প্রণয়ের_দহন পর্ব_১৬

প্রণয়ের_দহন
পর্ব_১৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

এসব মিথ্যে। বিশ্বাস করো আরু তোমার বলা একটা কথাও সত্যি না। তোমার আর আমার বিরুদ্ধে আবার কেউ ষড়যন্ত্র করছে। আর এই ষড়যন্ত্রকারী আর কেউ না এই আরিয়ান। এই পৃথিবীতে দুজন ব্যক্তিই আছে যারা চায় না আমরা দুজন এক হই। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আরিয়ান আরেকজন হচ্ছে আনিশা।

চুপপ। আর একটাও বাঁজে কথা বলবেন না আমার আরিয়ানের বিরুদ্ধে। যদি বলেন তাহলে আমি কী করবো? আপনি কল্পনাও করতে পারছেন না। আরিয়ান কোনো ষড়যন্ত্র করেনি ষড়যন্ত্র তো করেছন আপনি আর আনিশা মিলে। আমাকে এসব বলেছে আপনার ফ্রেন্ড ইহান। যে আপনাদের প্লেন থেকে বিয়ে সবকিছুতে সাক্ষি ছিলেন। ইহান সত্যিটা বলতেন না। যদি না উনার বোনেরও বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙ্গে না যেতো। উনার বোনের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে উনিও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ঐদিন আমার আর আমার ফেমিলির কী অবস্থা হয়েছিল। তাই উনি অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলেন আর সত্যিটা স্বীকার করে গেছেন।

আমি কথাগুলো বলে একটা লম্বা শ্বাস নিলাম। আরিয়ান দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আরিয়ানের এক হাত জড়িয়ে ধরে নিহানের সামনে এসে দাঁড়াই।

ঐদিন বিয়েটা ভেঙে অনেক ভালো হয়েছে। আপনার সাথে বিয়ে হলে আমি আরিয়ানের মতো একটা মানুষ পেতাম না। যে আমাকে নিজেক সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসে। যে আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে না আমার মনকে ভালোবাসে। আমিও আরিয়ানকে খুব ভালোবাসি। বেরিয়ে যান এখান থেকে নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বাধ্য হবো।

নিহান এসে আমার হাত ধরে বলে, আমি যাব না। আমি যদি যাই তাহলে তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।

আরিয়ান এক ঝটকায় নিহানের থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নেয়।

আনহা তুই সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দে। আমি এতক্ষণ চুপ ছিলাম। কারণ আমি চাইছিলাম না কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে। কিন্তু তুই তো ভালো কথার মানুষ। তোদেরকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে কাজ হয় না। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে হয়। আজকের মতো তোকে আমি ছেঁড়ে দিলাম। নেক্সট টাইম আরশির আশেপাশে তো দুরে থাক তোকে আমাদের বাসার আশেপাশেও দেখলে কেটে কুচি কুচি করে ফেলবো।

নিহান আরিয়ানের কলার ধরতে গেলে আরিয়ান নিহানের হাত ধরে ফেলে। নিহান চিৎকার দিয়ে বলে,

তোকে তো আমি…..

গলার স্বর নামিয়ে কথা বল। এটা তোর বাসা না আমার বাসা। আজকে যে ভুলটা করতে চেয়েছিল। নেক্সট টাইম সেটা করার চেষ্টাও করবি না। আমার জিনিসে দিকে হাত বাড়ালে আমি সেই হাত ভেঙে গুড়িয়ে দিতেও দুই বার ভাববো না।

আরিয়ান এক ধাক্কা দিয়ে নিহানকে রুম থেকে বের করে দেয়। ততক্ষণে দুজন সিকিউরিটি গার্ড চলে আসছে। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা থাকাই উনাদের ভিতরে আসতে অসুবিধা হয়নি। সিকিউরিটি গার্ডদের দেখেই আরিয়ান রেগে বলে,

আপনারা থাকেন কই? আপনাদের রাখা হয়েছে এখানে বসবাস করা প্রত্যেকটা পরিবারের সুরক্ষার জন্য। তাহলে আপনারা থাকতে বাইরের লোক বাসার ভিতরে প্রবেশ কী করে? আন্সার মি?

স্যার উনি বলেছিলেন উনি আরশি মেডামের আত্নীয় তাই আমরা উনাকে ভিতরে আসতে বাধা দেইনি।

আপনারা আমাদের ইনফর্ম করবেন না? বা জিঙ্গেস করবেন নাহ এই নামের কোনো আত্নীয় আমাদের আছে কী না?

সরি স্যার। এমন ভুল আর হবে না।

মনে থাকলেই ভালো। এই লোকটা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসার বাইরে ফেলে দিয়ে আসেন। যান।

জ্বী স্যার।

উনারা দুই জন গিয়ে নিহানের দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। নিহান যেতে চাইছে না।

আরু বলো ওদের আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাব না। এই তোমরা আমাকে ছাড়।

দাঁড়ান আপনারা।

আমার কথা শুনে গার্ডরা দাঁড়িয়ে যায়। নিহানের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে হাসি। বাকি সবাই কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

জানিস তোকে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মারতে পারলে শান্তি লাগতো। তুই দুই দুইটা মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিস। কিন্তু আফসোস তোকে আমি থাপ্পড়টা মারতে পারছি না। কারণ আমি আমার হাজবেন্ড ছাড়া অন্য কাউকে স্পর্শ করতে চাই না। কিন্তু আমি তো আমার ইচ্ছাটা অপূর্ণ রাখতে পারি না। আরিয়ান একটু এদিকে এসো।

