প্রণয়ের_দহন পর্ব_৬

প্রণয়ের_দহন
পর্ব_৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

তোর সাহস তো কম না। আমার স্ত্রী হয়ে অন্য ছেলের কথা চিন্তা করিস। আমার রুমে আমার বেলকনিতে বসে তুই অন্য ছেলের ভাবনায় মশগুল। তুই শুধু আমার কথাই ভাববি অন্য কারো কথা না। বুঝতে পেরেছিস?

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। এখন আমার একদমই ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। আর আরিয়ান ভাইয়া তো ঠিকই বলছে। অন্য ছেলের কথা ভাবা তো আমার জন্য এখন অন্যায়। কারণ আমি বিবাহিত। অন্য ছেলের কথা ভাবা আমার জন্য পাপ।

বুঝতে পারলেই ভালো। আমি এক জায়গায় যাচ্ছি। আসতে রাত হবে। আমি অন্যদের মতো বলব না যে, আমার জন্য জেগে না থেকে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়। আমি যতক্ষণ না আসব ততক্ষণ তুই সজাগ থাকবি। আমি আসলে দুজন একসাথে ডিনার করব।

কথাগুলো বলেই উনি চলে যান। আমি তাড়াতাড়ি বেলকনি থেকে রুমে চলে আসি। এটাই মোক্ষম সময় উনার ডায়েরী পড়া। উনি মনে হয় না ১০ টা ১১ টার আগে বাসায় আসবেন। আমি জানি উনার ডায়েরীটা কোথায়। উনি আমার চোখের আড়ালে ডায়েরীটা কাবার্ডের ওপর রেখে দিয়েছেন। উনি ভেবেছেন আমি দেখিনি সেটা। কিন্তু আমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি। উনি হয়তো ভেবেছেন কাবার্ডের ওপর ডায়েরীটা রাখলে আমি নাগাল পাব না। কিন্তু উনি তো জানে না আমি সুপার ট্যালেন্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি।

আমি একটা চেয়ার নিয়ে এসে কাবার্ডের সামনে রাখি। তারপর চেয়ার ওপর ওঠে পড়ি। কিন্তু কিছুতেই ডায়েরীটা নাগাল পাচ্ছি না। আল্লাহ ক্যান যে ছেলেদের মেয়েদের থেকে বেশি লম্বা বানাতে গেলো? লম্বু লম্বু স্বামিগুলো খাটো স্ত্রীদের ওপর এভাবে অত্যাচার করছে। বাংলাদেশে আইন হওয়া উচিত ছেলেদের বেশি লম্বা হওয়া যাবে না। বেশি লম্বা হলে ১০ বছরের জেল।

পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ালাম তবু নাগাল পাচ্ছি না। আমি আরশি এতো সহজে হার মানবো না। আমি চেয়ার থেকে নেমে সোফা থেকে একটা কুশন নিয়ে এসে চেয়ারের ওপর রাখি। তারপর আবার চেয়ারের ওপর ওঠি। এবার পায়ের পাতায় ভর দিয়ে খুব সহজেই ডায়েরীটা হাতে পেয়ে যায়। ডায়েরীটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলি,

আরিয়ানের বাচ্চা আপনি যদি ডালে ডালে চলেন তাহলে আমি পাতায় পাতায় চলি।

চেয়ার থেকে নেমে সবকিছু আগের জায়গায় রেখে আসি। যখনি ডায়েরীটা পড়া শুরু করবো তখনি আমার ডাক পড়ে। মা আমাকে ডাকছে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ডায়েরীটা রেখে আম্মুর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। বড়দের মুখের ওপর তো আর না করে দেওয়া যায় না যে, আমি আসতে পারবো না। মা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,

কিছু বলবা আম্মু?

উনি আমার দিকে চমকে তাকালেন। যেনো আমি মঙ্গল গ্রহের এলিয়েন। হঠাৎ উনি ঠোঁট মেলে হেসে বলেন,

আরশি আমি আজকে ভীষণ খুশি।

আমি ভ্রু কুচকে তাকাই উনার দিকে। উনি আলতো হেসে আমার হাত ধরে টেনে উনার পাশে বসিয়ে দেন।

তুই আমাকে আম্মু ডাকলি? আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না? তোর মুখে আম্মু ডাক শুনে আমি কতটা খুশি হয়েছি তোকে বলে বোঝাতে পারব না। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল আমার পুতুলের মতো দুইটা মেয়ে হবে। টুইন হলে তো কথাই ছিল না। দুজনকে আমি একরকম জামা-কাপড় পরাব। সবকিছু একরকম কিনে দিব দুজনের। একটা বিষাক্ত দিন আমার সব খুশি, আনন্দ কেড়ে নিল। কেড়ে নিল আমার মা হওয়ার ক্ষমতা। কেড়ে নিল আমার সন্তান।

এমন করে কেনো বলছো? আমি কী তোমার মেয়ে না?

