পূর্ণিমা🍂 #পর্ব_৩

#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৩
#Sanchita(Writer)

“পূর্ণিমার রাত! চলো তুমি আর আমি এই হালকা আলোময় পথে একটু হাটি তোমার হাতটা ধরে!কতদিন তো তোমাকে ছুঁই না আচ্ছা তুমি কেনো রাগ করে চলে গেলে বলোতো অন্তিক!(ভাংগা স্বুরে)

বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে তিথি। তার থেকে দুহাত দূরেই বেলকনির রেলিং ঘেষেঁ দারিয়ে আছে অন্তিক। তিথির চোখে স্পস্ট জল গুলো পূর্ণিমার উজ্জল আলোতে চিকচিক করছে । অন্তিক বাকহীন হয়ে ঠোঁটে একরেখা হাসি ফুটিয়ে উঠলো।ধিমি কন্ঠে বলে উঠলো।

” ভাগ্যতে যা পাওয়ার নেই তার দিকে ফিরে তাকাতেই নেই তিথি!তেমনই আমি তোমার ভাগ্যতে ছিলাম না তাই আমাদের দুজনের মিল হয়নি! বলো পৃথিবীতে তো আর সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না কিছু কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও অপূর্ণ থেকে যায় তেমনি আমাদের প্রেমকাহিনীও পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ! থাক না আমি নাহয় ভ্রম হয়ে তোমার সপ্নতে আসবো প্রতিদিন এই ভাবে।আজ তাহলে আসি আমাকে যেতে হবে ভালো থেকো কাল পর্যন্ত!(ধিমি স্বরে)

বলতে বলতে অন্তিক হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।এদিকে তিথির চোখ বেয়ে আপন-গতিতে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আচ্ছা নিয়তিকে শুধু তার সাথেই এমন করছে নাকি আরও অনেকের সাথেই এমনটা করছে। অন্তিক কে প্রকৃত ভালোবেসেও কখনো তাকে নিজের করতে রাখতে পারেনি একটা ঝড়ের মতো কিছু সময়ের জন্য তার জীবনের মরে যাওয়া বাগানটাতে ভালোবাসার এক আলাদা রঙিন ফুল ফুটিয়েছিলো। বাচাঁর নতুন করে সপ্ন দেখিয়েছিলো তবে সপ্নটা কিয়ৎক্ষণের জন্যই স্থায়ী ছিলো! ঝড় যেমন কয়েক ঘন্টা বা ক্ষণের মতো থাকে তেমনি অন্তিকও ছিলো কয়েকদিনের সপ্ন দেখানোর, নিজেকে নিজের মতো বাচঁতে দেওয়ার সঙ্গী ছিলো। যখন তিথির জীবনে আবারো ভালোবাসার ফুল ফুটলো ঠিক তখনই এক দমকা হাওয়ায় আবারো সেই ফুলটা নুইয়ে ভেংগে গেলো। অর্ধ পথেই অন্তিক তার হাত ছেড়ে দিলো।
তবে হাত ছেড়ে দিয়েও সম্পর্কের বাধঁনটা প্রকৃত ছিলো বলেই অন্তিক ভ্রম হয়ে তার কল্পনা-জল্পনাতে আসে শুধু কিয়ৎক্ষণের শান্তি মেলানোর জন্য।

তিথি চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে রুমে আসলো। তিথির নজর গেলো বেডে শুয়ে থাকা পূর্ণির দিকে। জানালা খোলা দেখে পূর্ণিমার এক টুকরো উজ্জল আলো এসে পূর্ণির মুখশ্রীতে বিচরণ করছে।
চোখ-মুখ উজ্জল হয়ে উঠেছে।

তিথি শত দুঃখের মাঝেও বিরবিরিয়ে বলে উঠলো

“পূর্ণিমা! তাইতো পূর্ণিমার আলো চোখে-মুখে পড়াতে এমন উজ্জল,স্নিগ্ধ লাগছে!ভাগ্য হয়তো পূর্ণিমাতিথির কপালে অশিষ যন্ত্রণা লিখে রেখেছে তাইতো পূর্ণিমা তার সংসার,ভালোবাসা ঠিকমতো পায়নি আর তিথি সেও তার প্রকৃত ভালোবাসা সেও পায়নি!দমকা হাওয়ায় দুজনের একই কস্ট মিলিত হয়েছে একই ধারাতে;(বিরবিরিয়ে)

