প্রতিশোধ পর্ব_১৬
💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
আয়ান ফোনটা রেখে দেয়।আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকিয়ে।এদিকে আয়ান কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আয়ুসীর মনে সন্দেহ হয়।কে ফোন করেছিল।অনেক প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে।আয়ুসী ভাবতে থাকে কোথায় যাবে বললেন।আবার বললেন যাওয়ার জন্য সবসময় রেডি।
আয়ুসী মনে মনে বলে-আচ্ছা,মামনি কে সেদিন ঘুরতে হাওয়ার কথা বলেছিল সেটা নয় তো?আবার গ্যাংটক।
আয়ুসী ভাবে একবার জিজ্ঞাসা করবে।কিন্তু আবার ভাবে আমি কেন জিজ্ঞাসা করব।যার যেখানে ইচ্ছা যাক।তাছাড়া জিজ্ঞাসা করলে অনেক কিছু শুনিয়ে দেবেন।তার থেকে চুপ করে থাকা ভালো।
আয়ুসী জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকে।আর ভাবতে থাকে আজ ও খুঁজতে যাওয়া হল না।খুব রাগ হয় আয়ানের উপর।
রাগে বিড়বিড় করে বলে-আসার আর সময় পেল না।ভালো লাগে না।কী জ্বালায় যে পড়েছি।
আয়ুসী বলতে থাকে আর আয়ানের দিকে আড়ে আড়ে চায়।আয়ানের চোখে চোখ পরে যায়।আয়ুসী অন্যদিকে ফিরে যায়।
আয়ান গাড়ি থামিয়ে দেয়।
কী ব্যাপার এমন ভাবে তাকাচ্ছ কেন?যেন ভষ্ম করে দেবে আর তখন থেকে কী বিড়বিড় করছ।একটু জোরে বলো না আমি ও শুনি তোমার মনে কী চলছে-আয়ান
আয়ুসী শুনে অবাক হয়ে যায়।
আস্তে আস্তে বলে-কান আর চোখ তো নয়।চোখ যেন সি সি টি ভি আর কান তো নয় যেন—-
আয়ান আয়ুসীর কথা শেষ করতে দেয় না।বলে-এই কী বলছ তুমি?
আয়ুসী হেসে বলে-আপনি শুনতে পাননি।
এতো আস্তে বললে শুনব কী করে-আয়ান
আয়ুসী জোরে বলে ফেলে-তাহলে কানটা গেছে।বাবা বেঁচে গেছি।
আয়ান কিছু বুঝতে পারে না।
এই কী বললে পরিষ্কার করে বল-আয়ান
কিছু নয়,বললাম আমার কানের ডাক্তার দেখতে হবে।কয়েকদিন ধরে কম শুনছি।-আয়ুসী
হ্যাঁ,তা ঠিক তুমি কমই শোনো।-আয়ান
কী আমি কম শুনি-আয়ুসী রেগে যায়।
আয়ান আয়ুসীর একটু কাছে এসে বলে-এই তোমার প্রবলেম টা কী?তুমিই তো বললে।
আমি বললাম বলে আপনিও বললেন-আয়ুসী
হুম-আয়ান
এই বলে সে গাড়ি স্টার্ট দেয়
ভালো হবে না,আপনি বলবেন না।-আয়ুসী
উফ্ফ,আর প্যানপ্যান কর না।বাড়ি গিয়ে প্যাকিং শুরু করে দেবে।পরশু আমরা গ্যাংটক যাচ্ছি।-আয়ান
আয়ুসী আয়ানের কথা শুনে জোরে চিল্লিয়ে বলে-কী আমরা গ্যাংটক যাব!
আয়ান গাড়ি থামিয়ে দেয়।বলে-এই তুমি কী আমাকে হার্ট অ্যাটাকে মেরে ফেলবার প্ল্যানিং করেছ?
