#প্রতিশোধ
পর্ব_৪ 💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
অফিসের কাজ একটু বাকি থাকায় আয়ুসী তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসে।উপরে উঠতে যাবে দেখে রামু কাকা সাদা অর্কিড নিয়ে যাচ্ছে।রামু কাকা ওখানেই কাজ করে।অর্কিড দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে-এই অর্কিড কার জন্য রামু কাকা।
নতুন স্যারের জন্য।ওনার কেবিনে অন্য কোনো ফুল রাখা বারণ।উনি অর্কিড ছাড়া অন্য কোনো ফুল পছন্দ করেন না।-রামু কাকা।
আচ্ছা।-আয়ুসী।
হ্যাঁ,দিদিমিনি।অর্কিড তাও সাদা চাই।তা খুঁজে পেতে দেরি হয়ে গেল।ওইদিকে স্যারও এসে গেছেন।-রামু কাকা।
স্যার এসে গেছেন, এতো তাড়তাড়ি!-আয়ুসী।
আয়ুসী ছুটতে ছুটতে নিজের কেবিনে যায়।আয়ুসী আর আয়ানের কেবিন পাশাপাশি।তাই ভাবে যদি আমাকে দেখতে না পায় তাহলে হয়তো খুব বকা খাবে।কিন্তু জোরে ছুটতে গিয়ে স্লিপ করে পরে যাচ্ছিল।কিন্তু দেখে একজন ধরে ফেলেছে।তার হাত ঠিক আয়ুসীর কোমরের কাছে।আর তার চোখ আয়ুসীর চোখের দিকে।আয়ুসী চোখ নামিয়ে আয়ুসী নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু একি সে নিজেকে ছাড়াতে পারে না।আর সেই চোখ এখনও তার দিকেই তাকিয়ে।
আয়ুসী কী করবে বুঝতে না পেরে বলে ওঠে-স্যার।
হ্যাঁ,এ হল আয়ান।আয়ুসীদের নতুন বস।আয়ুসীর কথাতে আয়ান আয়ুসীকে ছেড়ে দেয়।আর বলে-সরি,আমি আসলে —-।আমার ভীষণ বড় ভুল হয়ে গেছে।
আয়ুসী-না,স্যার।ঠিক আছে।আপনি না বাঁচালে আমি তো এতোক্ষণে হাসপাতালে।
আয়ান-আমি আসলে ওভাবে—-
আয়ুসী-স্যার,আমি কিছু মনে করিনি।
আয়ান কিছু বলে না।আয়ুসী আয়ানকে বলে নিজের কেবিনে চলে আসে।আর ভাবতে থাকে সে তো একটু অস্বস্তিতে পরেছিল।সেটা আয়ানের চোখের জন্য।কিন্তু সে কিছু বলতে পারেনি।কারন আয়ুসী লক্ষ্য করে আয়ানের হাত কোনো অভদ্রতা করেনি।এসব ভাবতে ভাবতে সে নিজের কাজ করতে থাকে।
কাজ করতে করতে তার সকালের অর্কিডের কথা মনে পড়ে।ভাবে এই কী সে?তার ও তো অর্কিড পছন্দ।অর্কিড ছাড়া কোনো ফুলই পছন্দ করত না।না,না,এ কী করে হয়।সে তো পছন্দ করত গোলাপি অর্কিড।তাহলে—-আয়ুসী মনে মনে বলে-যত সব ভুল চিন্তা।শুনলাম এনার তো বাবা আছে।
আসলে এখানকার কর্মচারীরা বিপ্লব আঙ্কেলকেই তার বাবা বলে মনে করেছে।তাই আয়ুসীও তাই জানে।
আয়ুসীকে একজন বলে যায় অফিস ছুটির এক ঘন্টা আগে মিটিং শুরু হবে।স্যার সবাইকে ডেকেছেন।তাই হলঘরের দিকে যেন চলে যায়।আয়ুসী ভাবে এখন আবার কীসের মিটিং।অন্যদিকে সে আয়ানের কেবিনের দিকে দেখে।কিন্তু সেখানে আয়ান নেই।ভাবে মিটিং যে করবে সেই কোথায়।
সবাই মিটিংরুমে হাজির হয়।দেখে সবাই এসেছে কিন্তু যে ডেকেছে সেই নেই।যে সবাইকে বলে গিয়েছিল তাকে জিজ্ঞাসা করে সে বলে স্যার সকালের দিকে বলেছিল।সবাই অপেক্ষা করতে থাকে।হঠাৎ আয়ান তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢোকে।সবাই উঠে দাঁড়ায়।
সরি,সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।সবাই দাঁড়িয়ে কেনো।বসো বসো।-আয়ান
সবাই বসে পড়ে।
আয়ান বলতে থাকে।
আমি যে জন্য তোমাদের ডেকেছি।আমি একটি নতুন কিছু করতে চাই।আমরা জানি আমাদের দেশেই অনেক ছেলেমেয়ে অনাথ আশ্রমে বড় হচ্ছে।তাদেরকে যেমন অর্থ দিয়ে আমি সাহায্য করতে চাই তেমন তাদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে নিজের অর্থ নিজে জোগার করতে পারে সেই ব্যাবস্থা করতে চাই।-আয়ান।
একজন বলে-স্যার ওরা কী ভাবে কী করবে?