তিথি জানালাতে পর্দা টেনে নিজেও পূর্ণির পাশে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।
এদিকে তিথি শুতেই কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকালো পূর্ণি। পূর্ণির একটা বিশেষ গুণ আছে আর সেটা হলো হাজারো কস্টকে লুকিয়ে ঘুমানোর নাটক করা।
এরপর যখন রাত্রি গভীর হবে আর একটা কাক-পক্ষিও জেগে থাকবেনা তখনি নিজের কস্টগুলোতে নিশ্চুপ অশ্রু ধারায় প্রকাশ করবে।

পূর্ণি চুপচাপ নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন করছে। রাত প্রায় গভীর এখন। চোখের অশ্রুকণায় বালিশ ভিজে যেতে লাগলো তরিৎ গতিতে।

” নিশ্চুপে অশ্রু বিসর্জন দিলে যে কস্ট কমে যাবে তা কিন্তু না পূর্ণি আপু। কস্টকে কখনো চাপা দিয়ে রাখতে নেই সবার মাঝে বিলীন করে খুশি থাকতে চেস্টা করতে হয় তাহলেই সুখেরা একে একে ধরা দিবে।(ভাংগা স্বরে)

পূর্ণি চমকে উঠলো তিথির গলার ভাংগা স্বরে কথাটা শুনে। তিথি কিভাবে বুঝলো যে সে কান্না করছে, পূর্ণি তো একদম নিশ্চুপে কান্না করছিলো তাহলে কিভাবে বুঝলো।

“ভাবছো কিভাবে বুঝলাম! এত বড় আঘাত পেয়েছো, রাত্রে ঘুমানোর বদলে যে অশ্রু বিসর্জন দিবে তা কিন্তু আমার বেশ জানা আছে? একটুর জন্য তোমার আর তোমার বেবির ক্ষতি হয়ে যেতো যদি সঠিক সময়ে ডক্টরের কাছে নিয়ে না যেতাম! আমি তো ভেবেই বসেছিলাম আমার বেখেয়ালির কারণে একটা নিস্পাপ শিশু মায়ের পেটেই মারা যাবে তবে ডক্টর আশা দিয়েছিলো।(হালকা গলায়)

পূর্ণি কান্নারত স্বরে তিথিকে বলে উঠলো

” তুমিও তো আমার মতোই রাতে কান্না করো!তাহলে আমার কান্নাকে কেনো আটকাতে চাইছো!আমার ভাষ্যমতে কান্না করলেই দুঃখ গুলো একটা সময় বিরক্ত হয়ে কমে আসে! ভালোবাসা না পাওয়াটা যে কতটা কস্টের তা আমার ভেতরটা দেখলে বুঝতে পারতে! আমার জীবনের দু বছর আমি নির্ঝরকে দিয়েছি তার সকল চাহিদা পূরণ করেছি, এই দু বছরে যে তার হাতের কত মার খেয়েছি হিসাব নেই‌ প্রথমত সে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও বিয়ের এক মাস পর থেকেই সে পাল্টে যায় টর্চার করা শুরু করে আমাকে!তবুও কেনো তার কাছে পরে ছিলাম জানো? কারন ভালোবাসিতো তাকে!জানো আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি সামান্য তাদের বাড়ির আশ্রিতা,মালির মেয়ে ছিলাম।বামুন হয়ে যে চাঁদের দিকে আঙ্গুল বারিয়ে ভুল করেছিলাম তাই মিসেস কণা রায় চৌধুরি ভালো মতো বুঝিয়ে দিলো‌ আমার মাতৃত্বে আঘাত করে?( কান্নারত স্বরে)

তিথি আর কিছু বলল না অন্ধকারে চুপ করেই‌ রইলো। থাক না পূর্ণি পূর্ণির মতো অশ্রু বিসর্জন দিয়ে একটু হালকা হোক। হাজারো কস্টের মাঝে,কিছু কিছু সময় কাদাঁ ভালো। তিথি কাদেঁ তখন যখন অতীতের স্মৃতিটা মনে ভাসেঁ। আজ পূর্ণির কস্ট গুলোকে দেখে সেও কাদঁলো তবে একান্তে না অন্তিকের সামনে।
তিথি মাঝে মাঝে ভাবে অন্তিক কি‌ আসলেই তার ভ্রম হয়ে আসে নাকি সত্যি হয়ে। না না মৃত মানুষ কিভাবে সত্যি হয়ে আসতে পারবে? হয়তো গভীর কস্টের মাঝে অন্তিকের ভ্রম তার কাছে আসে একটু কস্ট কমানোর জন্য।
.
🌼
.
নতুন ভোরের আগমন! নতুন এক রুপে।
যে মানুষ গুলো সারাটা রাত কান্না,ডিপ্রেশন,ভাংগা অনুভূতির সাথে জড়িত থাকে গভীর রাতের প্রতিটা ঘন্টা,প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা সেকেন্ড তারাই নতুন ভোরের‌ আলোতে লোকজনের সামনে ডিপ্রেশন জনিত মুখ ‌আড়ালে রেখে।নতুন এক হাসি,খুশি-প্রাণচ্ছ্বল মুখে ঘুড়ে-ফেরে।
সবাইকে দেখায় আমি হেরে গিয়েও খুশিতে আছি বেশ ভালো আছি।

