প্রতিশোধ পর্ব_৯

#প্রতিশোধ পর্ব_৯
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

আয়ান আয়ুসীকে প্রপোজ করেছে এ কথা একজনের কানে যায়।রাগে তিনি চিৎকার করতে থাকেন।বলে মেরে ফেল দুজনকে।আর বাঁচিয়ে লাভ নেই।কিন্তু চ্যালাচামুণ্ডারা তাকে বোঝাতে থাকেন।তাতে তিনি শান্ত হন।আর অন্য উপায় খুঁজতে থাকেন।

এদিকে আয়ানের ব্যবহারে ধ্রুবর মুখে কোনো কথা ফোটে না।আর আয়ান কী করতে চাইছে জিজ্ঞাসা করলে আয়ানের মুখে একটা হাসি খেলে যায়।আর সুষমা দেবী আর শ্রেয়া আয়ানের সিদ্ধান্তে ভীষণ খুশি।

এদিকে আয়ুসীর কাছ থেকে সব শোনার পর নিলয় তো প্রচন্ড খুশি।কিন্তু আয়ুসী চুপ করে বসে থাকে।এটা ঠিক সে সত্যি আয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু এতো তাড়তাড়ি এতো কিছু হয়ে যাবে তা ওর ভাবনার বাইরে।নিলয় আয়ুসীর কাছে এসে বলে-এই,দিদিভাই কী ভাবছিস।

আয়ুসী চুপ করে থাকে।

নিলয়-তুই কী ওনাকে ভালোবাসিস।মানে আমি বলছি—-

আয়ুসী-জানি না রে।উনি কাছে থাকলে খুব —-

নিলয়-বুঝেছি।তাহলে আর দেরি কীসের।

আয়ুসী-কিন্তু ভাই —-

নিলয়-আমি জানি তুই কী ভাবছিস।আমার মনে হয় তুই যাকে খুঁজছিস হয়তো উনিই তোকে খুঁজতে সাহায্য করবে।

আয়ুসী-কিন্তু ভাই ওনাকে সব বলে দেওয়া উচিত।নাহলে—-

নিলয়-না,না,এখন না দিদি।আগে বিয়ে হয়ে যাক তারপর তুই সব বলবি।

আয়ুসী-কিন্তু এতে ওনাকে ঠকানো হবে।

নিলয়-কিছু হবে না।যা বুঝলাম উনি তোকে খুব ভালোবাসেন উনি সব বুঝবেন।

আয়ুসী চুপ করে থাকে।

নিলয়-এইবার তোর উপর।তুই কী করবি।কাল ওনাকে কী বলবি।

এই বলে নিলয় চলে যায়।আপনারা ভাবছেন এরকম কথাবার্তা দিদি ভাইয়ের মধ্যে কী করে হয়।ছোটবেলা থেকে দুজন দুজনের সুখ দুঃখের সাথী।তাই দিদি ভাইকে যতটা আগলে রাখে।ভাইও চায় তার থেকে শতগুনে আগলে রাখতে।

আয়ুসী বসে থাকে।কী করবে সে ভাবতে থাকে।সে বুঝতে পেরেছে আয়ানকে সে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।সে আয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে।

এই ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরে জানে না।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়।তাড়তাড়ি করে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরে।এদিকে আয়ুসীকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।কিন্তু আয়ুসী অফিসে গিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে।এদিকে আয়ানের কথা তার মনে নেই।কিন্তু মনে পরে যখন আয়ানের কেবিন থেকে তার ডাক আসে।

ধীর গতিতে আয়ানের কেবিনের দিকে এগোতে থাকে।একবার গিয়ে ও ফিরে আসে।নিজের কেবিনে গিয়ে বসে পরে।এদিকে আয়ান আসে আয়ুসীর কেবিনে।আয়ানকে দেখে আয়ুসী লাফিয়ে ওঠে-আ-প-নি এ-খা-নে।

