প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-২২

0
691

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#২২তম_পর্ব

কপালে উষ্ম ঠোঁটের আলতো পরশ বুলিয়ে নরম স্বরে বললো,
“আবারো ম’র’লাম আমি, আবারো হারলাম। তবে এই মৃ’ত্যুতে যে জন্মের শান্তি, এই হারে যে প্রবল প্রশান্তি। ভালোবাসি বউ, প্রচন্ড ভালোবাসি”

অনলের স্বগোতক্তি শেষ হবার সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকালো ধারা। যেনো সে এতোটা সময় চোখ বুজে অপেক্ষা করছিলো কখন অনল তার হৃদয়ের অন্তস্থলে জমে থাকা কথাগুলো নিজ মুখে বলবে। ধারা সটান হয়ে উঠে বসলো। ধারার উঠে বসা দেখে ঈষৎ বিস্মিত হলো অনল। সে ভেবেছিলো ধারা গভীর ঘুমে। ধারা কিছুসময় গোল গোল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর ডানহাতটা অনলের কপালে ঠেকালো। ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
“যাক জ্বর নেমে গেছে, উফ রাতে যে কি একটা ভয় পেয়েছিলাম! হুট করে জ্বরটা বাড়লো কেনো বুঝলাম না!”

অনল একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ধারার মুখশ্রীর দিকে। চুলগুলো অবিন্যস্ত হয়ে নেমে গেছে ঘাড় বেয়ে। চোখগুলো এখন ঘুমের মাদকতা থেকে বের হয় নি। মুখখানা ঈষৎ ফোলা। গোলাপ ফুলের মতো স্নিগ্ধ ঠোঁটজোড়া দেখে কিছু নিষিদ্ধ ইচ্ছে উঁকি দিলো হৃদয়ের ভেতরে। কিন্তু পর মূহুর্তেই তা দমিয়ে নিলো। ঠোঁটে টেনে নিলো স্নিগ্ধ হাসি। তারপর মুখখানা একটু এগিয়ে নিয়ে নরম গলায় বললো,
“জ্বর না আসলে বউ এর এতো যত্ন পেতাম কি করে?”

অনলের কথাটা কর্ণপাত হতেই ঘুমগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো যেনো ধারার। অনলের “বউ” ডাকে যেনো এক অসামান্য সম্মোহনী শক্তি আছে। যা পাগলের মতো টানে ধারাকে। সে কিছুসময় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। অনল এখনো হাসছে, দূর্বোধ্য সেই হাসি এবং একই সময় মারাত্মক বুকে লাগা হাসি। মারাত্মক সুন্দর, মাদকাসক্ত। পুরুষের হাসি সাধারণত সুন্দর হয় না। তবে অনলের হাসিটি বরাবর ই ধারাকে মুগ্ধ করে। হয়তো সে সর্বদা হাসে না তাই। কিন্তু পরমূহুর্তেই গতদিনের বাক বিতন্ডার কথাটা মনে পড়তেই মনের ভেতর একটা তিতকুটে অনুভূতির সৃষ্টি হলো। মুখ ফিরিয়ে নিলো ধারা। ঠোঁট ভিজিয়ে অভিমানী স্বরে বললো,
“কেনো? এগুলো তো কিশোরীর আবেগমাত্র!”
“ভুল হয়ে গেছে! ক্ষমা করে দে। এই দেখ কান ধরছি”

বলেই হাতদুটো কানের কাছে নিয়ে গেলো অনল। ধারা সাথে সাথে হাতদুটো নামিয়ে নিলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
“আমি কি কান ধরতে বলেছি? কান ধরিয়ে বিশ্বজয় করার ইচ্ছে নেই”
“তাহলে মহারানীর রাগ ভাঙ্গাই কি করে?”

কথাটা বলেই ধারার কোমড় আকড়ে ধরলো অনল। অনলের নিবিড় স্পর্শে কেঁপে উঠলো ধারা। মেরুদন্ড বেয়ে উষ্ণ রক্তের ধারা বয়ে গেলো। অনলের উষ্ণ স্পর্শে হৃদয়ের তপ্ত জমিনে যেনো এক পশলা শীতল বর্ষন হলো। হিম হয়ে গেলো তার হাত পা। আরোও বিস্ময় জমলো যখন কানে মুখ ঠেকিয়ে অনল মাদকাসক্ত কন্ঠে বললো,
“বউ এর মান ভাঙ্গাতে হলে কি করতে হবে এই অ’ধ’ম’কে?”

