#প্রতিশোধ পর্ব_১২
💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
আয়ান ধ্রুবদের বাড়ি থেকে লাভাকে আনতে যায়।সেখানে আয়ুসী কোনো কথা বলেনি।ধ্রুব আয়ুসীকে দেখে বুঝতে পারে আয়ুসীর কিছু হয়েছে।সে ধ্রুবর সাথে কোনো কথা বলে না।ধ্রুবর সাথে সাধারন কথাবার্তার পর আয়ান বাড়ির দিকে রওনা হয়।গাড়িতে আয়ুসী একদম চুপচাপ থাকে।সেটা আয়ান লক্ষ্য করে।এমনকি লাভা এতো চেঁচামিচি করতে থাকে তাও আয়ুসী কিছু বলে না।
গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকে লাভা আয়ুসীর পায়ে পায়ে জড়াতে থাকে।কিন্তু আয়ুসী নিজের মতো হেঁটে চলে যায়।আয়ান অবাক হয়ে দেখতে থাকে।ভাবে এর আবার কী হল!এতো ভয় পায়।সে আজ!আয়ুসী তো তখন নিজের মধ্যে নেই।আপনমনে ঘরে গিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দরজাতে হেলান দিয়ে হাঁটু দুটোকে বুকের কাছে ভাঁজ করে বসে পরে।চোখের সামনে সব কিছু ওলট পালট হয়ে যেতে থাকে।
আয়ুসীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে।শাড়িটাকে হাতের মুঠোয় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।যত মুঠো শক্ত হচ্ছে তত আয়ুসীর কান্না জোরে হতে থাকে।
আয়ুসীর বার বার মনে হতে থাকে সে যা শুনেছে সব কী সত্যি!কিন্তু এতো বড় চক্রান্ত কারা করেছে?কারা, কাদের জন্য তার বাবা শাস্তি পেয়েছে?কাদের জন্য ছোটোবেলায় শুনতে হয়েছে সে খুনির মেয়ে?কাদের জন্য সে হারিয়ে ফেলেছে তার ভালো আঙ্কেল আন্টিকে?কাদের জন্য তার এই অবস্থা?কাদের জন্য উনি আমার সাথে এরকম ব্যবহার করছেন?
আয়ানের কথা মনে পরতে আয়ুসী চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়।ওয়াশরুমের সামনে থাকা আয়নার দিকে এগিয়ে যায়।মুখটাকে ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলে।তোয়ালেতে মুখটা মুছে নেয়।
কিছুক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর আয়ুসী বলে-আচ্ছা ওনাকে বললে কেমন হয়?উনি যদি আমাকে হেল্প করেন।কিন্তু—-উনি কেন আমার কথা বিশ্বাস করবেন।
এই বলে আয়ুসী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।তারপর কাঁদতে থাকে আর বলে-ঠাকুর আমাকে পথ দেখাও।আমি যে কিছু বুঝতে পারছি না।কিচ্ছু না।
এদিকে আয়ান দেখে আয়ুসী কখন ওয়াশরুমে গিয়েছে এখনও বের হবার নাম নেই।রুমে এসে পাইচারি করতে থাকে।ওয়াশরুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসে।আয়ান ভাবে এমন কী হল যে ও এইভাবে কাঁদছে।আমি তো কিছুই বলিনি।কান্নার আওয়াজে আয়ানেরও কেমন হতে থাকে।কিছুক্ষণ পরে কান্না থেমে গেলেও আয়ুসী বার হয় না দেখে আয়ান চিন্তা করতে থাকে।কী করবে বুঝতে পারে না।ওয়াশরুমের সামনে গিয়েও ফিরে আসে।তারপর সোফায় গিয়ে লাভাকে সাথে নিয়ে আপনমনে গিটারে টুংটাং আওয়াজ করতে থাকে।আর লাভা বেচারা কিছু বোঝে না।প্রথমে চীৎকার করতে থাকে তারপর শান্ত হয়ে সোফাতে শুয়ে পরে আয়ানের গিটারের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর আয়ুসীও চোখের জল মুঝে বেড়িয়ে আসে।ওয়াশরুমে দরজা খুলতেই লাভা সেই শব্দে এক লাফে আয়ুসীর কাছে ছুটে যায়।তখন আয়ুসী ভয় না পেলেও এখন আয়ুসী লাভাকে দেখে ভয় পায়।আর বারবার তাড়ানোর চেষ্টা করে।শেষে খাটের উপর উঠে বসে পরে।
আয়ান গিটার রেখে দেখতে থাকে।আয়ুসী খাটে উঠে গেলে লাভাও খাটে ওঠার চেষ্টা করে।আয়ুসী লাভাকে দেখতে থাকে।লাভা দেখতে ভীষণ কিউট।সাদা লোমে শরীরটা ঢাকা।আয়ুসী আস্তে আস্তে খাটের ধারে আসে।নিজের হাতটা বাড়ায়।তখনই লাভা ছুটে আসে।আয়ুসী ভয়ে হাতটা সরিয়ে নেয়।
ওদিকে লাভা আওয়াজ করতে থাকে।নতুন বন্ধুর সাথে খেলার খুব ইচ্ছা।
আয়ান দেখতে থাকে আয়ুসীকে।সেও যেন লাভার সাথে খেলতে চায়।ভাবে যে কুকুরের দেখে এতো ভয় পায় সে কিনা—-
এদিকে আয়ুসীর চেঞ্জ করা হয়নি।তাই চেঞ্জ করতে আবার খাট থেকে নামতে যায়।এদিকে লাভা নীচে।আয়ুসী ভয়ে ভয়ে নীচে নামে।কিন্তু লাভা কাছে আসতেই চীৎকার করে খাটে উঠে যায়।আয়ুসীকে দেখে আয়ান খুব জোরে হেসে ফেলে।আয়ুসী আয়ানকে দেখে রেগে যায়।বিড়বিড় করে বলে-বাজে ছেলে একটা।
আয়ুসী বিড়বিড় করে বললেও আয়ানের কানে তা ঠিক পোঁছে যায়।আয়ান উঠে এসে-কী বললে তুমি?
