প্রতিশোধ পর্ব_৫

#প্রতিশোধ
পর্ব_৫ 💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

আয়ুসী বাড়ি ফিরে আসে।কিন্তু আয়ানের ব্যবহারে সে ভীষণ রেগে আছে।বাড়ি এসে রাগে নিজেই বকর বকর করতে থাকে।

কী ভেবেছে।কুকুর দেখে কেউ কী ভয় পায় না।বাজে ছেলে একটা।-আয়ুসী

আয়ুসীর কথা ওর ভাই শুনতে পেয়ে বলে-এই,দিদিভাই কী হয়েছে?

কী আর হবে।এই বলে আয়ুসী নিলয়কে সব কথা বলে।নিলয় শুনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

আয়ুসী দেখতে পেয়ে বলে-হ্যাঁ,তুই ও হাস।ভালো হয়েছে আমি কুকুর দেখে ভয় পাই,আর পাব।

এই ভাবে দিদি আর ভাইয়ের দুষ্টুমি চলতে থাকে।

অন্যদিকে

আয়ান আজ বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে যায়।বিপ্লব আঙ্কেল বাড়িতে ছিলেন না।কারন তিনি এবারে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন।তাই তার অনেক কাজ।তাই আয়ান তার স্ত্রী আর মেয়ে শ্রেয়ার সাথে গল্প করতে থাকে।

কিছু খেয়েছিস?-শ্রেয়ার মা সুষমা দেবী

না,আন্টি।আসলে একবারে অফিস থেকে আসছি তো।-আয়ান

কী?তুই একটু বস।আমি আসছি।-সুষমা দেবী

আন্টি এতো ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই।-আয়ান

সুষমা দেবী আয়ানের কথা শোনে না।চলে যায়।অন্যদিকে শ্রেয়া ফ্যাশান ডিজাইনার নিয়ে পড়াশোনা করছে।আয়ানের থেকে ছোটো।

কী রে,তোর কী খবর?-আয়ান

কী আবার,ওই চলছে।তোমার খবর কী?নতুন কোম্পানি কিনেছ কেমন লাগছে।-শ্রেয়া

ভালো।-আয়ান

শুধু ভালো।না—-।-এই বলে সে হাসতে থাকে।

হাসছিস কেন?-আয়ান

আমি ভাবলাম তুমি বলবে খুব ভালো।কারন—-।-শ্রেয়া

কী কারন-আয়ান

কাল কলেজ থেকে আসার সময় দেখলাম তোমার গাড়িতে একটা সুন্দরী মেয়ে।তা কবে থেকে চলছে।-শ্রেয়া কথাটা বলে আয়ানের দিকে ইশারা করতে থাকে।

তুই খুব পেকেছিস।আন্টিকে বলতে হবে।-আয়ান

তুমি বললে আমিও বলব।যে তুমি প্রেম করছ তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে।-শ্রেয়া

এই না তুই কিছু বলবি না।-আয়ান

ওইদিকে সুষমা দেবী চলে আসে।

সুষমা দেবী-কী রে কী বলবে না।

না,আন্টি কিছু নয়।-আয়ান

সুষমা দেবী আয়ানের জন্য লুচি তরকারি করে এনেছে।কারন সে খুব পছন্দ করে।আর আয়ান আর শ্রেয়া দুজনে বকর বকর করতে থাকে।

সুষমা দেবী ওদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।মনে মনে বলে-জানি তোরা নিজেদেরকে কোন চোখে দেখিস।কিন্তু একজন তো তোদের সম্পর্ককে অন্য নাম দিতে চাইছে।জানি না কী হবে।

অন্যদিকে

(দুটি লোকের কথোপকথন)

কী রে কেমন চলছে প্রচার?—-সেই লোকটি(উকিল ও পুলিশের সাথে থাকা)

হ্যাঁ,বস ভালোই চলছে।বস অনেকে বলছে আমরা যেটা ভালো বুঝব সেটা করব।-অন্য লোকটি

তাই নাকি।তাহলে কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে অন্য পথ নিবি।—-বস

ঠিক আছে বস।-অন্য লোকটি

হুম,আর তোকে যে কাজটা করতে বলেছিলাম করছিস?—-বস

হ্যাঁ,—-অন্য লোকটি

কী দেখলি?—-বস

বস,কাল মেয়েটিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।আর আজ রাস্তাতে দুজনকে দেখেছি।-একটি লোক

বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে!-বস

হ্যাঁ,স্যার।-লোকটি

অন্য লোকটি রেগে গিয়ে পাশে থাকা একটি কাঁচের জিনিস ছুড়ে ফেলে দেয়।আর বলে-এ হতে পারে না।তুই ভুল দেখেছিস।-বস