ধারা অনুভব করলো তার গাল উষ্ণ হয়ে উঠলো। কথাগুলো দলা পাকালো। তবুও একরাশ সাহস নিয়ে বললো,
“যা ঘুমন্ত অবস্থায় বলেছো, তাই সজ্ঞানে শুনতে চাই”

অনল বুঝলো তার কিশোরী বউ তার স্বগোতক্তি শুনেছে। সুতরাং লুকোচুরি শেষ। অবশ্য আর লুকোচুরি করেও লাভ নেই। কারণ অনলের ভেতরটাও হাহাকার করছে। ধারাকে একান্ত করে পাবার ইচ্ছে তাকে বেসামাল করে তুলছে। সে মাথা ঠেকালো ধারার কাঁধে। কন্ঠ নরম করে বললো,
“একটা গল্প শুনবি?”
“সুন্দর গল্প হতে হবে, কিন্তু!”
“আমার প্রথম প্রণয়ের গল্প, শুনবি?”

ধারার বুকে মোচড় পড়লো। বাহিরে তখন আবারো বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কাঠের জানালা ভেদ করে পানি ছিটকে পড়ছে শীতল ঘরটিতে। অনল তখন তার কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বসে রয়েছে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে তার দেহে। ধারা মাথা উপর নিচ দোলালো। মানে সে শুনবে। অনলের হাসি বিস্তারিত হলো। তারপর সে মৃদু কন্ঠে বলা শুরু করলো,
“আমি তখন স্কুলে। এই বাড়িতে আমার একার রাজত্ব। আমার চেয়ে ছোট কেউ নেই। সবার আদরের মনি আমি। তখন জন্ম হয় একটা ছোট্ট শিশুর। ছোট একটি মানুষ, গোল মুখ, ছোট ছোট নরম হাত পা তার। অথচ এই মানুষটি আমার নয়বছরের রাজত্ব গুড়িয়ে দেয়। আমার আধিপত্যে নিঃশব্দে ভাগ বসায় সে। জানিস কে সে? তুই! বিনা কিছু করেই ছোট হবার দরুন সকলের আদরের মনি হয়ে উঠিস তুই। যে ফুপি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না সেই ফুপির সারাদিন কাটতো তোর যত্নে। নয়বছরের বালকের পক্ষে নিজের সিংহাসন ছেড়ে দেওয়া মোটেই সহজ হলো না। আজব এক হিংসে জন্মালো। তাই তোকে ভালোবাসতে ভালো লাগলো না। ফুপি যখন ই তোকে নিয়ে এ বাড়ি আসতো আমার বিরক্ত লাগলো। চাচু যে কিনা প্রতি বিকালে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো সেই চাচু তোকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। আমার বাবা আমার আগে তোকে চকলেট দিতো। খুব রাগ হতো জানিস। তারপর একদিন ফুপা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলো। তুই ফুপির সাথে এলি এ বাড়িতে। আমার হিংসে দ্বিগুন হলো। তোর মনে আছে কি না জানি না, একবার আমি তোকে সিড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিলাম। বা পায়ে খুব ব্যাথা পাস তুই। মা খুব রেগে গিয়েছিলো আমার উপর। কিন্তু সকলকে অবাক করে তুই বলেছিলি তুই নাকি নিজ থেকেই পড়ে গিয়েছিলি। এতে আমার দোষ নেই। সেইদিন প্রথম আমার তোকে ভালো লেগেছিলো। একটা পাঁচ বছরের মেয়ে এতো চমৎকার করে হাসতে পারে সেদিন প্রথম দেখেছিলাম। চৌদ্দ বছরের ছেলেটির বুকে যেয়ে লাগলো সেই মারাত্মক মোহনীয় হাসিটি। যাই হোক, ইতিমধ্যে আমার রাজত্বে ভাগ বসাতে আরোও মানুষ চলে এলো, আফিয়া, এশা, আশা, আফসার, আলিজা। আমার অভিমান চুরমার হলো। তাই অন্য একটা ফন্দি আটলাম, রাজত্বটা তোদের উপর খাটাবো। বড় হবার দরুন তোরা সবাই আমাকে হুজুর হুজুর করতে লাগলি! আমার দাপট ও চললো! তারপর ফুপির অসুখ ধরা পড়লো। মাত্র মাস দুয়েক মাঝেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। তখন তুই ছয় বছর। মৃতরা যে ফিরে না ব্যাপারটা তখন ও বুঝতে পারছিলি না। বারবার বলছিলি “মা ঘুমিয়ে আছে, ডেকো না। মা অসুস্থ”। সেদিন তোর প্রতি এক অসামান্য মায়া কাজ করলো জানিস, মনে হলো এই মেয়েটাকে আগলে রাখাই যেনো আমার কাজ। পনেরো বছরের ছেলের পক্ষে প্রণয় কি বোঝাটা অসম্ভব, শুধু এটুকু বুঝছিলাম তুই প্রচুর জরুরি আমার জন্য। আমার মনে খোড়াক, তোকে না জ্বালালে তো আমার ভাত ই হজম হয় না। এর পর ফুপা ফিরলেন তোকে নিয়ে যাবার জোর করতে লাগলেন। তার সাথে একজন নারীও এলো। যাকে দেখে তুই জেদ ধরলি তুই যাবি না। লুকিয়ে বসে রইলি ছাঁদের চিলেকোঠায়। সেদিন