কেটে কেটে বলে আয়ুসী।

তোমাকে কখন ডেকেছি।যাওনি কেন?-আয়ান

না,মানে।আপনি এখানে কেউ দেখলে কী ভাববে।-আয়ুসী

আমার কারোর ভাবাতে কিছু এসে যায় না আয়ুসী।আগে বল তুমি কী ঠিক করলে?-আয়ান

আয়ানের কথায় আয়ুসী কী বলবে বুঝতে পারছে না।

আয়ান আয়ুসীর একদম কাছে চলে যায়।আয়ুসী আয়ানকে দেখে দুপা পিছিয়ে গেলে আয়ান আরো আয়ুসীর সামনে এগোতে থাকে।

কী হল কিছু তো বল।নাকি আমি নাই ধরব।-আয়ান

আয়ুসী তখন বলে ফেলে-কে বলল না।

আয়ান আয়ুসী কথাতে আয়ুসীর দিকে চেয়ে হাসতে থাকে।আয়ুসী বুঝতে পারে সে কী বলে ফেলেছে।লজ্জা পেয়ে আয়ানের কাছ থেকে সরে আসে।

আয়ান- আমার হবু বৌটা লজ্জা পেলে আরো সুন্দরী হয়ে যায়।

আয়ুসী আয়ানের কথাতে আরো চমকে যায়।আয়ান আয়ুসীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে-।আর কিছু দিন।রেডি থাক আয়ুসী চৌধুরী হবার জন্য।

আয়ুসী-মানে।

আয়ান-মানে কী।তুমি কী ভাবছ।তোমার সাথে শুধু কী এখন প্রেম করব।না,সোনা আমি বিয়ের পর আমার বৌয়ের সাথে প্রেম করব।১০ দিনের মধ্যে বিয়ে।

আয়ুসী-কী!

আয়ান-কেন?আমার কাছে আসতে ইচ্ছা করছে না?

আয়ানের কথায় আয়ুসী আরো লজ্জা পেয়ে যায়।

আয়ান আয়ুসীর মুখটা দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলে-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আয়ুসী।খুব ভালোবাসি।

আয়ানের কথায় আয়ুসীর চোখ ছলছল করতে থাকে।

আয়ান-পাগলী।কাঁদছ কেন?

আয়ুসীর দুচোখ মুছিয়ে বলে-চল।

আয়ুসী-কোথায়?

আয়ান-কোথায় আবার বিয়ের কেনাকাটা করতে।

আয়ুসী-এখন?

আয়ান-হ্যাঁ,ম্যাডাম চলুন।

আয়ুসী আর আয়ান বিয়ের কেনাকাটা শুরু করে দেয়।আয়ুসী এখন অফিসে যায় না।বিয়ের বেশিদিন বাকি নেই।আয়ুসীর নিজের বলতে কেউ নেই।মামারা আছে কিন্তু সম্পর্ক রাখে না।তাই ধ্রুব আয়ুসীর দাদা হয়ে সব করে।আর ধ্রুবর মাও আয়ুসীকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখে।কিন্তু ধ্রুবর মনে অনেক প্রশ্ন যে প্রশ্নের উত্তর সে আয়ানের কাছ থেকে পায় নি।

এদিকে আয়ুসী আয়ানকে পেয়ে শুধু ভগবানকেই ধন্যবাদ দিচ্ছে।এই কয়েকদিনে আয়ান আয়ুসীকে চোখে হারাচ্ছে।সারাক্ষণ ওর খেয়াল রাখছে।বিয়ের আগের সময় সব মেয়েদের কাছেই অদ্ভুত এক ভালোলাগার মুহূর্ত।আয়ুসীর ক্ষেত্রেও তা বাদ যাচ্ছে না।প্রতিমুহুর্তে সে আয়ানের প্রেমে পড়ছে।আর আয়ান আয়ুসীকে বলেছে নিলয়ের পড়া শেষ হয়ে গেলে ওর জন্য একটা ব্যাবস্থা করে দেবে।

এদিকে বিয়ের দিন এসে যায়।ধ্রুবদের বাড়ি থেকেই আয়ুসীর বিয়ে হবে।সকাল থেকে বিয়ের কাজে সবাই ব্যস্ত।নিলয় তো কী করবে ভেবেই পাচ্ছে না।আয়ান সকাল থেকে শুধু আয়ুসীকে ফোন করে চলেছে।অন্যদিকে আয়ানের বিয়ের ব্যাবস্থা সুষমা দেবীই করেছেন।