ওরা নিজে কিছু তৈরি করবে সেগুলোই আমাদের কোম্পানি মার্কেটে আনবে।-আয়ুসী বলে ওঠে।
আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকায়।
একদম ঠিক বলেছেন।কিন্তু আমরা ওদেরকে শেখাব তারপর ওরা ওরা সেগুলো তৈরি করবে-আয়ান।
সবাই আয়ানের কথায় মত দেয়।আয়ানের এই সিদ্ধান্তে সবাই আয়ানের প্রশংসা করে।
মিটিং শেষে সবাই বাড়ির দিকে রওনা হয়।আয়ুসীও হাঁটতে থাকে।সে বাস ধরবে।তাই একটু এগিয়ে যায়। কিন্তু সামনে কতোগুলো কুকুর এমনভাবে পথ আটকে রাখে যে সে যেতে পারে না।সে কুকুরে ভীষণ ভয় পায়।কী করবে বুঝতে পারে না।
একটি গাড়ি এসে তার পাশে থামে।আয়ুসীর কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য নেই।গাড়ি থেকে আয়ান নেমে এসে আয়ুসীর পাশে এসে বলে-কী ব্যাপার?এখানে কী করছ?
আয়ানের ডাকে সে তাড়তাড়ি পিছিয়ে এসে অজান্তে আয়ানের হাত ধরে বলে-কু-কু-র
আয়ান-হ্যাঁ,কুকুরই তো।তুমি কী ভাবলে বাঘ।
আয়ুসী আয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকায়।আয়ান বলে-ok,ok,আমি দেখছি।
আয়ান এগোতে যাবে।কিন্তু দেখে আয়ুসী তার হাত ধরে আছে আর ওর হাত কাঁপছে।
আয়ান-হাতটা ছাড়ুন না হলে আমি যাব কী করে।
আয়ুসী হাতের দিকে তাকিয়ে হাতটা ছেড়ে দেয়।
আয়ান কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে ফিরে আসে।আয়ান দেখে এখনও আয়ুসী কাঁপছে।
আয়ান-ভয় পেও না।চলে গেছে।
আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকায়।বলে-ধন্যবাদ।
এই বলে আয়ুসী চলে যাচ্ছিল।তখন আয়ান বলে-আজ শুনলাম সামনে কুকুরের প্রচন্ড ভীড়।
আয়ুসী ফিরে এসে।আমতা আমতা করে বলে-কী-কী।
আয়ান-হুম।
আয়ুসী-আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন।
আয়ান-ভয় নয়।যেটা সত্যি সেটা বললাম।চলো আমি তোমাকে আজ ছেড়ে দিয়ে আসি।
আয়ুসী-তার কোনো দরকার নেই।
আয়ান-ভেবে দেখ।আবার কিন্তু—-
আয়ুসী-না,স্যার।ঠিক আছে আমি চলে যাব।
আয়ুসী চলে যায়।আয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে পরে।
চলবে—-