে এগিয়ে গেল রাসিফের দিকে । প্রত্যেক পায়ে পারমিতার শূন্যতা বাড়তে লাগলো ।
প্রীতুল রাসিফের কাছে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকক্ষণ কেউ কারো সঙ্গে কথা বলল না । পারমিতার মনে হল প্রীতুল কাঁদছে । কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রীতুল মাটির দিকে তাকিয়ে নখ খুটছে ।
রাসিফ হাত বাড়িয়ে প্রীতুলকে জড়িয়ে ধরল । নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল না প্রীতুল । চুপচাপ রাসিফের বক্ষে নিজেকে সপে দিলো। রাসিফ বলল , বাবারে এই খারাপ বাবাটাকে তুমি মাফ করে দিও। কোনদিনও তোমাদের কাছে জানতে চাইনি তোমরা কেমন আছো, কিভাবে আছো। এত বড় অন্যায় কখনোই ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু তোমরা আমাকে ক্ষমা না করলে আমি যে সারাজীবন কখনো শান্তি পাব না। প্লিজ বাবা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।
প্রীতুল চুপ করে রইলো ।
রাসিফ বলল , তোমার নতুন বাবা নিশ্চয়ই তোমাকে অনেক ভালোবাসে ?
উত্তর দিল না প্রীতুল। রাসিফ আবারও বলল , ঠিক আছে। তুমি নতুন বাবাকেই বাবা বলে ডেকো। শুধু মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে একটু কথা বইলো। আমি বিদেশে চলে যাবো বাবা। বিদেশে গেলে মাঝে মাঝে তোমার কাছে ভিডিও কল দিব। তখন প্লিজ আমার সঙ্গে একটু কথা বলবেম তুমি কি কথা বলবে আমার সঙ্গে প্রীতুল?

প্রীতুল চুপ করে রইল। যেন অভিমান তাকে কঠোর শক্ত করে রেখেছে। খানিকক্ষণ নিরবে কেটে যাওয়ার পর রাসিফ বলল , মাঝে মাঝে তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাইবো । তুমি কি আমার সঙ্গে দেখা করবে ?
প্রীতুল অনেকক্ষণ পর আস্তে করে একদিকে মাথা নাড়লো ।
আবেগপ্রবণ হয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরল রাসিফ। তার আবেগ যেন আর বাধা মানল না । নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সে । প্রীততুল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কাঁদতে ভুলে গিয়েছে সে । এত বছর সে তার মাকে নিয়ে অশ্রুর বন্যায় ভেসেছে। এখন কাঁদতে হবে রাসিফকেও।

রাসিফ নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ মুছলো । প্রীতুলের কাছে জানতে চাইলো, তুমি কি খাবে বাবা ?
প্রীতুল বলল, আমি কিছু খাব না ।
– কিছু অন্তত খাও ।
– না ।
– পারমিতা তুমি কিছু খাও। প্লিজ না করো না । কিছু একটা অর্ডার করো ।
পারমিতা শুধু উত্তর দেয়, থ্যাঙ্কস।
প্রীতুলকে পাশে বসিয়ে রেখে রাসিফ বেশ কয়েকটি খাবার অর্ডার করলো । কিন্তু আজকে কিছুই খেলোনা প্রীতুল। পারমিতার হঠাৎ মনে হল রোদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের কথা । রোদকে পেলে প্রীতুল সবকিছু ভুলে আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। অথচ তার বাবার সঙ্গে প্রীতুল সহজ হতে পারছে না। এ দৃশ্য পারমিতাকে ভাবায় না। বরং তার মনে আনন্দের ফোয়ারা বইয়ে দেয় ।