গোধূলি লগ্নে বিয়ে।সেই সময়ও উপস্থিত।বরবেশে আয়ানকে দেখে আয়ুসী তো চোখ ফেরাতেই পারছে না।আর আয়ান তো আয়ুসী দেখে এমনভাবে হাসছে যে আয়ুসী লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না।আয়ুসীকে আয়ানের হাতে তুলে দেয় আয়ুসীর ভালো কাকা।ভালো কাকা হল আয়ুসী যেখানে ভাড়া থাকত তার মালিক।আয়ুসীকে সে মেয়ের মতই ভালোবাসে।

বিয়ে পর্ব শেষ হয়।সবার গান আর তার সাথে শ্রেয়ার নাচে বাসর রাত কাটে।পরদিন বিদায়ের পালা।আয়ুসী নিলয়কে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।আয়ান নিলয়কে নিয়ে যেতে চাইলেও নিলয় যেতে নারাজ।

আয়ুসী আয়ানের বাড়িতে পা রাখে।সুষমা দেবী বরণ করে আয়ুসীকে ঘরে তোলে।বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে রাত হয়ে যায়।কিন্তু কালরাত্রি হওয়ায় দুজনকে আলাদা থাকতে দেওয়া হয়।শ্রেয়া থাকে আয়ুসীর কাছে।

রাত্রে আয়ুসীর ফোনে ফোন আসে।ঘুম চোখে সে ফোনটা ধরে।

হ্যালো,কে বলছেন?-আয়ুসী

নিজের বরের ফোন নম্বরও চিনতে পারছ না।-আয়ান

আয়ানের কথাতে আয়ুসীর ঘুম পালিয়ে যায়।

আপনি!-আয়ুসী

হ্যাঁ,এবার তাড়তাড়ি ছাদে চলে এসো।-আয়ান

আজ কালরাত্রি আমাদের—-

আয়ান আয়ুসীর কথা শেষ হতে দেয় না।বলে-তুমি না এলে আমি ওই ঘরে যাচ্ছি।

এই,না,না আমি যাচ্ছি।-আয়ুসী

গুড,আমার মিষ্টি বৌ-আয়ান

আয়ানের কথাতে আয়ুসী লজ্জা পেয়ে যায়।ফোন রেখে দিয়ে সন্তর্পণে ছাদে আসে।ছাদে গিয়ে আয়ানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু দেখতে পায় না।হঠাৎ কারোর হাতের টানে একবারে তার বুকের উপর পরে।আয়ুসী দেখে আয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ুসী মাথা নীচু করে বলছে-কেন ডেকেছেন?

তোমাকে দেখব বলে-আয়ান

আয়ান আয়ুসী কানের পাশে চুলগুলোকে গুঁজে দিতে থাকে।আয়ানের স্পর্শে আয়ুসী শিহরিত হয়ে ওঠে।আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে এক ছুটে ঘরে চলে আসে।আর লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।এদিকে শ্রেয়া বলে-বৌদিভাই,অনেক তো হল।এবার তো ঘুমাতে এসো।

শ্রেয়া তো জেগেই ছিল।আয়ুসী শ্রেয়ার কথায় তাড়াহুরো করে বলে-না,না,আমি মানে—-

শ্রেয়া হাসতে থাকে।আয়ুসী শুয়ে পরে।

সকালবেলা আয়ুসীকে দেখে আয়ান এমনভাবে হাসতে থাকে যে আয়ুসী মনে মনে বলে-ওই হাসিতেই আমি মরে যাব।

