প্রতিশোধ পর্ব_১৫

প্রতিশোধ পর্ব_১৫
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

ধ্রুব কিছু বুঝতে পারে না।কারন ওদের কথাবার্তায় কিছু ধরা পরে না।ভাবে হয়তো দুজনেই ভালো আছে।সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে।তারপর ধ্রুব বাড়ি চলে যায়।

সন্ধ্যা হয়ে আসে।আয়ুসী আর আয়ান বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়ির দিকে রওনা হয়।আজ আয়ুসী আয়ানকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না।নীল ব্লেজারে আয়ানকে খুব সুন্দর লাগছে।আয়ান আয়নার সামনে গিয়ে মাথা আঁচড়াছে।আয়ুসী একভাবে তাকিয়ে আছে।

আয়ুসী মনে মনে বলে-ছোটবেলায় তো কিউট ছিলেন এখন আরো সুন্দর লাগে।ইচ্ছা করছে আপনাকে গিয়ে বলি।

এদিকে আয়ান রেডি হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে।যাওয়ার সময় দেখে আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-কী দাঁড়িয়েই থাকা হবে,না যাওয়াও হবে?

আয়ুসী চমকে উঠে-হ্যাঁ,হ্যাঁ

আয়ান-আমি ভাবলাম তুমি সেজেগুজে বাড়িতেই থাকবে।এমন ভাবে আছো—-

এই বলে আয়ান বেড়িয়ে যায়।আয়ুসীও পিছনে পিছনে যায়।দুজনে গাড়িতে ওঠে।কিছুটা যাওয়ার পর আয়ান একটা ফুলের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে যায়।কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসে।দুটো ফুলের বুকে নিয়ে।একটা সাদা রঙের অর্কিডের গুচ্ছ আর একটা অনেক ফুল নিয়ে তৈরি বুকে।

গাড়িতে উঠে নিজের সিটবেল্ট লাগাচ্ছে।আয়ুসী দুটো ফুলের বুকে দেখে বলে-দুটো কী হবে?

সাদা অর্কিড আমার ঘরের জন্য।-আয়ান

সাদা!আপনি তো সাদা অর্কিড পছন্দ করেন না।-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-কে বলল আমি সাদা অর্কিড পছন্দ করি না।

না,মানে আমার একটু একটু মনে আছে আমি ছোটবেলায় একবার সাদা অর্কিড নিয়ে গিয়েছিলাম আপনি কিছুতেই নেননি।তাই বলছি,আপনার তো গোলাপি অর্কিড পছন্দ ছিল-আয়ুসী

আয়ান একটু হেসে বলে-হুম,ছিল এখন নেই।

মানে,বুঝলাম না।-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীর দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে-সত্যি বুঝতে পারো নি।নাকি না বোঝার অভিনয় করছ।যার জীবন থেকে ছোটোবেলায় সব আনন্দ হাসি চলে গেছে।তার তো সাদাই তো পছন্দ হওয়া উচিত।তাই না?

আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আয়ুসী দেখে শুধু রাগ নয়,দুচোখে আরো কিছু দেখতে পায়।

আয়ান-কী ঠিক বললাম তো?

আয়ুসী কিছু বলে না।মুখ নীচু করে নেয়।

আয়ান আয়ুসীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যে বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে পৌঁছায়।শ্রেয়া তো দেখেই ছুটে আসে।আয়ান শ্রেয়ার জন্য একটা বেসলেটও কিনেছিল।সেটা শ্রেয়াকে দেয়।শ্রেয়া ভীষণ খুশি ওদেরকে দেখে।শ্রেয়া আয়ুসীকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়।

শ্রেয়া তার বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে থাকে।বলে-এ আমার আয়ুসী বৌদি কী মিষ্টি দেখতে না।

আয়ান দেখতে থাকে।আয়ুসী যেন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

আয়ানকে দেখে শ্রেয়ার এক বান্ধবী বলে-কে রে ছেলেটা?