প্রীতুল মায়ের কাছে গিয়ে বসল । মায়ের হাত ধরে বলল,আমরা কখন বাসায় যাব ?
রাসিফের চোখ দুটো এখনো ছল ছল করছে। পারমিতা ও কিছুই খেলো না। অনাদরে অবহেলায় খাবারগুলো পড়ে রইল টেবিলে। রাসিফের বুকটা যেন ছিঁড়ে খানখান হয়ে যাচ্ছে। নিজের কৃতকর্মের অপরাধবোধ কুড়ে কুঁড়ে খেতে লাগল তাকে।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় রাসিফ আরো একবার প্রীতুলকে জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করল, ও এবার কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। রাসিফ প্রীতুলের হাত ধরে বলল, আমাকে মাফ করে দিস বাবা। তোদেরকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার মত কোনো খারাপ বাবা পৃথিবীতে নেই।

পারমিতা বলল, মন খারাপ করো না। আমি মাঝে মাঝে প্রীতুলের সঙ্গে তোমার কথা বলিয়ে দিব। কিন্তু প্লিজ তুমি কখনো এর বেশি কিছু দাবি করো না। প্রীতুলকে নিয়ে আজীবন বাঁচতে দিও আমাকে।
– দেবো। আমাকে তোমার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কবে বিয়ে করেছ?
– খুব বেশিদিন হয়নি।
পারমিতা চাইলেই পারতো বিয়ে না করার ব্যাপারটা স্বীকার করে নিতে। কিন্তু ইচ্ছে করেই সে বিষয়টা এড়িয়ে গেল। কারণ খুব শীঘ্রই হয়তো রোদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে সে। তাদের বিয়েতে যেন নতুন করে আর কোন ঝামেলা সৃষ্টি না হয়।
রাসিফ জানতে চাইল, কালকে যে লোকটাকে দেখেছিলাম। উনিই কি?
পারমিতা মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়, হুম।
– তোমরা এক সঙ্গে থাকো না ?
– খুব শীঘ্রই থাকবো ।
– বেস্ট উইশেস। তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।
– থ্যাংকস । তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করব রাসিফ?
– প্লিজ বল।
– তুমিও হয়তো খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবে। যাকেই বিয়ে করো, দয়া করে তাকে সবসময় সম্মান করবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মান জিনিসটা সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট। ভালোবাসা না থাকলেও শুধুমাত্র সম্মানের জোরে সম্পর্ক টিকে থাকে। কিন্তু সম্মান না থাকলে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য সম্পর্ক টিকে থাকে না। তাকে ভালোবাসবে কিনা সেটা তোমার ব্যাপার কিন্তু অন্তত তার প্রাপ্য সম্মানটুকু তুমি তাকে দিও।

রাসিফ নিরুত্তর মাথা ঝাকায়। তাদের দুজনাতে আর কোন কথা হয়না। খাবারগুলো অবহেলায় টেবিলে পড়ে রয়। যে যার মত চলে যায় তাদের পথের দিকে। অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে রাসিফ। এই প্রথম তার উপলব্ধি হয়, সে জীবনে অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছে।

পরের সপ্তাহে ঘরোয়াভাবে বিয়ে হয়ে গেল রোদ ও পারমিতার। রোদের বাবা চেয়েছিলেন অনেক মহাসমারোহে বিয়ের আয়োজন করতে। কিন্তু পারমিতা সেটা করতে দেয়নি। কারণ তার নিজের বলতে কোন পরিবার নেই। এত আয়োজন করে লোকমুখের নানান আলোচনার পাত্রী হতে চায় না সে।
বিয়ের পর বাবা মায়ের সঙ্গেই থাকতে শুরু করলো ওরা। বাসর রাতে রোদ বলেছিল, সে নিজের জন্য আলাদা বাসা নিতে চায়। কিন্তু পারমিতা রাজি হয়নি। মা রোদকে ভীষণ ভালোবাসেন। একদিন ছেলেকে না দেখলে উনি কষ্ট পান। মা ও ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো নিষ্ঠুর সে হতে পারবেনা ।
সবচেয়ে আনন্দে আছে প্রীতুল। সে পুরো বাড়ি জুরে হেসে খেলে, নেচে বেড়ায়। রোদের মা এখনো প্রীতুলকে সহজভাবে নিতে পারেননি। তবে প্রীতুল ঠিকই তাকে ‘দাদু মনি, দাদুমনি’ বলে তাকে পাগল করে তোলে। হয়তো খুব শীঘ্রই তিনিও প্রেমে পড়ে যাবেন প্রীতুলের। নতুন বাবা, দাদা-দাদী নিয়ে প্রীতুল মহাসুখে আছে।

