পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব- ১৭

0
1227

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ১৭
(নূর নাফিসা)
.
.
১৮.
সকালে নাস্তা করার পর তারা তাদের জংলী বেশে শুটিং করতে লেগেছে। সরাসরি শুটিং দেখতে ভালোই লাগছে বৃষ্টির। অন্যরকম জগতের মতো লাগছে সবকিছু। শুটিং দেখে মনে হচ্ছে এসব জংলীদের বাস্তবিক জীবন! পোশাকটাও দারুণ!
দুপুর পর্যন্ত তাদের শুটিং চললো। সকালে বানানো বসি নিয়ে তারা ঝর্ণার ধারে চলে এলো। প্রথমে সবাই গোসল করে নিলো। কাপড়চোপড় রোদে শুকাতে দিয়ে মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে গাছের নিচে বসে। আর ছেলেগুলো বসি হাতে নিয়ে পৃথক পৃথক জায়গায় পাথরের উপর বসে পড়লো মাছ ধরতে। বৃষ্টি মেয়েগুলোর কাছেই বসে আছে কিন্তু মন তার ছেলেদের মাছ ধরার দিকে। অভ্র রওনককে উদ্দেশ্য করে বললো,
– রওনক, তোর বসিতে মাছ না উঠলে সিমি মাছ খেতে পারবে না বলে দিলাম।
এদিক থেকে সিমি জবাব দিলো,
– তাহলে, তোর বসির মাছ কে খাবে? তোর বউ তো আসেনি!
– আমার বসির মাছ সিমি বাদে সবাই খেতে পারবে। রওনক মাছ না পেলে তোর খাওয়া বন্ধ!
রওনক জবাব দিলো,
– ব্যাটা, চাপা না ছেড়ে আগে মাছ ধরে দেখা।
বৃষ্টি তাদের কথোপকথন শুনে আনন্দ পাচ্ছে। সিমিকে জিজ্ঞেস করলো,
– আপু, কবি ভাইয়ার বউ আছে?
– হ্যাঁ, কবি ভাই পিচ্চিকালেই বিয়ে সেরেছে।
– বউ কি এখনো পিচ্চি?
– বউ ডাক্তারি পড়ছে।
– ওয়াও! দারুণ তো! হাসব্যান্ড কবি আর ওয়াইফ ডাক্তার!
বৃষ্টিসহ মেয়েরা সবাই হেসে উঠলো। অথৈ বৃষ্টিকে বললো,
– তুমি কোন গ্রুপ থেকে এইচএসসি দিয়েছো?
– সাইন্স গ্রুপ থেকে।
– লক্ষ্য কি ডাক্তার নাকি!
– হুম, বাবামায়ের ইচ্ছে সেটাই।
– তোমার ইচ্ছে?
– আমার ইচ্ছে বাবা-মা কে ঘিরেই।
– ভালোই, পূরণ হোক বাবামায়ের ইচ্ছে!
– আমিন।
তারা নিজেরা আবার গল্প করতে লাগলো। ওদিকে রওনক এর কন্ঠ শুনা গেলো,
– চুপচাপ থাকা আকাশের না হয় স্বভাব, কিন্তু রিজভীর কি হলো! রিজভী এখন চুপচাপ কেন! কিরে তোর বাকশক্তি হারিয়ে গেছে নাকি শ্রবণশক্তি হারিয়ে গেছে!
অভ্র বলে উঠলো,
– বিরক্ত করিস না তো। বেচারা নিতুর সাথে ঝগড়া লেগেছে হয়তো!
– হাহাহা! ছেকা খেলে কবিতা লিখা শিখে নিস অভ্রের কাছে!
– অই ব্যাটা, আমি কি ছেকা খেয়ে কবিতা লিখছি রে?
– তোর কবিতা লেখার রহস্য খুজতে গেলে আমাকে বিজ্ঞানী হতে হবে। আমি অজ্ঞান টজ্ঞান হতে পারবো না বাপু!
অভ্র ও রওনকের কথা শুনে বৃষ্টি এখান থেকেই হিহিহি করে হেসে উঠলো। হঠাৎ করেই রিজভী চিৎকার করে উঠলো! অনেকে ভয়ও পেয়ে গেছে তার চিতকারে! অভ্রের হাত থেকে তো বসিই পড়ে গেছে!
