পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব- ১৬

0
1125

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ১৬
(নূর নাফিসা)
.
.
১৭.
মেঘার ডাকে ঘুম ভাঙলো মেঘের। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো মেঘা তার পাশে দাড়িয়ে তাকে ডাকছে।
– সকাল হয়েছে, উঠুন। আমি ঘর ঝাড়ু দিয়ে গুছাবো।
মেঘা ডেকে চলে যাচ্ছিলো। পায়ের কাছে যেতেই মেঘ সুযোগ বুঝে আচমকা তার সামনে পা বাড়ালো এবং মেঘা হোচট খেয়ে মেঘের উপর পড়লো। মেঘ মুচকি হেসে তাকালো, মেঘা চোখ বন্ধ করে আছে। এক হাতে মেঘার পিঠে ধরে অন্য হাতে মেঘার বাধা চুল খুলে দিলো। চুল এসে মেঘের সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। সে চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত! সকাল সকাল মেঘার চুলের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে উঠছে! মেঘা তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে মেঘ আরও চেপে ধরলো তার সাথে। সামনে আসা চুল কানের পেছনে গুজে দিয়ে বললো,
– সকাল বেলা এভাবে ডেকে কেউ বরের ঘুম ভাঙ্গায়? তার উপর বিয়ের পর আজ আমাদের প্রথম সকাল! মিষ্টি করে ডাকতে হয় বরকে। চুলে বিলি কেটে, মুখে উষ্ণ ঠোঁটের ছোয়া দিয়ে, প্রেম প্রেম দুষ্টুমি মেখে ডাকতে হয়।
নাফিসা রেগে উঠতে গেলে মেঘ তার মাথাটা টেনে কাছে এনে ঠোঁটে উষ্ণ ঠোঁটের আলতো ছোয়া দিয়ে প্রথম সকালটাকে মিষ্টি বানিয়ে দিলো। নাকে নাক ঠেকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ছেড়ে দিলো। নাফিসা উঠে ঠোঁট মুছতে মুছতে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। মেঘ হেসে উঠে বসলো। হাত মুখ ধুয়ে ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজার করে রিসোর্টে এলো। তার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে রিসোর্টের ভাড়া পরিশোধ করে রিসোর্ট ছেড়ে দিলো। কাপড়চোপড়ের ব্যাগ আর বাজারের ব্যাগ সাথে নিয়ে নাফিসার বাড়িতে এলো। আম্মিকে ডেকে হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিলে রোকসানা বললো,
– এতো বাজার কেন এনেছো? শাকসবজি সব আছে ঘরে।
– এটা আমার দায়িত্ব, আম্মি। বিয়ের পরদিন নাকি নতুন জামাইকে বাজার করতে হয়, তাই আমিও করলাম।
– কিন্তু এখন প্রয়োজন ছিলো না। মাছ মাংস এনেছো, ফ্রিজ নেই যে এসব সংরক্ষণ করে রাখবো!
– অল্পই এনেছি। রান্না করে ফেলুন। আর সবজিগুলো এমনিতেই রাখা যাবে।
নাফিসা ঘর থেকে বেরিয়ে বললো,
– এসব কি শুরু করেছেন? আপনাকে না চলে যেতে বলেছি। আপনি তো দেখছি কাপড়চোপড় নিয়ে হাজির হয়েছেন! এখানে থাকতে পারবেন না৷ বাজারের ব্যাগসহ এই মুহূর্তে বের হন বাড়ি থেকে।
– নাফিসা, এভাবে কথা বলছিস কেন? চুপ থাক। এখন ও তোর স্বামী, এটা মানতে হবে।
– মানি না আমি। চলে যেতে বলো। না হলে আমি চলে যাবো।
– ভালো কথা বলতে শিখে গেছিস! সম্মান শব্দটাকে ভুলে যাচ্ছিস!
– আম্মি তুমি জানো না এ লোকটা এসে আমাদের কি ক্ষতি করেছে! তার হয়ে কথা বলছো কিভাবে তুমি!