তুই তো আমার আরেক মেয়ে। যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই মনে মনে ঠিক করে নেই তোকেই আমার ছেলের বউ করে আনব। তুই আমাকে মা বলে ডাকবি। আমার ইচ্ছে পুরণ হবে। আমার দুইটা মেয়ে হবে। দুজনকে আমি নিজ হাত সাজিয়ে দিব। কিন্তু তুই নিহানকে বিয়ে করার জন্য জেদ ধরলি।

সত্যিই আমি হিরে রেখে কাঁচ বেঁচে নিয়ে ছিলাম।

আম্মু এসব কথা বাদ দাও। পুরোনো কথা টেনে তো আর লাভ। এখন তো আমি তোমার সাথেই আছি।

আম্মুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসলাম। দরজাটা লক করে বিছানার ওপর বসে ডায়েরীটা হাতে নিলাম। তৃতীয় পেইজে গেলাম।

খুব তুচ্ছ কারনে যে কারো প্রতি ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। কোন মেয়ের ভূবন ভুলানো হাসি দেখে এক মুহুর্তেই তাকে ভালো লেগে যেতে পারে। কিংবা রাস্তায় চলতে ফিরতে সুন্দরী কোন মেয়েকে এক পলক দেখেই যে কোন ছেলের হার্টবিট মিস হয়ে যেতে পারে।

এসব আমার বিশ্বাস হতো না। কিন্তু তোকে যেদিন প্রথম দেখি সত্যি সত্যি আমার হার্টবিট মিস হয়ে গিয়েছিল। তোর ভুবন ভুলানো হাসিতে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আরশি।

আরশি নামটা দেখে আমি থমকে যায়। আমার মনের মাঝে জেগে ওঠছে অসংখ্য প্রশ্ন। কৌতূহল ধমাতে না পেরে পরবর্তী পেইজ উল্টায়।

মাটির কোনায় কোনায় জলের বসবাস পাতার ফোকড়ে ফোকড়ে পাখির বসবাস নদীর কুলে কুলে নৌকার বসবাস পাহাড়ের মাঝে ঝরনার বসবাস অগনিত তারার মাঝে চাঁদের বসবাস মানুষের দেহের মাঝে আত্মার বসবাস আমার মনের মাঝে তোমার বসবাস।

ভালোবাসি আরশি।

আরিয়ান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে? এটা কী করে সম্ভব? আরিয়ান ভাইয়া না আয়না আপুকে ভালোবাসে তাহলে? ডায়েরীটা যত পড়ছি তত কৌতূহল বাড়ছে। পরবর্তী পেইজে যাই।

আমার আকাশটা তোমায় দিলাম সেখানে তুমি পাখির মতো উড়ে বেড়াবে ডানা মেলে,আর রাতে চাঁদ হয়ে উঠবে আলো জ্বেলে।আমার বাগানটাও তোমায় দিলাম সেখানে তুমি ফুল হয়ে ফুটবে সুবাস ছড়িয়ে,প্রজাপতি হয়ে রং ছড়াবে আমায় জড়িয়ে।

পরবর্তী পেইজে যায়।

কল্পনার রঙতুলিতে তোমায় রাঙাবো তুমি রাগ করোনা,স্বপ্নের সিংহাসনে আমি তোমায় বসাবো তুমি চলে যেও না।দখিনা বাতাস হয়ে এলোমেলো করে দেবো তোমার চুল,কখনো বা ভালোবেসে খোপায় গেথে দেবো ফুল।বুকের পাজর ভেঙে প্রাসাদ বানিয়ে তোমায় দিলাম তুমি থাকবে কি?প্রতিটি বসন্তে, প্রতিটি বর্ষায় আমি তোমাকে চাই পাশে রাখবে কি?

পরবর্তী পেইজে যায়।

জানিস আরশি তোকে ভালোবেসে আমি একটা নাম দিয়েছি। নামটা হলো আয়না। আরশির সমার্থক শব্দ আয়না। তুই গাধা এসব তুই জানবি না।

আরিয়ান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসতো? আর আমি কোনোদিন বোঝতেই পারিনি। সত্যিকারের ভালোবাসা পায়ে ঠেলে দিয়ে আমি এতোদিন ধরে মরীচিকার পিছনে ছুটে চলেছি। ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু এখন একটাই নাম থাকবে আর সেটা হলো আরিয়ান। নিহানকে আমি নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলব। আমার জীবনের সবটা জুড়ে এখন থেকে শুধু থাকবে আরিয়ান। আমার ভালোবাসা শুধু মাত্র আরিয়ানের জন্য। অন্য কারো জন্য নয়। পরবর্তী পেইজে যায়।

আরেকটু কাছে সরে এসো ভালো করে দেখে নেই তোমায়।বহু দিনের লুকানো ইচ্ছে আমার মনের সাধ মিটিয়ে আমি দেখতে চাই তোমায়।খুব কাছে থেকে একদিন তোমাকে দেখবো বলে আমি কতো পূর্ণিমা অমাবস্যা পার করে দিয়েছি নির্ঘুম,কাটিয়েছি কতো অস্থির দিন রাত।কতো দিন আমি মনে মনে ভেবেছি তোমায় কতো কথা বলেছি অবিরাম।কতো দিন আমার ভাবনায় আমার স্বপ্ন গুলি ছুঁয়ে দিয়েছে তোমায়।তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেছি আমি দেখেছি তোমার দুই চোখ জুড়ে কোনও এক স্বপ্নের গাঢ় ছায়া আমি সেই স্বপ্নময় চোখের দিকে বিভোর হয়ে তাকিয়ে থেকেছি কতো।এবার আমার স্বপ্নের তুমি সত্যি হয়ে সামনে এসে দাঁড়াও একটি বার আমি প্রান ভরে দেখে নেই তোমায়।

পরবর্তী পেইজে যায়।

আমারও তো ইচ্ছা করে, তোমার পাশে থাকি ছোট একটা বাড়ি হবে ,থাকবে ছোট উঠান থাকনা কিছু গাছগাছালী ,পাখির ডাকে বিভোর ইচ্ছা হলেই রাগ করবো যাবো অনেক দুরে না হয় তুমি মান ভাঙ্গালে একটু আদর করে !!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here