আয়ুসী ভয় পেয়ে বলে-ক্ক-ই।কী-ছু না তো।
আয়ান-আমি শুনেছি।
আয়ুসী-আমি কিছু বলিনি।
এই বলে সে খাট থেকে নামতে থাকে।কিন্তু শাড়ি পায়ে আটকিয়ে যায়।তাতে নিজেকে সামলাতে না পেরে আয়ানকে ধরে।আয়ানও বুঝতে পারেনি।হঠাৎ এমনভাবে ধরার ফলে সেও নিজেকে সামলাতে পারে না।দুজনে ব্যালেন্স হারিয়ে খাটের উপর পরে যায়।আয়ুসীর উপর আয়ান পরে।
আয়ুসীর এক হাত আয়ানের আয়ানের কাঁধে আর এক হাত পিঠের উপর।আর আয়ানের এক হাত আয়ুসীর পিঠের নীচ দিয়ে আয়ুসীর ঠিক পেটের কাছে।অন্য হাত আয়ুসীর পাশে বিছানার উপর।দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে।
কিছুক্ষণ পরে আয়ান আয়ুসী কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতে থাকে।আয়ুসী শিহরিত হয়ে ওঠে।তারপর আয়ানের ঠোঁট আয়ুসীর কপালের দিকে এগোতে থাকে।আয়ুসী চোখ বন্ধ করে নেয়।আয়ান আয়ুসীর কপালে কিস করে।আয়ুসী আয়ানের জামাটাকে শক্ত করে ধরে।কিছুক্ষণ ওই ভাবেই থাকে।তারপর কপাল থেকে ঠোঁট টা সরিয়ে আয়ুসীর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে।আয়ুসী চোখ খুলে আয়ানকে দেখে।তারপর আয়ান আস্তে আস্তে আয়ুসীর ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে।আয়ুসীর গলা দিয়ে স্বর বার হয় না।আয়ানকে বাঁধা দেওয়ার মত শক্তি সে পায়না।এদিকে আয়ান এগোতে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ বিছানার উপর রাখা আয়ুসীর ফোনটা বেজে ওঠে।আয়ানের সম্বিত ফিরে যায়।সে আয়ুসীকে ছেড়ে উঠে পরে।ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।সাথে লাভাও বেড়িয়ে যায়।আয়ুসী বসে থাকে।ফোনটা বেজে যায়।আয়ুসী ধরে না।
অন্যদিকে আয়ান ড্রয়িং রুমে এসে বসে পরে।ভাবতে থাকে সে এতক্ষণ কী করছিল।কী করে সে আয়ুসীকে—-।যাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এনেছিল তাকে কী করে সে!
সেই রাতে আয়ান আর ঘরে যায় না।লাভাকে ওর জায়গা মতো রেখে দেয়। আয়ুসী ভাবে কেন বারবার উনি এরকম করেন?সত্যিই কী আমাকে কষ্ট দেবে বলে!
আয়ান ঘরে না এলে আয়ুসী আয়ানকে খুঁজতে যায়।আয়ুসী দেখে আয়ান সোফার উপর শুয়ে পড়েছে।আয়ুসী ঘরে চলে যায়।ড্রেস চেঞ্জ করে সে শুয়ে পরে।এদিকে আবার ফোন বেজে ওঠে।আয়ুসী ফোনটা ধরে।ওপার থেকে-হ্যালো দিদি কেমন আছিস?
আয়ুসী আনন্দে-ভালো।তুই কেমন আছিস?
