প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-২০

0
630

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#২০তম_পর্ব

ধারা বিস্মিত কন্ঠে বললো,
“কেনো?”

এবার একটু থামলো অনল। মিনিট দুয়েক চুপ করে থাকলো। তারপর মুখ গোল করে একটা উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তারপর একটু এগিয়ে এলো ধারা কাছে। শান্ত দৃষ্টি রাখলো ধারার গাঢ় নয়নে। নির্লিপ্ত ভরাট কন্ঠে বললো,
“কারণ তুই আমার বউ, আমি চাইনা আমার বউ অন্য পুরুষের ঘরে যাক”

অনলের কথাটা মস্তিষ্কে ধারণ করতে সময় নিলো ধারার। এর পূর্বেও অনল বহুবার তাকে “বউ” বলে সম্বোধন করেছে, কিন্তু প্রতিবার ই সেই সম্বোধন, একরাশ স্নেহ এবং আদরের বহিঃপ্রকাশ ছিলো। কিন্তু আজ তার সম্বোধনের অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্বোধনের পেছনে যেনো আধিপত্য এর বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। যেনো কোনো বিজয়ী রাজা স্বত্তা জারি করছে, নিজের কতৃত্ব জাহির করছে। ধারা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। তার হৃদস্পন্দন অযাচিত কারণেই মাত্রা ছাড়াচ্ছে। অনলের স্থির, শান্ত ঝিলের মতো আঁখিজোড়ায় শুধু নিজের প্রতিবিম্ব ই দেখতে পাচ্ছে যে। খরা মনোজমিনে এক পশলা বৃষ্টির আগমণ ঘটলো। ধারা কিছুটা এগোলো। অনলের চোখে আবদ্ধ তার চাহনী। মৃদু কন্ঠে শোধালো,
“জোর খাটাচ্ছো!”
“যদি তাই মনে হয়, তবে তাই”
“কিন্তু তুমি ই তো বলেছিলে, আমার মতো স্টু’পি’ড মেয়েকে বিয়ে করে নিজের জীবনের জ্বলাঞ্জলি দেবার ইচ্ছে নেই! তাহলে এতো জোর, আধিপত্য কেনো অনল ভাই?”

ধারা উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে। কিশোরী মন উতলা হয়ে আছে সম্মুখে দাঁড়ানো যুবকের উত্তর পাবার জন্য। প্রতীক্ষা গাঢ় হচ্ছে। নিস্তব্ধ ঘরে শুধু পুরোনো ফ্যানের ক্যাচর ক্যাচর শব্দটিই পাওয়া যাচ্ছে। অনল চুপ করে আছে, তার নিবৃত্ত চাহনী নিবদ্ধ ধারার মুখশ্রীতে। ধারা ভাবলো এবারো আশাহত হতে হবে। অনল হয়তো এবারো মনে ঝড় তুলে দূরে চলে যাবে, কিন্তু তেমন হলো না। আরেকটু এগিয়ে এলো অনল। তার মুখশ্রী নামিয়ে নিলো খানিকটা, উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে ধারার মুখশ্রীতে। কিন্তু ধারা নড়লো না। জড় বস্তুর ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর মুখশ্রীতে অনুভব করলো বলিষ্ঠ শক্ত হাতের গভীর স্পর্শ। অনলের রুক্ষ্ণ, বিশাল হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় খানিকটা হলেও মোমের ন্যায় বিগলিত হলো ধারা। চোখ বুজে নিলো সে। অনল এটুকুতেই ক্ষান্ত হলো না। গম্ভীর স্বরে নিবৃত্তচিত্তে বললো,
“তুই মানিস, বা না মানিস তুই পুরোদস্তুর আমার। যেখানে মানুষটা আমার, সেখানে কতৃত্ব তো থাকবেই।”

অনলের কথাটা বুকে তীরের মতো লাগলো। সাথে সাথেই কিছু অভিমান জড়ো হলো কিশোরীর চোখে। টলমলে নয়ন আবার তাকালো অনলের দিকে। অভিমানের বিষাক্ত জোয়ার উঠলো তার হৃদয়ে। ঈষৎ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“তাহলে কেনো বারে বারে আমাকে ফিরিয়ে দাও? যতবার কাছে আসতে চাই তত বার কেনো নিজেকে ঘুটিয়ে নাও? কেনো আমার অনুভূতিগুলোকে বুঝেও অবুঝ হও? আমার চোখজোড়া যে শুধু তোমাকে দেখে, আমার মস্তিষ্কে, চিত্ত সবটাতে যে শুধু তুমি আছো৷ কেনো সেটাকে জেনেও অজানা সাজো?”