– একদম চুপ। কোনো ক্ষতি করেনি ও। বরং সম্মান বাচিয়েছে। এটা তোর ভাগ্য, ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। মেঘ, তুমি ঘরে যাও।
নাফিসা রেগে মায়ের রুমে চলে গেলো। অসহ্য লাগছে তাঁর। মায়ের রুমে বসে কান্না করছে নাফিসা। রোকসানা রান্না বসিয়েছেন। মেঘ নাফিসার রুমে এসে তার ব্যাগটা চেয়ারে রাখলো। বিছানাপত্র সব গুছিয়েই রেখেছে নাফিসা। চোখের পানি মুছে নাফিসা তার রুমে এলো। আলমারি খুলে স্কার্ট হাতে নিলো। মেঘ নাফিসাকে আটকালো।
– কোথায় যাচ্ছো? কোন কাজ করবে না তুমি আজ থেকে। সব দায়িত্ব আমার উপর।
– সরে দাড়ান। আপনি বাধা দেয়ার কে?
– মেঘা, জেদ করো না। তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না। প্রয়োজন হলে আমি করবো।
– কি চাইছেন কি আপনি? আমার সাজানো জীবনটাকে তো ধংস করে দিয়েছেন! জোর করে বিয়ে করেছেন, জোর করে আমার বাসায় উঠেছেন। এখন আবার আমার কাজ বন্ধ করে ঘরে বন্দী করে রাখতে চাইছেন? আমি কি পুতুল, যে আমাকে যেভাবে নাচাবেন আমি সেভাবেই নাচবো? সারাজীবন কি অন্যের বাধ্য হয়ে চলবো? এজন্যই কি আমি পৃথিবীতে এসেছি? আমার কোনো স্বাধীনতা নেই?
– তুমি যা ভাবছো তা নয়। আমি তোমাকে পরাধীন করতে চাইছি না। শুধু উপার্জন করতে নিষেধ করেছি। আমি এখন তোমার হাসব্যান্ড। আমি থাকতে তুমি কেন উপার্জন করতে নামবে? আমার উপর ভরসা রাখো। ইনশাআল্লাহ সবটা সামলে নিবো।
– ভরসা! পুরুষ মানুষের উপর কোন ভরসা নেই আমার। বিশ্বাস করিনা আমি পুরুষদের। মানি না আপনাকে হাসব্যান্ড। আমার কোন কাজে বাধা দিতে আসবেন না বলে দিলাম। পারলে মুক্তি দিয়ে এখান থেকে চলে যান।
নাফিসা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। স্কার্ট পড়ে না খেয়েই চা বাগানে চলে গেলো। আম্মি বারবার বলার পরও খায়নি। চা বাগানের কাজ করে বাসায় আসেনি। এই রোদের মধ্যে সেই পাহাড়ে এসে বসে বসে কান্না করছে। হঠাৎ কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো। মেঘ এসে তার পাশে বসেছে।
– এখানে বসে কান্না করছো কেন? রাগ তো আমার উপর, শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো কেন?
– আমার কোন ব্যাপারে আপনি কথা বলবেন না। চলে যান এখান থেকে। আপনাকে সহ্য হয় না আমার।
– এমন কেন করছো? বিয়ে তো একসময় করতেই। কোন একসময় তোমার জীবনে কি কেউ আসতো না। তাহলে সেখানে আমাকে মেনে নিতে পারছো না কেন?
– না, আসতো না কেউ। আপনাকেও মেনে নিতে পারবো না।
– একা একা জীবন কাটানো যায়?
নাফিসা আর কিছু বললো না।
– বাসায় চলো।
– যাবো না।
– আম্মি কিন্তু সকাল থেকে না খেয়ে আছে তোমার জন্য। আম্মিকে কেন কষ্ট দিয়ে যাচ্ছো!
নাফিসা অবাক হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো মেঘের দিকে। এতো বেলা হয়ে গেছে, তার আম্মি তার জন্য না খেয়ে আছে! তাহলে তো ওষুধও খায়নি ! চোখের পানি মুছে নাফিসা তারাতাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মেঘ হেসে সেখানেই বসে রইলো।
নাফিসা বাসায় ফিরে আম্মিকে ডাকতে ডাকতে ঘরে প্রবেশ করলো।
– এখনো খাওনি কেন?
– তুইও তো খাসনি!
– তোমার ওষুধ খেতে হবে জানো না!
– তুই যে না খেয়ে কাজ করতে গিয়েছিস জানিস না?