আমি প্রথম ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেয়েছিলাম তোকে হারাবার। তুই চলে গেলে আমি কার চুল টানতাম? তার চুলে চুইংগাম লাগাতাম? কার উপর হুকুম ঝারতাম? কার জন্য পাড়ায় ঝগড়া করতাম? কাকে পাহারা দিতাম যেতো কোনো ছেলে তার আশেপাশে না ঘুরে! যাক গে, দাদাজানের সামনে ফুপার জোর খাটলো না। আমার জীবন আবার আগের মতো হয়ে উঠলো। তুই থেকে গেলি, আমার চিরজীবনের খেলার সাথী। এর মাঝে স্কুল থেকে আসার সময় আমি ছেলেধরার কবলে পড়ি। দিনটা আমার জীবনের সবথেকে কালো দিনের একটা। ওরা আমাকে একটা অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে। তিন দিন আমি ওই ঘরেই থাকি, বিনা খাবার, বিনা পানি তে। তিনদিন পর আমাকে উদ্ধার করা হয়। আমার তখন নিজের ছায়াকেও ভয় করতে শুরু হয়। নিজেকে ঘরে আটকে রাখতাম। একদিন দেখলাম আমার ঘরের দরজার নিচে একটা চকলেট আর একটা এবড়োখেবড়ো হাতের লেখার চিরকুট। যাতে লেখা ছিলো “অনল ভাই, আমি তোমাকে পাহারা দিচ্ছি”। ভাবা যায় একটা সাত বছরের একটা মেয়ে কিনা ষোল বছরের ছেলেকে পাহারা দিবে। সেদিন প্রথমবারের মতো ম’রে’ছি’লা’ম। বুঝলাম আমি হেরে গেছি তোর চঞ্চলতার কাছে। তোর প্রতিটা কাজে মুগ্ধ হতাম। তুই বড় হতে থাকলি, আমার সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকলো তোর। একই বাড়িতে থাকা স্বত্তেও আমাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব। আমার প্রতি তোর বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখে নিজেকে আরোও বেশি গুটিয়ে গেলাম আমি। তোর প্রতি আসক্তিটা লুকিয়ে রাখলাম এক অজানা প্রকোষ্ঠে। যেদিন আমাদের বাড়ি প্রথম প্লাবণ এলো সেদিন আমি তোর মাঝে এক অকল্পনীয় পরিবর্তন দেখলাম। একটা মেয়েলীভাব এলো তোর মাঝে, সাজগোজ করা, সুন্দর লাগা ব্যাপারগুলো যেনো তোকে বড্ড ভাবাতে লাগলো। প্রথমে খেয়াল না করলেও যত দিন গেলো বুঝলাম তোর প্লাবণের প্রতি একটা আবেগ জমেছে। তোর প্লাবণের প্রতি আবেগ আমার ভেতরের ঈর্ষার দাবানল তৈরি করলো। আমি এজন্য ওকে বারণ করতাম আসতে। তোর আসে পাশে না ঘেষতে। কিন্তু ছেলেটা শুনতো না, তোর আবেগে হাওয়া দিতো আর সেটা আরো বেগে জ্বলতো। না পেরে জিজ্ঞেস করে বসলাম ওকে, কেনো এগুলো করে। ছেলেটা উত্তরে বললো, তোকে দেখলে তার নিজের আপন বোনের মতো মনে হয়। আমি আর বাধা দিতে পারলাম না। আর তোকে যে বোঝাবো সে জোর রইলো না, কারণ আমার প্রতি তোর আচারণ ছিলো বড্ড বিচিত্র। তোর মনে আছে যেদিন তোর এস.এস.সি এর রেজাল্ট দিলো, মার কড়া লাল শাড়িটা জোর করে পড়লি?”
“আর তুমি ইচ্ছে মতো আমাকে বকে ছিলে”
“কারণ তোকে সেদিন বউ বউ লাগছিলো। সেদিন দ্বিতীয়বারের মতো ম’রে’ছি’লা’ম। তোর কাজলকালো চোখে নিজেকে আবারো হারিয়েছিলাম। কেনো তোকে এতোটা মায়াবিনী হতে হবে! পাড়ার সব কটা ছেলের চোখ শুধু তোকে গিলছিলো। সহ্য হলো না। তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করলাম। সেদিনের পর থেকে আমার সাথে সোজা মুখে কথা বলাই ছেড়ে দিলি তুই। আমিও আমার প্রণয়কে আরো একবার গুটিয়ে নিলাম। এর পর দাদাজানের অসুস্থতা, আমাদের বিয়ে সব কিছু যেনো এলোমেলো করে দিলো। প্রথমে না করলেও শেষমেশ মনের হারতেই হলো। রাজি হলাম বিয়েতে। কিন্তুআমি বুঝছিলাম না ঠিক কি করা উচিত। তোকে নিজের করে পাবার আনন্দটা যেমন হচ্ছিলো, তোকে হারানোর ভয়টা আরোও মাত্রা ছাড়াচ্ছিলো। আমি বড্ড ভয় পাই, ভয় পাই আঘাতের। ভয় পাই নিজেকে হারিয়ে নিঃস্ব হবার। ভয় পাই শূন্যতার। এতো ভয়ের মাঝেও অবুঝ হৃদয়টা তোর প্রতি আকৃষ্ট হয় বারেবারে। বারবার তোর প্রতি বেসামাল প্রণয় আমাকে কাবু করে। তাই তো মৃ’ত মানুষটি আবার ম’রে, পরাজিত হৃদয় আবার হারে। হ্যা, ভালোবাসি তোকে। প্রচন্ড ভালোবাসি। আমার ভালোবাসাকে কখনো পায়ে ঠেলে দিস না। সইতে পারবো না”