আমার কথা মতো আরিয়ান আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।

আরিয়ান এবার তুমি নিহানকে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মার। তুমি নিহানকে থাপ্পড় মারলেই মনে হবে আমি মেরেছি। তুমি আমি এক। তাই তুমি মারলেই আমার মারা হয়ে যাবে।

আরিয়ান আমার কথা শুনে নিহানকে দুইটা থাপ্পড় মারে। কিন্তু থাপ্পড়গুলো আমার মন মতো হয়নি। মনে হচ্ছে আরিয়ান থাপ্পড়গুলো আস্তে মেরেছে। ফিল্মে বা নাটকে থাপ্পড় মারলে কতো জুড়ে সাউন্ড হয়ে এখন তো তেমন কিছুই হলো না।

আরিয়ান তুমি এতো আস্তে থাপ্পড় মারলে কেনো? একটু জুড়ে মারতে পারলে না। যাতে ছিটকে গিয়ে ঐ টেবিলের সাথে বারি খায় আর কপাল কেটে যায়।

আমার কথা শুনে আরিয়ান অবাক। এবার আরিয়ান সত্যি সত্যি অনেক জুড়ে থাপ্পড় মারেন যার ফলে নিহান ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পড়ে। আফসোস নিহানের মাথাটা টেবিলে লাগেনি। কিন্তু আরিয়ানের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ নিহানের ফর্সা গালে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।

এবার আপনারা উনাকে নিয়ে যেতে পারেন।

আমার কথা শুনে গার্ডরা নিয়ে যেতে লাগলো। নিহান এবার আর ছুটাছুটি করলো না। কিন্তু যাওয়ার আগে বলে গেছে,

আমি তোমাদের দেখে নিব। এই অপমানের প্রতিশোধ আমি ঠিকই নিব।

নিহানের কথাটা আমি যাস্ট পাত্তা দিলাম না। আব্বু রাগে গজ গজ করতে করতে বলেন,

আমি আগে থেকেই জানতাম এই ছেলেটা অসভ্য। এখন তো অসভ্যের সব সীমা পার করে গেছে। এই অসভ্য ছেলেটার জন্য একটা মিটিং এটেন্ড করতে লেইট হয়ে গেলো। আরিয়ানের মা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট দাও। আজকে অনেক লেইট হয়ে গেছে।

তুমি বসো ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছি। আরিয়ান তুইও তো হসপিটালে যাবি। আর আরশি তো ভার্সিটি যাবি। আয় তোরা দুজনও ব্রেকফাস্ট করে নিবি।

আম্মু আমি আজকে হসপিটালে যাচ্ছি না। তাই এখন আর খাব না। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমুতে গেলাম।

আম্মু আমিও ভার্সিটি যাব না। আর আমার এখনো ক্ষুধা লাগেনি। গতকাল ডিনার করছি মাঝ রাতে। বিকেলবেলা ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। তোমার ছেলে রুমে খাবার নিয়ে গিয়েছিল ঠিকই আমাকে ডাক দেয় নাই।

আরিয়ান আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুমে চলে গেলেন। আমি আম্মুর সাথে কিচেনে চলে গেলাম। কিচেন থেকে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। সবার খাওয়া শেষ হতেই আম্মুর সাথে সবকিছু গুছিয়ে রাখলাম।

তারপর রুমে চলে গেলাম। আরিয়ান রুমে নেই তাই বেলরনিতে চলে গেলাম। আরিয়ান বেলকনিতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আরিয়ানের চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হয়তো সদ্য শাওয়ার নিয়েছে আর চুলগুলোও ঠিক করে মুছেনি।

আমি আরিয়ানের কোলের ওপর থেকে ল্যাপটপটা সরিয়ে ঠাস করে উনার কোলে বসে পড়লাম। উনি কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন নাহ। উনার আঁখি জোড়া আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। যেনো এমনটা হওয়ারই ছিল।

নিহান আমাদের বেডরুমে ঢুকে পড়লো। ইনফ্যাক্ট ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা ধাক্কি করলো। কিন্তু আমি কিছু বললাম না তোমার রাগ হয়নি?

একদমই না। আমি জানি তুমি কারণ ছাড়া
কোনো কাজ করো না। আর তুমি শান্ত বিহেবের পিছনে একটা বড় কারণ ছিল আমি সেটা জানি। তুমি চাইছিলে না। কোনো রূপ সিনক্রিয়েট হোক আর আশেপাশের লোকজন জেনে যাক। তুমি চেয়েছিল নিহান ফিল করুক আমি নিহানকে দেখে যেমন রেগে যাচ্ছি তেমনি বিরক্ত হচ্ছি। আর আমি নিহানের সামনে স্বীকার করি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর নিহানকে জেনো আমি নিজে তাড়িয়ে দেই। ঠিক বলেছি না?

তুমি কী করে বুঝলে?

আমি তোমার মন পড়তে পাড়ি।

হা হা হা। আমার মন পড়ার সাধ্য এই পৃথিবীর কারো নেই। আমার মন কখন কী চাই সেটা আমি নিজেই জানি না। তুমি সেটা পড়তে পারবা অসম্ভব।

ইহ। একদম ভাব ধরবে না। আমি আরশি আমি সব পারি। হুহ।

আরিয়ান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি। সত্যি আরিয়ান সব দিক দিয়ে পারফেক্ট।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here