এই দেখুন আমি যাব না কিন্তু-আয়ুসী
আয়ান আয়ুসীকে এক টানে কাছে নিয়ে এসে বলে-তুমি কী ভাবছ।তোমাকে নিয়ে গিয়ে তোমার সাথে আমি—-।ভুল ভাবছ ওসব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও।মামনি বলেছে তাই যাচ্ছি।
আয়ুসী আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ান আয়ুসীকে দূরে ঠেলে দিয়ে গাড়ি স্পিডে চালাতে থাকে।
আয়ুসী দেখতে পায়।আয়ান রেগে আছে।
এমন ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন?অঘটন ঘটে যাবে-আয়ুসী
যা ঘটার তা অনেক দিন আগেই ঘটে গেছে।আর নতুন করে কী ঘটবে-আয়ান
আয়ুসী আর কিছু বলে না চুপ করে যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যায়।আর আয়ান রুমে চলে যায়।আর লাভাকে সাথে নিয়ে চলে যায়।আয়ুসীও রুমে আসে।আয়ুসী দেখে লাভা সোফার উপর বসে।আয়ুসীকে দেখে ছুটে চলে আসে।আয়ুসী লাভাকে কোলে তুলে আদর করতে থাকে।
আয়ান এদিকে শাওয়ার নিয়ে বার হয়।আয়ুসী দেখে আয়ান খালি গায়ে।শুধু একটা টাওয়াল পরে আছে।এদিকে আয়ুসী আয়ানকে দেখে মুখ লোকাতে থাকে।আয়ান এতোক্ষণ দেখতে পায়নি।
আয়ুসীকে দেখে সে কী করে ভেবে পায় না।সে যেন লজ্জায় পরে যায়।
এই,তুমি এখানে?-আয়ান
আয়ুসী অন্যদিকে ফিরে বলে-আমি কিছু দেখিনি।বিশ্বাস করুন আমি কিছু দেখিনি।আমি চলে যাচ্ছি।
এই বলে আয়ুসী চোখ বন্ধ করে রুম থেকে বার হতে যায়।কিন্তু টেবিলে ধাক্কা লেগে পরে যাচ্ছে।আয়ান দেখতে পেয়ে গিয়ে ধরে নেয়।
আয়ুসী চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে থাকে।আয়ানের চুলগুলো ভিজে থাকায় তার জল আয়ুসীর চোখে মুখে পরছে।আর আয়ানের শরীর থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে।
আয়ানও আয়ুসীর দিকে একভাবেই চেয়ে আছে।এদিকে আয়ানের এক হাত আয়ুসীকে ধরে।আর হঠাৎ অন্য হাত দিয়ে আয়ুসীর মুখে থাকা জল মুছিয়ে দিতে থাকে।আয়ুসী চোখ বন্ধ করে নেয়।আয়ানের পরশ সে অনুভব করছে।আর তার সাথে সাথে আয়ুসীর সারা শরীরে যেন বিদ্যুত খেলে যাচ্ছে।
হঠাৎ লাভা সে ওদের সামনে চেঁচাতে থাকে।তাতে আয়ান আয়ুসীকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
আয়ুসীও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ড্রয়িং রুমের জানলার ধারে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।আয়ুসী অনুভব করে বুকের ভিতর হার্ট টা যেন আজ বেশিই জোরে চলছে।
আয়ুসী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
ওইদিকে আয়ান মনে মনে ভাবে-আচ্ছা আমি কেন বারবার ওর কাছে যাই।না,আর যাব না।কিছুতেই মা।কিছুতেই না।
আয়ুসী বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না।ডিনার রেডি করে।আয়ানকে ডাকার আগেই আয়ান চলে আসে।মাথা নীচু করে চুপচাপ খেয়ে উঠে পরে।
আয়ুসী সেদিন আর খায় না।গিয়ে শুয়ে পরে।পরের দিন একইভাবে কাটে।অফিস থেকে ফিরে আয়ুসী প্যাকিং করতে শুরু করে।
আয়ুসী ভেবে পায় না।আয়ান কী নিজের প্যাকিং নিজেই করবে।বারবার জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও ফিরে আসে।
একবার আয়ুসীকে দেখতে পেয়ে আয়ান-এই কিছু বলবে?
