প্রতিশোধ পর্ব_১০

প্রতিশোধ পর্ব_১০
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

আয়ুসী লাভাকে দেখে ভয় পেয়ে একেবারে সোফার উপর উঠে পড়েছে।আর আয়ান তো আয়ুসীকে দেখে হেসেই চলেছে।এদিকে লাভা নতুন ব্যক্তির আগমনে তার কাছেই ঘোরাঘুরি করতে থাকে।সে সোফায় ওঠার চেষ্টা করতে থাকে।পা দিয়ে সোফাতে হেঁতো মারতে থাকে।

আয়ুসী তো ভয়ে চীৎকার করছে।আর লাভাকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে।এদিকে আয়ান শুধু হেসেই চলেছে।আয়ুসী কিছু না করতে পেরে সোফার উপর থাকা টি ভি র রিমোর্টটা লাভার দিকে ছুঁড়ে দিতে যায়।লাভাকে আঘাত করার জন্য নয়।যাতে লাভা ভয় পেয়ে সরে যায়।

সবে রিমোর্টটা ছুঁড়তে যাবে আয়ান চেঁচিয়ে ওঠে-এই তুমি কী করছ?

এই বলে সে আয়ুসীর হাত থেকে রিমোর্টটা কেড়ে নেয়।

বলে-আর ইউ ম্যাড?

আয়ুসী বুঝতে পারে না।সে কী করেছে।

আয়ান আয়ুসীর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে-লাভার কিছু হলে তোমার কী অবস্থা হবে তুমি নিজেই জানো না।

আয়ুসীর হাতটা আয়ান এতটাই শক্ত করে ধরেছে জেলা আয়ুসীর হাত লাল হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আয়ুসী কিছু বলে না।এই আঘাত তো কালকের দেওয়া আঘাতের থেকে বড় নয়।

আয়ুসীকে ছেড়ে দিয়ে আয়ান লাভাকে কোলে তুলে নেয় আর বলতে থাকে-লাভাও জেনে গেছে তুমি কে?তাই আমার হয়েই সে তোমাকে—-।এই বলে সে হাসতে থাকে।

আয়ুসী সোফা থেকে নীচে নেমে আসে।দেখতে থাকে তার ভালবাসার মানুষটিকে।আজ আয়ানের চোখে ভালোবাসার কোনো চিহ্ন নেই।শুধু আছে বিদ্রুপ আর প্রতিহিংসার আগুন।

আয়ান লাভাকে আদর করতে করতে বলে-এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে আর আমার সাথে অফিসও যাবে।আমাদের মধ্যে এইসব কথা যেন কেউ না জানে।ধ্রুবও না।কী বললাম বুঝতে পেরেছ।

আয়ুসী মাথা নাড়ে।আয়ান চলে যেতে যেতে বলে-প্রত্যেকদিনের ব্রেকফ্রাস্ট থেকে ডিনার আমি চিরকুটে লিখে কিচেনে হ্যাঙ্গ করে দেব।দেখে নিয়ে তাই রেডি করবে।এর অন্যথা যেন না হয়।আর আজ রবিবার আমি তো বাড়িতেই থাকব।তাই অযথা আমাকে রাগাবে না।

এই বলে সে আয়ুসীর দিকে একবার রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যেতে থাকে।

আয়ুসী তখন বলে-আপনি কিন্তু খুব সুন্দর অভিনয় করেন।কবে থেকে এতো সুন্দর অভিনয়—-

আয়ুসী কথাতে শেষ হতে দেয় না।আয়ান একবারে আয়ুসীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে-অভিনয় তো আমি করেছি,কিন্তু আমার মনে হয় অভিনয়টা তোমার পরিবার ভালো জানে।তাই তো?