ধারা অনুভব করলো তার কাধে উষ্ণ তরল গড়াচ্ছে। সেই তরলে ভিজে যাচ্ছে তার কাঁধ। অজান্তেই তার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়লো নোনাজলের রেখা। একমূহুর্ত দেরী না করেই জড়িয়ে ধরলো সে অনলকে। বলিষ্ঠ শক্ত বুকে লেপ্টে রইলো সে। ধরা গলায় বললো,
“শেষ নিঃশ্বাস অবধি এই প্রণয় কে আগলে রাখবো। কথা দিলাম।”
“ভালোবাসিস?”
“কারণ অকারণে ভালোবাসি, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি”

অনলের বেষ্টনী আরোও নিবিড় হলো। কিশোরী বউ কে আগলে ধরলো তার শক্ত বাহুবেষ্টনীতে গভীরভাবে। বাহিরে ঝুম আষাঢ়িয়া বৃষ্টি। ব্যাস্ত শহর ভিজে যাচ্ছে। নিস্তব্ধ রুমেও তখন চলছে প্রণয়ের বর্ষণ, কি মধুর সেই বর্ষণ_________

****

ব্যস্ত শহরে নামলো সন্ধ্যা। ঘুটঘুটে আলো সন্ধ্যা। সেই সাথে চলছে আষাঢ় মাসের চিরন্তর নৃত্য। ঝুমঝুম করে বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন। অবশ্য সকালের কড়া, তেজী উত্তাপের জ্বালানো শহরটি ঠান্ডা করার প্রয়োজন ছিলো। বাংলাদেশে না আসলে হয়তো এই অলীক মায়াটার সাক্ষী হতে পারতো না দীপ্ত৷ সে এখনো ধারাদের বাড়িতেই ঘাপটি মেরে আছে। জামাল সাহেবের সাথে বনাবনি হয় নি মোটেই। কিন্তু রাজ্জাক সাহেবের দয়ার পাত্র সে হয়ে গিয়েছে। হাতে টাকা নেই, লাগেজ নেই। অনলের কাপড় পড়ে দিব্যি দিন কাটছে তার। এদিকে অনলের পা ঠিক হয়ে গিয়েছে। লোকটি বেশ ত্যাদর, দীপ্তকে মোটেই ধারার ধার ঘেষতে দিচ্ছে না। অবশ্য দীপ্ত ধৈর্য্যশীল ছেলে। পাঁচদিন চুপচাপ ই রয়েছে। সে অবশ্য জমজদের খুব ভয় পায়। ভুলে ও ও পথ মা’রা’য় না।