– অনেক কথা বলো তুমি। আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি, খাবার দাও। দুপুর হয়ে গেছে এখনো নাস্তা করার খবর নেই!
নাফিসা হাতমুখ ধুয়ে এলো। আম্মি খাবার বেড়ে বসে আছে।
– মেঘ কোথায়?
– জানিনা।
– জানিস না মানে! তাহলে তুই জানলি কিভাবে আমি না খেয়ে আছি!
– উনিই বলেছে। এখন কোথায় জানিনা। কথা না বলে খাও তো এবার।
– মেঘও কিন্তু নাস্তা না করেই তোকে খুজতে বেরিয়ে গেছে।
নাফিসা একটু অবাক হয়ে আম্মির দিকে তাকালো। তারপর কড়া কন্ঠে বললো,
– আমি কি বলে গেছি কাউকে, আমাকে খুজতে যেতে!
– বারবার তোকে একটা কথাই বুঝাতে চাইছি বুঝতে পারছিস না কেন তুই! বিয়েটা যেভাবেই হোক, এখন তো মেনে নিতে হবে, নাফিসা। ছেলেটারই বা কি দোষ! তাছাড়া ওর দোষ থাকলে তোরও দোষ আছে। ছেলেটা অনেক ভালো। খুব যত্ন নিবে তোর।
– হ্যাঁ, প্রথম প্রথম সবাই ভালো হয়। পরে গিয়ে দোষ বের হয়ে আসে।
– আল্লাহ, একটু বুদ্ধিশুদ্ধি দাও এ মেয়ের মাথায়। পরে যদি দোষ বের হয়ে আসে তাহলে ভেবে নিবি এটা তোর ভাগ্যে লিখা ছিলো।
– আমি কি এখন না খেয়ে চলে যাবো?
– না।
– তাহলে, তুমি খাচ্ছো না কেন?
– মেঘ আসুক।
– আমি তোমার জন্যই খেতে বসেছি।
– আমরা খাইনি বলেই মেঘ খায়নি।
– ওষুধ খেতে হবে তোমার। তারাতাড়ি খাও। আমি খাওয়া শেষ করে মেঘকে ডেকে আনবো।
মেয়ের কথায় খেয়ে নিলো রোকসানা। নাফিসা খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে গেলো মেঘকে ডাকতে।
– সবসময় পিছু পিছু ঘুরে, আজ আবার ঢং দেখিয়ে বসে ছিলো কেন! অসহ্য!
পথে একা একাই বিড়বিড় করতে করতে নাফিসা পাহাড়ে এলো। কিন্তু এখানে কেউ নেই। মেঘ কোথায় গেলো!
– এখানেই তো এসেছিলো! এখন আবার কোথায় হারিয়ে গেছে! এখানে আসার পর থেকে ঝামেলার উপর ঝামেলা বাধিয়ে যাচ্ছে লোকটা! এখন আবার কোথায় খুজি!
নাফিসা পাহাড় থেকে নেমে এলো। রাস্তায় আশেপাশে দোকানপাটেও দেখতে পেল না। একবার ভেবে আবার ইকো রিসোর্টে এলো। ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আজ সকালে সে রিসোর্ট ছেড়ে দিয়েছে। ক্লান্তি আর বিরক্তি নিয়ে বাসায় ফিরে এলো।
– এসেছে তোমার মেঘ?
– না। তুই না খুজতে গেলি?
– পাই নি।
– পাসনি মানে! কোথায় গেলো ছেলেটা। চলে যায়নি তো কোনোদিকে! নিশ্চয়ই তুই কিছু বলেছিস!
– আমি বলতে আর নতুন কি! আগেও তো বলেছি। গিয়েছে চলে? আর চলে গেলে ভালোই হয়।
– এতো কথা না বলে খুঁজে নিয়ে আয়।
– আযব কথাবার্তা বলো। এমন বিহেভ করছো যেন আমি পর আর সে আপন! না খুঁজেই কি এসেছি! এখন না পেলে আমি কি আকাশ থেকে নামিয়ে আনবো মেঘকে!