রাতে রিসেপশনের পার্টি।সেখানে আয়ুসীকে এতো সুন্দর লাগছিল যে সবাই আয়ুসীর প্রশংসা করতে থাকে।রাত বাড়ে।সবাই চলে যায়।আর আয়ুসীকে নিয়ে যাওয়া হয় আয়ানের ঘরে।আয়ুসী দেখে ঘরটাকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো।আয়ুসী জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।এদিকে আয়ান ঘরে আসে।আয়ানকে দেখে আয়ুসীর কেমন যেন হতে থাকে।এদিকে আয়ান আয়ুসীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়ুসী লজ্জায় সেখান থেকে সরে আসে।আর আয়ান সে তো ছাড়বার পাত্র নয়।সে আয়ুসীকে কোলে তুলে নিয়ে খাটের উপর বসায়।আয়ুসীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।এদিকে আয়ান আয়ুসী গালে হাত রাখে।আয়ানের ঠোঁট আস্তে আস্তে আয়ুসীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়।আয়ুসী চোখ বন্ধ করে নেয়।

হঠাৎ আয়ুসী ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।চেয়ে দেখে আয়ান হাসছে।কিন্তু হাসিটা অন্যরকম।আয়ুসী বুঝতে পারে না কী হল।

নিজেই উঠে পরে।আয়ানকে জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই আয়ান এসে আয়ুসীর গালটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে-কী ভেবেছিলে আমি তোমাকে—-। আয়ুসী বোস আমি তোমাকে ভালোবাসি?

আয়ানের মুখে আয়ুসী বোস শুনে সে অবাক হয়ে যায়। যে কিছুদিন আগে আয়ুসী চৌধুরী বলছিল সে এখন—-।

আয়ুসী-আমি কিছু বুঝতে পারছি না।আমি কী কোনো ভুল করেছি?

আয়ান-ভুল তো হয়েছে।বড় ভুল।তার শাস্তি তুমি পাবে।

আয়ুসী কিছু বলতে যাবে।তখন আয়ান বলে-চল।দেখাচ্ছি তোমাকে।

এই বলে আয়ুসীকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে তোলে।আয়ান গাড়ি স্টার্ট দেয়।গাড়ি ছুটে চলে শহর ছেড়ে।শহরের ছেড়ে অনেক ভিতরের দিকে একটু নির্জন এলাকায়।গাড়ি থামে একটা বড় বাড়ির সামনে।বাড়িটাকে দেখে আয়ুসী অবাক হয়ে যায়।এই বাড়িটাই সে এতদিন খুঁজেছিল।আয়ান আয়ুসীকে টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়।একটা ঘরে নিয়ে এসে একটি ছবির সামনে দাঁড় করিয়ে বলে-চিনতে পারছ।

আয়ুসী ছবিটার দিকে তাকায়।ছবিটা দেখে সে আঁতকে ওঠে।

আয়ুসীর গলা দিয়ে স্বর বার হয় না।

আয়ান আয়ুসীর কাঁধটা শক্ত করে ধরে বলে-কেন করেছিল?কেন তোমার বাবা এমন করেছিল?তোমাকে তো আমার মা বাবা খুব ভালোবাসত।কেন আয়ুসী কেন তোমার বাবা আমার বাবা মাকে খুন করল?কেন বল কেন?

আয়ুসী কাঁদতে থাকে।সে বলে-আপনি!

আয়ান-হ্যাঁ,আমি অপূর্ব।

আয়ুসী-আয়ান?

আয়ান-ওটা তো তোমার কাছে।এই শহরের কাছে।

আয়ুসী-এসবের মানে।

আয়ান আয়ুসী দিকে তাকিয়ে বলে-প্রতিশোধ নেব।তোমার বাবা যেটা করেছে তার শাস্তি ভোগ করেনি।তিনি তো জেলেই আত্মহত্যা করেছিল।আমার ছোটবেলা কেড়ে নিয়েছে।তাই আমি তোমাকে শান্তিতে থাকতে দেব না।তোমার বাবার শাস্তি তোমাদের দেব।

আয়ুসী দেখে আয়ানের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।সেই আগুনে সব তছনছ হয়ে যাবে।

আয়ুসীকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দেয়।আর বলে-দেখতে থাক তোমাকে কীভাবে তিলে তিলে শেষ করি।