বিকেলবেলা নিজের ঘরে কাজ করছে পারমিতা। এমন সময় রোদ এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। ওয়ালেট থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে আনন্দিত গলায় বলল, এইটা আমার স্যালারির টাকা। আমার নিজের উপার্জন করা। কাজেই এটা নিতে তুমি দ্বিধাবোধ করবে না। তুমি এটা দিয়ে তোমার বিজনেস শুরু করতে পারো। ছোট্ট বিজনেসের জন্য আশা করি এই মূলধন দিয়েই হয়ে যাবে।
পারমিতা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে রোদের দিকে। হঠাৎ করেই ওর নিজেকে বড্ড বেশি সম্মানিত মনে হয়। রোদকে জড়িয়ে ধরে আবেগী গলায় পারমিতা বলে, তুমি এত ভালো কেন? ভেবেছিলাম মাস খানেক গেলে আমি নিজে থেকেই তোমাকে বলবো। অথচ তুমিই তার আগে সবকিছু বুঝে গেলে।
– আমি তোমাকে বুঝতে পারি পারমিতা। তুমি নিজে স্বনির্ভর থাকতে চাও, আমি তোমার স্বাধীনতায় কখনো হস্তক্ষেপ করতে চাইনা।
– ইউ আর দ্যা গ্রেট হাসবেন্ড।
রোদ পারমিতাকে তার বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখল। পারমিতার হাতে টাকাটা তুলে দিলো। পারমিতা হাতের মুঠোয় টাকা নিয়ে অনেকক্ষণ নিস্পলক চোখে তার প্রিয় রোদকে দেখে। একটা মানুষ কতটা উদার, কতটা দায়িত্ববান! ওর মাঝেমাঝে সুখে কান্না চলে আসছে আজকাল। পারমিতা রোদকে শক্ত করে ধরে বলল, ‘তুমি আমাকে কখনও কষ্ট দিও না।’
– দিবো না গো। আমাকে তুমি আজও চিনতে পারলে না?
– চিনেছি। আমার ছেলেটাকে তুমি এত আদর করছো, মনে হচ্ছে এই ছেলে তোমারই।
– চুপ। আর একবার তোমার একার ছেলে বললে মাইর খাবা আমার হাতে। প্রীতুল আমার ছেলে। ওকে আজীবন বুকে আগলে রেখে মানুষ করার দায়িত্ব আমার।
– প্রীতুলের আনন্দ দেখে আমার অনেক আনন্দ হয়। শুধু ভালো খাওয়া আর জামাকাপড় পরলেই তো মানুষ সুখে থাকে না, মানুষ সুখে থাকে পরিবারের যত্নে। তোমার বাবা, মা, তুমি সবাই প্রীতুলকে এত আদর করবে আমি কল্পনাও করিনি। আমি জানিনা কোন কপালের গুণে আমি তোমাকে পেয়েছি।
– কপালের গুণে কিনা জানিনা। কিন্তু তুমি তোমার গুণে আমাকে প্রেমে ফেলতে বাধ্য করেছো।
– এমন কি আছে আমার মাঝে?
– তুমি সাধারণ, সহজ, আমার মনের মতো।
– আমাকে এত ভালবাসো কেন? এত ভালোবাসলে আমার ভয় হয়। প্লিজ ভালবাসা কমিয়ে দাও।
– ভালবাসা কমিয়ে দিলে বুঝি খুব ভালো হবে? আচ্ছা কমাচ্ছি। যাও ছাড়ো আমাকে। বাইরে যাচ্ছি।
রোদ দুই পা এগিয়ে যেতেই পারমিতা ওর শার্টের পিঠে খামচে ধরল। মুহুর্তেই রোদ পারমিতার দিকে ফিরে ওকে গভীরভাবে চুমু খেল। শিহরিত হয়ে উঠল পারমিতা। রোদ দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
পারমিতা বলল, এই দিনের বেলা দরজা বন্ধ করলে বাবা মা কি ভাব্বে?
– এখন ওপরে আসবে না কেউ। ওরা সবাই ড্রয়িংরুমে।
– প্রীতুল আসবে তো।