“চাইলে নামিয়ে আনতে পারো আকাশ থেকে মেঘকে। আকাশের মেঘও ছোয়া যায়।”
হঠাৎ মেঘের গলা শুনে উঠুনের দিকে তাকালো মা মেয়ে। দরজার সামনে দাড়িয়েই কথা বলছিলো তারা। মেঘকে দেখে বেরিয়ে এলো রোকসানা। পিছু পিছু নাফিসাও। মেঘের পোশাকআশাকসহ সে সম্পূর্ণ ভেজা। হাতে পাতায় মোড়ানো কিছু দেখা যাচ্ছে। নাফিসা উঠুনে এসে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ তো পুরো পরিষ্কার! সিলেট অঞ্চল জুড়েও হয়তো বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু মেঘ ভেজা কেন!
– আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখো! বৃষ্টি হয়নি আজ।
নাফিসা রাগী দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো আর রোকসানা হেসে বললো,
– তোমার এ অবস্থা কেন? কোথায় গিয়েছো?
– হামহাম ঝর্ণায় গোসল করে এলাম।
নাফিসার দিকে মোড়ানো পাতাটা এগিয়ে দিয়ে,
– নাও ধরো।
নাফিসা কিছু না বুঝে তাকালো মেঘের দিকে।
– তাকিয়ে আছো কেন! ধরো, এখানে ফোন আর ওয়ালেট আছে। এটা ঘরে নিয়ে যাও আর আমার জামা নিয়ে আসো ব্যাগ থেকে।
নাফিসার দাত কিড়মিড় করছে! মা পাশে থাকায় কিছু না বলে পাতা ফেলে ফোন আর ওয়ালেট হাতে নিয়ে ঘরে এলো। হাতের চাপ লেগে ফোনের স্ক্রিনটা জ্বেলে উঠলো। স্ক্রিনে চোখ পড়তেই খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখতে পেল নাফিসা! আম্মি দ্রুত জামা নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে ফোন রেখে ব্যাগ খুললো। সামনে যা পেয়েছে তা থেকেই একটা টিশার্ট আর একটা প্যান্ট নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
– আবার কোথায় গেছে?
– বাথরুমে গেছে। দিয়ে আয়।
– আমি পারবো না। তুমি যাও।
– জামাইয়ের সামনে আমি যাবো! ছি, মেয়ের আন্দাজ দেখলে অবাক লাগে।
নাফিসা বোকা হয়ে গেল তার মায়ের কথায়। অবশেষে তাকেই যেতে হলো। দরজার সামনে গিয়ে ডাকলো,
– এই নিন আপনার জামাকাপড়।
– ভেতরে রেখে যাও।
– ছি, লজ্জা করে না বাথরুমে আরেকজনকে ডাকতে!
– তোমার কি মনে হয়, আমি তোমার মতো জামাকাপড় খুলে গোসল করি!
– আপনাকে কে বললো আমি জামাকাপড় খুলে গোসল করি!
– তোমার কথার স্টাইলই বলে দিয়েছে।
মেঘের মুখে এরকম কথা শুনবে ভাবেনি নাফিসা। এখন তার নিজেরই লজ্জা লাগছে খুব! কি হচ্ছে আজ তার সাথে! যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই বোকার মতো লজ্জা পাচ্ছে! নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে আবার বললো,
– তাহলে আপনি নিতে পারছেন না কেন!
– আমার হাতে সাবান।
দরজা ঠেলে নাফিসা ভেতরে ঢুকলো। মেঘ শার্ট খুলে ফেলেছে। সারা শরীরে সাবান লেগে আছে। নাফিসার কেমন যেন লাগছে তাকে দেখে। তারাতাড়ি করে কাপড় রেখে বেরিয়ে যেতে নিলে মেঘ তাকে বাথরুমের দেয়ালে আটকে ধরলো।
– তোমাদের বাথরুমটা আমার পছন্দ হয়েছে। চার দেয়াল আছে কিন্তু ছাদ নেই। লাইট লাগবে না! দিনের বেলা সূর্যের আলো, রাতের বেলা চাদের আলো। আর আমাবস্যায় ভুতের ভয়! হাহাহা!
– ছাড়ুন!
– তুমি এতো তারাতাড়ি আমার পছন্দ জেনে গেছো! বেছে বেছে লাল টিশার্টটা ই এনেছো!