শ্রেয়া-আরে,ও তো আয়ান দা।আয়ুসী বৌদির বর।

খুব হ্যান্ডসাম কিন্তু—-

একদম নজর দিবি না-শ্রেয়া

এদিকে আয়ুসী একপাশে দাঁড়িয়ে।আয়ানের সাথে বিপ্লব আঙ্কেল কথা বলছে।

আয়ুসীর চোখ কিন্তু একজনকে খুঁজতে থাকে।তা হল সেই লোকটা।যার মুখ সে অন্ধকারে দেখছিল।কিন্তু কথা বলতে পারেনি।

হঠাৎ একজন এসে-হাই,আপনি!

আয়ুসী পাশে ফিরে দেখে।

আরে কুনাল বাবু-আয়ুসী

হ্যাঁ,আমি।আপনি এখানে?-কুনাল

হ্যাঁ,এরা আমাদের রিলেটিভ-আয়ুসী

আচ্ছা,আপনাকে কিন্তু আর দেখতে পাব আশা করিনি।আপনি কী করেছিলেন?-কুনাল

না,তেমন করে কিছু ভাবিনি।তাছাড়া পৃথিবীটা গোল।দেখা না হওয়ার কিছু নেই।-আয়ুসী

আপনি কিন্তু খুব ভালো কথা বলেন।-কুনাল

তা জানি না,কিন্তু আপনি যে ভালো বক্সিং করেন তা আমি সেদিন জেনে গেছি।-আয়ুসী

মানে!-কুনাল

সেদিন রাতে অতো লোক ছিল কিন্তু আপনার মারের কাছে কেউ টিকল না।আমার মনে হচ্ছিল ওরা যেন ইচ্ছা করে মার খাচ্ছে।-আয়ুসী

আয়ুসীর কথায় কুনাল চুপ করে যায়।

আপনি কী রাগ করলেন?-আয়ুসী

না,না,রাগ করব কেন।-কুনাল

আপনি সেদিন আপনাকে বাঁচালেন আর আমি কী সব ভুলভাল বলছি।-আয়ুসী

না,না তেমন কিছু নয়।আসলে আমি ভাবছিলাম আপনার ছাতাটা আমার কাছে।তাই আজ দেখা হবে জানলে—-কুনাল

আয়ুসী কুনালের কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে-তাহলে আজ সঙ্গে নিয়ে আসতেন।

কুনাল হাসতে থাকে।তার সাথে আয়ুসীও।

এদিকে আয়ান ওদেরকে দেখছে।আর মনে মনে বলে-এতো হাসি,কে ছেলেটা?

তারপর নিজে থেকেই বলে-আমি জেনে কী করব।যার যা ইচ্ছা করুক।

শ্রেয়া এদিকে মিউজিক সিস্টেম চালায়।সফট মিউজিক বাজতে থাকে।তার সাথে সবাই ডান্স শুরু করে।কেউ তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে।আর যার নেই তারা দুই বান্ধবীই একসাথে ডান্স শুরু করে।কী করবে ডান্স নিয়ে দরকার।আর তাতে আনন্দ পেলেই হল।

শ্রেয়া আয়ানের কাছে যায়-আয়ান দাদা আমার সাথে একটু—-

না,না শ্রেয়া আমি পারিনা-আয়ান

আচ্ছা বাবা বেশিক্ষন নয়।তারপর তুমি আয়ুসী বৌদির সাথে ডান্স করবে-শ্রেয়া

শ্রেয়া তুই কিন্তু খুব কথা শিখেছিস-আয়ান

শ্রেয়া বিড়বিড় করে বলে-যদি কথা শিখতাম আয়ান দা তাহলে যাকে ভালোবাসি তাকে কবে মনের কথাটা বলতাম।আর তাকে আসতে বলতাম।তার সাথেই এই পার্টিতে ডান্স করতাম।

কী রে কী বলছিস।আয়ান

না,কিছু নয়,চল-শ্রেয়া

এই বলে শ্রেয়া আয়ানকে নিয়ে আসে।এদিকে আয়ুসীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুনাল বলে-আপনি ডান্স করবেন না?

না,না-আয়ুসী

কেন,আপনার হাসবেন্ড কই?-কুনাল

আয়ুসী কিছু বলে না।শুধু বলে-আমার ওসব ভালো লাগে না।তাই—-

কুনাল হঠাৎ আয়ুসীর হাত ধরে বলে-চলুন।

আয়ুসী-এ কী করছেন?