– আসবে না। আসার আগেই আমি…
রোদ পারমিতাকে নিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পারমিতা বাঁধা দিতে পারে না। তারও ইচ্ছে করে রোদকে নিবিড়ভাবে কাছে টেনে নিতে। পারমিতা রোদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার বিজনেসটা তাহলে তারাতাড়ি শুরু করে দেই?
– এখন আমাকে ভালবাসাটাই তোমার একমাত্র বিজনেস।
– উফফ দুষ্টু, আমি আমার ব্যবসার কথা বলছি।
– ব্যবসা নিয়ে পরে আলাপ করবো লক্ষিটি।
– এখনই করি।
বলতে বলতে খিলখিল করে হেসে ওঠে পারমিতা। রোদ ওর হাসিতে মুগ্ধ হয়ে বলল, না গো প্রিয়তমা। এখন শুধুই ভালবাসাবাসি।
ভালবাসার মুহুর্ত যেন স্বর্গের এক স্পর্শ। রোদ পারমিতাকে বুকের ভেতর লেপ্টে নিয়ে পরম ভালবাসায় ওর আঙুলে আঙুল রাখলো। পারমিতা খেই হারিয়ে তাকিয়ে রইল রোদের দিকে। রোদের গোলাপি আভাময় ঠোঁট দুরুদুরু কাঁপছে। পারমিতা ওর ঠোঁট ছুঁয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে। শিউরে ওঠে ওর পুরো দেহ।
পারমিতা বলল, তুমি কাছে থাকলে আমি কেমন যেন সুখে পাগল হয়ে যাই।
– আমি পাগল করে দেই সেটা কি বলবে না?
– যাহ, দুষ্টু। তোমাকে হারানোর ভীষণ ভয় পাই রোদ।
রোদ একটা হাতে পারমিতার চিবুক ধরে রইল। তারপর অন্য এক হাতে পারমিতার কোমরে চাপ দিতে দিতে পারমিতার শরীরের সঙ্গে মিশে যেতে যেতে রোদ বলল, আমার এতটা কাছে আসো, যত কাছে আসলে তোমার আর ভয় থাকবে না। তুমি জানো না, তোমাকে হারালে আমিই পাগল হয়ে যাবো। আই লাভ ইউ সো মাচ।
পারমিতা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারল না। তার ওষ্ঠ তখন রোদের কোমল ওষ্ঠে বাঁধা পড়ে গেছে। সুখের আবেশে অজান্তেই পারমিতার চোখ থেকে টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, আনন্দের অশ্রু।

সমাপ্ত।

কিছু কথা ..
পারমিতা গল্পটি পড়তে গিয়ে সবাইকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ কাল করে অপেক্ষা দীর্ঘতম হয়ে গেছে। কেউ কেউ বকাও দিয়েছেন মনে মনে আবার কেউ মন্তব্য করে খুঁজেছেন। সবার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা। আমিও মানুষ ব্যস্ততা আর বাস্তবতা মিলিয়ে আমরা সামাজিক জীবন অতিবাহিত করি। মাঝখানে কিছু সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কাজের চাপে থাকায় গল্প লিখা হয়নি। এ শীতেও ইনশাআল্লাহ পুরো একটি জেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত দের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করবো।
সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। সুযোগ হলে আবার কোনো গল্পে কথা হবে। প্রতিটি প্রিয় পাঠকের ছোট্ট একটা মন্তব্য আশা করছি #নীলাভ্র

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here