তিথি ঘুম থেকে উঠে গেলো‌। পূর্ণি এখনো গভীে ঘুমে ‌আকৃষ্ট হয়ে আছে। হয়তো কাল সারাটা রাত নির্ঘুমে ছিলো তাই..
তিথির আজকে অফিস থেকে এক জায়গায় প্রেজেন্টেশনের জন্য যেতে হবে। তাই সে তারাতারি রেডি হয়ে নেয়। আর কিছু না খেয়েই পূর্ণির জন্য একটা চিঠি লিখে তার বেডের উপর রেখে চলে আসে।

তিথি‌ ইদানিং হাপিয়ে উঠেছে একবার কলেজ তো একবার অফিস। দুদিক সামলাতে সামলাতে তার সারাটা দিন ব্যায়বহুল হয় এতে দুবেলা খেতেও পারেনা সে।
অথৃ তার বাবার এত টাকা পয়সা থাকতেও সে নিজের চেস্টায় প্রতিনিয়ত বেচেঁ চলেছে।
.
.
ভেজা চুলে সিড়িঁ দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিচে নামছে নিদিয়া।
নিচেই ডাইনীং টেবিলে বসে‌ আছে নিরব,নির্ঝর,নির্ঝরের বড় ভাই অর্নব,মিশু, মিসেস কণা,মি.অভিনব বসে আছে।
সাথে বাড়ির বড় কত্রী মিসেস মৌমি রায় চৌধুরি।মূলত ওনার কথাতেই পুরো সংসার চলে। মিসেস কণা তো নামে মাত্র বাড়ির বড় বউ।

“ছিঃহ্হ ছিঃহ্হ ছিঃহ্হ বড় -ভাসুর,দেবর,শ্বশুড় বসে আছে আর তার সামনেই ঢেং ঢেং করতে কেতে ঘোমটা বিহীন নিচে নাচঁতে নাচঁতে আসছে!নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার!এই মেয়ের মোহে পড়েই আমার বাড়ির লক্ষী আজ বাড়িছাড়া হয়েছে!বলি সংসারে আগুন লাগলো বলে!(নাক-মুখ ছিটকে)

মিসেস মৌমির কথা শুনে ভ্রু কুচঁকে সিড়িঁর দিকে তাকালো মিসেস কণা।আর বিরক্তিতে কপালে হাত দিয়ে বিরবিরিয়ে বলে‌ উঠলো।

” এই বুড়িটাও না এই যুগে কি‌ কেউ বড়-ভাসুর,শ্বশুড়ের সামনে ঘোমটা দেয়!অবশ্য এই বুড়ি কি বুঝবে আদিযুগের মানুষ তাই তো আধুনিক যুগ বুঝেনা।(বিরক্তি নিয়ে)

নিদিয়া নিচে নামতেই সবার আগে তার নজর গেলো ডাইনীং টেবিলের নিচে। নিরব মিশুর পায়ে পা সিয়ে স্লাইড করছে।নিদিয়া ভ্রু কুচঁকে মনে মনে বলে উঠলো।

“এবাড়ির ছেলেরা খারাপ জানা আছে তবে যে বাড়ির ছেলে বড় বৌদির সাথে পরকীয়া করে তা জানা ছিলোনা!অবশ্য তা দেখে আমার কি আমি তো এসেছি প্র..(মনে মনে)

#চলবে,,

[গল্প নিয়ে কিছু কথা,গল্পটা কেমন হচ্ছে আমি জানিনা আমি আদেও কি আপনাদের মন মতো ‌লিখছি কিনা তাও জানিনা।তবে গল্পের কিছু অংশ বাস্তব ও কিছু অংশ কাল্পনিকতার সাথে লিখছি।আশা করি বিষয়টা বুঝতে পারবেন।দেরি করে দেওয়ার জন্য সরি কারেন্ট ছিলোনা + ফোনও বন্ধ ছিলো।ভুল-ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here