কুনাল-আরে আসুন আসুন।

আয়ুসীর কোনো কথা কুনাল শোনে না।

একদিকে আয়ান শ্রেয়া আর অন্যদিকে আয়ুসী কুনাল।

আয়ুসীকে দেখে আয়ান রেগে যায়।আর আয়ুসী মাথা নীচু করে ডান্স করতে থাকে।এরকম ডান্স করতে করতে কখন তারা পাশাপাশি এসে পরে।

এদিকে couple change করে ডান্স হতে থাকে।আর কিছুক্ষণের মধ্যে আয়ান আয়ুসী একসাথে।আয়ুসী প্রথম আয়ানের হাত ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছিল।আয়ান শক্ত করে হাত ধরে রাখে।আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

নিজের বরের সাথে একটু কী ডান্স করতে নেই-আয়ান

আয়ুসী অবাক হয়ে যায়।আর এদিকে আয়ান আয়ুসীর হাত এমন শক্ত করে ধরেছে যে আয়ুসীর লাগছে।

প্লিল,আমাকে যেতে দিন-আয়ুসী

আগে ডান্স তারপর-আয়ান

আয়ুসী নিরুপায়।আয়ানের সাথে সে ডান্স করতে থাকে।আয়ান আয়ুসীর কোমর ধরে।

আয়ুসী-হাত টা সরান।

আয়ান বুঝতে পারে না।কারন ও ইচ্ছা করে করেনি।

আয়ুসী-হাত টা সরান।

আয়ান তখন আয়ুসীকে আরো কাছে টেনে বলে-কী হাত সরাও হাত সরাও বলছো।আমি ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবে তাই তো।

আয়ুসী আর কিছু বলতে পারে না।এদিকে আয়ান আয়ুসীর চোখে চোখ রেখেছে।আয়ুসী আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে তারপর অন্য দিকে ফিরে যায়।

এদিকে শ্রেয়া এসে বলে-কী লাগছে দুজনকে।পুরো সেরা জুটি।আমি একটা ছবিও তুলে নিয়েছি।

শ্রেয়ায় কথায় আয়ান আয়ুসীকে ছেড়ে দেয়।

ডিনারের সময় এসে পরে।আর আয়ান আয়ুসী ডিনার সেরে বাড়ির পথে রওনা হয়।আয়ান আর আয়ুসীকে কোনো কথা বলে না।

বাড়ি ফিরে আয়ান ড্রেস চেঞ্জ করে সোফাতে শুয়ে পরে।আর আয়ুসীও নিজের মতো ঘুমিয়ে পরে।

তারপর দিন সকালে আয়ুসী রেডি হয়ে নীচে গিয়ে দেখে আয়ান লাভার সাথে খেলা করছে।আয়ুসী কিচেনে যায়।দেখে খাবারের চিরকুট হাঙ্গ করা নেই।

আয়ানের কাছে এসে বলে-কী ব্রেকফ্রাস্ট করব?

আয়ান আয়ুসীর কথা শুনে ভিতরে চলে যায়।এদিকে লাভা আয়ুসীকে দেখতে পেয়ে লাফাতে শুরু করে।কারন আয়ান লাভাকে আয়ুসীর কাছে যেতে দেয় না।আয়ুসীও লাভাকে আদর করতে থাকে।এদিকে আয়ান এসে-এই নাও।

একটা চিরকুট আয়ুসীর হাতে ধরিয়ে দেয়।

আয়ুসী চলে যাচ্ছে।তখন আয়ান বলে-তুমি আর কখনও লাভার কাছে আসবে না।

আয়ুসী ফিরে তাকিয়ে বলে-যে আমাকে ভালোবাসে আমাকে পছন্দ করে আমিও তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারব না।

এই বলে আয়ুসী চলে যায়।আর আয়ান রেগে গিয়ে লাভাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়।
দুজনে ব্রেকফ্রাস্ট করে অফিসে বেড়িয়ে যায়।কিন্তু আজ আয়ুসী ঠিক করে নিয়েছে আজ সে আয়ানের সাথে বাড়ি ফিরবে না।