– ওই পাইছিরে, মাছ পাইছি! দেখ কত্তবড় মাছ পাইছি!
রওনক বললো,
– এনাকোন্ডা কোথাকার! আমি তো ভাবছি তোর পায়ের নিচে পাথর ফেটে বিস্ফোরণ ঘটেছে!
অভ্র বললো,
– দেখ, কাট্টার জন্য আমার বসি পড়ে গেছে!
রিজভী আনন্দে লাফিয়ে বললো,
– তোরা তো এসবই ভাববি! একটা মাছ ধরতে পারছোস কেউ! আমি এজন্যই এতোক্ষণ চুপ ছিলাম। কখন থেকে চেষ্টা করছি এটা ধরার জন্য। তোদেরকে চুপ থাকতেও বলতে পারিনি এটা চলে যাবে বলে! উম্মাহ!
ঝুমুর চেচিয়ে বললো,
– কিরে রিজভী, এটা কি নিতুর জন্য পাঠাবি? নিতুর কাছে যেতে যেতে তো কাটাসহ পচে যাবে!
– দূর! তোর নিতুর নিমকুচি করি। নিজের পেট বাচাই আগে, পরে নিতুর খবর!
সবাই হেসে উঠলো। অথৈ বললো,
– নিতু জানলে, ঢাকা থেকেই তোকে জুতাপেটা করবে।
– দূর হো, কথা বলিস না। দেখ আরও কতো মাছ ধরি। বলদ গুলায় তো এখনো মাছের চেহারাও দেখে নাই! মাছও মানুষ চিনে!
রিজভী আবার বসে পড়লো মাছ ধরতে। বৃষ্টি আর বসে না থেকে তার প্যান্ট ফোল্ড করে পানির উপর থাকা পাথরের উপর দিয়ে হেটে হেটে আকাশের কাছে চলে এলো। আকাশ যেই পাথরে বসে আছে তার সাথে লাগানো পাথরেই বৃষ্টি বসলো আকাশের কাছাকাছি। আকাশ তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনযোগ দিলো। বৃষ্টি বললো,
– গরম লাগে না, রোদে বসে আছেন!
– বাতাস তোমার গায়ে লাগছে না!
– হ্যাঁ লাগছে, তবে রোদের তাপও আছে মোটামুটি। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি অনেক মাছ ধরতে পারেন, কিন্তু রিজভী ভাইয়াই তো সবার চেয়ে এগিয়ে!
আকাশ কিছু না বলে তার মাছ রাখার পাত্রটা এপাশ থেকে বৃষ্টির কাছে দিলো। বৃষ্টি পাত্রে তাকিয়ে হা করে আছে! একবার পাত্রের মধ্যে তাকাচ্ছে আর একবার আকাশের দিকে! এতো মাছ ধরে ফেলেছে, অথচ একবার টুশব্দও করেনি! আর ওদিকে রিজভী একটা ধরেই লাফাচ্ছে! বৃষ্টি চিৎকার করে কিছু বলতে যাবে, তখনই আকাশ তাকে থামিয়ে দিলো।
– হুশশশ! একদম চুপ!
বৃষ্টি ফিসফিস করে বললো,
– আপনি কি ভুত! এইটুকু সময়ে এতো মাছ ধরে ফেলেছেন আর ওরা কেউ ধরতে পারেনি!
আকাশ তাকে ভয় দেখানোর জন্য চোখ বড় করে “ভাও!” শব্দ করলো। বৃষ্টি একটু হলেও ভয় পেয়ে পেছনে হেলে পাথর থেকে পড়ে যাচ্ছিল। আকাশ হাসতে হাসতে তার হাত ধরে আবার সোজা করে বসালো। বৃষ্টিও আকাশের হাসি দেখে হাসছে আর মুগ্ধ হয়ে তার হাসি দেখছে। আকাশ বললো,
– এটা টেকনিক!
– আপনার হাসি অনেক সুন্দর!
– বকবক করলে মাছ আসবে না। ওরা এতোক্ষণ বকবক করায়ই মাছ পায়নি। এখন আমিও পাচ্ছি না।
– ওহ! সরি, আমি চুপ!