আয়ুসী কিছু বলে না।সে বুঝতে পারে কথাটা তার বাবাকেই বলছে।

আয়ান চলে যায়।আর আয়ুসী কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাথরুমে চলে যায়।এদিকে আয়ানও ঘরে এসে ল্যাপটপে নিজের কাজ করতে থাকে।

আয়ুসী স্নান সেরে বের হয়েছে আর তখনই লাভা আয়ুসীর পায়ের কাছে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।আয়ুসী তো লাভাকে দেখে ছোটাছুটি করতে থাকে।আয়ান দেখতে থাকে।কিছুক্ষন পর উঠে এসে লাভাকে বলে-লাভা এইদিকে আয়।

লাভা তো আয়ানের কথাই শোনে না।সে তো এখন নতুন সদস্যের সাথে খেলতে চায়।আর আয়ুসী তো ভয়ে খাটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে।

আয়ান এগিয়ে গিয়ে লাভাকে সরিয়ে দেয়।তাও লাভা সরতে চায় না।আয়ান ধমক দিয়ে বলে-লাভা,সরে যা।

লাভাও কেঁউ কেঁউ করতে করতে খাটের তলায় চলে যায়।এতক্ষন পর আয়ান আয়ুসীকে ভালো করে দেখে।আয়ুসী একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে।চুলগুলো অল্প অল্প ভিজে।পিঠের উপর পরে রয়েছে।গলা থেকে জল গড়িয়ে পরছে।আঁচলটা একভাঁজ করে কাঁধে ফেলা।আর ঠকঠক করে কাঁপছে।আর খাটের তলার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আয়ুসীর দিকে।এদিকে আমাদের লাভাও ঠিক সময় বেড়িয়ে আসে।লাভাকে দেখে আয়ুসী তিরিংবিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে।তাতে লাভা ভয় পেয়ে চলে যায়।কিন্তু আয়ুসী গিয়ে পরে আয়ানের গায়ের উপর।আয়ান আয়ুসীকে ধরে ফেলে।

আয়ান আয়ুসী দুজন দুজনের দিকে চেয়ে।আয়ান আয়ুসীকে দেখেই চলেছে।এদিকে লাভাও আবার ফিরে আসে।এবার সে আয়ুসী পায়ের উপর উঠে পরে।আয়ুসী লাফিয়ে সরে দাঁড়ায়।আর আয়ানেরও ঘোর কেটে যায়।আয়ুসীর কাছে গিয়ে বলে-দেখে চলতে পারো না।সারাক্ষন গায়ের উপর পরা কী অভ্যাস।অসভ্য মেয়ে।

আয়ানের কথায় আয়ুসীর বুকটা কেঁপে ওঠে।আয়ান লাভাকে নিয়ে চলে যায়।আয়ুসীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে।

কোনোরকমে নিজেকে সামলে কিচেনে যায়।গিয়ে দেখে চিরকুটে সারাদিনের খাবারের একটা তালিকা লেখা আছে।

ব্রেকফ্রাস্টে লেখা আছে-ব্রেড,ডিমের অমলেট,আর জুস।

আয়ুসী তাই রেডি করতে থাকে।সবকিছু রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।আর আয়ানকে খুঁজতে থাকে।দেখে আয়ান লাভাকে খেতে দিয়েছে।আর বলছে-খুব খিদে পেয়েছে না।এই বলে সে লাভার গলায় হাত বোলাতে থাকে।

আয়ুসী দেখতে থাকে।এখন কতো ছেলেমানুষের মত লাগছে আয়ানকে।কিন্তু কালকের কথা মনে পরে আয়ুসী আঁতকে ওঠে।আয়ান দেখে আয়ুসী দাঁড়িয়ে।আয়ানের চোখে চোখ পরতেই আয়ুসী বলে-ব্রেকফ্রাস্ট রেডি।তাই—-।

আয়ান-হুম,চল।

আয়ান টেবিলে গিয়ে বসে।আয়ান খেতে থাকে আর ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকে।আয়ুসী কিন্তু আয়ানকে দেখে চলেছে।কী করে বোঝাবে আয়ানকে।কী করে সত্যি সামনে আনবে।তার মুখের কথা কেই বা বিশ্বাস করবে।