আয়ানের কেবিনে গিয়ে-ভাই ফোন করেছিল।তাই আজ আমি—-

আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-ভাইকে বাড়ি ডেকে নাও।

আয়ুসী শুনে আঁতঙ্কে ওঠে-না,

কী না-আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে।

ভাইয়ের কাল অন্য জায়গায় যাওয়ার আছে।তাই আজ আমাদের বাড়ি যাবে আবার ফিরবে।তার চেয়ে আমি দেখা করে আসি।-আয়ুসী

আয়ান চুপ করে থাকে।

আয়ুসী আবার বলে-আগের দিন আমি ফিরে গিয়েছিলাম।

হুম,কিন্তু সন্ধ্যা যেন না হয়।তুমি এখন বেড়িয়ে পর।-আয়ান

আয়ুসী তো শুনে ভীষণ খুশি।তাড়াতাড়ি সে বেড়িয়ে পরে।অফিস থেকে বেড়িয়ে সে হাঁটতে শুরু করে।আপনমনে বলতে থাকে-কী করে খুঁজব।এতো বড় শহরে।কালও লোকটাকে দেখতে পেলাম না।আমি কী কিছু পারব।

এদিকে সে আপনমনে মাথা নীচু করে চিন্তা করতে করতে হাঁটছিল তাই কেউ সামনের দিক দিয়ে আসছে দেখতেই পায়নি।

এই যে ম্যাডাম—-

আয়ুসী সামনের দিকে তাকিয়ে-আরে কুনাল বাবু!

হ্যাঁ,আমি আর আপনি এভাবে হাঁটছেন?-কুনাল

না,কিছু নয়।-আয়ুসী

ও ও তা কোথায় যাচ্ছেন?-কুনাল

আয়ুসী-একটু দরকার আছে।

আচ্ছা।তা আয়ুসী ম্যাডাম আমাদের এতো বার দেখা হচ্ছে।এক কাপ কফি তো চলতেই পারে।চলুন-কুনাল

না,না আমার একটু দরকার আছে,অন্য দিন দেখা যাবে-আয়ুসী

কুনাল কিছু বলতে যাবে।আয়ুসী বলে-আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কী করে?

কুনাল যেন একটু ভয় পেয়ে যায়।বলে-কেন সেদিনই তো আপনি বলেছিলেন।

আয়ুসী-আমি!হবে হয়তো।

আয়ুসী আবার বলে-আচ্ছা আপনি ওখানে কেন গিয়েছিলেন?শ্রেয়া কী আপনার ফ্রেন্ড?

কুনাল আমতা আমতা করে বলে-না,মানে।বলছি আমার একটা ফোন করার ছিল যা আমি ভুলে গিয়েছি।দাঁড়ান একটু আমি ফোনটা করে নি।

আয়ুসী দেখে কুনাল ফোনটা বের করে।আর আয়ুসীর থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে থাকে।

এদিকে আয়ানও অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়েছে।দূর থেকে রাস্তায় আয়ুসীকে দেখে মাথা গরম হয়ে যায়।সে কুনালের সাথে আয়ুসীকে কথা বলতে দেখছে।আয়ুসীর কাছে এসে গাড়ি থামিয়ে বলে-কী করছ এখানে?ভাইয়ের কাছে যাওনি?চল আমিও যাচ্ছি।

আয়ানকে দেখে আয়ুসী কী বলবে বুঝতে পারে না।বলে-ভাই যেতে না করল।ও ওর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে।

আয়ান আয়ুসীর দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়।ভাবে আয়ুসী কিছু একটা লুকাচ্ছে।

তাহলে দাঁড়িয়ে কেন?উঠে এসো-আয়ান

আয়ুসী গাড়িতে উঠে পরে।এদিকে ধ্রুব ফোন করে-এই তোদের ঘুরতে যাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে গেছে।পরশু ট্রেন।গ্যাংটকের টিকিট।

আয়ান-পরশু!গ্যাংটক!

কেন ভালো লাগেনি?যা যা ঘুরে আয়।অনেক কষ্টে টিকিট জোগার করেছি।-ধ্রুব

কিন্তু—-আয়ান

তুই সত্যি যেতে চাস তো-ধ্রুব

আয়ান-আমি যাওয়ার জন্য সবসময় রেডি।

আয়ান ফোনটা রেখে দেয়।আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকিয়ে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here