না,স্যার আমি ঠিক দেখছি।-লোকটি

লোকটির গলা টিপে ধরে বস।বলে-যদি ভুল কথা হয় যে মুখ দিয়ে বলেছিস সেই মুখ চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেব।যাও চলে যাও।

লোকটি চলে যায়।আর অন্য লোকটি বলতে থাকে- কী করতে চলেছে ও।ছোটোবেলা থেকে যে কথা বুঝিয়ে এলাম তার উল্টো কাজ করছে।না,না,আমাকে আমার কাজ টা আগে করতে হবে।বিয়ের ব্যাবস্থা করতে হবে।আমার চাল ভুল করলে চলবে না।

লোকটি হাসতে থাকে আর বলতে থাকে-তোমাকে দিয়ে যেটা করব ভেবেছি সেটাই আগে করব।তারপর অন্য খেলা।

এদিকে তারপর দিন আয়ান,ধ্রুব,আয়ুসী অর অফিসের দুইজন স্টাফ মিলে কয়েকটি অনাথ আশ্রমে যাবে ঠিক করে।প্রথমেএকটি অনাথ আশ্রমে যায়।সেখানে গিয়ে কথা বলতে আশ্রমের লোক এ ব্যাপারে রাজি হবে কিনা।আশ্রমে ঢুকতে যাবে দেখে কতোগুলো ছেলে মেয়ে খেলছে।আয়ান ওদেরকে দেখে ওদের দিকে গিয়ে ওদের মধ্যে একটি বাচ্চা ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।সবাই দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে।আয়ুসীও দেখে আয়ানের চোখে যেন কিসের দুঃখ।ওকে দেখে ধ্রুব ওর কাছে এসে বলে-চল,ভিতরে গিয়ে কথা বলি।

আয়ান-হুম,চল।

তারা ভিতরে গিয়ে কথা বলে।ওদের কথায় আশ্রমের লোক সায় দেয়।বলে-এতো ভালো ভাবনা।আপনারা ওদের শেখাতে পারেন।

ওখান থেকে কথা বলে সবাই বাইরে এসে গাড়িতে উঠতে যাবে।দেখে আয়ুসী নেই।

আয়ান বলে-আপনারা গাড়িতে উঠুন,আমি দেখছি।

আয়ান আয়ুসীকে খুঁজতে গিয়ে দেখে আয়ুসী কতগুলো বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলছে।আয়ান আয়ুসীকে ডাকে না।চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব এসে আয়ানের কাঁধে হাত রাখে।আয়ান চমকে যায়।

ধ্রুব বলে-কী দেখছিস?

আয়ান চুপ করে থাকে।

ধ্রুব-তুই না প্রতিশোধ নিবি তাহলে এখন গিয়ে ওকে মেরে ফেল।ও তোকে দেখতেও পাবে না।

আয়ান তাও চুপ করে থাকে।

ধ্রুব-প্রতিশোধ মানে কী তুই বুঝেছিস আমি জানি না।আমি কিন্তু এরকম প্রতিশোধ ভাবতে পারি না।ওনার তো কোনো দোষ নেই।ওনার অপরাধ কী।উনি ওই লোকটির মেয়ে সেটাই কী ওনার দোষ।কী হল চুপ করে আছিস কেন বল।

আয়ান রেগে গিয়ে বলে-হ্যাঁ,ওর দোষ।যেটা ওর বাবা করেছে—-।আমার ছোটবেলা কেড়ে নিয়েছে।আমি বাবা মার স্নেহ পেলাম না।

ধ্রুব-কিন্তু,ওনার বাবা তো শাস্তি পেয়েছেন।তাহলে আবার ওনাকে কেন?

আয়ান-উনি শাস্তি পান নি।

ধ্রুব-কিন্তু—-

আয়ান-ধ্রুব,তুই চুপ কর।ওর হয়ে কথা বলতে আসিস না।আমার মনে হয় তোকে বলাই ভুল হয়েছে।তোকে বিশ্বাস করে বলেছিলাম।আর তুই ওর হয়ে কথা বলছিস।

এই বলে আয়ান চলে যায়।

ধ্রুব নিজেই নিজেই বলতে থাকে-ছোটবেলার সেই শিশুমনে তোকে যে ভুল বোঝানো হয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে।আর তাতেই তোর মনে এই প্রতিশোধের আগুন।আমি আন্দাজ করতে পারছি এ ভুল ধারনা তোর মনে কে দিয়েছে।কিন্তু আমি কী করব।কী করে তোকে বাঁচাব।কী করে বাঁচাব মেয়েটিকে।তুই কী করতে যাচ্ছিস তাও বলছিস না।মেয়েটির সাথে খারাপ ব্যবহার করতেও দেখিনি।তাহলে কী চলছে তোর মনে।

ধ্রুব একবার আয়ুসীর দিকে তাকায়।তারপর এগিয়ে গিয়ে আয়ুসীকে ডেকে আনে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here