বৃষ্টি পাত্রে রাখা মাছ নিয়ে খেলা করে উঠে গেলো। পাথরের উপর দিয়ে হেটে হেটে অভ্রের কাছে গেলো। তার পাত্র খালি! বৃষ্টি কতগুলো নুড়ি তুলে দিলো পাত্রে। অভ্র তাকাতেই বৃষ্টি খিলখিল করে হেসে বললো,
– ভাইয়া কবিতা না শুনালে মাছ আসবে না!
– ঠিক বলছো, দাড়াও কবিতা বানাই!
– আপনি বানাতে থাকুন, আমি যাই।
বৃষ্টি হাসতে হাসতে রওনক এর দিকে এলো। মাছ না দেখতে পেয়ে তার পাত্রেও নুড়ি তুলে দিয়ে হাসতে লাগলো। রওনক মেজাজ খারাপ করে পাত্র উল্টে নুড়ি ফেলে দিলো। বৃষ্টি বললো,
– মাছ না ধরতে পারলে পাথর দিয়েই পাত্র ভরে নিন!
– মজা নেও মাছ পাইনা বলে!
– এক কাজ করুন, সিমি আপুকে ডেকে নিন সাথে। মাছ হুরহুর করে চলে আসবে!
– আইডিয়াটা মন্দ না, মাছ না পেলেও বকা খাওয়া থেকে বেচে যাবো।
রওনক সিমিকে ডাকতে লাগলো আর বৃষ্টি হাসতে হাসতে রিজভীর কাছে গেলো। রিজভী খুব মনযোগ দিয়ে মাছ ধরছে আর তার পাত্রে একটা মাছ লাফাচ্ছে। বৃষ্টিকে দেখে ফিসফিস করে বললো,
– কথা বলো না, মাছ চলে যাবে!
– ওকে।
– দেখেছো, আমি চ্যাম্পিয়ন মাছ ধরায়!
– হুম, আপনাকে সেকেন্ড পুরষ্কার দেওয়া উচিত।
– সেকেন্ড কেন! চ্যাম্পিয়নকে ফার্স্ট দিতে হয় বোকা মেয়ে!
– আকাশের পাত্রটা একবার দেখে আসুন।
– কেন?
– নিজে গিয়েই দেখুন।
– বসিটা ধরো একটু।
বৃষ্টির হাতে বসি ধরিয়ে দিয়ে রিজভী আকাশের কাছে চলে গেলো। পাত্রে মাছ দেখে জোর গলায় বলতে লাগলো আকাশের মাছের কথা, আর আকাশকে ভন্ড বলে বকতে লাগলো। সবাই অবাক হয়ে আকাশের মাছ দেখতে চলে এলো। হাটে হাড়ি ভেঙে দেওয়া আকাশকে তার দিকে রেগে তাকাতে দেখে বৃষ্টি হঠাৎ চিৎকার করে বললো,
– রিজভী ভাইয়া, বড় মাছ! বড় মাছ! আপনার বসি নিয়ে পালাচ্ছে!
রিজভী পানি দিয়েই দৌড়ে চলে গেলো। বৃষ্টি তাকে বোকা বানাতে পেরে হাসতে হাসতে আবার আকাশের কাছে চলে এলো। সবাই আবার মাছ ধরতে নিজের জায়গায় ফিরে গেলো। বৃষ্টি আকাশের পাশে বসে বললো,
– সরি!
– মাছ ধরবে?
বৃষ্টি উৎফুল্ল হয়ে মাথা নাড়ালো। আকাশ জায়গা মতো বসি পেতে বৃষ্টির হাতে ধরালো। দুতিনটা মাছ ধরেছে বৃষ্টি। এতেই অনেক খুশি হয়েছে সে। আকাশ তার আনন্দ দেখে মৃদু হেসেছে ! বৃষ্টি আকাশের হাতে বসি ধরিয়ে আকাশের কাধে মাথা রেখে বললো,
– থ্যাংক ইউ সো মাচ, আকাশ! লাইফে ডিফারেন্ট কিছু অনুভব করলাম তোমার জন্য! পাহাড়ের গোড়ায় মাছ! ওফ্ফ! ভাবতেই অবাক লাগছে!