নাফিসা আমতা আমতা করে বললো,
– আমি বেছে বেছে আনিনি। সামনে যা ছিলো তাই নিয়ে এসেছি।
– সামনে তো তোয়ালেও ছিলো। কোথায় সেটা? গোসলে এলে তোয়ালে লাগে, জানোনা সেটা?
নাফিসা থতমত খেয়ে গেলো। কি হয়েছে আজ তার! সব কাজ এমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন! এদিকে মেঘ আরো কাছে চলে এসেছে।
– ক..কি করছেন! সরুন।
– গোসল করেছো?
– না।
– তাহলে আর কি, একসাথেই করি চলো।
মেঘ দুষ্টুমি হাসি দিয়ে কথাটা বলে তার গালটা মেঘার গালে ঘষে সাবানের ফেনা লাগিয়ে দিলো।
– ক..করবো না আমি এখন।
মেঘ নাফিসার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখে পানি। তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– বিনা কারণেই চোখে হামহাম ঝর্ণা বয়ে যায়! যাও, তোয়ালে নিয়ে আসো।
নাফিসা সেখান থেকে বেরিয়ে গালের ফেনা আর চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘরে চলে এলো। তোয়ালে নিয়ে আবার ছোট ছোট কদমে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজার বাইরে থেকে বললো,
– হাত ধুয়ে আপনার তোয়ালে নিন।
মেঘ দরজা ফাঁক করে হাত বাড়িয়ে নাফিসার হাতসহ তোয়ালে ধরে বললো,
– ভয় পাচ্ছো? এখনো তো তোমাকে ভেতরে নিতে ব্যাপার না। এক টান পড়লে নিজেই চলে আসবে।
নাফিসা ভয়ার্ত চোখে তাকালে মেঘ হাত ছেড়ে তোয়ালে নিয়ে হাসতে হাসতে ভেতরে দরজা লাগিয়ে দিলো। গোসল সেড়ে ঘরে এলো মেঘ। নাফিসা খাটের কোনায় বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো।
– মেঘা, বৃষ্টির সময় কি বাথরুমে ছাতা নিয়ে যাও?
মেঘের কথায় নাফিসা ঘুরে তাকালো। তোয়ালে টা ঢিল মেরে খাটে ফেলে মেঘ আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। লাল টিশার্টে, ভেজা চুলে মেঘকে দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। অনেক স্মার্ট সে। কথাবার্তা, চলাফেরা, গঠন সবদিক থেকেই স্মার্ট। ফর্সা গায়ে লাল রংটা মানিয়েছে বেশ। সুন্দরের পূজারী মেয়েরা মুহুর্তেই প্রেমে পড়ে যাবে। নাফিসা কোন উত্তর না দিয়ে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো। বাইরে তোয়ালে নেড়ে মায়ের রুমে এলো। মা তার হাতে মেঘের জন্য খাবার ধরিয়ে দিলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাবার নিয়ে রুমে আসতে হলো।
– খেয়েছো তুমি?
– কেন? না খেলে খাবেন না?
মেঘ তার হাত ধরে টান দিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো।
– না খেলে জোর করে খাওয়াবো এখন।
– আমি খেয়েছি।
– পালানোর জন্য বলছো?
– আম্মিকে জিজ্ঞেস করুন।
মেঘ হাত ছেড়ে দিয়ে খেতে খেতে বললো,
– আমার জামাকাপড় এখনো আলমারিতে রাখোনি কেন?
– নিজের বাসায় ফিরে যান।
– আচ্ছা, তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নাও দ্রুত। আজকেই ঢাকা ফিরবো।
– কিহ! আমি কেন যাবো!
– বউ রেখে আমি একা যাবো নাকি!
– আমি আপনার বউ না।
– খেতে বসেছি, বেশি কথা বলো না। জামাকাপড় আলমারিতে রাখো।
নাফিসা রুম থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মেঘ ধমকের সুরে বললো,
– কানে কথা যায়নি? এক পা বাড়ালে পা ভেঙে ফেলবো। জামাকাপড় রাখো!
হটাৎ ধমকে উঠায় নাফিসা ভয়ে একটু কেপে উঠেছে। দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে ব্যাগ থেকে কাপড়চোপড় নামিয়ে গুছিয়ে আলমারিতে রাখছে সে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here