অনল মৃদু হাসলো। তার সুপ্ত অবাধ্য ইচ্ছেটা পূরণ করে নিলো ধারার কপালে উষ্ণ ঠোঁট ছুইয়ে। কপালে উষ্ণ ঠোঁটের পরশ অনুভূত হতেই হৃদস্পন্দন থেমে যাবার যোগাড় হলো ধারার। অনলের স্বচ্ছ চোখে শুধু নিজের প্রতিবিম্ব ই দেখতে পাচ্ছে ধারা। তার অবাক নয়নে হাজারো প্রশ্ন করছে যা মোটেই উপেক্ষা করলো না অনল। বরং স্বর নরম করে বলল,
“কারণ আমি কিশোরীর ক্ষণ আবেগ হতে চাই না। হতে চাই তার হৃদয়ের অন্তস্থলে পরিস্ফুটিত প্রণয়। যেদিন তুই এই আবেগের উত্তর পাবি সেদিন আর অবুঝ হবো না। সর্বোচ্চ দিয়ে আগলে রেখে দিবো এই ছোট্ট কিশোরীর নিভৃত যতনে বোনা ভালোবাসাকে”

ধারা এখনো নিস্তব্ধ চাহনীতে চেয়ে আছে অনলের কঠিন মুখশ্রীর দিকে। অনলের স্বচ্ছ চাহনী এখনো ধারাতেই নিবদ্ধ। তবে এখন ধারার পেটের ভেতর উড়ন্ত প্রজাপতি গুলো যেনো থমকে গেলে। বরং অনলের কাছে নিজের ঝড়তোলা অনুভূতিগুলো নিছক আবেগ আখ্যা পাওয়ায় ভেতরটা তিতকুটে হয়ে উঠলো মূহুর্তেই। ধারা অনুভব করলো উষ্ণ নোনাজল তার নরম গাল ভেজাচ্ছে। দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সে। কথা খুঁজে পাচ্ছে না, তাহলে কি সত্যি তার ভেতরে সৃষ্ট অনুভূতিগুলো কেবল ই ক্ষণস্থায়ী আবেগ! এই কদিনের সকল সুখময় স্মৃতি তার ই একটা রুপ মাত্র! ঠোঁট চেপে নিজেকে সামলাতে চাইলো ধারা। কিন্তু বক্ষস্থলের চিনচিনে ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়ছে। অনল আর দাঁড়ালো না, বরং বেড়িয়ে গেলো ঘর ছেলে। ধারা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। হাত পা অসাড় হয়ে গেছে। ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বুঝে উঠতে পারছে না, সে কি প্রেম নিবেদনের পূর্বেই প্রত্যাখ্যাত হলো! নাকি এখনো তার অবকাশ আছে অনলের হৃদয়ে জায়গা করে নেবার!

