প্রণয়ের_দহন
পর্ব_৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আমারও তো ইচ্ছা করে, তোমার পাশে থাকি ছোট একটা বাড়ি হবে ,থাকবে ছোট উঠান থাকনা কিছু গাছগাছালী ,পাখির ডাকে বিভোর ইচ্ছা হলেই রাগ করবো যাবো অনেক দুরে না হয় তুমি মান ভাঙ্গালে একটু আদর করে !!
জানি আমার এই ইচ্ছেটা পুরণ হবার নয়। কারণ তুমি তো অন্যতে মেতে আছো। তোমার ভাবনায় অন্য কেউ। তোমার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই সে।
আজকে সম্পূর্ণ ডায়েরীটাই পড়ে শেষ করব। আমার প্রতি উনার প্রত্যেকটা অব্যক্ত অনুভূতি সম্পর্কে জানবো।
সই, কে বলে পিরীতি ভাল
হাসিতে হাসিতে পিরীতি করিয়া
কান্দিতে কান্দিতে জনম গেল।।
“তোমাকে মন থেকে আমি কতটা ভালোবাসি এটা প্রকাশ করার জন্য ভালোবাসি এই শব্দটা অনেক ছোট হয়ে যায়। তোমাকে আমি যে পাগলের মতো ভালোবাসি এটা বুঝানোর জন্য আমার এক জীবন খুব ছোট হয়ে যায়”।
এই নিঝুম রাতে একা আমি,
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে।
চিৎকার করে বলতে চাই তোমায় আমি,
ভালোবাসি শুধু তোমায় ভালোবাসি!
এখনও শুধু তোমায় ভালবাসি।
আর সব প্রেম সফলও হয় না। প্রেমে ব্যর্থ হলে নিজের জীবন নষ্ট করে দেয়ার মানে নেই। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখতে হবে।
আমি চাইলেই তোমাকে নিজের করে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ তুমি আমার কাছে ভালো থাকবে না। তুমি তো নিহানকে ভালোবাসো। ওর সাথেই সারাজীবন থাকবে বলে পণ করেছে। নিহানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্ন বুনেছ। কল্পনায় নিহানের সাথে ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়েছ। এসব কেড়ে নেওয়ার অধিকার আমার নেই।
কী লাভ তোমাকে নিজের করে যেখানে তুমি হ্যাপি থাকবে না? আমি চাই তুমি সারাজীবন হাসি খুশি থাক। তোমার মুখের হাসির জন্য আমি নিজের জিবনও দিয়ে দিতে পারি।
নাইবা হলে আমার। তাই বলে কী ভুলে যাব তোমাকে? উহু সারাজীবন নিরবে ভালোবেসে যাব তোমাকে। তোমার #প্রণয়ের_দহন এ পুড়ব আমি।
কাউকে দুর থেকে ভালবাসাই সব থেকে পবিত্র ভালোবাসা। কারন, এ ভালোবাসায় কোন রকম অপবিত্রতা থাকে না, কোন শারীরিক চাহিদা থাকে না। শুধু নীরব কিছু অভিমান থাকে, যা কখনো কেউ ভাঙায় না। কিছু অশ্রু বিন্দু থাকে, যা কেউ কখনো মুছতে আসে না। আর সবার অজান্তে আড়ালে একা যেখানে একজনই রানী।
প্রেমিক পুরুষের সুখ নিহিত প্রেয়সীর মুখের হাসিতেই।
জানিস আয়না আজকে যখন তোকে হলুদের সাঁজে নিহান পাশে দেখেছিলাম। তখন আমার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ আমার বুকে অজস্র ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করছে। হৃৎপিন্ড ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছিলাম না তোকে নিহানের পাশে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বার বার তোকে স্বার্থপর উপাধি দিতে ইচ্ছে করছিল। কারণ তুই আমার ভালোবাসাটা বুঝলি না।
তুই যদি আমার ভালোবাসাটা বুঝতি তাহলে নিহানের জায়গায় আমি থাকতাম। নিহান বার বার কথার ছলে তোর হাত ধরেছিল। সেটা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই ওপরে রুমে চলে আসি। ঐ জায়গায় আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।
রুমে এসে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেই। মনকে বোঝায় তোর খুশিতেই আমি খুশি। তোর সুখেই আমি সুখী। কিন্তু তা তুই হতে দিলি না। সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য আবার চলে এলি। তোর #প্রণয়ের_দহনে এ পুড়াতে চলে এলি। যখন আমি এসব বিড়বিড় করে বলছিলাম তখন হুট করেই তুই আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলি। তোর মুখ না দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম এটা তুই। কারণ আমি তো তোর উপস্থিতি অনুভব করতে পারি।
তুই জড়িয়ে ধরেছিলি বলে প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল। আমি জানতাম তুই ভুল করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস। হয়তো আমাকে নিহান ভেবেই জড়িয়ে ধরেছিস। প্রথমে রাগ হলেও পরে মনের মাঝে একরাশ ভালো লাগা কাজ করে। ভুল করে হলেও তো তোর ছোঁয়া আমি পেয়েছি। এইটুকু স্মৃতি নিয়েই আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব।
