প্রতিশোধ পর্ব_৮
💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
আয়ুসী পরদিন অফিসে যায়।কিন্তু দেখে আয়ান আসেনি।আর ধ্রুবকেও দেখতে পায় না।আয়ান ঠিক আছে কিনা সেই চিন্তাই করতে থাকে।তাই ঠিক করে অফিসের পর একবার আয়ানকে দেখতে যাবে।
অফিসের ছুটির পর আয়ানের বাড়িতে যায়।দেখে দরজা খোলা।খুঁজতে খুঁজতে আয়ানের ঘরের দিকে যায় দেখে আয়ান ব্যালকনিতে চোখ বন্ধ করে বসে। আছে।আয়ুসী আয়ানকে ডাকবে কিনা ভাবছে।তাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বলে-স্যার
আয়ুসীর ডাকে আয়ান চোখ খুলে তাকায়।
আপনি!-আয়ান
আপনার শরীর কেমন আছে তাই দেখতে এলাম।-আয়ুসী
একটু ভালো।আপনি দাঁড়িয়ে কেন বসুন না।-আয়ান
না,না,ঠিক আছে।-আয়ুসী
আয়ান উঠতে যায় কিন্তু শরীর দুর্বল থাকায় উঠতে পারে না।
আপনি উঠছেন কেন?-আয়ুসী
আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এভাবে—-আয়ান
আচ্ছা,ঠিক আছে আমি বসছি।-এই বলে আয়ুসী বসে।
আয়ুসী দেখে আয়ানের পাশে একটা স্যুপের বাটি।আয়ুসী দেখে বলে-স্যার আপনি কিছু খেয়েছেন?
আয়ান-হ্যাঁ,ধ্রুব সকালে যাওয়ার সময় স্যুপ করে দিয়েছিল।ওই—-।
আয়ান আর কিছু বলে না।
স্যার,আপনি সকালে খেয়েছেন আর কিছু খাননি?-আয়ুসী
শরীরটা ভালো নেই তাই আর ভালোও লাগেনি।আর ধ্রুবর ও তো কাজ আছে।-আয়ান
স্যার আপনি তখন থেকে এখানেই বসে আছেন?-আয়ুসী
হ্যাঁ,আজ আকাশ টাও মেঘলা।বেশ ভালো লাগছে।-আয়ান
স্যার,আমি আপনার জন্য কিছু করে আনছি।রান্নাঘরে কিছু আছে?-আয়ুসী
আপনি!না,না,ঠিক আছে।-আয়ান
স্যার,প্লিজ-আয়ুসী
আচ্ছা,ঠিক আছে।রান্নাঘরে ধ্রুব আমি মাঝে মাঝে রান্না করে থাকি।দেখুন কিছু তো আছে।-আয়ান
আয়ান আয়ুসীকে রান্নাঘর কোন দিকে বলে দেয়।
আয়ুসী রান্নাঘরে গিয়ে সব কিছু নেড়ে চেরে দেখতে থাকে।ভাবে জ্বর মুখে ঝাল ঝাল কিছু ভালো লাগতে পারে।তাই লুচি আর আলুর দম বানাতে শুরু করে।এদিকে ধ্রুব আয়ুসীকে লক্ষ্য করে না।সে একেবারে আয়ানের ঘরে যায়।
কী রে কেমন আছিস?-ধ্রুব
ভালো-আয়ান
মনে হয় না কিছু তো খেয়েছিস?দাঁড়া আমি কিছু বানিয়ে আনি।-এই বলে ধ্রুব চলে যায়।
আয়ান ওকে ডাকতে থাকে।কিন্তু কে শোনে কার কথা।
এদিকে রান্নাঘরে গিয়ে ধ্রুব আয়ুসীকে দেখে।
কীরে তুই এখানে?-ধ্রুব
স্যার,কেমন আছে দেখতে এসেছিলাম।তাই উনি কিছু খাননি শুনে—-কেটে কেটে বলে আয়ুসী
ওও,ভালো ভালো।তা কী বানাছিস। লুচি! ও মাই গড।উফ্ফ কী সুন্দর গন্ধ রে।-এই বলে ধ্রুব একটা লুচি হাতে করে নিয়ে খেতে শুরু করে।
তোর কত বাকি?-ধ্রুব।
এই তো হয়ে গেছে।-আয়ুসী
আচ্ছা,তুই আয়।ওর খাওয়ার আগে ওষুধ আছে দিয়ে আসি।-এই বলে ধ্রুব লুচি খেতে খেতে চলে যায়।
আয়ানের ঘরে গিয়ে বলে-তুই তো বলিস নি বোন এসেছে।এই বলে সে আয়ানের দিকে ওষুধের পাতাটা এগিয়ে দেয়।
বোন!কে বোন?-আয়ান
কে আবার আয়ুসী।-ধ্রুব
আয়ান চমকে ওঠে।
এই ও তোর বোন হল কবে থেকে?-আয়ান
কাল থেকে।-এই বলে সে লুচির অর্ধেকটা মুখের মধ্যে পুরে দেয়।অর বলে-খুব ভালো হয়েছে।সাথে আলুর দমটা হলে আরো জমে যেত।
আয়ান ধ্রুবকে দেখতে থাকে।আর বলে-তুই বড় বাড়াবাড়ি করছিস।
ধ্রুব-এই তুই চুপ কর।
এদিকে আয়ুসী এসে পরে।ধ্রুব আয়ুসীর কাছ থেকে প্লেটগুলো নিয়ে নিচে রাখে।আর বলে-তোরটা কই।
আয়ুসী-আমি খাবো না।