ভালো দিদি-আয়ুসীর ভাই নিলয় ফোন করেছে।
এই দিদি আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে আমি পাশ করে গেছি।ফার্স্ট ক্লাসে পাশ করেছি।-নিলয়
সত্যি!আমার সোনা ভাই।এবার কী করবি?-আয়ুসী
এবার একটা কজের চেষ্টা।-নিলয়
কিন্তু তুই আর পড়বি না?-আয়ুসী
না রে দিদি এখন বিভিন্ন কোম্পানিতে ইনটারভিউ দেব।দেখি কী হয়।-নিলয়
তোর যা ভালো লাগে তাই কর।-আয়ুসী
আচ্ছা।তাহলে আমি রাখছি রে।-নিলয়
হুম,সাবধানে থাকিস।-আয়ুসী
হুম,তুই ও-এই বলে নিলয় ফোনটা কেটে দেয়।
আয়ুসীর নিলয়ের জন্য মন খারাপ করতে থাকে।ভাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন আয়ুসী সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে।ফ্রেশ হয়ে নীচে আসে।দেখে আয়ান কার সাথে ফোনে কথা বলছে।এদিকে আয়ান আয়ুসীকে লক্ষ্য করেনি।সে কথা কথা বলতে বলতে রুমে যায়।কথা বলা হয়ে গেলে দেখে আয়ুসী রুমে নেই।মনে মনে বলে-বাঁচা গেছে।
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নীচে আসে।আয়ুসীর দিকে আড় চোখে দেখতে থাকে।কিন্তু আয়ুসী নিজের কাজে ব্যস্ত।তাই নিজের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য টেবিলে রাখা একটা চামচকে নীচে ফেলে দেয়।
আয়ুসী আয়ানকে দেখতে পেয়ে বলে-ব্রেকফ্রাস্ট হয়ে গেছে।
টেবিলে এনে সাজিয়ে রাখে।এদিকে আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকাতে পারে না।আয়ুসী ওর প্লেটে খাবার দিতে থাকে।তখন আয়ান বলে-কাল রাতে যা হয়েছে তা —-
আয়ানকে পুরো কথা বলতে দেয় না।আয়ানের কথার মাঝেই আয়ুসী বলে-জানি আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।এটাই যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।আমি সব জানি।
এই বলে আয়ুসী ছুটে চলে যায়।বুকের ভিতর খুব কষ্ট হতে থাকে।এদিকে আয়ান আয়ুসীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।খাবার টা আর গলা দিয়ে নামে না।
আয়ুসী রেডি হয়ে নীচে এলে দুজন অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরে।লাভাকে প্রত্যেকদিন ধ্রুবর বাড়িতে রেখে দিয়ে যায়।আজও লাভা যাচ্ছে।আজ গাড়িতে আয়ুসী বড্ড চুপচাপ।আয়ান দেখতে থাকে।আয়ুসী জানলার দিকে চেয়ে আছে।এদিকে লাভা কিছুক্ষণ চেঁচাচ্ছিল।কিন্তু এখন সে চুপ করে গেছে।লাভাকে ধ্রুবর বাড়িতে রেখে তারা অফিসে যায়।
অফিসে যে যার কেবিনে চলে যায়।এদিকে ধ্রুবও আয়ানের সাথে চৌধুরী কোম্পানির কিছু দরকারি বিষয়ে কথাবার্তা বলতে আসে।যাওয়ার সময় সে আয়ুসীর ঘরে যায়।
আয়ুসী কোনো কাজ করে না।কালকের ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।
কী রে?-ধ্রুব
আয়ুসী আয়ানের ডাকে একটু ভয় পেয়ে যায়।
ও তুমি-আয়ুসী
তুই কী ভাবলি-ধ্রুব
না,কিছু না।কিছু বলবে-আয়ুসী
আমার কিছু বলার নেই।তোর কী কিছু বলার আছে?-ধ্রুব
আ-মা-র,আমার ক্কী বলার থাকবে।-আয়ুসী একটু ঘাবড়ে যায়।
ধ্রুব তা লক্ষ্য করে।
এমনি বললাম-ধ্রুব
ধ্রুব ভাবছে আয়ুসী আয়ানের বিষয়ে কিছু বলতে চায়।কারন সে তো জানে আয়ান আয়ুসীর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।তাই ভাবছে আয়ান হয়তো ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।
ধ্রুব আর কিছু বলে না।
যাওয়ার সময় একবার বলে যায়-আমার নিজের কোনো বোন নেই।তাই তোকেই—-।নিজের খেয়াল রাখিস।
এই বলে সে বেড়িয়ে যায়।আয়ুসী ধ্রুবর চলে যাওয়া দেখতে থাকে।খুব কষ্ট হয়।মনে করে ছুটে গিয়ে সব বলে দেবে।কিন্তু তার পা সেখান থেকে এক ইঞ্চিও সরে না।চোখ জ্বালা করতে থাকে।চোখের সামনে সব অস্পষ্ট হয়ে যায়।
চলবে—-