পরের দুইটা পেইজে শুকনো রক্ত। আমার মনের মাঝে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে এই শুকনো রক্তটা কার। আরিয়ান ভাইয়ার না তো। কিন্তু উনার কোথাও কাটলে তো আমি দেখতে পেতাম। উনার শরীরে তো কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পরবর্তী পেইজে যায়।
বিশ্বাস কর আয়না আমি তোকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চাই়নি।তুই বল যাকে ভালোবাসি তাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়া যায়। আমি তো তোকে মেনে নিতে পারছি না। আমি তোর জীবনের সেকেন্ড অপশন হতে চায়নি। আমি তোর জীবনের একমাত্র অপশন হতে চেয়েছিলাম।
তুই ভাবিস আমার ইগো হার্ট হয়েছে বলে তোর সাথে মিস বিহেভ করি। কিন্তু তোর ধারণা একদম ভুল। তুই যখন আমরা সামনে আসিস বা কেউ যখন তোকে আমার বউ বলে তখন আমার চোখের সামনে তোর আর নিহানের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ভেসে ওঠে। জড়িয়ে ধরা, কিস করা।
যখন তুই একই বিছানায় আমার পাশে থেকে নিহানের কথা ভেবে চোখের জল ফেলিস। তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। পারি না সহ্য করতে। না চাইতেও তোর সাথে মিস বিহেভ করে ফেলি।
আমি না পারছি তোকে কাছে টেনে দিতে না পারছি দূরে ঠেলে দিতে। আমাদের মাঝে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়ে গেছে। যে দেওয়াল চাইলেও আমি ভাঙতে পারছি না। হয়তো সেদিনই এই দেওয়াল ভাঙবে যেদিন তুই আমাকে মন থেকে ভালোবাসবি। যেদিন তুই আমাকে ভালোবেসে ডাকবি সেদিন সব দেওয়াল ভেঙে আমি তোর কাছে চলে আসবো।
পরের পেইজ ফাঁকা। আরো কয়েকটা পেইজ উল্টে দেখলাম। সবগুলো পেইজ ফাঁকা। হয়তো পরে আর কিছু লিখেনি। ডায়েরীটা আবার আগের জায়গায় রেখে বেলকনিতে চলে গেলাম। বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সবকিছু আজ বিষাক্ত লাগছে। নিহানকে না ভালোবেসে আরিয়ান ভাইয়াকে ভালোবাসলে আজকে আমার জীবনটা অন্য রকম হত।
একটা গানের সুর ভেসে আসছে। দক্ষিণ দিক থেকে গানের সুরটা ভেসে আসছে। হয়তো কেউ তার প্রেয়সীর জন্য নদীর পাড়ে বসে গান গাইছে। গানটা আমার খুব প্রিয়।
তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনেমর কাছে আসা
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনেমর কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়লে
লাগে যতক্ষণ
তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন
ভালোবাসার সাগর তুমি
ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অথৈয় জল
যারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সুইসাইড করে তারা প্রচণ্ড বোকা। তাদের মতো বোকা আর কেউ নেই। তারা জীবনে দ্বিতীয় বার প্রেম আসার সুযোগই দেয় না।
আর সব প্রেম সফলও হয় না। প্রেমে ব্যর্থ হলে নিজের জীবন নষ্ট করে দেয়ার মানে নেই। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখতে হবে। পৃথিবীতে প্রেম অল্পতেই শেষ হয় না। প্রেম জীবনে একবারও আসে না। প্রেম জীবনে বহুবার বহুরুপে আসে।
নিহানকে ভুলে যাব। নিহান বলতে কেউ যে আমার জীবনে ছিল। সেটাই ভুলে যাব। আমার জীবন নামের খাতা থেকে নিহানের নামটা মুছে ফেলব সারাজীবনের মতো।
যে আমার সাথে প্রতিশোধের নেশায় ভালোবাসার অভিনয় করছে তাকে মনে রাখাই কোনো মানেই হয়। তার কথা মনে করে চোখের জল ফেলা বোকামি।
আমি এখন থেকে একজনকেই ভালোবাসবো। আর সেই ব্যক্তিটা হচ্ছে আরিয়ান ভাইয়া। উহু শুধু আরিয়ান। আমার আরিয়ান। আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু একটাই নাম থাকবে আর সেটা হচ্ছে আরিয়ান। আমার অস্তিত্ব জুড়ে থাকবে শুধু আরিয়ান।
পায়ের শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম আরিয়ান এসেছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই। আরিয়ান বেলকনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ানকে দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না।
দৌড়ে গিয়ে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আরিয়ান আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। আমি পাত্তা দিলাম না সেটা। আমার ওপর অভিমান করে আছে জানি। আমি ভালোবাসা দিয়ে সব অভিমান ভাঙিয়ে দিব। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা। আরিয়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে জুড়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
চলবে…..