প্রণয়ের_দহন সূচনা_পর্ব

আজকে আমার বিয়ে বউ সেজে দাঁড়িয়ে আছি ড্রয়িংরুমে। আমার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে আমার হবু বর নিহান। তবে সে একা দাঁড়িয়ে নেই। তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী। মেয়েটা দেখতে পরীর মতো সুন্দর। হয়তো সুন্দরের মোহে পড়েই আমার তিন বছরের ভালোবাসা ভুলে গেছে নিহান।

কিছুক্ষণ আগে

আমি বউ সেজে নিজেকে আয়নায় দেখছিলাম। হঠাৎ নিচ থেকে আব্বুর চিৎকার শুনে একটু অবাক হলাম। কিন্তু ততটা পাত্তা দিলাম না। কারণ আব্বু কেউ কাজে একটু ফাঁকি দিলেই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। কিন্তু যখন নিহানের কন্ঠ শুনলাম তখন চমকে ওঠলাম। কারণ নিহানদের আরো পরে আসার কথা ছিল। আমি দৌড়ে নিচে নেমে গেলাম। নিচে নেমে নিহানকে বর বেশে আর তার পাশে একটা মেয়েকে বধূ বেশে দেখে চমকে ওঠলাম। যখন নিহান বলল এটা তার বউ তখন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায়।

আমি আচমকা নিহানের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বললাম, কেনো করলে আমার সাথে এমন নিহান? আমার মাঝে কী কমতি ছিল যে তুমি আমাকে রেখে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করলে? আমার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ ছিল না। তাহলে কেনো এমন করলে? তুমি না আমাকে ভালোবাসো? তাহলে কী করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে? এই মেয়েটাকে বিয়ে করার আগে একবারও কী আমার মুখটা তোমার মনে পড়েনি?

কথাগুলো বলতে বলতে আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। নিহান নিজের কলার থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিল। তারপর রেগে বলল,

না মনে পড়েনি তোর মুখ। মনে পড়েনি তোর মতো চরিত্রহীনার মুখ। তোর মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসবে কে? তোর সাথে তিন বছর ভালোবাসার অভিনয় করে আমি প্রতিশোধ নিয়েছি। তুই আমাকে কলেজের সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছিলি। সেই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিলাম আজকে। আর তোর সাহস হয় কী করে আমার কলার চেপে ধরার? তোর মতো একটা আনস্মার্ট, ক্ষেত্র মার্কা মেয়েকে বিয়ে করবে এই নিহান চৌধুরী। নো ওয়ে। তার ওপর চরিত্রের ঠিক নেই। নিজের ভাইয়ের বন্ধুর সাথে ফষ্টিনষ্টি করে এখন আমার ঘাড়ে ঝুলে পড়তে চাইছিস।

আমি হতভম্ব হয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম। ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লাম। আমার চোখগুলো আজ বাধ মানছে না। অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না নিহান শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার সাথে তিন বছর প্রেমের অভিনয় করছে। এই তিন বছর তার আমার প্রতি একটুও ভালোবাসা জন্মায়নি। মাথা চক্কর দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাব। বাবা এসে নিহানের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়। চিৎকার করে বলে,

চুপ কর বেয়াদপ ছেলে। আমার মেয়ের নামে আরেকটা বাজে কথা বললে আমি তোর জিব টেনে ছিড়ে ফেলব। নিজের চরিত্রের ঠিক নেই আমার মেয়ের চরিত্রের ওপর আঙ্গুল তুলতে এসেছিস। বিয়ে করতে চাস না চলে যা। তোকে কেউ আটকে রেখেছে। তোর থেকে হাজার গুণ ভালো ছেলেরা আমার মেয়ের পিছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তোর মতো একটা ছেলের সাথে আমি কখনই আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হতাম না। শুধু মাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছি। বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। আমার মেয়েকে আমি তোর থেকে হাজার গুণ ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিব।

আব্বু যে নিহানকে থাপ্পড় মারল। নিহান কোনো সিনক্রিয়েট করলো না। উল্টো আলতো হেসে বললো,

কে বিয়ে করবে আপনার এই চরিত্রহীন মেয়েকে। যে মেয়ে বিয়ের আগের দিন রাতে পর পুরুষের সাথে ঢলা ঢলি করে সেই মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না। আপনি জিঙ্গেস করে দেখেন এখানের একটা ছেলেও আপনার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাজি হবে না। উপস আপনি তো আবার আমার কথা বিশ্বাস করবেন নাহ। আপনার কাছে আপনার মেয়ে তো দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। আপনার মেয়েকেই জিঙ্গেস করুন গতকাল হলুদ অনুষ্ঠান ছেড়ে কোথায় গিয়েছিল আপনার মেয়ে? আমি বলে দিচ্ছি। আপনার হলুদ অনুষ্ঠান ছেড়ে তার প্রেমিকের সাথে রোমান্স করতে গিয়েছিল। জানেন আপনার মেয়ের প্রেমিকটা কে? আপনার ছেলের বন্ধু আরিয়ান।