আয়ুসী-আপনার প্যাকিং
আয়ান-আমি করে নেব।আর ঠান্ডার পোশাক ঠিকমত নেবে।কোনো প্রবলেম হলেআমি কিন্তু কিছু করব না।
আয়ুসী মাথা নেড়ে চলে যায়।আয়ুসীর কাছে শীতের পোশাক খুব একটা নেই।তাও সে আয়ানকে কিছু বলে না।
পরেরদিন সন্ধ্যায় আয়ান আয়ুসী লাভাকে ধ্রুবর বাড়িতে রেখে দিয়ে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।সন্ধ্যার ট্রেন।সিট নম্বর খুঁজে সিট দেখে আয়ুসী একটু ভয় পেয়ে যায়।কারন তার সিট ওপরে।আর আয়ুসী তো উপরে উঠতেই ভয় পাচ্ছে।আয়ানের সিট নীচে।
আয়ান-তোমার উপরের সিট।
আমি নীচে থাকি না,আপনি উপরে থাকুন।-আয়ুসী
আয়ান একটু ভেবে বলে-না,কোনো দরকার নেই।
এদিকে এক ভদ্রমহিলা যে আয়ানের পাশের নীচের সিটে বসে ছিলেন।আয়ুসীকে বলে-তোমার বর তোমাকে নীচে রাখতে ভয় পাচ্ছে।ভাবছে যদি কোনো বিপদ হয়।
আয়ুসী শুনে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ান কিছু বলে না।ও লাগেজ গুলো ঠিকঠাক জায়গায় রেখে দিতে থাকে।
ভদ্রমহিলাটি বলেন-তুমি এই নীচে থাকো।আমি উপরে থাকছি।
আয়ুসীর শুনে খুব আনন্দ হয়।
thank you আন্টি-আয়ুসী
ভদ্রমহিলা হেসে চলে যায়।
আয়ান আর আয়ুসী কিছুক্ষণ বসে থাকে।কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
রাত হলে দুজনেই কিছু খেয়ে নেয়।
আয়ান শুয়ে পরতে পরতে বলে-শুয়ে পরবে না বসেই থাকবে সারা রাত।
আয়ুসী-হুম
আয়ান এদিকে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে।
ট্রেন ছুটতে থাকে।আয়ুসী জানলার বাইরে তাকিয়ে চলন্ত ট্রেনের দুরন্ত দৃশ্য দেখতে থাকে।জানলা সে বন্ধ করে না।
আয়ান এদিকে উঠে জানলা বন্ধ করে দিয়ে আয়ুসীর দিকে একবার তাকিয়ে শুয়ে পরে।
আয়ুসী নিরাশ হয়ে যায়।সেও শুয়ে পরে।কিন্তু তার ট্রেনে ঘুমানো অভ্যাস নেই।তাই ঘুম আসে না।
একটু রাত হয়ে আসলে সে আস্তে আস্তে জানলা খুলে দেয়।আয়ুসীর খুব ভালো লাগে।কোথাও একটু আলো দেখা যাচ্ছে আবার কোথাও ঘুটঘুটে অন্ধকার।আয়ুসী একটু বেশি অন্ধকার দেখলে জানলা থেকে সরে আসে।হাওয়ায় তার একটু শীত করতে থাকে।তাই চাদর বার করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।মাঝে মাঝে আবার সেই হাওয়া মুখে লাগাতে জানলার কাছে মুখটা নিয়ে যায়।
ভোর হতে থাকে।কিন্তু আয়ুসী ঘুমায় না।তার চোখে ঘুম আসে না।এদিকে আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আয়ুসীকে বসে থাকতে দেখে বলে-এই তুমি ঘুমাও নি?