আয়ান খেয়ে উঠে যায় আর বলে যায়-খেয়ে নাও।

আয়ুসী-না,আমার খিদে নেই।

আয়ান ফিরে আসে।আয়ুসীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে-কী ভাব নিজেকে খুব চালাক।না খেয়ে নিজেকে অসুস্থ করবে।ভুল ভাবনা মাথা থেকে বার করে দাও।কষ্ট আমি তোমাকে দেব।

আয়ুসী আয়ানের চোখে চোখ রেখে বলে-আপনি তো প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করলেন?

আয়ান আয়ুসী কথায় আয়ুসীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মিচকে মিচকে হাসতে থাকে আর বলে-তুমি কী ভেবেছিলে?ভালোবাসি?আয়ুসী বোস তোমাকে ভালোবাসব বলে নয়।তোমাকে চোখের সামনে রেখে কষ্ট দিয়ে দিয়ে শেষ করব।তাই কাছে আনার এটাই ছিল সঠিক পদ্ধতি।

এই বলে আয়ান হাসতে হাসতে চলে যায়।আয়ুসী বসে পরে।এ কী হল তার সাথে!কেন হল?এই ভেবে সে কাঁদতে থাকে।

আয়ুসী কিছু খায় না।ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে দুপুরের খাবার রেডি করতে যায়।দুপুরের খাবার রেডি করে আয়ানকে ডেকে।আয়ান খেয়ে চলে যায়।কিন্তু আয়ুসী সকাল থেকে কিছু খায়নি।

ডাইনিং রুমে সোফার উপর বসে থাকে।বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত শরীরে কখন যে তন্দ্রা আসে সে জানে না।সোফার উপরই ঘুমিয়ে পরে।এদিকে ধ্রুব আয়ানের আগের বাড়িতে যায় সেখানে না পেয়ে আয়ানকে ফোন করে।আয়ান জানায় সে এখানে আছে।তাই ধ্রুব এই বাড়িতে চলে আসে।কলিং বেল বাজাতে থাকে।কিন্তু ক্লান্ত আয়ুসীর কানে যায় না।আয়ান এসে দরজা খোলে।সে আয়ুসীকে লক্ষ্য করেনি।দরজা খুললে ধ্রুব
ভিতরে আসে।সে আয়ুসীকে দেখতে পায়।

কী রে ও এখানে?-ধ্রুব

আয়ান আয়ুসীকে দেখতে পায়।কী বলবে বুঝতে পারে না।

তুই কী সত্যিই ওকে ভালোবাসিস?-ধ্রুব

তুই আবার এই নিয়ে পড়লি-আয়ান

আয়ান আয়ুসীর কাছে যায়।কী ভাবে ডাকবে বুঝতে পারে না।কিছুটা সংকোচের পর আয়ুসীর গায়ে হাত দিয়ে বলে-এই কে এসেছে দেখ।তুমি কখন এখানে এলে।এই,এই শুনছ।

আয়ানের কথাতে আয়ুসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।আয়ানকে নিজের উপর ঝুঁকে থাকতে দেখে সে একটু ভয় পেয়ে যায়।তাড়তাড়ি করে উঠে পরে।দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে।

আয়ান আয়ুসীর কাছে এসে বলে-এত রাগ।একটু ঝগড়া হয়েছে কী তুমি এখানে ঘুমাবে।

আয়ুসী বুঝতে পারে।আয়ান কেন এই ধরনের কথা বলছে।সে কিছু বলে না।ঠোঁটে হাসি আনার চেষ্টা করে।

ধ্রুবর সন্দেহ যায় না।যে কিছুদিন আগে মেয়েটার উপর প্রতিশোধ নিতে চাইত সে এখন!কিন্তু সে মুখে কিছু বলে না।

আয়ুসীকে দেখে বলে-কী রে দাদা এলো কিছু তো খাওয়াবি।তোর হাতের লুচি আলুর দম।

আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকায়।কারন আজ খাবারের তালিকাতে লুচি আলুর দম নেই।

ধ্রুব-কী রে আয়ান,ঠিক বললাম তো।এই সন্ধ্যাবেলাতে লুচি আলুর দম হলে জমে যায়।

আয়ান-হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।

আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-কী খাওয়াবে নাকি?