– বৃষ্টি সোজা হও।
– প্লিজ একটু থাকি। কথা বলবো না কোনো।
আকাশ আর কিছু বললো না। কমবেশি মাছ ধরে সবাই তাবুতে ফিরে এলো। অভ্রের পাত্র খালিই আছে। হয়তো তার কবিতা মাছ পছন্দ করেনি!
লাঞ্চ সেড়ে আবার তাদের শুটিং চললো। বিকেলে মাছ রান্নার আয়োজন করলো তারা। সবাই ই গল্পগুজব করছে, আবার গান গাইছে কেউ। আকাশও বৃষ্টির সাথে হাসিখুশি ব্যবহার করছে! আনন্দের মাঝে রান্নাটা শেষ করলো তারা। খাওয়াদাওয়ার পর আড্ডা দেয়ার সময় আকাশ তাদের মাঝ থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে তার কাজ সারতে তাবু থেকে অনেকটা দূরে চলে গেলো। একটু পর বৃষ্টিও বেরিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে শুনতে পেল আকাশ ফোনে কথা বলছে,
– সুইটহার্ট, আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। আমি অতি শীঘ্রই ঢাকা ফিরবো। এতো টেনশন করো কেন! আমি ঠিক আছি। কাজটা শেষ হলেই তোমার কাছে ফিরবো জান। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করো। চেহারার যদি বাজে হাল দেখি, আমি কিন্তু তোমার খবর নিয়ে ছাড়বো। ওকে গুড নাইট, লাভ ইউ।
আকাশ পেছনে ফিরতেই বৃষ্টিকে দেখতে পেল। চাদের আলোয় বৃষ্টির চোখের পানি চিকচিক করছে।
– তুমি এখানে এসেছো কেন?
– কার সাথে কথা বলছিলে, আকাশ?
– তুমি জেনে কি করবে! যাও তাদের কাছে আড্ডা দাও।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি, বুঝতে পারছো না! তুমি তো বলেছিলে কাউকে ভালোবাসবে না কখনো! তাহলে এভাবে কার সাথে কথা বলছিলে? কেউ কি আছে তোমার জীবনে?
– হ্যাঁ আছে। আমার বউ আছে। আর এজন্যই বলেছি কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। এবার দয়া করে বুঝতে চেষ্টা করো আর আমার পিছু ছাড়ো।
বৃষ্টির ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। সে কি শুনলো এসব! আকাশের জীবনেও কেউ অাছে! আকাশ তাবুতে চলে গেলো আর বৃষ্টি এখানেই গাছের শিকরে বসে পড়লো। কান্না করছে খুব! প্রথমবার এভাবে কাউকে চেয়ে এখন নিজের দোষে ধোকা খেয়েছে সে! সবসময় ভিন্ন কিছুতে সে আকর্ষিত হয়! আকাশ ভিন্ন মন মানসিকতার ছেলে বিধায় তার প্রতি বৃষ্টি আকর্ষিত হয়ে গেছে! যদিও প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলো তাকে পটানো যায় কিনা সেটা পরীক্ষা করতে। কিন্তু এখন সে পটাতে নয়, মন থেকেই চাইছে আকাশকে। আকাশের ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছে! কিন্তু হঠাৎ করে এটা কি শুনলো সে!
একটু পর সিমি এলো তার কাছে। তাকে কান্না করতে দেখে বললো,
– কি হয়েছে তোমার! কান্না করছো কেন? আকাশ কিছু বলেছে?
– হ্যাঁ বলেছে আপু! অনেক কিছু বলেছে! তোমরা আগে বলনি কেন ওর বউ আছে! আমাকে এভাবে বোকা বানালে কেন!
– বউ! কি বলছো তুমি! আকাশের বউ নেই।
– আছে আপু। সে নিজে বলেছে। আর আমি তাকে ফোনে কথা বলতেও শুনেছি। সুইটহার্ট, জান বলে নিশ্চয়ই অন্যকারো সাথে কথা বলবে না!
সিমি মুচকি হেসে বললো,
– বোকা মেয়ে, ওটা ওর দাদুর সাথে কথা বলেছে।
– দাদু!