এই বলে আয়ান চলে যায়।আয়ুসী ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছবিতে আয়ানের বাবা,মা আর আয়ান।আয়ুসী আয়ানকে দেখতে থাকে।যে মুখটা আয়ুসী বার বার ভুলে যেত।আর মনে করার চেষ্টা করত।এখন সে চোখের সামনে।

আয়ুসীর মনে করতে থাকে সে ছোটবেলাকার কথা।বাবার হাত ধরে প্রথম এ বাড়িতে আসা।আর আয়ানের মা মানে অপূর্বর মা বাবা শান্তি দেবী আর অখিলেশ বাবু আয়ুসীকে খুব ভালোবাসতেন।আয়ুসীর বাবা অজয় ছিলেন অখিলেশ বাবুর কোম্পানির ম্যানেজার।কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অন্যরকম।আর আয়ুসীর সাথে অপূর্বর বন্ধুত্ব ছিল খুনসুটির।অপূর্ব আয়ুসী এলে সারাক্ষণ পিছনে লাগত।কিন্তু আয়ুসী পরে গেলে ব্যাথা পেলে অপূর্বও কেঁদে ফেলত।কিন্তু আয়ুসীর মা মারা যান আয়ুসীর ভাই নিলয় হওয়ার পর।ছোটো আয়ুসী আর নিলয়কে শান্তি দেবী নিজের মায়ের মতো দেখত।অজয় বাবুর সাথে মাঝে মধ্যেই আয়ুসী আর নিলয় এ বাড়িতে আসত।এদিকে অপূর্ব ইস্কুল গিয়ে এতো দুষ্টুমি করত যে কোনো ইস্কুল ওকে রাখতে চাইত না।তাই অপূর্বর বাবা ছেলের বাইরে রেখে পড়ার ব্যাবস্থা করে।অপূর্ব চলে যায়।যাওয়ার সময় অপূর্ব আয়ুসীর কান্না দেখে বড়দের চোখেও জল চলে আসে।সেইসময় অপূর্ব আয়ুসী তার প্রিয় টেডিটা দিয়ে গিয়েছিল।

আয়ান যাওয়ার কিছু বছরের মধ্যে অপূর্বর মা বাবা খুন হন।আর দোষ পরে অজয় বাবুর নামে।আয়ুসী তখনও খুব একটা বড় নয়।সবাই তাকে দেখে বলত সে খুনির মেয়ে।কিন্তু আয়ুসীর মন এইটুকুই জানে তার বাবা খুন করতে পারে না।এদিকে বাবা মারা যাওয়ার পর আয়ুসী আর ওর ভাই মামার বাড়িতে থাকলেও বড় হতে থাকলে তাদেরকে ভাড়া বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।প্রথম প্রথম খোঁজ খবর নিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়।

এদিকে ছোটো আয়ুসী অপূর্বর কথা মামাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু বলতে পারেন নি।আর এই বাড়িটার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেছিলেন বাড়িটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।আসলে তিনি মিথ্যা কথা বলেছিলেন।তাতে কোনো কারন ছিল না।বাবার সাথে হাত ধরে আসা আয়ুসী কখনই এ বাড়ির খোঁজ পায়নি।

এসব ভাবতে ভাবতে আয়ুসী দেখে সকাল হয়ে গেছে।গতরাতে আয়ানের কথা মনে পরে তার দুচোখ আবার ভিজে আসে।ধীরে ধীরে উঠে আয়ানের খুঁজতে থাকে।আয়ানের গলা পায়-এই লাভা লাভা রাগ করেছিস আমার উপর।

আয়ুসী বুঝতে পারে না।আয়ান কাকে বলছে।কারন আয়ান উল্টোদিকে মুখ করে বসে আছে।এদিকে লাভা আয়ানের হাত থেকে পালিয়ে আয়ুসীর সামনে।
আয়ুসী দেখে ভয় পেয়ে যায়।

লাভা আর কেউ নয়।আয়ানের পোষা ককুর।আয়ুসী তো ভয় পেয়ে পুরো সোফার উপর উঠে পড়েছে।এদিকে আয়ুসীকে দেখে আয়ান হাসতে থাকে।যে হাসিতে আজ বিদ্রুপের চিহ্ন।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here