আয়ুসী হাসার চেষ্টা করে বলে-হ্যাঁ

আয়ুসী চলে যায়।আর ধ্রুব আর আয়ান অফিসের আলোচনা করতে থাকে।অনেকক্ষন পরে আয়ুসীও খাবার নিয়ে এসে পরে।কিন্তু আসতে গিয়ে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে যায় আর পড়ে যায়।ধ্রুব আর আয়ান ছুটে যায়।আয়ান আয়ুসীকে খাটে শুইয়ে দেয়।ধ্রুব আয়ুসীর চোখে মুখে জল দিতে থাকে।এদিকে আয়ান ডাক্তারকে ফোন করতে থাকে কিন্তু তিনি ধরেন না।অনেকক্ষন পরে আয়ুসী চোখ খোলে।

ধ্রুব-কী রে কেমন লাগছে?

আয়ুসী-আমি ঠিক আছি।

এই বলে সে উঠে বসে।অন্যদিকে আয়ান তাকিয়ে থাকে আয়ুসীর দিকে।সে বুঝতে পারে কেন আয়ুসীর এই অবস্থা।সকাল থেকে কিছু খায়নি।

ধ্রুব-হঠাৎ এরকম ভাবে!তোর কী খুব শরীর খারাপ লাগছে।

আয়ুসী-না দাদাভাই আমি ঠিক আছি।আমার জন্য তোমার খাওয়া হল না।

ধ্রুব-পাগলি কোথাকার।খাওয়া তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।

ধ্রুব আয়ানকে বলে-ওর খেয়াল রাখিস।রাতও হয়ে গেল।আমি আসি।

আয়ান-হুম

ধ্রুব আয়ুসীকে ইশারা করে বলে চলে যায়।আয়ুসী উঠে পরে।

আয়ান-কোথায় যাচ্ছ?

আয়ুসী-আমি অন্যরুমে শোব।

আয়ান-আগে তো কিছু খেয়ে নাও।

এই বলে সে আয়ুসীর জন্য খাবার গুছিয়ে আনে।আয়ুসীর হাতে দিয়ে বলে-খেয়ে নাও।

আয়ুসী-আমার খিদে নেই।

আয়ান-ওও তাই।তাহলে আমিই জোর করে খাইয়ে দি।

আয়ুসী আয়ানের কথায় অবাক হয়ে যায়।বলে-না,না আমি পারব।

আয়ুসী খেয়ে নিয়ে চলে যেতে গেলে আয়ান বলে-কোথায় যাচ্ছ?

আয়ুসী-অন্যরুমে।

আয়ান আয়ুসী কাছে এসে বলে-তোমাকে যা বলি সব ভুলে যাও।তোমাকে আমি সবসময় চোখের সামনে দেখতে চাই।তাছাড়া একঘরে থাকলে আমার সামনে তুমি ঠিক মতো ঘুমাতেও পারবে না।আমি তো সেটাই চাই।

আয়ুসী আয়ানের কথা শুনে আয়ানের দিকেই তাকিয়ে থাকে।

আয়ান-কী দেখছ?যাও শুয়ে পড়।

আয়ান খাটের উপর থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফাতে চলে যায়।আয়ুসী খাটের উপর গিয়ে বসে থাকে।তার যে আর ঘুম আসে না।চোখের ঘুম আজ যেন কোন অজানা দেশে পাড়ি দিয়েছে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here