– হ্যাঁ, দাদুকে বউ বলেই ডাকে। দাদু অসুস্থ। আকাশ খুব যত্ন নেয় দাদুর। এখন কাজের লোকের কাছে দায়িত্ব দিয়ে এখানে এসেছে। আর এজন্যই শুটিং তারাতাড়ি শেষ করে ঢাকা ফিরতে চাইছে।
– আকাশের বাবা-মা নেই?
– আছে। দু’জনেই বিজনেস ম্যান। তাদের নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। ছোট থেকে আকাশ তার দাদুর কাছেই মা-বাবার যত্ন পেয়েছে। এমনিতে কোনোকিছুরই অভাব রাখে না তারা, কিন্তু পরিবারকে সময় দিতে পারেনা। এজন্যই আকাশ এমন হয়ে গেছে। বাবা-মা কে দেখে এখন তার সংসার জীবন ভালো লাগে না। যদি সংসারে সময় দিতে না ই পারে তাহলে সংসার গড়ার কি প্রয়োজন!
বৃষ্টি চোখের পানি মুছে বললো,
– আপু তুমি সব জেনে সত্যি বলছো তো?
সিমি মুচকি হেসে বললো,
– খুব ভালোবাসো না আকাশকে! খুব কষ্ট হয় তোমার জন্য। এতো চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হয়ে যাও! এই পাষানের জন্য শুধু শুধু নিজে কষ্ট পেয়ো না। আকাশ বুঝতে পারছে না কত লক্ষি একটা মেয়েকে অবহেলা করছে!
– আমি আরো চেষ্টা করবো আপু।
– আল্লাহর রহমতে সফল হও এই দোয়াই করি। কিন্তু ব্যর্থ হলে উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করো না। তাহলে সেটা বোকামি হবে।
বৃষ্টি মৃদু হেসে সিমির সাথে তাবুর দিকে ফিরে এলো। সিমির সাথে যেতে যেতে বৃষ্টি মনে মনে বললো,
– আমার সাথে মস্করা! দাড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে। খুব মজা পাও না আমাকে কাদিয়ে! আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না বাপু!
আকাশকে অভ্রের পাশে বসে থাকতে দেখলো বৃষ্টি। চোখের পানি ভালোভাবে মুছে আকাশের কাছে এলো।
– আপনার ফোনে ব্যালেন্স আছে? কল করবো আমি।
আকাশ বৃষ্টির চোখেমুখে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দিলো। বৃষ্টি তাবুর পেছনে চলে এলো কিন্তু তাদের দৃষ্টির বাইরে না। বৃষ্টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ আগে কল করা নম্বরে ডায়াল করলো। রিসিভ হতেই বৃদ্ধা কন্ঠ শুনতে পেল বৃষ্টি। তাহলে সিমির কথাই ঠিক! সালাম দিয়ে বৃষ্টি তার পরিচয় দিয়ে কথা বলতে লাগলো। কথায় ভাব জমাতে বৃষ্টি ওস্তাদ! এক প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য প্রসঙ্গে যেতে যেতে সহজেই আকাশের দাদুর সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে। আকাশকে সে কতটা পছন্দ করে তা আর বলা বাকি রাখেনি। দাদুর সাথে কথা বলে বৃষ্টিও আনন্দ পেয়েছে। খুব মজার মানুষ বুঝাই যাচ্ছে। আকাশ বৃষ্টির সাথে কেমন আচরণ করে সেটাও জানিয়েছে দাদুকে, আর দাদুর সাপোর্ট চেয়েছে। বৃষ্টি তাবুর পাশে বসে থাকা লোকদের কন্ঠ শুনতে পেলেও তারা বৃষ্টির কথা শুনতে পায়নি। কারণ বৃষ্টি স্বভাবতই ধীর গলায় কথা বলে। কথা বলা শেষে আকাশের কাছে ফোন দিয়ে এলো। তারপর আবার তাদের সাথে আড্ডা দিতে বসলো। আকাশ কললিস্টে চেক করে কোন নম্বর পেল না। কথা বলে কেটে দিয়েছে ভেবে ফোন রেখে দিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here