*****

আজকাল আবহাওয়ার কোনোই ঠিক ঠিকানা নেই, এই খরতাপ তো, এই শীতল বর্ষা। আজকের সকালটাও তাই হলো। বিনা নোটিশে দক্ষিণে জমে থাকা নিকষকালো মেঘের দল আন্দোলন করলো। ভারী বর্ষণ শুরু হলো বজ্রপাত সহ। অবশ্য বিনা নোটিশ বলাটা সাজে না, কারণ এই মেঘেদের বেশ কিছুদিন যাবৎ ই তীব্র আন্দোলন হচ্ছিলো। তারা ঘাপটি মেরে বসে থাকছিলো দক্ষিণ কোনে। কিন্তু সূর্যিমামার সাথে বনাবনিটা ঠিক হচ্ছিলো না। তাই তো তারা খালি দল বেঁধেই ঘুরে বেড়াতো, বর্ষিত হতো না। আজ হয়তো তাদের সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গলো, তাই তো আষাঢ়ের প্রথম দিন ই অঝর ধারায় বর্ষণ হলো। অবশ্য প্রকৃতিকে তো জানাতে হবে, ওহে পৃথিবী শুনে রাখো বর্ষাকাল আবারো চলে এসেছে। তবে এই বর্ষনে ঝামেলায় পড়লো ধারা। ভার্সিটিতে যেতেই হবে অথচ রাস্তায় রিক্সা নেই। আজ সে অনলের সাথে যাচ্ছে না। কারণ গতকাল তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়েছে। এটাকে বাকবিতন্ডা বলে কি না জানে না ধারা। তবে সেই মূহুর্তের পর অনল যে বেড়িয়েছিলো, বান্দার আসার নাম নেই। মাঝে যখন নানাভাই এর শরীরটা আবারোও খারাপ হলো, বড় মা হুমড়ি তুমড়ি করে ফোন লাগালো। তখন তার দর্শন পাওয়া গেলো। অনল ফিরতেই তার সাথে কথা বলতে চাইলো ধারা। কিন্তু অনল কথা বললো না, ভাব দেখালো বেশ অভিমান করেছে সে। কিন্তু অভিমান তো ধারার করবার কথা, কারণ তার প্রণয়কে আবেগ আখ্যা দিয়ে নিচু করা হয়েছে। সকালে বান্দা উঠলো ধারার পূর্বে। ধারা যখন ডাইনিং এ পৌছালো তখন অনলের খাওয়া শেষ। ধারা সব ছেড়ে তার সাথে ভার্সিটি যাবার জন্য পা বাড়াবে তখন ই দীপ্ত অনুনয় করে বলে উঠলো,
“ধারা, কোথায় যাচ্ছো?”
“ভার্সিটিতে, ক্লাস আছে”
“আচ্ছা, না গেলে হয় না?”
“হ্যা?? কি বলেন আপনি! আমার সামনে ফাইনাল পরীক্ষা!”
“না আসলে আমি চাইছিলাম তুমি আমাকে একটু ঢাকা শহর ঘুরে দেখাবে”

দীপ্তের বিনয়ী কন্ঠের কথাটাও মেজাজ গরম করে দিলো ধারার। আরে যে মেয়ে নিজেই দু গলি পড়ে হারিয়ে যায়, বাসা থেকে একা বের হওয়া যার নিষেধ সে কি করে এই লোককে ঢাকা দেখাবে। ধারা কোনো মতে নিজেকে সামলালো। তারপর মুখে বিনয়ের হাসি টেনে বললো,
“আসলে কি বলুন তো, আমি নিজেই ঢাকা চিনি না। আর আমার তো ক্লাস আছে। আপনি বরং ছোট মামার সাথে যান। ঢাকা কেনো বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দিবে”

ধারা কথাটা বলেই ছুটলো বাহিরে। কিন্তু কেঁচি গেটে আসতে আসতে দেখলো প্রিন্স উইলিয়াম নিজের পঙ্ক্ষীরাজ নিয়ে হাওয়া। তখনই নামলো অঝর বর্ষণ। ধারা বেকুবের ন্যায় পিচের রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। অনলের প্রতি অভিমান ও জমলো বেশ! নীলাম্বরের দিকে মুখ উচিয়ে তাকালো। হতাশ কন্ঠে বললো,
“তুমি আমাকে বুঝলে না, অনল ভাই”

তখন ই একটা মাঝবয়সী রিক্সা চালক ভিজতে ভিজতে এসে হাজির হলো। প্রসন্ন চিত্তে শুধালো,
“আফা যাবেন নি?”

ধারা মাথা নাড়ালো। রিক্সা ভাড়া না ঠিক করেই উঠে বসলো রিক্সায়। রিক্সা পিচ ঢালা পথ চিরে চললো গন্তব্যে_________