তোর মতো মিথ্যাবাদীর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না এখানের। তোর কথার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ তোর কথাগুলো সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

কে বললো নেই। এই দেখুন প্রমাণ।

নিহান তার পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও চালু করে। ভিডিওতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আমি আর আরিয়ান ভাইয়া জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। নাহ একটু মিষ্টেক হলো আমি আরিয়ান ভাইয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আরিয়ান ভাইয়া বিড়বিড় করে কিছু বলছে। যেটা ভিডিওতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। সবাই আব্বুর দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।

আরিয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, এর পরেও বলবেন আপনার মেয়ে ধোয়া তুলসি পাতা। আর যায় হোক এমন একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করার আমার পক্ষে সম্ভব নাহ।

আমি হতভম্ব হয়ে বসে আছি। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছি নিহানের দিকে। কয়েক ঘন্টার মাঝে কী করে মানুষ এতটা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে? সবই তো নিহানের নাটক ছিল। মানুষ এতটা নিখুঁত অভিনয় কী করে করতে পারে? নিহান আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিলো। নিহান বুঝতে পারছে আমি কিছু বলবো। কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিহান তার সদ্য বিয়ে করা বউকে নিয়ে হনহন করে চলে যায়।

আমি অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছি নিহানের যাওয়ার দিকে। আশেপাশের লোকজন আমাকে নিয়ে কানাকানি করছে। কিন্তু আমার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। আব্বু বুকে হাত দিয়ে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। আমি আব্বুর কাছে যেতে নিলেই আব্বু বাধা প্রধান করে। আন্টি আর আংকেল ( আরিয়ান ভাইয়ার আব্বু-আম্মু ) আব্বুর সামনে দাঁড়ায়।

ভাই সাহেব যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। আমাদের মান সম্মান যা নষ্ট হওয়ার তা হয়েই গেছে। আমি চাইছি আজকে আরিয়ান আর আরশির বিয়ে দিয়ে দিতে যদি আপনার কোনো আপত্তি না থেকে। যদি তাতে মানুষের মুখ একটু বন্ধ হয়।

আব্বু কিছু না বলে শুধু মাথা নেড়ে সায় জানায়। আব্বুর কোনো অমত নেই।

আরিয়ান ভাইয়া করুন কন্ঠে বলল, আব্বু..

আংকেল ধমক দিয়ে আরিয়ান ভাইয়াকে চুপ করিয়ে দেয়। আর রাগী কন্ঠে বলে, আর কোনো নাটক করার বাকি আছে তোমার। এতো তামাসা করেও শান্তি হয়নি। আমাদের মান সম্মান সব ধূলোয় মিশিয়ে দিলে।

সবাই জোড় করে আমাদের দুজনকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দিল। আরিয়ান ভাইয়া কবুল বলেই হন হন করে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ জানে আমার ভাগ্যে কী আছে? হয়তো আমার জীবনটা এখন নাটকের চেয়ে নাটকীয় হয়ে যাবে। আমি নিজের হাতে নিজের জীবন নষ্ট করে দিলাম।

______________

আমি এক হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি আরিয়ান ভাইয়ার বেডে। একটু আগে আনহা (আরিয়ান ভাইয়ার বোন) আমাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমার চোখ দিয়ে আর পানি পড়ছে না কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। নিহান কেনো আমার সাথে এমন করল? ও আমাকে বললেই আমি ওর জীবন থেকে সরে যেতাম। কেনো আমার নামের সাথে চরিত্রহীনা শব্দটা জুড়ে দিলে।

ধরাম করে দরজার খোলার শব্দে আমি কেঁপে ওঠি। জানি আরিয়ান ভাইয়া এসেছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে পড়ি বিছানার এক কোণে। এখন আমার সাথে কী হতে পারে এটা ভেবেই আমার আত্না কেঁপে ওঠছে। কিছু ভাঙার শব্দে আমি চমকে ওঠি।

প্রণয়ের_দহন
সূচনা_পর্ব
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

( চলে এলাম নতুন গল্প নিয়ে। আশা করি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগবে। আপনাদের রেসপন্সের ওপর ভিত্তি করে পরের পর্ব দেওয়া হবে। প্রথম পর্ব পরেই কেউ নেগেটিভ কমেন্ট করবেন নাহ প্লিজ। আপনারা জানের আমার গল্পে রহস্য একটু বেশি থাকে। তাই সম্পূর্ণ গল্পটা পড়ার আগে কেউ নেগেটিভ মন্তব্য করবেন নাহ প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here