ধ্রুব কিছু বলে না।ছুটে গিয়ে রান্নাঘর থেকে একটা প্লেট এনে তাতে সব কিছু দিয়ে বলে-এই খা।
এদিকে আয়ান ধ্রুব আর আয়সীর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে দেখতে থাকে।
আয়ুসী কিছু বলতে পারে না।সবাই একসাথে বসে খায়।
ধ্রুব তো খাচ্ছে আর বলেই চলেছে-কী খেতে হয়েছে রে।আর আঙুল চাটতে থাকে।
আয়ান দেখে রেগে যায়।
কী হচ্ছে কী ধ্রুব-আয়ান
কী হবে রান্নার প্রশংসা।যেটা তুই পারিস না।-ধ্রুব
ধ্রুবর কথায় আয়ুসী আয়ানের দিকে চায়।
আয়ান দেখে আয়ুসী তার দিকে তাকিয়ে।
আয়ান কী বলবে বুঝতে পারে না।আয়ুসী এমনভাবে তাকিয়ে আছে তার মুখ দেখে কথা বার হচ্ছে না।
শেষে বলে-ভালো হয়েছে।বেশ ভালো।
ধ্রুব ওর কথায় হাসতে থাকে।তার সাথে আয়ুসীও।
এই হাসছিস কেন?-আয়ান
ধ্রুব আয়ানের কথার নকল করে বলে-বেশ ভালো।
আয়ান রাগে ফুলতে থাকে।আয়ানের মুখ দেখে আয়ুসী চুপ করে যায়।
আয়ুসী বলে-স্যার,আমি আসছি।সন্ধ্যা হয়ে গেল।
আয়ান আয়ুসীকে আশ্রমের কাজ ঠিকমতো চলছে কিনা জিজ্ঞাসা করে।তারপর ধ্রুব বলে সে আয়ুসীকে বাড়িতে ছেড়ে দেবে।
আয়ুসী আর ধ্রুব চলে যায়।
আর আয়ান আপনমনে বলতে থাকে-বোন পাতানো বার করছি।
আয়ুসী বাড়িতে আসে।তার মনে আজ খুব আনন্দ।নিলয়ের সাথে বকর বকর করতে থাকে।দিদিকে এতো খুশি সে খুব কম দেখছে।সে লক্ষ্য করে আয়ুসী আগের মতো আর মন খারাপ করে না।এটা ভেবে সে আনন্দ পায়।
পরদিন আয়ান অফিসে যায়।আর আয়ুসী সে তো কাজ কম আয়ানকেই বেশি লক্ষ্য করে।এদিকে আয়ান অফিসের সবাইকে বলে সে একটা পার্টি রেখছে।এই কোম্পানি কেনার উপলক্ষ্যে।কাল সন্ধ্যাতে তারা সবাই যেন আসে।
সবাই তো খুব খুশি।এদিকে সবাই চলে গেলে আয়ান আয়ুসীর কানের কাছে গিয়ে বলে-কী তুমি আসবে তো?
আয়ুসী আয়ানকে এতো কাছে দেখে তার কেমন হতে থাকে মুখ থেকে কথা বার হয় না।অনেক কষ্টে বলে-হ্যাঁ,যাব।
আয়ান হেসে চলে যায়।আয়ুসী আয়ানের কথাটা ভাবতে থাকে।কী বলে গেল।তুমি!এ কী ঠিক শুনলাম।
পরদিন বিশাল আয়োজন করেছে আয়ান।শ্রেয়া আর সুষমা দেবীও এসেছেন।বিপ্লব আঙ্কেল পরে আসবেন।আয়ুসী কোনোদিন এতো বড় পার্টিতে আসেনি।ভেবেছিল আসবে না।কিন্তু আয়ানের মুখটা মনে পরায় সে আর না এসে থাকতে পারে না।
সবাই কতো সেজে এসেছে।স্যারের দেওয়া পার্টি বলে কথা।কিন্তু আয়ুসী একটা গোলাপি রঙের লং স্কার্ট আর হালকা নীল রঙের টপ।কিন্তু তাতেও তার সৌন্দর্য দেখার মতো।সে এসে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।ধ্রুব এসে অনেকবার তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।অন্যদিকে আয়ান সবার সাথে কথা বলছে।
হঠাৎ আয়ান মাইক্রফোনে বলতে শুরু করে-ATTENTION PLEASE
সবাই আয়ানের কথাতে আয়ানের দিকে ফেরে।আর আয়ান বলতে থাকে-সবাইকে আমার কিছু বলার আছে।আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ।শুধু এই কোম্পানি কেনার জন্য নয়,আজ অন্য কারনেও আজ আপনাদের সকলকে দেখছি।
এদিকে ধ্রুবর মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।আর অন্যদিকে আয়ুসীও আয়ানের দিকে তাকিয়ে।আয়ান কী বলবে তা শোনার অপেক্ষায়।
এদিকে আয়ান কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে।আয়ুসী দেখতে থাকে তার দিকেই আয়ান আসছে।সমস্ত গেস্টরা সরে যেতে থাকে।আয়ুসী বুঝতে পারে না।কী হচ্ছে।আয়ান পুরো আয়ুসীর সামনে।একটা লাইট তাদের উপর পরেছে।চারিদিক নিস্তব্ধ।পিন পরলেও শোনা যাবে।