দীপ্তের কোনো কাজ নেই। সে শুধু সারা ঘরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। গতরাতে জামাল সাহেবের শরীর খারাপ হবার দরুন সে আরোও একদিন থাকার অনুমতি পেয়েছে। গতরাতে দীপ্তই সামলে নিয়েছিলো জামাল সাহেবকে। স্প্রে, ঔষধ কিনিয়ে বাসায় একটা ফার্মেসি খুলে বসলো সে। এর মাঝে জামাল সাহেবের অবস্থার উন্নতি হলো। ফলে তার আজ সকালে প্রস্থানের কথা থাকলেও তার প্রস্থান হলো না। রাজ্জাক তাকে আরোও একদিন রেখে দিলো। এখন এ বাড়িতে অবাধ পাখির মতো বিচরণ করার অনুমতি আছে তার। কিন্তু বাসার কেউ তার সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশ করে না। এই আজ সকালের কথাই ধরা যাক, সে জামাল সাহেবকে দেখতে গিয়েছিলো। জামাল সাহেব তখন চাঁদর মুড়ি দিয়ে হুমায়ুন আহমেদের “জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প” বইটি পড়ছিলেন। দীপ্ত ভেবেছিলো বৃদ্ধ হয়তো নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিবে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। উলটো সে ভীষণভাবে খেঁকিয়ে উঠলো। মোটা বইটি বন্ধ করে বাজখাঁই কন্ঠে বললেন,
“ওই তুমি যাও নাই এখনো? তোমারে না চলে যাইতে কইছি আমি?”
“আচ্ছা আপনি এমন আচারণ করছেন কেন? আমি যদি চলে যেতাম তাহলে আপনার চিকিৎসা করতো কে?”
“বহুত উপকার করছো! তা এখন কি তোমারে তুলোধুনো করুম?”
“না না, তুলো দিয়ে কিছুই করা লাগবে না। শুধু আমাকে থাকতে দিন। আই এম নট এ ব্যাড পার্সোন, ইউ নো। তাই শুধু শুধু আমাকে হেইট করবেন না”

দীপ্ত ভেবেছিলো বৃদ্ধের মন গলবে। কিন্তু উলটো জামাল সাহেবের ক্রোধ বাড়লো, তীব্র স্বরে বললেন,
“বাইর হও, বাইর হও আমার ঘর থেইক্যা। এক্ষন বাইর হইবা। তোমার আংরেজী শুনার ইচ্ছা আমার নাই। তুমি এক্ষন বাইর হও”
“ওকে, ওকে যাচ্ছি। উত্তেজিত হবেন না রিল্যাক্স, চিল”
“তোমার চিলের গু’ষ্টি মা’রি, বাইর হও আগে”

হতাশ দীপ্ত বেড়িয়ে গেলো। বের হতেই বসার ঘরের বারান্দায় দেখা পেলো জমজদের। একই রকম দেখতে মেয়ে দুটো। একই মুখের আদল, একই মুখভাব। জামাও একই। দুজন ই সবুজ রঙ্গের সালোয়ার কামিজ পড়া। কোন্তা আশা আর কোনটা এশা বোঝা যায় না। দীপ্ত দেখলো তারা কিছু একটা করছে। খুব মনোযোগ দিয়ে বসার ঘরের বারান্দার রেলিং দিয়ে উপুড় হয়ে কিছু দেখছে। কিন্তু কি! দীপ্তের কৌতুহল হলো। সে এগিয়ে গিয়ে আশাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি করো?”

কথাটায় যেনো আশা বড্ড বিরক্ত হলো। মুখ, চোখ কুচকে নিরস কন্ঠে বললো,
“নেত্য করি”

তারপর তারা আবারো মনোযোগী হলো নিচের দিকে। দীপ্ত বুঝলো জমজ তাকে পছন্দ করছে না। তার জন্য জমজদের মনোযোগে ব্যাঘাত পড়ছে। তাই সে একটু সরে দাঁড়ালো। সে জানতে চায় মেয়ে দুটি কি করবে। বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পর হুট করে মেয়েদুটির মাঝে চাঞ্চল্য দেখা গেলো। তারা তাদের পায়ের কাছে মেঝেতে রাখা ডাকনা দেওয়া বালতি থেকে পানি নিয়ে বেলুনে ভরতে লাগলো। সাথে সাথেই বিশ্রী গন্ধ নাকে এলো দীপ্তের। দিপ্ত নাকে হাত দিলো কিন্তু জমজদের ভ্রুক্ষেপ হলো না। তারা মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করে উঠে দাঁড়ালো, তারপর নিজেদের নিশানা সাধলো। দীপ্ত উঁকি দিয়ে দেখলো নিচে একজন সাদা শার্ট পরিহিত রোগাপাতলা, জীর্ণশীর্ণ, টাক মধ্যবয়স্ক লোক হেটে যাচ্ছে। লোকটি যখন ই বারান্দার নিচে এলো, অমনি বেলুনগুলো ছেড়ে দিলো জমজেরা। বেলুনগুলো ঠিক যেয়ে পড়লো লোকটির টাকে। উপর থেকে পড়ার কারণে সেগুলো ফেটে গেলো আর ভেতরের তরল তার মাথা বেয়ে পড়তে লাগলো। দীপ্ত খেয়াল করলো লোকটির মুখোভাব বদলে গেলো। তীব্র স্বরে চিৎকার করে উঠলো সে,
“কে রে আমার গায়ে পঁচা গোবরের পানি মেরেছে?”