দীপ্ত কাঠের জানালাটা খুলে দিলো। সাথে সাথেই পানির ছিটে মুখে পড়তে লাগলো। তবুও মোহনীয় দৃষ্টিতে বাহিরে তালিয়ে রইলো সে। সোডিয়ামের রোড লাইট গুলো একের পর এক জ্বলে উঠছে রাস্তার ধারে। বৃষ্টির শব্দ যেনো কোনো সুখময় গান। এই গানে বাধা দিলো কাঠের দরজার ঠক ঠক আওয়াজ। ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে খুলতে অবাক হলো সে। জমজেরা বাটি হাতে বিনীত হাসি একে দাঁড়িয়ে আছে। ঘাবড়ানো কন্ঠে শুধালো দীপ্ত,
“কি চাই?”
“ক্ষমা”

একসাথে বলে উঠলো এশা আশা। খানিকটা বিস্মিত হলো দীপ্ত। মুখে সন্দেহের ছাপ। সন্দীহান কন্ঠে বললো,
“কিসের ক্ষমা?”
“বাহ রে! আমাদের জন্য আপনাকে কি অপমানটাই না হতে হলো। সেটার ক্ষমা চাইতে এসেছি। আর দেখুন আপনার জন্য এই বৃষ্টিতে ভিজে রহমাত পাড়া বিখ্যাত চটপটি নিয়ে এসেছি। আমাদের এবার ক্ষমা করে দিন দীপ্ত ভাই”

এশা এতোটা নরম এবং বিনয়ী স্বরে বললো যে দীপ্ত মানা করতে পারলো না। আর কেনো জানে জমজগুলোকে তার ভীষণ ভালো লাগে। ইচ্ছে করে গাল টিপে দিতে। তাই হাসি মুখে চটপটির বাটিটা নিলো। তারপর বললো,
“থ্যাংক ইউ। আমরা তাহলে বন্ধু?”
“একদম, আপনি তাহলে আমাদের ক্ষমা করেছেন তো?”
“তা আর বলতে, এটা কি স্পাইসি?”
“হালকা, তবে বেশ মজা। আপনি খান আমরা তাহলে আসি”
“তোমরা খাবে না?”

সাথে সাথেই আশা বলে উঠলো,
“আমাদের খাওয়া যাবে না”
“হ্যা?”
“না আসলে আমরা খেয়েছি, ওয়েদার খারাপ তো। তাই বেশি খাওয়া যাবে না। আশা পা’গ’লী বোঝাতে পারে নি”

আশাকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে এশা কথাটা বললো। তারপর তারা “আসি” বলেই বিদায় নিলো। দীপ্ত তৃপ্তি নিয়ে চটপটিটা খেলো। একটু ঝাল বটে, কিন্তু ভীষণ মজা। কিন্তু ঝামেলাটা হলো এক ঘন্টা পর, যখন তার পেট মুড়িয়ে উঠলো। শুধু রুম টু বাথরুম আর বাথরুম টু রুম। এক মিনিট যে বসবে তার উপায় নেই……….

চলবে

(আসসালামু আলাইকুম, পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আগামীকাল থেকে আমার মিড টার্ম এক্সাম শুরু হচ্ছে, এক্সামের দিনগুলোতে ক্লাস টেস্টও থাকবে। তাই আমি এক্সামের দিনগুলোতে পর্ব দিবো না। সুতরাং আগামীকাল পর্ব পাবেন না৷ প্রথমত সময় হবে না। আর দ্বিতীয়ত পরীক্ষার পর এতোটাই ক্লান্ত থাকি যে লিখতে ইচ্ছে হয় না। পরীক্ষার দিন ব্যাতীত ইনশাআল্লাহ প্রতিদিন দেবার চেষ্টা করবো, তাই ইনশাআল্লাহ পরশুদিন যথাসময়ে গল্প পাবেন, ধন্যবাদ ❤️❤️❤️❤️❤️)

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here