আয়ান আয়ুসীর সামনে এসে দাঁড়ায়।আয়ুসী চোখের দিকে তাকিয়ে।আয়ান আস্তে আস্তে হাঁটু মুড়ে বসে-একটা হাত আয়ুসীর দিকে এগিয়ে দেয়।হাতে তার একটা ডাইমন্ডের আংটি।আয়ুসীর সাড়া শরীর কাঁপতে থাকে।কী করতে যাচ্ছে আয়ান।
আয়ান বলতে শুরু করে-
I LOVE YOU,,,, FOREVER
AND EVER AND EVER
💓
আয়ুসী নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এরকম ভাবে তাকে কেউ প্রপোজ করবে সে তো স্বপ্নেও ভাবেনি।অন্যদিকে ধ্রুব সে তো আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।চেয়ারে বসে পড়েছে।
আয়ান আয়ুসীর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নেয়।আর আয়ুসীর আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দেয়।আয়ুসী না পারছে হাতটা সরিয়ে নিতে,না পারছে কিছু বলতে।গলা থেকে একটাও স্বর বার হচ্ছে না।
আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি
আয়ুসী।
আয়ুসীর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলে-
সারাটা জীবন তোমাকে পাশে পেতে
চাই।তোমার দুঃখ কষ্ট সব ভাগ করে
নিয়ে তোমাকে খুশি রাখতে চাই।
তোমার চলার সাথী হতে চাই।
তোমার হাতটা ধরতে চাই।দেবে না
ধরতে আয়ুসী।
আয়ুসীর নীরবতা সবাইকে হ্যাঁ সূচক উত্তর প্রদান করে।সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে।কিন্তু যে সব মেয়েরা আয়ানের মন গলানোর জন্য আজ বিউটি পার্লারে সারাটা দিন কাটিয়েছে।তারা মনে মনে আয়ুসীকে গালাগালি দিতেও ছাড়ে না।
কিন্তু কেন আয়ুসী চুপ।এটা ঠিক সে আয়ানকে পছন্দ করে।কিন্তু সে ভাবেনি এরকম কিছু হবে।সে না বলতে পারত।এক তাতে আয়ান সবার সামনে ছোটো হয়ে যেত।যেটা আয়ুসী চায় না।আয়ানের এই হাসি মুখটা দেখে সে পারেনি।আর এক তার গলার স্বর।হারিয়ে গিয়েছিল শব্দ,বলার মতো শব্দ বা গলার আওয়াজ আজ আয়ুসীর কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল।
সবাই আয়ানকে অভিনন্দন জানাচ্ছে সাথে আয়ুসীকেও।আয়ুসী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।ছুটে চলে যায়।আয়ানও পিছু পিছু যায়।অন্ধকারে আয়ুসী দাঁড়িয়ে।কী করবে বুঝতে পারছে না।চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।আয়ান এসে আয়ুসীর কাঁধে হাত রাখে।আয়ুসী আয়ানকে দেখে বলে-এ কী বললেন?
আয়ান-যেটা ঠিক।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আয়ুসী-কিন্তু—-
আয়ান-জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।তাই আমার শরীর খারাপ জেনে আমি কেমন আছি জানতে তুমি সেদিন এসেছিল,অনেকেই তো অফিসের জেনেছিল কেউ কী এসেছিল।তাছাড়া আমি কী খেয়েছি জানতে চাইতে না।আমার জন্য নিজের ওড়না কাটতে না।
আয়ুসী-ওড়না—।মানে আপনি—-
আয়ান-আমার কেবিনে পরে ছিল।
আয়ুসী-কিন্তু—-
আয়ান-আমি তোমাকে কোনো চাপ দিচ্ছি না।তুমি বাড়িতে গিয়ে ভেবে বল।আমি অপেক্ষা করব।
আয়ুসী আয়ানকে দেখে।আয়ানের চোখ যেন কতো কিছু বলে দিচ্ছে।
আয়ানের ড্রাইভার আয়ুসীকে পৌঁছে দেয়।আয়ুসীর বারণ আয়ান শোনে না।
আয়ুসী নিলয়কে সব বলে।নিলয় শুনে তো আয়ুসীকে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু আয়ুসী কী করবে?আয়ানকে কী হ্যাঁ বলবে?
চলবে—-