লোকটি হন্তদন্ত করছে। তার সাদা শার্ট ময়লা পানির জন্য ভিজে ধূসর হয়ে গিয়েছে। সে উপরে তাকাতেই দীপ্তকে দেখতে পেলো। জিজ্ঞেস করে উঠলো,
“এই তুমি মারছো এই বেলুন, তুমি মারছো তাই না?”

দীপ্ত হতভম্ব হয়ে গেলো, কি উত্তর দিবে বুঝে উঠলো না। পাশে তাকাতেই দেখলো জমজ গায়েব। এতো তাড়াতাড়ি তারা সরে যাবে কল্পনাও করে নি সে। এ যেনো কোনো বিজ্ঞ মস্তিষ্কের সুক্ষ্ণ চাল। লোকটি চেঁচাচ্ছে। আশেপাশের লোক জড়ো হলো। কিন্তু গোবরের গন্ধে তারা এগুতে পারছে না। এদিকে দীপ্ত এখনো স্তব্ধ, নির্বাক। তার মস্তিষ্ক অচল হয়ে গেছে যেনো। এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। আজ প্রথমবার বুঝলো, “কৌতুহল বড় বাজে জিনিস”________

ধারা বসে আছে লাইব্রেরির শেষ মাথায়। তার সম্মুখে মাহি। দুজনের মুখ থমথমে। এটা ভাবার কারণ নেই যে একটু পর ল্যাবকুইজ হবে বিধায় তাদের এই দশা। তারা আসলে অনলের ভাবমূর্তি বিশ্লেষণে ব্যাস্ত। অনল ভাই গতকাল যে কথা বললো তার মর্মার্থ এবং ভাবার্থ বিশ্লেষণ করছে তারা। মাহি অতিবিজ্ঞের মতো বললো,
“আমার কি মনে হয় বলতো, অনল ভাই তোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্লাবণ ভাই এর প্রতিও তোর আবেগ ছিলো। এখন তুই অনল ভাই কে ভালোবাসিস। ব্যাপারটা বোধ হয় ঘেটে গেছে। সে ভাবছে, তোর লাইফে নতুন কেউ আসলে তুই অনলভাইকেও ঝুলিয়ে দিবি। অবশ্য তোর যা মতিগতি, আমি নিজেই কনফিউজড।”
“আজ তুই বান্ধবী না হলে আমি একটা খু’ন করে বসতাম”
“ভুল বললাম নাকি! এই তো প্লাবণ ভাই এর বিয়ের আগে, কেঁদে দুনিয়া ভাসালি ভুললে চলবে!”
“তা তো অতীত ছিলো”
“অতীত ই সবথেকে বড় শত্রু। দেখ, আমার মতে অনল ভাই তোকে পছন্দ করে। নয়তো সে এতো চেততো না ওই দীপ্ত না ফিপ্ত এর রুমে যাওয়া নিয়ে। জেলাসি বলতে পারিস, এটা নারী-পুরুষের ইন্সটিনক্ট। তুই বরং হতাশ না হয়ে কোমড় বেধে নাম। অনল ভাইকে বুঝিয়ে দে “তুমি আমার প্রথম না হলেও তুমি ই আমার শেষ””
“বুঝাতে গেলে তো কথা বলতে হয়। লোকটা এতো জেদি, কাল থেকে একটা কথাও বলে নি”
“শোন বৎস, প্রেম সাগরে ঝাপ দিচ্ছো৷ একটু বেহায়া তোমাকে হতেই হবে। বেহায়া না হলে কিসের প্রেমিকা। আর তুমি তো তার বউ। তাই এখানে বেলতলার লজিক খাটবে না। সব ভুলে যাও। নিজ থেকে চেষ্টা করো, হবেই হবে। হতেই হবে”

মাহির কথাটা শেষ না হতেই দিগন্তের আগমণ ঘটলো। ছুটে এসে বলল,
“কুইজ ক্যান্সেল, অনল স্যারের শরীর খারাপ…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here