আয়ুসী মিথ্যা বলে-হ্যাঁ,ঘুমিয়েছি তো।
আয়ান ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে যায়-দেখে মনে হচ্ছে না।
আয়ুসী অবাক হয়ে যায়।ভাবে এনার কাছে কিছুই লোকানো যায় না তো।
আয়ান ফিরে আসে।বাড়ি থেকেই বিভিন্ন শুকনো খাবার এনেছিল সেগুলোই বার করতে থাকে।আয়ুসীও ফ্রেশ হয়ে নেয়।
আয়ান একটা বিস্কুটের প্যাকেট আয়ুসীর দিকে এগিয়ে দেয়।আয়ুসী নিয়ে নেয়।
এদিকে তাদের পাশের দিকে এক নব বিবাহিত স্বামী স্ত্রী ছিল।মেয়েটি আয়ুসীকে ডেকে বলে-তোমার কী নতুন বিয়ে হয়েছে?
আয়ুসী একবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়।
ছেলেটি বলে-দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আচ্ছা আপনাদের কী love marriage।
মেয়েটি বলে-না,না,arrange marriage।দেখ না কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব।দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।
আয়ান সবই শুনছে।কিন্তু কিছু বলছে না।
ছেলেটি আর মেয়েটি আর কিছু বলে না।নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে।
আয়ুসীর এদিকে শীত করতে থাকে।সে চাদরটাকে আরো ভালো ভাবে জড়িয়ে নেয়।
আয়ান দেখতে পেয়ে বলে-ওতে কোনো কাজ হবে না।অন্য কিছু বার করে নাও।
আয়ুসী একটা সোয়েটার বার করে।আয়ান দেখে বলে ওতেও কাজ করবে না।
আয়ুসী-এর থেকে মোটা সোয়েটার আমার কাছে নেই।
আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-সেদিন যখন বলছিলাম মন কোথায় ছিল?
আয়ুসী কিছু বলে না।
আয়ান নিজের একটা জ্যাকেট বার করে দেয়।
আয়ুসী-দরকার নেই।
আয়ান-কিছু হলে এখানে ফেলে চলে যাব।দেখ কী করবে।
আয়ুসী ভয় পেয়ে জ্যাকেটটা নিয়ে পরে নেয়।
কয়েকঘন্টা পরে তারা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামে।আয়ান নেমে আগে একটা শপিং মলে যায়।আয়ুসীর কয়েকটা ভালো শীতের পোশাক কিনে নেয়।আয়ুসী না না করতে থাকে।আয়ান বলে-আমার ইচ্ছা নেই।কিন্তু কিছু হলে তখন কে তোমার দায়িত্ব নেবে।আয়ুসী চুপ করে থাকে।
তারপর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে গ্যাংটকে পাড়ি দেয়।সেখানে হোটেল বুকিং ছিল।আয়ান সব কিছু ফর্মালিটি সেরে রুমে যায়।তারা রাতেই হোটেলে আসে।তাই রাতের ডিনারটা আয়ান অর্ডার করে দেয়।
আয়ুসী ফ্রেশ হয়ে আসে।কিন্তু সে শীতে কাবু হয়ে গেছে।বারবার হাঁচতে থাকে।
আয়ান দেখেও কিছু বলে না।
রাতের ডিনার চলে আসে।দুজনে খেতে বসে।তখন ধ্রুব ফোন করে-পৌঁছে গিয়েছিস?
হুম-আয়ান
সাবধানে থাকবি দুজনে-ধ্রুব
হ্যাঁ-আয়ান
আর শোন ঘোরার ফটো আনবি।আমি দেখব-ধ্রুব
কী ফটো!-আয়ান
হ্যাঁ,আমি দেখব।আমাকে তো নিয়ে গেলি না।-এই বলে ধ্রুব হাসতে থাকে।
এদিকে আয়ুসী তো সব শুনতে পাচ্ছে।ফোনটা লাউড স্পিকারে দেওয়া।
আয়ান-হ্যাঁ,তুলব।
আচ্ছা,রাখছি রে,bye-ধ্রুব
ধ্রুব ফোন কেটে দেয়।আর আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকেই চেয়ে আছে।যেন কিছু শোনার জন্য।
চলবে—-